মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য্যই কি একজন মানুষের সৌন্দর্যের মাপকাঠি? মুখে অনেকে এ কথা বললেও পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই বাহ্যিক সৌন্দর্যের মোহে বন্দী!
ম্যারি অ্যান বিভানভান পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত মহিলা নামে উপাধি পেয়েছিলেন। অ্যাক্রোমেগালি নামক একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে, মেরি অ্যান বিভানের মুখের হাড় এবং পেশীগুলি বড় হয়ে গিয়েছিল। যা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বড়!
ম্যারি অ্যান বিভানের গল্প
ম্যারি অ্যান বিভান ১৮৭৪ সালে লন্ডনের নিউহ্যামে জন্মগ্রহণ করেন। মেরি অ্যান বিভান অন্যান্য মেয়েদের মতো সাধারণ মানুষ হিসেবেই জীবন যাপন করছিলেন। মেডিকেলে পড়াশোনা শেষ করার পর, ১৮৯৪ সালে নিজেকে একজন নার্স হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। খুব শীঘ্রই টমাস বেভান নামের এক লোককে বিয়ে ও করে এবং ৪ জন সন্তানের জন্মদান ও করেন।
যাইহোক বিয়ের পর তার সাথে সন্তানদের নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সুখে শান্তিতে দিনযাপন করছিলেন। সে সুখ তার বেশিদিন স্থায়ী হলো না। বেশ কয়েক বছর পর ম্যারি অ্যান বিভান অ্যাক্রোমেগালি নামক একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগটি সম্পর্কে তখনকার চিকিৎসকরা খুব বেশি কিছু জানতেন না।
সময় যতে গড়াতে লাগলো ম্যারি অ্যান বিভানের রোগটির ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা ও বাড়তে থাকলো। মাত্র ৫ বছরের মধ্যে এই রোগ তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দেহের হার পেশিগুলো স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ বড় হয়ে গিয়েছিল। নিজেকেই তিনি চিনতে পারছিলেন না, সময়ের সাথে সাথে অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে তিনি গুটিয়ে নিচ্ছিলেন।
এরই মাঝে ১৯১৮/১৯ সালে হঠাৎ করে ম্যারি অ্যান বিভানের স্বামী টমাস বিভানের মৃত্যু হলো। ৪ সন্তান সহ পরিবারের সকল অর্থ উপার্জনের গুরুদায়িত্ব এসে পরে ম্যারি অ্যান বিভানের উপর।
পরিবারের অর্থ যোগাতে হিমশিম খেতে খেতে ১৯২০ সালে ম্যারি অ্যান বিভানের অর্থ উপার্জনের অদ্ভুত একটি সুযোগ পেয়ে যান। ১৯২০ সালে লন্ডনে একটি অদ্ভুত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতাটি ছিল সবচেয়ে কুৎসিত নারীতে প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতা! আর এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর জন্য বেশ বড় রকমের অর্থ পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। ম্যারি অ্যান বিভান সন্তানদের কথা ভেবে নিজের ও পরিবার সম্মান বিসর্জন দিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন। আর তার নামের সাথে উপাধি যুক্ত করা পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত মহিলা!
কিন্তু ম্যারি অ্যান বিভান এখানেই থেমে থাকেন নি। তিনি এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর বিভিন্ন সার্কাসগুর এর জন্য আকর্ষণীয় ব্যাক্তি হিসেবে পরিণত হতে থাকেন। সন্তানদের জন্য নিজের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (১৯৩৩ সাল অবধি) তিনি ‘ কনি আইল্যান্ডের ড্রিমশো’ তে একজন ‘ফ্রিক শো’ পারফর্মার হিসেবে কাজ করে গেছেন।
সেসময় যারা অ্যাক্রোমেগালি নামক বিরল রোগে ভুগছিল তারা ম্যারি অ্যান বিভান কে নিজেদের অনুপ্রেরণামূলক ব্যাক্তি মানতেন।
ম্যারি অ্যান বিভান পৃথিবীর কুৎসিত মহিলা উপাধি পেলেও আদতে তিনি হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ মা। যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সবটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছেন।