বাচ্চা ছেলেটির জন্ম হয়, ১৭৮৩ সালের মে মাসে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিনস্ত ভারতের বাংলায় এক গরীব কৃষকের ঘরে। ছেলেটির নাম কি ছিলো তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। জন্মের সময় ছেলেটির মাকে জন্মদানে সাহায্য করা ধাত্রী ছেলেটির চেহেরা দেখে মারাত্মক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে যায়। ভয়ে তিনি তার পাশে থাকা আগুনের উপর নবজাতক শিশুটিকে ফেলে দেন। সৌভাগ্যক্রমে শিশুটিকে বেশি যন্ত্রণার শিকার হতে হয়নি, শরীরের অল্প কিছু স্থান তার পুড়ে গিয়েছিলো।
মেডিকেলের তথ্যমতে প্রতি ৫০ লক্ষ শিশু জন্মানোর সময় মাত্র দুটো শিশুর ক্ষেত্রে এমন কন্ডিশন হতে পারে। তবে এদের বেশিরভাগই জন্মের পরপরই মারা যায়।
ছেলেটির আগুনে পুরে যাওয়া শরীর নিরাময়ের পর তার বাব মা তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন; এবং তাকে অবিলম্বে তাকে প্রদর্শনী হিসেবে ব্যবহার করে টাকা পয়সা রোজগার করতে থাকেন। যারা দেখতে চাইতো তাদেরকে টাকা দিয়ে দেখতে হতো। ছেলেটি তার পরিবারের জন্য টাকা পয়সা আয়ের মাধ্যম হয়ে উঠে।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেটির কথা প্রায় পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার ধনী ব্যক্তি, অভিজাত ও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছেলেটিকে দেখতে নিজেদের গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে যেতেন। অনেকে তাকে ভাড়া করে আনতেন নিজেদের ঘরোয়া পার্টিতে মানুষদের দেখাতে।
এই খবর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের কানেও চলে যায়। পরে তারা বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে ছেলেটিকে চুরি করেছিল।
ছেলেটির শারিরীক বর্ণনা
ছেলেটির দুটো মাথা ছিলো, তবে দুটো মাথাই ছিলো দুটো আলাদা সত্ত্বা। ছেলেটির দ্বিতীয় মাথাটি তার প্রথম মাথা থেকে বেরিয়েছিল, দেখে মনে হতো মাথার উপর কিন্তু একটার স্তুপ।
ছেলেটির মাথা দুটো স্বাভাবিক শিশুদের মাথার তুলনায় কিছুটা বড় ছিলো। আর দ্বিতীয় মাথাটি ছিল প্রথম মাথাটির আকৃতির তুলনায় কিছুটা ছোট। দ্বিতীয় মাথাটি প্রথম মাথাটির তুলনায় অসম্পূর্ণ ছিলো, ছেলেটির দ্বিতীয় মাথাটির চোখ এবং কান সম্পূর্ণভাবে গঠিত হয়নি। আর দ্বিতীয় মাথাটির জিহ্বা ও চোয়াল ছিলো স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেকটাই বিকৃত।
যদিও দ্বিতীয় মাথাটি খুব কমই সচেতন ছিল, এটি মাঝে মাঝে অন্য থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করেছিল।
যখন শিশুটি হাসত বা কাঁদত তখন কখনো কখনো দ্বিতীয় মাথাটি তার সাথে তাল মেলাতো না। মনে হতো এটি তার শরীর না, তার আলাদা একটি ব্যাক্তিত্ব আছে।
প্রথম মাথাটি ঘুমিয়ে থাকলে, দ্বিতীয় মাথাটি এমনভাবে তার চোখ খেলা রেখে চোখ ঘোরাতো যেনো সে তার চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছে। তবে বেশ কিছু কার্যক্রম সে তার অন্য মাথার মতেই একরকম ভাবে কাজ করতো।
মজার ব্যাপার হল, যখন ছেলেটিকে প্রথম মাথা দিয়ে খাওয়ানো হত, তখন তার দ্বিতীয় মুখের জিহ্বা লালা নিত। তখনকার প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেন যে দ্বিতীয় মাথাটি সহজাতভাবেই মুখ দিয়ে স্তন পান করতে।
মেডিকেল কারণ
ছেলেটির এমন অবস্থার পেছনের কারন ছিলো ক্রেনিওপ্যাগাস প্যারাসিটিকাস নামে এক কন্ডিশন। এটি মূলত হয় গর্ভে যমজ সন্তানের বিকাশের সময় ভ্রূণ বিভক্ত না হওয়া।
এর জন্য শুধুমাত্র একটি কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে ‘the removal of the parasitic twin’। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরনের অস্ত্রোপচার প্রাণঘাতী। কারণ মাথার ধমনীগুলো এতটাই পরস্পর যুক্ত যে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে, ক্র্যানিওপ্যাগাস প্যারাসিটিকাস সহ একটি মেয়ের উপর এই পদ্ধতির চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সে অস্ত্রোপচারে এগারো ঘন্টার মাথায় মারা যায়।
২০০৫ সালে মিশরে একটি ছেলের জন্য একই ধরনের পদ্ধতি করা হয়েছিল, কিন্তু সে মস্তিষ্কের সংক্রমণের কারণে মারা গিয়েছিল।
তবে আমাদের বাংলায় দু মাথা নিয়ে জন্মানো ছেলেটির অন্য কোনো শারিরীক অসুস্থতা ছিলো না। তবে দূর্ভাগ্যবশত তার জন্মের মাত্র চার বছর পর একটি কোবরার কামড়ে তার মৃত্যু হয়।
ছেলেটির মৃতদেহ চুরি
ছেলেটিকে কবর দেওয়ার পরপরই, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন এজেন্ট তার কবর লুট করে। ছেলেটির মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করার পরে, তারা আবিষ্কার করেছিল যে তার দুটি পৃথক মস্তিষ্ক রয়েছে এবং উভয়ই একই সিস্টেমের মাধ্যমে পুষ্টি পেয়েছে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে, ছেলেটির শরীর শুষ্ক হয়ে যায় এবং তার মাথার খুলিটি এভারার্ড হোম নামে একজন ইংরেজ সার্জনের কাছে উপহার হিসেবে পেশ করা হয়।
আজ, লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনস-এর হান্টেরিয়ান মিউজিয়ামে ছেলেটির দুই মাথার খুলিটি এখনও প্রদর্শিত হচ্ছে।
Resources
- The Two-headed Boy and Other Medical Marvels by Jan BondesonCraniopagus Parasiticus:
- A Case Illustrating its Relationship to Craniopagus Conjoined Twinning by Aquino et. al
- Two-headed Baby Dies After Surgery from CBS News