You are currently viewing শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর উক্তি : ৬০ টি বিখ্যাত উক্তি

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর উক্তি : ৬০ টি বিখ্যাত উক্তি

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত বিভাজনের সময়, তার পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি আসাম, পূর্ববঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তার জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি প্রথমে জলপাইগুড়ির ফনীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশন এ, ক্লাস Vlll অব্দি পড়েন, তারপরতিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।



তোমরা যে শান্তির কথা ভাবো সেটা হল নিস্তরঙ্গতা, নিশ্চেষ্টতা, নিথরতা। আমি যখন কোমার মধ্যে ছিলাম তখন তো আমার ওইরকম শান্তিই ছিল। চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, ফ্রিকশন নেই, টেনশন নেই। মরে গেলে তো আরও চমৎকার শান্তি, একদম ঠাণ্ডা। বেঁচে থাকাটা কিন্তু নিছক শান্তি নয়। নিরন্তর সূক্ষ্ম বা স্থূল কিছু-না-কিছু ফ্রিকশন হয়েই যাচ্ছে। তুমি ভার্সাস তোমার পারিপার্শ্বিক। তুমি ভার্সাস তোমার আইডিয়াজ। তুমি ভার্সাস তোমার অতীত ও বর্তমান। তুমি ভার্সাস ভাল অথবা মন্দ। যদি জীবন বিমুখ হয়ে একটা কোটরের মধ্যে নিজেকে ভরে রাখতে পারো তাহলে তুমি তোমার মতো শান্তি পেয়ে যাবে। আর যদি খোলা জীবনের মধ্যে এসে দাঁড়াতে চাও তাহলে সংঘর্ষ হবেই।



মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নিত্যনৈমিত্তিক, তবু প্রতিটি মৃত্যুই মানুষকে কিছু বলতে চায়। কোনও একটি সত্যর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে চুপ করে থাকে। মৃত্যুর কোনও উচ্চারন নেই, তবু অস্ফুট কিছু নীরবে বলেও যায়।



ম্যাটাডর ভ্যানে একটি তুচ্ছ মৃতদেহ ভোঁ-ভোঁ করে শ্মশানমুখো যখন ছুটছে তখন কলকাতার রাস্তাঘাটে অফিসের ভিড়। মৃত্যুর মতো মহান ঘটনাও কলকাতার ব্যস্ততার কাছে তুচ্ছ। মৃত্যু কত অর্থহীন, কত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে ডবলডেকার, বাস, ট্যাক্সির ব্যস্ত রাস্তায়।



ইগো একটা পাজি জিনিস। মৃতদেহের দাহ শেষ হবার পরও একটা পিণ্ডাকার জিনিস থাকে। সেটা পুড়ে পুড়ে শেষ হতে চায় না। লোকে ওটাকে বলে অস্তি। অর্থাৎ যার লয় ক্ষয় নেই। ইগো ঠিক ওরকম। তবে সংসারী তার ইগোকে পুষে রাখে, তাকে যত্নআত্তি করে। যেন পোষা পাখি। আর সন্ন্যাসী তার ইগোকে তাড়ানোর একটা চেষ্টা অন্তত করে। সেটাই তার তপস্যা।



তুমি সারাক্ষণ একদৃষ্টে ওই ঘরখানার দিকে চেয়ে কি দেখ বাবা?
-ওটার মধ্যে মানুষের একটা লড়াই আছে যে। মানুষ কত চেষ্টা করে, সব কি হইয়ে তুলতে পারে? খানিকটা হয়, খানিকটা হয় না। চেয়ে চেয়ে দেখি। আমার আর কি দেখার আছে বল?



