মধ্যযুগের ইউরোপে ডাইনি শিকারে প্রচলন ছিলো। ডাইনি মূলত তাদের বলা হয় যারা ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করে থাকে।

ডাইনী-শিকারের প্রাথমিক যুগ ছিল ১৪৮০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে। সারা বিশ্বের অনেক সংস্কৃতিতেই ডাইনী-শিকার হয়ে আসছে প্রাচীন ও আধুনিককাল জুড়ে।মানুষ কুসংস্কারে আক্রান্ত হয়ে ডাইনী ভীতিতে ডাইনীদের বা যারা ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করে তাদের হত্যা করে আসছে অথবা বর্জন করে আসছে। ডাইনী-শিকার এখনও আধুনিক সমাজে চলছে যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ডাকিনীবিদ্যা ও গুপ্তবিদ্যা সমর্থন করে না। ডাইনী-শিকার বলতে এটাও বোঝায় যে আতঙ্কজনিত কারণে আসল ডাইনি বাদে অন্য সন্দেহজনক ভুল মানুষকে খোঁজা।
১৫ শতকে যখন দু’জন মহিলা স্বীকার করেন যে তারা ১৩৮৪ ও ১৩৯০ সালে এক প্রকারের সাদা যাদুতে অংশ নিয়েছে। প্রাথমিক আধুনিক ইউরোপে ডাইনী বিচার শুরু হয় ভালোভাবেই। ১৫ শতকে ও ১৬ শতকে প্রাথমিক ডাইনি বিচার শুরু হয়। তারপর মানুষের ডাইনি ভীতি কমে গেলে বিচার কমে যায়। পরে আবার ১৭ শতকে এটা তুমুলভাবে শুরু হয়। খ্রিস্টান সমাজ ও সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করত ডাকিনীবিদ্যা নগ্ননৃত্য, অরজি সেক্স ও মানুষের মাংস খাওয়া নিয়ে পালিত শয়তানী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে ভালভাবে জড়িত।

জার্মানীতে ডাইনী শিকার শুরু হয় অনেক আগে। দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানীতে ডাইনী শিকারের সফল বছর ছিল ১৫৬১ থেকে ১৬৭০ সাল। ডাইনীদের ধরে পুড়িয়ে মারা হত। সারা ইউরোপে প্রায় ১২,০০০ ডাইনি বিচারের ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ৪০০০০ থেকে ১০০০০০ লোক এসব বিচার সম্পাদন করেছিল। ১৮ শতকে এ ধরনের অভ্যাস কমে যায়। ইংল্যান্ডে শেষ ডাইনি শিকারের ঘটনা ঘটেছিল ১৬৮২ সালে। ১৭১২ সালে জ্যানি ওয়েনহ্যাম ছিল প্রথাগত ডাইনি বিচারের শেষ ঘটনা যেখানে সে ক্ষমা চায় তার কৃতকর্মের জন্য ও মুক্তি পায়।
কিভাবে শনাক্ত করা হতো?
১. তার পোষা প্রাণী আছে কিনা লক্ষ্য করতো
ডাইনি হিসেবে চিহ্নিত নারীর বিড়াল কিংবা অন্য কোনো পোষা প্রাণী থাকবে এটাই তখন ভাবা হতো।যদি সেই নারীর অনেক বেশি বেড়াল কুকুর থাকতো তাকে ডাইনী ভাবা হতো এমনকি যদি সে কখনো প্রতিবেশীর বিড়াল হ্যালো বলে থাকলেও! এমনকি বিচারকার্য চলাকালীন যদি ডাইনী হিসেবে চিহ্নিত নারীর আশেপাশে কোনো মাছি কিংবা ইঁদুর ও আসে তখন সে ডাইনী এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতো।

২. বাইবেলের সাথে ওজন করা হতো
একগাদা বাইবেল এর স্তুপ দাঁড়িপাল্লার একবাসে রাখা হতো অন্যপাশে রাখা হতো ডাইনী বলে অভিযুক্ত নারীকে। যদি ঐ নারীর ওজন বাইবেলের সমান না হয়ে ওজন বেশি বা কম হতো তখন তাকে ডাইনী হিসেবে ধরা হতো। ওজন সমান হওয়া তখন একেবারে অসম্ভব ব্যাপার ছিল।

