লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি। তিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে ফকিরি গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
লালন সাঁই ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো যুগে যুগে বহু সঙ্গীতশিল্পীর কণ্ঠে লালনের এই গানসমূহ উচ্চারিত হয়েছে। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।
সুপ্রিয় পাঠক আজকের এই ব্লগ পোস্টে থাকছে লাল সাঁই এর বিখ্যাত বাণী ও গানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১#
ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার।
২#
সামান্যে কি তার মর্ম জানা যায়।
হৃদকমলে ভাব দাঁড়ালে অজান খবর আপনি হয়
৩#
মানুষ তত্ত্ব যার সত্য হয় মনে
সে কি অন্য তত্ত্ব মানে !
৪#
সব লোকে কয় লালন কি জাত এ সংসারে
লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে।
৫#
নূর টলে হলো নৈরাকার
নিরঞ্জনের স্বপ্ন কী প্রকার
৬#
শুনেছি সাধুর করুনা
সাধুর চরণ পরশিলে হয় গো সোনা
৭#
শুদ্ধ প্রেমের প্রেমিক মানুষ যে জন হয়
মুখে কথা কোক বা না কোক
নয়ন দেখলে চেনা যায়
৮#
আমার জনম গেলো তোমার আশে
তুমি দাও হে দেখা অন্তিমে এসে
৯#
এ কিরে সাঁইয়ের আজব লীলে
আমার বলতে ভয় হয়রে দেলে
১০#
দেখো দিবারাতি নাই সেখানে;
মনের মানুষ যেখানে
কী সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে
১১#
যে জন অনুরাগী হয়, রাগের দেশে রয় রাগের তালা খুলে সে রূপা দেখতে পায়।
১২#
পাতিয়ে সে ফাঁদের চোয়া বেহাত বেটা দিচ্ছে খেয়া লোভের চার খাটায়ে।
১৩#
কতো কামী লোভী পরেছে ধরা
চার খাইবার আশে।
১৪#
অনুরাগীর করণ, বিধি বিস্মরণ লীলা নিত্যপুরে রাগের ধারা।
১৫#
চাঁদে চাঁদ ঢাকা দেওয়া চাঁদে দেয় চাঁদের খেওয়া দেওয়া।
১৬#
মরিবে এক বেহাত বেটা হাওয়ায় ফাঁদ পেতেছে।
১৭#
সিরাজ সাঁইর হক্কের বচন জন্মমৃত্যুর ফাঁদরে লালন এড়াবি তুই কিসে।
১৮#
কী বলবো সেই ফাঁদের কথা কাক মারিতে কামান পাতা আরম্ভ করেছে।
১৯#
স্বরপের ঘরে অটলরূপ বিহারে চেয়ে দেখ না তোরা, ফনি মণি জিনি রূপের বাখানি আছে দুইরূপে একরূপ হল করা।
১৯#
দেখলেরে চমৎকার প্রাণ বাঁচা ভার সেই ফাঁদে যে পরেছে।
২০#
কতো কামী লোভী পরেছে ধরা
চার খাইবার আশে
২১#
যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে
সেই জানে রসিক রাগের ধারা
২২#
আছে অটলরূপে সাঁই, ভেবে দেখলাম তাই
সেই রূপের নিত্যলীলা নাই
২৩#
যে জন অনুরাগী হয়, রাগের দেশে রয়
রাগের তালা খুলে সে রূপা দেখতে পায়
২৪#
ও যার আপন খবর আপনার হয় না
একবার আপনারে চিনতে পারলে রে
যাবে আচেনারে চেনা
২৫#
যে করে কালার চরণের আশা
জানো নারে মন তার কী দুর্দশা
২৬#
শুনি মরিলে পাব বেহেস্তখানা, তা শুনে তো মন মানেনা…
বাকির লোভে নগদ পাওনা, কে ছাড়ে এই ভুবনে….।
২৭#
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়
লালন বলে জাত কারে কয়
এই ভ্রমও তো গেল না।
২৮#
