You are currently viewing প্রাচীন রোমের পাবলিক টয়লেট: রোমানরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে ভয় পেতেন

প্রাচীন রোমের পাবলিক টয়লেট: রোমানরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে ভয় পেতেন

প্রাচীন রোমের মানুষরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে ভয় পেতো। শুধু ভয়ই পেতো না কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই রোমানরা টয়লেট থেকে জীবিত বের হওয়ার জন্য যাদু মন্ত্র পাঠ করতো।

যখন প্রাচীন সাম্রাজ্যগুলোর কথা বলি রোম সাম্রাজ্যের নাম উপরের দিকে থাকে। প্রায় ২ হাজার বছরের এই সাম্রাজ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর। তাদের এখনো কত-শত বিশাল স্থাপত্য হাজার বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

রোমানরা তাদের শহরের পাবলিক টয়লেট এর জলের সরবরাহের জন্য শহর থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরের ঝর্ণার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিল ড্রেনেজ ব্যস্থার মাধ্যমে। এই জলপ্রবাহিত ড্রেন ছিল রোমান শক্তির প্রতিক। ঝর্ণার প্রবাহিত এই জলের ফোয়ারা রোমানরা তাদের পান, স্নান এবং টয়লেট শেষে পশ্চাৎদেশ পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতো। ২০০০ বছর আগে পাবলিক টয়লেট প্রবাহিত জলের মাধ্যমে ব্যবহার সত্যিই চমৎকার ও আশ্চর্যজনক ঘটনা।

“ রোমানদের পাবলিক টয়লেট এর মতো পাবলিক স্নানাগার ও ছিলো। পাবলিক স্নানাগার গুলো আরাম আয়েশে পূর্ণ হলেও রোমান শহরের সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি ছিল পাবলিক টয়লেট।”

একটি পাবলিক টয়লেটের প্রবেশদ্বারে একটি ফ্রেস্কোতে একজন ব্যক্তি নিজেকে স্বস্তি দিচ্ছেন এবং দেবী আইসিস তাকে রক্ষা করছেন। শিলালিপিতে ল্যাটিন ভাষায় বলা হয়েছে Cacator cave malu যার অর্থ শয়তানের মন্দ দৃষ্টি হতে সাবধান। Image credit: Wikimedia commons

রোমান পাবলিক টয়লেট গুলো একটি বিল্ডিং এর মধ্যে তৈরি করা হতো। মলত্যাগ করার জন্য ছোটখাটো অনেকগুলো গর্ত তৈরি করা হতো এছাড়াও বসার জন্য অনেক জায়গা ছিল।

টয়লেটের নীচে দিয়ে ঝর্ণা বা জলাশয় থেকে আনা জল প্রবাহিত হতো ফলে প্রস্রাব এবং মল সাথে সাথেই পরিষ্কার হয়ে চলে যেত।
তাত্ত্বিকভাবে এটি ছিলো অসাধারণ একটি সৃষ্টি এতো অসাধারণ সুবিধা থাকার পরেও রোমানরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে ভয় পেত।
তারা পাবলিক টয়লেট থেকে জীবিত বের হওয়ার জন্য মন্ত্র এবং লাকি চার্ম ব্যবহার করত।

ইতালির ওস্টিয়াতে রোমান পাবলিক টয়লেটের অবশিষ্টাংশ Image credit: Wikimedia commons

প্রথম দিকে, পাবলিক টয়লেটগুলি খুব অন্ধকার ছিল। সেই বিল্ডিং গুলোর ছাদ ছিল খুবই নিচু এবং জানালাগুলো খুব ছোট ফলে বাহিরের আলো খুব একটা প্রবেশ করতে পারতো না।

টয়লেটগুলো কেউ কখনো পরিষ্কার করতো না। টয়লেট এর মূত্র ত্যাগ করার গর্ত ছিলো খুবই ছোট ফলে মল ত্যাগ করতে গিয়ে গর্তে ফেলতে গিয়ে উপরেই মলত্যাগ করে বসতো। বতমানে প্রত্নতাত্ত্বিকরা যেসব রোমান পাবলিক টয়লেট গুলো আবিষ্কার করেছেন সবগুলোই সাদা মার্বল পাথরে তৈরি ছিলো। কিন্তু বেশিরভাগ রোমানদের সেই সাদা মার্বেল পাথরের টয়লেট চোখে দেখার ভাগ্য হয়নি। ময়লা ও নোংরা করে তার রঙই পাল্টে ফেলেছিল।

আরো পড়ুন:  এলেন স্যাডলার: যে মেয়েটি দীর্ঘ ৯ বছর ঘুমিয়েছিল

সবচেয়ে খারাপ জিনিসটি ছিলো টয়লেট করতে গিয়ে মানুষ ইঁদুর, সাপ কিংবা মাকড়শার আক্রমণের শিকার হতো। কারণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে রোমান পাবলিক টয়লেট গুলো সেগুলোতে পূর্ণ ছিল।

ময়লা আবর্জনা ও পচনশীল নর্দমা থেকে মিথেন গ্যাস সৃষ্টি হতো ফলে মাঝে মাঝে পাবলিক টয়লেট গুলোতে আগুনে বিস্ফোরণ হওয়ার ঘটনা ও ঘটতো।