একেই কি ভোর বলে- যেমনটা সে কলকাতায় কখনও দেখতে পায় না? এত অপরূপ! দিগন্ত থেকে দিগন্তে হালকা কুয়াশার মায়াজালে জড়িয়ে অস্ফুট ভোরের আলো কত ম্যাজিক দেখাতে থাকে। দুখানা চোখ আজ দৃশ্যর ঐশ্বর্যে ডুবে গেল তার। প্রকৃতির এত অলঙ্কার আছে জানত না সে। কালো নদীর উপর সোনালী আলপনা এঁকে উঠে আসছে সূর্য। পলক ফেলতে পারে না হেমাঙ্গ। আবেগে তার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে।



বাঙালিদের প্রেম হল সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার আর বিয়ে হল মস্ত কীর্তি।



দলের মধ্যে সে ছিল সবচেয়ে কম কথা আর বেশি হাসির মেয়ে। দেখতে ভীষণ সুন্দর। তবে সে সৌন্দর্য উত্তেজক বা উত্তপ্ত নয়। একটু যেন শীতলতা মাখানো। হয়তো ক্লাসিক কিন্তু এরোটিক কিছুতেই নয়।



এক একটা দিন যেন পাষাণভার নিয়ে আসে। সারাটা দিন যেন দমচাপা, পাগল-পাগল, বিচ্ছিরি। এরকম সব বিচ্ছিরি দিনে মাঝে মাঝে অপর্ণার ইচ্ছা করে কেরোসিনে স্নান করে একটা দেশলাই কাঠি ঘষে দেয় নিজের শরীরে।

১০

একটা নদী কত কী করতে পারে! পালটে দেয় জীবনের দর্শন, বদলে দেয় মনের অবস্থা। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে চয়ন যে আদিগন্ত বিস্তারকে দেখছিল তেমনটি কলকাতার গলিতে বন্ধ তার আশৈশব জীবনে সে দেখেনি। তার রোগক্লিষ্ট, অভাবতাড়িত জীবনে প্রকৃতির শোভার কোনও স্থানই ছিল না। এক থালা ভাতের শোভা অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল তার। একখানা বাড়তি টিউশনি পাওয়াই ছিল জীবনদর্শন। চারুশীলার কল্যাণে এই আঘাটায় এসে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে পৃথিবীর মহত্ত্ব উপলব্ধি করে সে বুঝল, কলকাতায় এতকাল ধরে যে জীবন সে যাপন করে এসেছে তা হল এক পশুর জীবন।

১১

একা প্রায়ান্ধকার কামরায় জানালার পাশে বসে সে আজ উপভোগ করছিল এই একাকীত্বকে। বিশাল বিশ্বজগতের কথা যখনই সে ভাবতে শুরু করে তখনই তুচ্ছ হয়ে যায় তার সব প্রিয়জন, তার চাকরি, সাফল্য, প্রতিষ্ঠা। এক দিশাহীন অতল অন্ধকারে আচ্ছন্ন অসীম আর মহাকাল- যার শুরু নেই, শেষও নেই- তাকে এসে সম্মোহিত করে দেয়।

১২

আমরা কেউ কোনও অবস্থাতেই স্বাধীন নই। স্বাধীনতা একটা রিলেটিভ ধারনা মাত্র। এক ধরনের আই ওয়াশ। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মানেই চাকরির অধীনতা, সেখানেও হুকুম করবার লোক আছে, বাধ্যবাধকতা আছে। পুরো স্বাধীনতা কোথাও নেই।

১৩

এই সেই পুরুষ যে স্ত্রীর কাছে কেবলই আশা করে বশ্যতা, মুগ্ধতা, নতশির দাসত্ব, প্রত্যুতরহীন অপমানের পাত্রী। এই সেই পুরুষ যারা গুহামানবের উত্তরাধিকার এখনও রক্তে বহন করে। যারা শয্যাসঙ্গিনী ছাড়া স্ত্রীকে আর কিছুই ভাবতে পারে না। এদের চাই একটি সুন্দরী জ্যান্ত রক্তমাংসের পুতুল।

১৪

তুমি বোধহয় এবার আমাকে নারীমুক্তির কথা শোনাবে! শোন বোকা মেয়ে, নারীমুক্তি বলে কিছুই নেই। প্রতি মুহূর্তেই পুরুষকে তার দরকার। কোনও মেয়ে যদি তার স্বামীকে না মানে, স্বাধীন হয়, তবে অন্য পুরুষরা তাকে ছিঁড়ে খাবে। স্বাধীন মেয়ের মতো এমন সহজ ভোগ্যবস্তু পুরুষের আর কি আছে ? বহুভোগ্যা হলে কি স্বাধীন হওয়া যায়? !
-তাহলে মা, তুমিই স্বীকার করছ যে, পুরুষরা পশুর মতই। সুযোগ পেলেই মেয়েদের ছিঁড়ে খায়। তাহলে এই জাতকে মেয়েরা প্রভুর আসন দিবে কেন?
–উপায় নেই বলে। পৃথিবীতে মেয়েদের আর কোনও উপায় নেই, তাই ওই নিয়ম মানতে হয়। মেয়েতে মেয়েতে তো আর বিয়ে হয় না!

