১৯৩৮ সালে কোরিয়া তখন জাপান সাম্রাজ্যের অংশ। তখন জাপান সরকার জোর করে১৮ বছর বয়সী ইয়ান কিয়ানজাং কে রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নিযুক্ত করে। যুদ্ধে গিয়ে তিনি ১৯৩৯ সালে রীশিয়ানদের হাতে বন্দী হয় এবং রাশিয়া তাকে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নিযুক্ত করে। এরপর সে জার্মান নাৎসি বাহিনীর কাছে ধরা পড়লে তারা তাকে পাঠায় আমেরিকার বিরুদ্ধে ডি ডে’তে যুদ্ধ করতে এবং সেখানে গিয়েও সে বন্দী হয় আমেরিকানদের হাতে।
মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন দেশের হয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার কারনে তিনি বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগদান করার আগে ইয়ান কিয়ানজাং এর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। তিনি একজন স্থানীয় কেরিয়ান ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একদম শুরুতে তিনি জাপানিদের নিয়ন্ত্রিত মাঞ্চুরিয়া অঞ্চলে বসবাস করতেন।
মাঞ্চুরিয়া অঞ্চলটি জাপানিদের অধিনস্থ হওয়ার সেখানে সবকিছু জাপানিদের নির্দেশ মোতাবেক চলতো। আর তাই ১৯৩৮ সালে ইয়ান কিয়ানজাং কে মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়েছিল।
খালখিন গোলের যুদ্ধের সময় তাকে সোভিয়েত রেড আর্মি বন্দী করে এবং তাকে একটি শ্রম শিবিরে পাঠানো হয়েছিল।
নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সোভিয়েতদের লোকবলের ঘাটতির কারণে, ১৯৪২ সালে তাকে হাজার হাজার বন্দীর সাথে রেড আর্মিতে লড়াইয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।
সোভিয়েতদের সাথে ইয়াং এর যুদ্ধ কার্যক্রম প্রায় এক বছর স্থায়ী হয়েছিল, এই সময়ে তিনি পূর্ব ফ্রন্টে অসংখ্য ব্যস্ততম যুদ্ধের অংশে যুক্ত হয়েছিলেন, বিশেষত খারকভের তৃতীয় যুদ্ধে।
এই যুদ্ধে ইয়ান কিয়ানজাং আবারো যুদ্ধ বন্দী হিসেবে জার্মান নাৎসি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। জার্মানরা আরো অন্যান্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সৈন্য বন্দী করতে গিয়ে একজন কোরিয়ান কে সোভিয়েতদের হয়ে যুদ্ধ করতে দেখে চমকে গিয়েছিলো।
ইয়ান কিয়ানজাং এর গল্পটি এখানে শেষ হলে হয়তো গল্পের আকর্ষণীয় অংশটিই শেষ হয়ে যেতো।
জার্মান নাৎসি বাহিনী অনেক যুদ্ধ বন্দীদের মৃত্যুদন্ড দিতো। অনেক কে নির্যাতন করেই মেরে ফেলতো। নাৎসি রা ইয়ান কিয়ানজাং কে মারলো না। যেহেতু সে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করেছে তাই ফলস্বরূপ, ইয়ান কে ওয়েহরমাখটের 709 ইনফ্যান্টেরি-ডিভিশনে একটি জার্মান অস্টবাটেইলোনে (আক্ষরিক অর্থে: পূর্ব ব্যাটালিয়ন) যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল।
Ostbataillones ছিল নাৎসি জার্মানি নিয়ন্ত্রিত ইউরোপের অসংখ্য অঞ্চলের “স্বেচ্ছাসেবকদের” সমন্বয়ে গঠিত পুরুষদের ছোট ব্যাটালিয়ন। এগুলিকে জার্মান সৈন্যদের বৃহত্তর ইউনিটে ভাঁজ করা হয়েছিল শক ট্রুপ হিসাবে কাজ করার জন্য এবং আরও অভিজ্ঞ ওয়েহরমাখ্ট ব্যাটালিয়নের ব্যাকআপের জন্য।
থার্ড রাইখের জন্য যুদ্ধ করার জন্য যোগদানের পর, ইয়াংকে ডি-ডে এর কিছু আগে ফ্রান্সের কোটেনটিন উপদ্বীপ রক্ষায় সাহায্য করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। যখন D-Day এসে পৌঁছায় তখন মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা সফলভাবে সৈকতে আক্রমণ করে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট বেশ অনেকজন সৈন্য কে আটক করে এর মধ্যে ইয়ান কিয়ানজাং ও ছিলেন। এই বন্দী সেনাদলে জার্মান ইউনিফর্ম পরিহিত আরো ৪ জন এশিয়ান ছিলেন। নির্দিষ্ট করে বললে তারা ছিলেন জাপানি।
ইয়ান কিয়ানজাং জার্মান কিংবা ইংরেজি কোনো ভাষাই জানতেন না, তাই মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথে তিনি বাক্যালাপ করতে পারেন নি। মার্কিনিরা ইয়ান কিয়ানজাং কে ব্রিটেনের একটি POW ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেখানে তিনি সদয় ভাবে যুদ্ধ করে গেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইয়ান কিয়ানজাং মাতৃভূমি তে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বেছে নেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কুক কাউন্টির, ইলিনয়েতে বসতি স্থাপন করেন, আর সেখানেই ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।