You are currently viewing যদ্যপি আমার গুরু রিভিউ

যদ্যপি আমার গুরু রিভিউ

বইয়ের নামঃ যদ্যপি আমার গুরু

লেখকঃ আহমদ ছফা

ধরনঃ স্মৃতিচারন মূলক

প্রকাশকঃ মাওলা ব্রদার্স

প্রচ্ছদঃ কাইয়ুম চৌধুরী

প্রথম প্রকাশঃ ১৯৯৮

পৃষ্ঠাঃ ১১০

দামঃ ১৭৫

বইটির তাৎপর্যতা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাইনা,আমার সেই যোগ্যতাও নেই। তবে আমি শুধু আমার দৃষ্টিতে বইটির কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

বইটিতে গুনি লেখক আহমদ ছফা তার গুরু জাতীয় অধ্যাপক রাজ্জাক স্যারের জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। যদিও তাদের সম্পর্কটা একটি নাটকিয়তার মধ্যদিয়ে শুরু হয় তবে তা আর শেষ হয়ে উঠেনি এই বইটিই যার প্রমান।

প্রথমেই প্রফেসর রাজ্জাক স্যারের জীবন যাপনের যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো তার অতিসাধারণ জীবনযাপন। তিনি বলতেন- “লিভ সিম্পল এন্ড থিংক হাই”।একদিন যখন তিনি হ্যানরি কিসিঞ্জার সাহেবের সাথে দেখা করতে যান তিনি মলিন একটি খদ্দরের পাঞ্জাবী গায়ে জরিয়েই রওনা দেন,এটি দেখে একজন বলেউঠে আরে করছেন কি আপনি এভাবেই কিসিঞ্জার সাহেবের সাথে দেখা করতে যাবেন.? উনি উত্তর দিয়েছিলেন আমার তো আর কোন জামা নাই। এমনকি উনি যে বিছানায় ঘুমোতেন তার একটি পায়া ছিলো ভাঙা এবং সেখানে খুটি হিসেবে বই ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বিলাসিতায় নিজেকে জড়াননি, উনার সাদামাটা জীবনযাপন দেখলে কেউ মনে করবেনা যে তিনি হার্বার্ড দাপানো একজন বাঙালী।

বইটি হাতেনিয়ে যখন যাত্রা শুরু করবেন তখন প্রথমেই আপনি পরিচিত হবেন কবি জসিমউদদীনের সাথে তারপর নজরুল, মুনির চৌধুরী, বিক্ষত দাবাড়ু নিয়াজ মোরশেদ সহ খুব কাছথেকে পরিচিত হবেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সাথে। চিনতে পারবেন তাদের নতুনভাবে।

ছাএ-শিক্ষক সম্পর্ক কতটা মধুর হতেপারে এই বইটিতে তা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখক তার গুরুর কাছে নিয়মিত যাচ্ছেন শিখছেন এবং চেষ্টা করেছেন মুক্ত আহরনের, শিক্ষকও দিচ্ছেন প্রান উজাড় করে।লেখক তার গুরুর কাছে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করছেন,কখনো রাজনীতি, কখনো অর্থনীতি, সমাজতন্ত্র,ধনতন্ত্র, সামন্তবাদ,ধর্ম, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ কোন কিছুই বাদ পড়েনি তাদের আলোচনা থেকে।

বই পড়া সম্পর্কে তিনি বলতেন-“মাই বয় গো এন্ড সোক” অর্থাৎ প্রথমে লাইব্রেরীতে ঢুইক্যাই আপনার টপিকের কাছাকাছি যে যে বই পাওনযায় পয়লা একচোট পইড়া ফালাইবেন। তারপর একটা সময় আইব আপনি নিজেই খুইজা পাইবেন নিজের চলার পথ।তিনি আরো বলতেন” যখন আপনি মনে করলেন আপনি কোন বই পইড়া ফালাইছেন, নিজেরে জিগাইবেন যে-বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় বইটা আবার লেখবার পারেন কিনা। আপনার ভাষার জোর লেখকের মতো ভারি না অইতে পারে,আপনার শব্দভান্ডার সামান্য অইতে পারে তবে মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রডিউস না করবার পারেন, ধইর্যা নিবেন আপনের পড়া অয়নাই।”

আমার শিক্ষাজীবনে ( যতটুকু পাড় করলাম আর-কি) এমন কোন শিক্ষককে পাইনি যে বই পড়ার জন্য এমন করে কথা বলেছেন বা উৎসাহিত করেছেন।ইউনিভার্সিটির এই লেভালে এসেও তিনি তার নিজস্ব সংস্কৃতি ধরে রেখেছিলেন। ঢাকাইয়া ভাষায় ছুঁয়ে গেছেন সবার মন।

স্যারের কিছু কিছু কথা আমার ভালো লেগেছে তার মধ্যে-

১. অতি পরিচয়ে সুন্দর সম্পর্কও মলিন হয়ে যায়।

২.আমাদের শ্রদ্ধাভাজন বয়োজ্যেষ্ঠরা যেভাবে আমাদের উপকার করতে চান,আর আমরা পরবর্তী প্রজন্মের তরুণরা যেভাবে উপকৃত হতে চাই,তার মধ্যে বিস্তর ফারাক।

৩.যে ধরনের কাজে অমানুষিক মানসিক শ্রমের প্রয়োজন হয়, সে ধরনের কাজ করার প্রেরণা আমাদের সমাজ থেকে সংগ্রহ করা একরকম অসম্ভব।

সবমিলিয়ে বইটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে, আমি বলবো বইটি আপনার সংগ্রহে রাখা উচিৎ।

Leave a Reply