১৫

প্রেম জিনিসটা কম দামী সেন্টের মতো, গন্ধ টপ করে উবে যায়। একজন চিন্তাশীল, কল্পনাপ্রবন মানুষ বিয়ের পর হয়ে যায় শ্রমিকের মতো। প্রেমের সমাধির উপরেই তো বিয়ের সৌধ।

১৬

বিয়ে, প্রেম ইত্যাদি তামাদি হয়ে যাচ্ছে দুনিয়ায়। ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ায় প্রেম কবেই নির্বাসনে গেছে। আছে কেবল দগদগে যৌন সম্পর্ক। ওই সম্পর্কের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে মানুষ। বিয়ে করছে না, একসঙ্গে থাকছে, ছেলেপুলে হচ্ছে, বাঁধা পড়ছে না। পৃথিবীর ভবিতব্য কি তাহলে ওটাই? কুকুর বেড়ালের মতো শুধু দেহের প্রয়োজনে একসঙ্গে হওয়া এবং ফের আলাদা হয়ে যাওয়া, ইচ্ছে হলেই?

১৭

আচমকা যে কাণ্ডটা করে বসল অনিন্দিতা তার কোনও যুক্তিসিদ্ধ অর্থ হয় না, না হয় তার কোনও ব্যাখ্যা। খুবই অকস্মাৎ সে দুই হাতে চয়নের দুটো কাঁধ ধরে নিজের শরীরের দিকে টেনে নিল তাকে। খোলা, বিপজ্জনক ছাদে তার দুখানা ঠোঁট চেপে বসে গেল চয়নের ঠোঁটে। কয়েকটা অদ্ভুত মুহূর্ত। তারপরই তাকে ছেড়ে দিল অনিন্দিতা।

১৮

নিজের ঘরে দোতলায় এসে একটা আরামের শ্বাস ছাড়ল হেমাঙ্গ। স্থানের মায়া কেন তা সে বুঝতে পারে না। এই যে ঘরদোর, বারান্দা, চেয়ার টেবিল, চেনা আসবাব এদের কি সত্তা আছে ? নইলে এত টানে কেন ? কেন এই চেনা বাড়িতে ফিরে এসে তার এত স্বস্তি ? কী আছে এখানে?

১৯

এই ভালবাসাটাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না হেমাঙ্গ। রক্তের সম্পর্ক নয়, মনিব-ভৃত্যর সম্পর্ক, তবু তার কিছু হলে ফটিক কাঁদে কেন ? এইসব সামান্য সামান্য জিনিসের জন্যই বোধ হয় আজও মানুষের বাঁচতে ভালো লাগে।

২০

প্রবন্ধে সে এক জায়গায় সভ্যতার অভ্যন্তরে স্ববিরোধের উদাহারন দিতে গিয়ে বলেছে, টিভিতে দেখতে পাচ্ছি ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি, মর্টার, রকেট, বোমার আক্রমনে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে শহর, মরছে মানুষ! আবার তার ভিতরেই রেডক্রস এসে তুলে নিয়ে যাচ্ছে হতাহতদের, মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে মানুষ দুটো কাজই করছে কি করে? মারা এবং বাঁচানোর চেষ্টা? এখনও পৃথিবীতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হচ্ছে, চলছে মারনাস্ত্র তৈরির গভীর গবেষণা। এখনও অস্ত্রের বাজার রমরম করছে দক্ষিনী দেশগুলিতে। সভ্যতা তাহলে কত দূর এগোল? কোন দিকে এগোল?

২১

কে জানে! জীবন এত অনিশ্চিত বলেই না এত ভাল এই জীবনযাপন !