রোমান বাট ব্রাশ

রোমান টয়লেট ব্রাশ জাইলোস্পনজিয়াম Image credit: Wikimedia commons

ইদুর, সাপ কিংবা মিথেন গ্যাসের বিস্ফোরণের চেয়েও বিপজ্জনক ছিল জাইলোস্পংগাম (কাঠিতে থাকা স্পঞ্জ)।

জাইলোস্পনজিয়াম ছিল একটি মৃদু এবং সহজ হাতিয়ার যাতে একটি লাঠিতে রাখা একটি সামুদ্রিক স্পঞ্জ ছিল। এটি মলত্যাগের পরে মলদ্বার পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হতো।

সহজ ভাষায় জাইলোস্পনজিয়াম ছিলো রোমানদের বাট ব্রাশ। যদি একটু রসিকতা করে বলি জাইলোস্পনজিয়াম হল একটি আধুনিক টয়লেট ব্রাশ, যা (সৌভাগ্যক্রমে) শুধুমাত্র টয়লেট পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়!

টয়লেট শেষে জাইলোস্পনজিয়ামকে নোনতা জল বা ভিনেগার ভর্তি একটি বালতিতে রেখে দেয়া হতো যাতে পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যক্তিরা এটি ব্যবহার করতে পারে।
বলা বাহুল্য, জাইলোস্পনজিয়াম ভাগাভাগি করে ব্যবহারের ফলে সবাই কৃমি রোগে আক্রান্ত হতো।

রোমান পাবলিক টয়লেট Image Credit: pinterest.com

আমাদের শরীর প্রতিদিন গড়ে ১২৮ গ্রাম (৪.৫ আউন্স) মলত্যাগ করে। রোম শহরের উচ্চতায় ১ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিক ছিল।
সরল গণিত আমাদের বলে যে রোম শহরে প্রতিদিন গড়ে ১২৮ টন মল তৈরি হয়েছিল!

ধনী রোমানরা তাদের রাস্তায় মল দেখতে চাইতো না, তাই তারা পাবলিক টয়লেট তৈরি করেছিল।
বলা বাহুল্য, রোমান উচ্চ শ্রেণী পাবলিক টয়লেটে পা রাখেনি। এগুলো ছিল নিম্নবিত্ত ও দাসদের জন্য। তবে মাঝেমধ্যে অবশ্য তারা ব্যবহার করতো। পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের আগে ধনী রোমানরা তাদের দাস বা চাকরদের পাবলিক টয়লেটে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখতো জায়গা গরম করার জন্য যাতে বসলে তাদের পাছুতে ঠান্ডা না লাগে। যেহেতু পাবলিক টয়লেট গুলো তৈরি হতো মার্বেল পাথর দ্বারা যা সবসময় থাকতো হিম ঠান্ডা।

সাধারণত ধনী রোমানরা তাদের ভিলায় ল্যাট্রিন ব্যবহার করত না, পরিবর্তে, তারা পাত্র ব্যবহার করত যা মল ত্যাগ এবং প্রস্রাব করার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল।

ক্লোয়াকা ম্যাক্সিমা ছিল একটি অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়

ইতালির রোম শহরের ক্লোকা ম্যাক্সিমা এর অবশিষ্টাংশ Image credit :imperiumromanum.pl

রোমান ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণগুলির মধ্যে একটি ছিল রোমের ক্লোয়াকা ম্যাক্সিমা। পাবলিক টয়লেট ও রোমের সকল নর্দমা এই ড্রেনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতো।
রেমান লেখক প্লিনি দ্য এন্ডার এড় সম্পর্কে বলেছিলেন এটা ছিলো প্রাচীন রোমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জিনিস।

আরো পড়ুন:  ভিক্টোরিয়ান যুগের নারীদের উদ্ভট রূপচর্চা

ক্লোয়াকা ম্যাক্সিমা রোমের নাগরিকদের কাছে পবিত্র ছিল। নর্দমাটি মানুষের বর্জ্য দক্ষতার সাথে টাইবার নদীতে সরাতে সক্ষম হয়েছিল। এটি কয়েক শতাব্দীর ভূমিকম্প, নতুন বিল্ডিং প্রকল্প এবং বন্যা সহ্য করেছে।
এমনকি পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরেও, নর্দমাটি তার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য পূরণ করেছিল। ১৮ শতকে, ক্লোয়াকা ম্যাক্সিমা একটি পর্যটক আকর্ষণ হয়ে ওঠে।

সবশেষে কিছু কথা

যদিও প্রাচীন রোমানরা দক্ষ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মতো অসাধারণ প্রকৌশল কৃতিত্ব অর্জন করেছিল, তবে তাদের পাবলিক টয়লেট এর স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে ছিলো খুবই ঝুকিপূর্ণ।
রোমান পাবলিক টয়লেটগুলি সংক্রামক রোগের প্রজনন ক্ষেত্র ছিল এবং রোমান শহরগুলির জন্য উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেছিল।

Featured Image Credit: historicaldis.ru