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়,
ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতেম পাখির পায়।
২৯#
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সব দেখি তা না না না ।
৩০#
মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।
৩১#
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টানজাতি গোত্র নাহি রবে। এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে।
৩২#
ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
একি জলেই সব হয় গো সুচি
দেখে শুনে হয় না রুচি
যমে তো কাউকে ছাড়বে না ”
৩৩#
ও যার আপন খবর আপনার হয় না।
একবার আপনারে চিনতে পারলে রে যাবে আচেনারে চেনা।
৩৪#
এমন মানবজনম আর কি হবে! মন যা করো তরায় করো এইভবে
৩৫#
সাঁই আমার অটল পদার্থ নাইরে তাঁর জরাত।
৩৬#
এলাহি আল আলমিন, সিদরাতুল একিন কুদরতি গাছ পয়দা করে।
৩৭#
শুনি ঘাড়ের উপরে মানুষ মুর্শিদরূপে রয়েছে।
৩৮#
সত্তর হাজার সাল ধরে গাছের পরে সাধন করে, বারিতলায় হুকুম হলো, নসূর ঝরিল ঝরিয়ে দুনিয়া সৃষ্টি করে।
৩৯#
এইদিন সাঁই ডিম্বুভরে
ভেসেছিলো নৈরাকারে,
লালন বলে হায় কী খেলা,
কাদের মাওলা
করেছে লীলা অপার পারে।
৪০#
স্বরপের ঘরে অটলরূপ বিহারে চেয়ে দেখ না তোরা।
৪১#
ধরবো বলে এলাম আমি
খুঁজে পাইনে তাঁর দিশে।
৪২#
আমি শুনবো কথা তোমার তরে তাঁর উপরে কে আছে বসে।
৪২#
আমার জনম গেলো তোমার আশে তুমি দাও হে দেখা অন্তিমে এসে।
৪৩#
আছে অটলরূপে সাঁই, ভেবে দেখলাম তাই সেই রূপের নিত্যলীলা নাই।
৪৪#
অধিন লালন ভেবে বলে পেলাম না তোমার দিশে।
৪৫#
না ছিল আসমান জমিন পবনপানি সাঁই তখন নিরাকারে।
৪৬#
ফনি মণি জিনি রূপের বাখানি আছে দুইরূপে একরূপ হল করা।
৪৭#
আব, আতশ, খাক, বাত কিসে গড়ে বলো গুরু সত্য করে, হাওয়া পবন এলো কোন কারে পানির জন্ম হয় কিসে।
৪৮#
যদি জরামৃত হয়, তবে অটল পদ না কয় ফকির লালন বলে তা কয়জন বোঝে।
৪৯#
যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে
সেই জানে রসিক রাগের ধারা।
৫০#
রসিক যাঁরা চতুর তাঁরা তাঁরাই নদীর ধারা চেনে।
৫১#
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি দিবারাতি নাই সেখানে।
৫২#
শ্রীরূপ অনুগত যে হবে, তালা চাবি পাবে লালন বলে অধর ধরেছে তারা।
৫৩##
নূর টলে হলো নৈরাকার নিরঞ্জনের স্বপ্ন কী প্রকার।
৫৪#
যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে সেই জানে রসিক রাগের ধারা।
৫৫#
আপনি নিরঞ্জনস মণি আপনি কুদরতের ধনী।
৫৬#
আছে রূপের দরজায়, শ্রীরূপ মহাশয় রাগের তালাচাবি তাঁর হাতে সদাই।
৫৭#
আছে অটলরূপে সাঁই, ভেবে দেখলাম তাই সেই রূপের নিত্যলীলা নাই ।
৫৮#
যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে সেই জানে রসিক রাগের ধারা।
৫৯#
যে জন অনুরাগী হয়, রাগের দেশে রয় রাগের তালা খুলে সে রূপা দেখতে পায়।
৬০#
অনুরাগীর করণ, বিধি বিস্মরণ
লীলা নিত্যপুরে রাগের ধারা।
৬১#
আছে রূপের দরজায়, শ্রীরূপ মহাশয় রাগের তালাচাবি তাঁর হাতে সদাই।
৬২#
অধীন লালন বলে বিপদ আমার গুরুচাঁদকে ভুলে।
৬৩#
সে চাঁদেতে চাঁদের আসন রেছেছে ঘিরে।
৬৪#
ভেবে কয় লালন, সে হয় কোনজন কারে দেখলেন সাঁই নয়ন খুলে।
৬৫#
ভবের পর এক সতী ছিল বিপাকে সে মারা গেল, মরার পেটে গর্ভ হল এই ছিল তার কপালে।
৬৬#
গাছের ছিলো চার ডাল হলো হাজার সাল, এক এক ডাল, কি হাল ছিলো তাঁর এতোই দূরে।
৬৭#
বাহ্য কাজ ত্যাজ্য করে নয়ন দুটি রুপের ঘরে সদাই থাকে রুপনিহারে।
৬৮#
মরা যখন কবরে নেয় তিনটি সন্তান তার তখন হয়, তিনজনা তিন দেশেতে যায় মরা লাশ ফেলে রেখে।
৬৯#
দেখলো কি স্বপ্ন, হলো সে মগ্ন কোনরূপ দেখে নিরঞ্জন ভোলে।
৭০#
তোরা দেখ নারে মন দিব্য নজরে। চারি চাঁদে দিচ্ছে ঝলক মণিকোঠার ঘরে।
৭১#
কেবা তাঁর দোসর, পায় সে খবর খোদার অঙ্গ কে খণ্ড করিলে।
৭২#
জমিনেতে ফলছে মেওয়া ঐ চাঁদের সুধা ঝরে।
৭৩#
শ্রীরূপ অনুগত যে হবে, তালা চাবি পাবে লালন বলে অধর ধরেছে তারা।
৭৪#
নয়ন চাঁদ প্রসন্ন যাঁর সকল চাদ দৃষ্ট হয় তার হয়রে।
৭৫#
এ কিরে সাঁইয়ের আজব লীলে আমার বলতে ভয় হয়রে দেলে।
৭৬#
হলে সে চাঁদের সাধন অধর চাঁদ হয় দরশন হয়রে।
৭৭#
আবার মরা মরায় সাধন করে মরা ধরে খায়।
৭৮#
যেতে পথে কামনদীতে পাড়ি দিতে ত্রিবিনে।
৭৯#
দাই মেরে ফয়তা করে নাপিত মেরে শুদ্ধ হয়রে।
৮০#
বাপের জন্ম ছেলে দেখলো তাতে কি ফল হলো।
৮১#
মরার যখন মাংস পচে তিনজনাতে বসে হাসে, অন্য লোকে ঘৃনা করে লালন তুলে নেয় কোলে।
৮২#
মহাসন্ধির উপর ফেরে সে। মনরে ফের সদাই যার তল্লাশে।
৮৩#
চন্দ্র যে প্রকার, উদয় জলের পর অমনি সে বিরাজে এই মানুষে।
৮৪#
অন্ধকারে আর ধন্ধকারে আর ছিলো কুত্তকারে।
৮৫#
লালন বলে ম’লাম জ্বইলে ম’ লাম আমি নিশিদিনে।
৮৬#
আশেকের ভেদ মাশুক জানে জানে না আর অন্য জনে।
৮৭#
সদাই থাকে রুপ বদনে; রুপের মালা হৃদয়ে গেঁথে ভাসে প্রেমসাগরে।
৮৮#
মরণের ভয় নাইকো তার রোজ কেয়ামত রোজের মাঝার মোর্শেদ রুপটি করে সে সার।
৮৯#
তাজমালা সব ফেলে লালন যায় ভবসিন্ধু পারে।
৯০#
বেঁজো নারীর ছেলে ম’লো এ কী হলো দায় মরা ছেলের কান্না দেখে মোল্লাজী ডরায়।
৯১#
ছেলে ম’ লো তিন দিন হলো ছেলের বাবা এসে জন্মাইলো।
৯২#
রসিক সুজন ভাইরে দুইজন বসে আছ কার আশে, তোর বাড়িতে অতিথ এল দুই ছেলে আর এক মেয়ে।
৯৩#
কী সন্ধানে যাই সেখানে মনের মানুষ যেখানে।
৯৪#
মোল্লা মেরে কাল্লা কাটে জানাজা পড়ায়।
৯৫#
ঘটে পটে সব জায়গায় আছে আবার নাই বলা যায়।
৯৬#
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে; তাঁরাই স্বরূপ সাধন জানে ওরে তাঁরাই স্বরূপ সাধন জানে।
৯৭#
আমি মনি হারা ফনির মতন; হারা হলেম দিন নিধনে আমি হারা হলেম দিন নিধনে।
৯৮#
দেখো দিবারাতি নাই সেখানে; মনের মানুষ যেখানে কী সন্ধানে যাই সেখানে মনের মানুষ যেখানে।
৯৯#
ভবে আশেক যার লজ্জা কী তাঁর সে খোঁজে দীনবন্ধুরে।
১০০#
লালন ফকির ভেবে বলে দেখলাম মরা ভাসে মরার ঘাটে।
সে খোঁজে প্রাণভরে; দীনবন্ধু প্রাণসখা দেখা দাও মোরে।