২২

এ শহরের একটা সাঙ্ঘাতিক নেশা আছে ! চট করে কলকাতাকে জীবন থেকে মুছে ফেলা যায় না।

২৩

শীতের সকালে কলকাতা যেন তারই অপেক্ষায় সেজে বসে আছে। সাজ কিছুই নয়, একটু রোদ, লোকজন, একটু ঠাণ্ডা হাওয়া। সেই পুরনো কলকাতাই। তবু যেন এক আবিষ্কারকের চোখে নতুন ভূখণ্ড দেখল চয়ন।

২৪

কলকাতা একটা অদ্ভুত শহর। এর নিশ্চই নিজস্বতা কিছু আছে। এই শহরে যারা একবার বসবাস শুরু করে তারা আর অন্য কোথাও যেতে আগ্রহ বোধ করে না। গেলেও তারা কলকাতায় ফিরে আসার কথাই বোধ হয় ভাবে। কিন্তু আমার মনে হয় লন্ডন, নিউ ইয়র্ক বা মস্কোও কি তাই নয় ? এইসব শহরের অধিবাসীরা কেউ আর কারও মতো নয়, প্রতিটি শহরেরই পরিবেশ ভিন্ন, ভিন্ন তাদের ভূগোল ও ইতিহাস, ভিন্ন তাদের জীবনযাত্রা। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, মস্কো বা কলকাতা কেউ কারও মতো নয়। আবার এক অর্থে ওরা সবাই সেই মহানগরী- সেই নরক, যাকে হিন্দুশাস্ত্রে বলা হয় কুম্ভীপাক। যার মধ্যে হাজারো রকমের মানুষকে মিশিয়ে পাক খাওয়ানো হচ্ছে নানা জীবিকায়, নানা মতলবে, নানা আশা বা বঞ্চনায়।

আমি এইসব শহরের চুম্বকের মতো আকর্ষণের কথা ভেবেছি। কিসের এই আকর্ষণ? জীবিকা? বৃহত্তর সুযোগ? নানা সম্ভাবনা? হ্যাঁ, এ সবই সত্যি। কিন্তু এর অতিরিক্তও কিছু আছে। মহানগর মানেই একটি জঙ্গম, চলিঞ্চুতা। এখানে সারাক্ষণ একটা জীবনের প্রবাহ চলেছে, চলেছে নানা কর্মকাণ্ড। এই জঙ্গমতাই কি আকর্ষণ করে মানুষকে?

২৫

পোশাক মানুষকে ততটা সুন্দর করতে পারে না, যতটা পারে অভ্যন্তরীণ আনন্দের আভা যখন বিকীর্ণ হয় তার অবয়বে।

২৬

সংসারের সম্পর্কগুলো এমন সব সুক্ষ ভারসাম্যতার ওপর নির্ভর করে যে একটা মাছি বসলেও পাল্লা কেৎরে যায়।

~সাঁতারু ও জলকন্যা

২৭

ভালবাসা এক অনুশীলনসাপেক্ষ ব্যাপার। ভাবের ভালবাসা বেশিক্ষন থাকতে পারে না। যাকে ভালোবাসো তার জন্য কিছু করো। তাকে কিছু দাও। রোজ দাও। প্রতিদান চেও না।


২৮

মেয়েমানুষ হলো জলের মতো,যে পাত্রে থাকে তার মতোই হয়
-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়(“পার্থিব”)

২৯

যখন কোন মেয়ে দু’বেলা খাবার, মাথার ওপরে একটু ছাদ এর বেশি আরো কিছু আছে তা বুঝতে শিখে, তবেই তার ভেতরে জন্ম নেয় লজ্জা আর রোমাঞ্চ!” -শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।


৩০

ব্যাধিময়, ব্যথাময়, নশ্বর এই শরীর নিয়ে মানুষের কত না ভাবনা, কিন্তু শরীরখানা দেওয়া হয়েছে এটাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য, বসিয়ে বা আরাম করার জন্য না!” -শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

৩১

প্রেমিক প্রেমিকারা কতো ভালোবাসার কথাটথা বলে ঘর বাঁধে, তারপর তাদের ঝগড়ার জ্বালায় বাড়িতে কাকপক্ষীও বসতে পারে না।❞
—শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (পার্থিব)


