প্রাচীন যুগ থেকেই সিরিয়াল কিলারদে আগমন ঘটে চলেছে। ইতিহাসের নথি ঘাটলে দেখা যায় যীশু খ্রিষ্টের জন্মের বহু আগেই প্রাচীন রোমে লোকাস্টা নামে এক নারী বিষ দিয়ে মানুষদের হত্যা করতেন।
সিরিয়াল কিলাররা তাদের অপরাধ সংঘটিত করার পর ধরাও পড়তেন। বর্তমানে যেসব সিরিয়াল কিলার ধরা পড়েন তাদের তুলনায় অতীতের ধরা পড়া সিরিয়াল কিলারদের মৃত্যু অনেক বেশি কঠোর ছিলো।
সিরিয়াল কিলাররা মূলত তাদের হত্যার ধরণ ও নৃশংসতার কারনে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের নৃশংসতার ছাপ রেখে যান। তবে বেশ কিছু সিরিয়াল কিলাররা তাদের নৃশংসতা নয় বরং ধরা পড়ার পর তাদের তাদের নিজেদেরই নৃশংস মৃত্যুদন্ডের কারণে আজো ইতিহাসের পাতায় চর্চিত বিষয় হয়ে আছেন।
আজ এমনই এক সিরিয়াল কিলারের বিভৎস মৃত্যুর কথা শোনাবো। আর এজন্য আমাদের ১৯ শতকের মরকেশ দেশে ফিরে যেতে হবে। (মারাকেশ এর অধুনা নাম মরক্কো, সেসময় মরক্কো ফ্রেঞ্চদের অধিনে থাকায় ফ্রেঞ্চরা তাদের ভাষায় মারাকেশ বলতো।)
হাজ মোহাম্মদ মেসফিউই মরক্কোর সিরিয়াল কিলার ছিলেন। পেশায় তিনি ছিলেন একজন জুতার কারিগর। মরক্কোর তখনকার প্রধান শহর মারাক্কেশে তার নিজস্ব জুতার দোকান ছিলো। ১৯ শতকে মারাকেশ কে আফ্রিকা মহাদেশের বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসাবে দেখা হতো, তাই প্রচুর দেশি ও বিদেশি বণিক আসতেন। বাণিজ্যিক অঞ্চল হওয়ার এখানে অপরাধের পরিমান ও সংঘটিত হতো প্রচুর।

১৯০২ সালে এই শহর থেকে ১০ জন মহিলা রাতারাতি নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের নিখোঁজ হওয়ার পর কোনো চিহ্ন ও খুঁজে পায়নি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। ধারণা করা হচ্ছিল শহরে বাণিজ্য করতে আসা বণিক বা কোনো পর্যটকের দ্বারা এই নারীরা অপহরণ হয়ে থাকতে পারেন।
হাজ মোহাম্মদ মেসফিউই তখন শহরের মানুষের কাছে ভালোভাবেই পরিচিত ছিলেন। কারণ সেই সময়ে শহরে জুতার কারিগর ছিলো গুটিকয়েক। যাই হোক তাদের কেউই তাকে মন থেকে পছন্দ করতো না। তার হাবভাব দেখে মানুষজনের রহস্যময় মনে হতো। মনে হতো কিছু না কিছু একটা সে আড়াল করছে।
এর ঠিক ৪ বছর পর ১৯০৬ সালে আবারো একসাথে অনেকগুলো মহিলা নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের সংখ্যা টা এবার ৩০ জন। এবার শহরে তদন্ত পুলিশ হন্য হয়ে খোঁজতে খোঁজতে হাজ মোহাম্মদ মেসফিউই এর জুতার দোকান থেকে নিখোঁজ ২৬ জন নারীর লাশ খুঁজে পায়। আর বাকি ৪ জন মহিলার লাশ খুঁজে পায় তার বাড়ি থেকে। ধরা পড়ার পর পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে শারীরিক প্রহার শুরু করলে, সে নিজের সকল অপকর্মের কথা স্বীকার করে। স্বীকারোক্তিতে সে বলেছিলো, সে নারীদের রাতের খাবারের জন্য তার বাড়িতে নিয়ে যেতো এবং পরে তাদের মাদক পান করিয়ে হত্যা করতো।
মেসফিউইকে সর্বমোট ৩৬ জন মহিলাকে হত্যার জন্য আদালত তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে মৃত্যুদণ্ডের জন্য আদেশ দিয়েছিল। ১৯০৬ সালের ২ মে তারিখে আদালতের রায় সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো। সে সময় মরক্কো তে অপরাধী কে ক্রুশবিদ্ধ করে মৃত্যু দেওয়া হতো, তাই ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু বিদেশী কূটনীতিক মররোকান সরকারকে বুঝিয়েছিলেন যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বিংশ শতাব্দীর জন্য অত্যন্ত নৃশংস, তাই তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তিনি মারা না যাওয়া পর্যন্ত তাকে প্রাচীর দিয়ে আটকে রাখা উচিত। প্রাচীর বলতে তাকে এমন ভাবে আটকে ফেলতে হবে যেখানে কোনো আলো বাতাস ও প্রবেশ করতে পারবে না।

এই পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তিকে বন্দী করলে কিছুদিনের মধ্যেই বন্দী অনাহার বা অক্সিজেন ও আলোর অভাবে মারা যাবে। ১৯০৬ সালের ১১ জুন মেসফিউইকে জীবিত অবস্থায় দেয়ালে বন্দী করা হয়েছিল। সেই সময়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিনি দুই দিন অনবরত কান্নাকাটি করেছিলেন দেয়ালের ভেতর এবং কয়েকদিন বাদে তিনি মারা যান।
সমসাময়িক ইতিহাসবিদরা বলছেন যে ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা নেই; যেখানে মানুষকে জীবন্ত দেয়ালে বেঁধে রাখা হয়েছে এবং সবশেষে তার মৃত্যু হয়েছে।