চোখের বালি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস। ১৯০১-০২ সালে নবপর্যায় বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের বিষয় “সমাজ ও যুগযুগান্তরাগত সংস্কারের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের বিরোধ”। আখ্যানভাগ সংসারের সর্বময় কর্ত্রী মা, এক অনভিজ্ঞা বালিকাবধূ, এক বাল্যবিধবা ও তার প্রতি আকৃষ্ট দুই পুরুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।
এই ব্লগে চোখের বালি উপন্যাসের কিছু বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরেছি।
১#
সুখ যখন তোমার হাতেই আছে, তখন এমন করিয়া ভোগ করো, যাহাতে পরের হিংসা না হয়।
২#
সংসারের কঠিন কর্তব্য হইতে প্রেমকে ফুলের মতো ছিঁড়িয়া স্বতন্ত্র করিয়া লইলে তাহা কেবল আপনার রসে আপনাকে সজীব রাখিতে পারে না, তাহা ক্রমেই বিমর্ষ ও বিকৃত হইয়া আসে।
৩#
পোকা যখন গুটি বাঁধে তখন তত বেশি ভয় নয়; কিন্তু যখন কাটিয়া উড়িয়া যায়, তখন ফেরানো শক্ত।
৪#
পরের জন্য হইলেও কন্যা দেখিবার প্রসঙ্গমাত্রেই যৌবনধর্ম আপনি চুলটা একটু ফিরাইয়া লয়, চাদরে কিছু গন্ধ ঢালে।
৫#
ছেলে অভিমান করিয়া আছে বলিয়া কি মাও অভিমান করিয়া থাকিবে?
৬#
অবিশ্রাম মিলনের মধ্যে একটা শ্রান্তি ও দুর্বলতা আছে। সে মিলন যেন থাকিয়া থাকিয়া কেবলই মুষড়িয়া পড়ে – সংসারের দৃঢ় ও প্রশস্ত আশ্রয়ের অভাবে তাহাকে টানিয়া খাড়া রাখায় কঠিন হয়। কাজের মধ্যেই প্রেমের মূল না থাকিলে ভোগের বিকাশ পরিপূর্ণ ও স্থায়ী হয় না।
৭#
অধিকারলাভের যে মর্যাদা আাছে, সেই মর্যাদা রক্ষা করিতে হইলে অধিকার প্রয়োগকে সংযত করিতে হয় । যতটা পাওয়া যায় ততটা লইয়া টানাটানি করা কাঙ্কলকে সুভা পায় – ভোগকে খর্ব করিলেই সম্পদের যথার্থ গৌরব।
৮#
উপদেশ দেওয়া সহজ, উপায় বলিয়া দেওয়াই শক্ত।
৯#
যাহা যথার্থ গভীর এবং স্থায়ী, তাহার মধ্যে বিনা চেষ্ঠায় , বিনা বাধায় আপনাকে সম্পূর্ণ নিমগ্ন করিয়া রাখা যায় বলিয়া তাহার গৌরব আমরা বুঝিতে পারি না – যাহা চঞ্চল ছলনামাত্র , যাহার পরিতৃপ্তিতে লেশমাত্র সুখ নাই , তাহা আমাদিগকে পঞ্চাতে উর্ধ্ধশ্বাসে গোড়দৌড় করিয়া বেড়ায় বলিয়াই তাহাকে চরম কামনার ধন মনে করি।
১০#
অন্যকে দোষী করিয়া যেটুকু সুখ , দোষ মনে রাখিবার দুঃখ তাহার চেয়ে ঢের বেশি।
১১#
একটা প্রবল আবেগের উচ্ছ্বাসের পর ঋদয়ে অবসাদ উপস্থিত হয় – ক্লান্ত ঋদয় কিছুকালের জন্য দূরে ঠেলিয়া রাখিতে চায় । সেই ভাবের ভাঁটার সময় তলের সমস্ত প্রচ্ছন্ন পঙ্ক বাহির হইয়া পড়ে – যাহা মোহ আনিয়াছিল তাহাতে বিতৃষ্ণা জন্মে।
১২#
ভালো যে বাসে সে নিজের ভালোবাসাকে বরাবর অপদস্থ করিতে পারে।
১৩#
প্রকৃত আপনাকে মানুষ আপনিও জানিতে পারে না , অন্তর্যামীই জানেন , অবস্থাবিপাকে যেটা বাহিরে গড়িয়া উঠে সংসারের কাছে সেইটাই সত্য।
১৪#
চিকিৎসা করিয়া রোগ সারানোর চেয়ে রোগ না হইতে দেওয়াই ভাল।