৩২

আমি যে তাকে ভালবাসি তা ওর রূপের জন্যও নয়, গুণের জন্যও নয়। ভাল না বেসে থাকতে পারি না বলে বাসি।❞
—শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

৩৩

শৈশবের মতো সুন্দর সময় আর নেই,,
বড় হলে দেখবে পৃথিবীটা কত বিচ্ছিরি…

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।


৩৪

লোকে কয় বটে অভাবে স্বভাব নষ্ট, কিন্তু আমি কই নষ্টের বীজ ভিতরে না থাকলে অভাব তারে টলাইতে পারে না।

~ চক্র (শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

৩৫

আমি যে তাকে ভালবাসি তা ওঁর রূপের জন্যও নয়, গুণের জন্যও নয়। ভাল না বেসে থাকতে পারি না বলে বাসি।

৩৬

ভালবাসলেই অ্যাকসেপ্ট করা যায় ঠিকই, কিন্ত অ্যাকসেপ্ট করলেই ভালবাসা যায় কি?


৩৭

বেশির ভাগ মানুষেরই অভ্যাস হল, যেখানে বলার কথা কিছু নেই, সেখানেও অকারণে কথা বলে যায়, প্রয়োজন থাক বা না থাক।

৩৮

দুটো শব্দ আছে, জানো! রমণীয় আর পরম। ওদের কাছে জীবন হল রমণীয়, আমাদের কাছে পরম।


৩৯

যে মানুষ নিজের বশে থাকে না ষে নানা অবস্থার চাপে পরে নানারকম মানুষের একটা সমষ্টি হয়ে দাঁড়ায়।


৪০

এই জনকোলাহল, মানুষে মানুষে বিচিত্র সব সম্পর্ক, সংসারে জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে হরেক জটিলতা, অপমান, দুঃখ ও অভাববোধ, এসব ছাড়িয়ে ওই বহু দূরে এক মহান শ্বেতবর্ণের পর্বত দাঁড়িয়ে আছে তাঁর জন্য। শুধু তাঁরই জন্য। দীপনাথ বরফ কাটা কুড়াল নেবে না, নাল লাগানো জুতো পরবে না, সঙ্গে নেবে না অক্সিজেন সিলিন্ডার, দড়ি বা তাঁবু। ষে একদিন এমনি সাদামাটা ভাবে রওনা দেবে সেই উত্তুঙ্গ প্রেমিক ও প্রভুর কাছে। নিজের তুচ্ছতাকে বিসর্জন দেবে সেই মহিমাময়ের অতুলনীয় মহত্বের মধ্যে। একদিন কি পাহাড় ডাকবে না তাকে?

৪১

বকুলকে কে যেন শিখিয়েছিল, ছেলেদের সঙ্গে মিশতে নেই। তাঁর বিষণ্ণ,গম্ভীর, সুন্দর মুখে সবসময় একটা অদৃশ্য নোটিশ ঝুলতঃ আমার দিকে কেউ তাকাবে না, একদম তাকাবে না, খবরদার তাকাবে না।


৪২

যে জীবন তাঁর নয়, যে জীবন তাঁর কখনো হবে না তাকে সিংহাসনে বসিয়ে মানুষ মাঝে মাঝে এরকম ধূলায় পরে কাঁদে।


৪৩

আমি যদি মরি ঠিক ভূত হব। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জন উপত্যকায়, পাহাড়ে, জঙ্গলে, বালিয়াড়িতে ঘুরে ঘুরে বেড়াব। ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে হা হা করে হেসে উঠব। বৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে ভিজব। কিছুতেই মেয়ে হয়ে জন্মাব না আর।


৪৪

শুধু বেঁচে থাকতে পারলে, কোনওরকমে কেবলমাত্র বেঁচে থাকতে পারলেও জীবনে কত কী যে হয় !