৩. তারা নিজেদের সাথে কথা বলতো কিনা?
যদি কোনো নারীর বিরুদ্ধে নিজে নিজে কথা বলার অভিযোগ উঠতো তাকে ও অশুভ ডাইনি বলে ধরা হতো। কমবেশি অনেক মানুষই আছেন যারা নিজেরাই নিজেদের সাথে কথা বলেন।
সালেম উইচ ট্রায়ালের সময় একবার সারা গুড নামে এক মহিলাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। তাকে নাকি বিড়বিড় করে নিজের সাথে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। আর সেসব বিড়বিড় করছিলেন প্রতিবেশীদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়।
যদিও সারা গুড দাবি করছিলেন তিনি ধর্মীয় বাণী বিড়বিড় করে পাঠ করছিলেন। কিন্তু তার এসব কথা তখন তাকে বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিলো না। ১৯ জুলাই ১৬৯২ সালে তাকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা হয়।

৪. ধর্মীয় বাণী পাঠ করতে বলা হতো
তাদের কে ধর্মীয় বাণী পাঠ করতে বলা হতো। যদি ধর্মীয় বাণী পাঠ করতে দ্বিধা সংকোচ করতো তাহলে ধরা নেয়া হতো সে শয়তানের উপাসক। আবার যদি কেউ মাত্র একবার পাঠ করতো তাকেও ডাইনি ভাবা হতো।
বিচারের সময় হত্যা করা একমাত্র মন্ত্রী জর্জ বুরোস এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হন।
তিনি যখন তার নির্দোষতা প্রমাণ করার জন্য প্রভুর প্রার্থনা উচ্চারণ করেছিলেন যখন তিনি ফাঁসিতে ঝুলতে চলেছেন।
বিচারের সময় লোকেরা ভেবেছিল যে বিচারক হয়তো ভুল করেছে। কিন্তু কটন ম্যাথার নামের একজন যাজক, বিচার সমাবেশে বলেছিলেন যে শয়তান জর্জ বুরোসকে এই প্রার্থনাটি পাঠ করতে বাধ্য করেছিল যেন সে নির্দোষ বলে মনে হয়।

৫. বিশেষভাবে জিজ্ঞাসা করা হতো তারা কখনও নেটিভ আমেরিকানদের সম্পর্কে স্বপ্ন দেখেছে কিনা!
উইচ ট্রায়ালের সময় সারাহ ওসবোর্ন নামের এক মহিলার বিরুদ্ধে ডাইনি অভিযোগ উঠে। তিনি বলেছিলেন তিনি একবার দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্নে তিনি দেখেছিলেন একজন ভারতীয় তার চুল ধরে তাকে তার বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
সারা ওয়াসবোর্ন তার গ্রামবাসীদের এটাও করতে চাইছিলেন যে তিনি ডাইনি নন তার উপর কেউ তন্ত্র মন্ত্র করা হয়েছে। সারা ওয়াসবোর্নের আর বিচার কখনোই হয়নি। সে বন্দী অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করে।

৬. তাদের বিয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হতো
ডাকিনীবিদ্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া অন্তত কয়েকজন মহিলা ছিলেন যারা একাধিকবার বিবাহিত ছিলেন এবং তাদের অনেক কে তাদের স্বামীর পূর্ববর্তী স্ত্রীদের যাদু করে হত্যা করেছে এটা ভেবেও সন্দেহ করা হয়েছিল।
৭.তিল, জন্মচিহ্ন, দাগ আছে কিনা
এগুলো সবই শয়তানের চিহ্ন। এগুলো শয়তানে চিহ্ন এটা প্রমাণ করতে সেই চিহ্ন কে ব্লেড দিয়ে কাঁটা হতো। যদি সেখান দিয়ে ব্লিডিং হতো এর মানে ছিলো সে ঠিক আছে, সে ডাইনি না। সালেম উইচ ট্রায়ালের সময় কিছু অসাধু ডাইনি শিকারি ডাইনি হিসেবে অভিযুক্ত নারীর সেই চিহ্ন কে নকল ছুড়ি বা বেল দিয়ে কাটার চেষ্টা করতো ফলে রক্ত বের হতো না আর ঐ নারীর ডাইনি এটা নিশ্চিত হতো এবং বিচারে তাকে মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেওয়া হতো।

Reference: History, Wikipedia & BBC