৪৫

সংসারের সম্পর্কগুলো এমন সব সুক্ষ ভারসাম্যতার ওপর নির্ভর করে যে একটা মাছি বসলেও পাল্লা কেৎরে যায়।


৪৬

আকাশ কতটা পরিষ্কার থাকলে, কতখানি জ্যোৎস্না উঠলে কতগুলো গাছপালা এবং কতখানি মাঠ-ময়দান থাকলে কতটা সৌন্দর্যের সৃষ্টি হবে, তার পিছনেও কি অঙ্ক নেই?


৪৭

কোন কোন স্বামী-স্ত্রী বোধহয় তাদের সম্পর্কের বিষকেই বেশী উপভোগ করে। মধুর কথা তারা কানে নেবে না।


৪৮

বড় উচাটন হয়ে ওঠে মন। কোথায় কোন দুর্গম প্রান্তর, পাথুরে জমি, চড়াই-উতরাই ভেঙে যেতে হবে তার তো কোন ঠিক নেই। কোন দিক থেকে সংকেত ভেসে আসছে, তা সে জানেও না ভালো মতো। শুধু তার পালে সেই পাহাড়-ছোঁয়া বাতাস এসে লাগে। বলে, উজানে যাও, উজানে যাও।


৪৯

বেশ করেছি হাড়কেপ্পন হয়েছি। কেপ্পন হয়েছি তো নিজের পয়সায় হয়েছি। আপনার তাতে কি?


৫০

বোধ হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রবলেম হল অহংকারের লড়াই।

৫১

দুঃখী মানুষ, তোমার ভালো হোক।


৫২

যাকে বোঝা যায় না, যে কম কথা বলে এবং যার অনেক কাজই স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না, তার সম্পর্কে আশেপাশের লোকের খানিকটা ভয় থাকে।


৫৩

মরতেই যে তার জন্ম এটা বনানী খুব ভাল করে জানে। বেঁচে থাকতে পারে তারাই যাদের বেঁচে থাকাটা অন্য কেউ চায়। যাদের ভালবাসার লোক আছে। বনানীর তো সেরকম কেউ নেই। কে চাইবে যে সে বেঁচে থাকুক?


৫৪

এই মরা-মরা জীবনেও মাঝে মাঝে এরকম ঘটলে একটু কেমন বাঁচার ইচ্ছে জাগে। বই বা ওষুধ, ওগুলো কিছু নয়। আসল হল ওই আদরকাড়া কথা। প্রাণটা নিংড়ে যেন জল বের করে আনে চোখ দিয়ে। এটুকু, খুব এইটুকু আদর পেলেও বনানীর মনে হয় অনেকখানি পেয়ে গেল সে। আর বুঝি কিছু চাওয়ার নেই।


৫৫

বাপ আর ছেলের মধ্যে যেমন জেনারেশন গ্যাপ থাকে, দাদু আর নাতির মধ্যে তেমনটা না থাকতেও পারে। বাপ আর ছেলে সব সময়েই সরাসরি সংঘর্ষের সম্ভাবনার মধ্যে থাকে। দাদু আর নাতির সেই ভয় নেই। প্রজন্মগত পার্থক্যটা বেশি হওয়ার দরুনই বোধহয় তাদের মধ্যে এক সমঝোতা গড়ে ওঠে।


৫৬

বোধ হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রবলেম হল অহংকারের লড়াই।

~মানবজমিন

৫৭

বেশির ভাগ মানুষেরই অভ্যাস হল, যেখানে বলার কথা কিছু নেই, সেখানেও অকারণে কথা বলে যায়, প্রয়োজন থাক বা না থাক।
(গয়নার বাক্স)

৫৮

যে মানুষ নিজের বশে থাকে না ষে নানা অবস্থার চাপে পরে নানারকম মানুষের একটা সমষ্টি হয়ে দাঁড়ায়।
(মানবজমিন)

৫৯

যে জীবন তাঁর নয়, যে জীবন তাঁর কখনো হবে না তাকে সিংহাসনে বসিয়ে মানুষ মাঝে মাঝে এরকম ধূলায় পরে কাঁদে।
(মানবজমিন)

৬০
শুধু বেঁচে থাকতে পারলে, কোনওরকমে কেবলমাত্র বেঁচে থাকতে পারলেও জীবনে কত কী যে হয় !

–সাঁতারু ও জলকন্যা


Leave a Reply