টমাস হার্ডি ভিক্টোরিয়ান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক। টমাস হার্ডির সময়টায় ইংল্যান্ডের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিশাল পরিবর্তন এসেছিল। কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে সরে গিয়ে ইংল্যান্ড তখন প্রায় পুরোপুরি শিল্পবিপ্লবের মধ্যে ঝুঁকে পড়েন। মানুষজন কৃষি কাজ ছেড়ে দলে দলে শহরে পাড়ি জমাতে থাকে আর বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগদান করেন।
শিল্পবিপ্লবের ফলে তখনকার ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডের মানুষের মধ্যে শ্রেণীগত বৈষম্য আরো বড় আকার ধারণ করে। শিল্প বিপ্লবের ফলে একদল নতুন পয়সাওয়ালা শ্রেণীর মানুষের উদ্ভব ঘটেছিল। এছাড়া মানুষের মধ্যেকার ধর্ম ও নৈতিকতার অবক্ষয় ও ঘটেছিলো ব্যাপক হারে। টমাস হার্ডির উপন্যাস বা লেখায় এই ভিক্টোরিয়ান যুগের সামাজিক ব্যাবস্থা ও রূপের চিত্রই বার বার ফুটে উঠেছে।
টেস অব দ্য ডারবারভিলস উপন্যাসেও আমরা সেইসব বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই, যা তখনকার যুগে মানুষের মধ্যে বিদ্যমান ছিলো। এখানে রয়েছে প্রেম ও জটিলতা। সমাজের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য। মানুষের মধ্যে ধর্ম ও নৈতিকতার অবক্ষয় সহ বিভিন্ন বিষয়।
উপন্যাসের শুরুতেই দেখতে পাই জন ডার্বিফিল্ড মাঝবয়সী এক লোক যার সাথে এক যাজকের দেখা হয়। সেই যাজক তাকে স্যার বলে সম্বোধন করায়, তার কারণ জানতে চাইলে তিনি জন ডার্বিফিল্ড কে বলেন; তিনি একজন ইতিহাসবেত্তা। তিনি জানতে পেরেছেন জন ডার্বিফিল্ড ঐতিহাসিক সম্ভান্ত্র ডার্ভারভিল বাংশের মানুষ। এই কথা শুনে জন ডার্বিফিল্ড বেশ খুশি হয়। সেই সাথে বংশ গৌরবে অহংকারের সাথে তার বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে তিনি তার স্ত্রীর সাথে পুরো ঘটনাটি বলেন। তিনি বলেন তারা কোনো সাধারণ মানুষজন নয় তারা বিখ্যাত ডার্ভারভিল বংশের মানুষ।
জন ডার্বিফিল্ডের বড় মেয়ের নাম টেস ডার্বিফিল্ড। তিনি এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। টেস সেদিন মে দিবসের অনুষ্ঠানে গ্রামের একটি মাঠের নৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সেদিন অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ার সহ তারা ৩ ভাই সেই নাচে অংশ নিয়েছিলো। নাচে অ্যাঞ্জেল টেস কে নাচের সঙ্গী হিসেবে বেছে না নিয়ে অন্য একজন সুন্দরী মেয়েকে বেছে নেয়। এতে টেস কিছুটা মনকষ্ট পায়, কারন অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ারকে তার দেখতে ভালো লেগেছিল।
নাচের অনুষ্ঠানের পর টেচ বাড়ি ফিরে আসে এবং বাড়ি ফিরে এসে জানতে পারে তার বাবা নতুন বংশ পরিচয় উম্মেচনের খুশিতে মদ পান করতে পানশালায় চলে গেছে। তার বাবা বাড়ি ফিরে এলে জন ডার্বিফিল্ড তার মেয়ে পরামর্শ দেয় যে, যেহেতু তারা বিখ্যাত ডার্ভারভিল বাংশের বংশধর। তারা যদি ডার্ভারভিল বংশের অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের সাহায্যে নিজেদের দুর্দশা থেকে মুক্তি পায়, তাহলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না। টেস তার বাবার প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করে। সে তার প্রিয় গ্রাম মার্লট ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না।
ডার্বিফিল্ড পরিবার দারিদ্র্যপীড়িত একটি পরিবার। তাদের পরিবারের আয়ের উৎস প্রধানত কৃষিকাজ ও ঘোড়ার গাড়ি চালানো থেকে। জন ডার্বিফিল্ড তখন মদ খেয়ে পুরোপুরি মাতাল অবস্থায় রয়েছেন। আর পণ্যগুলো রাতের মধ্যেই কাস্টারব্রিজ মার্কেটে পৌছাতে হবে। আর তাই টেস তার ছোট ভাই আব্রাম কে সাথে নিয়ে তাদের পরিবারের কৃষি পণ্য, প্রধানত মাখন (butter), বিক্রি করতে তাদের ঘোড়া প্রিন্স কে সাথে যাচ্ছিলেন। পণ্য বাজারে দিয়ে ফেরার পথে তাদের ঘোড়াটি একটি দ্রুতগামী ডাক গাড়ির সাথে আঘাত লেগে প্রিন্সের সেখানেই মৃত্যু হয়। গাড়ি চালানোর সময় ক্লান্তিতে টেস ও তার ভাই দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। প্রিন্সের মৃত্যুর পর টেসের পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠে। তাদের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। টেস প্রিন্সের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দোষারোপ করে; সেই সাথে অপরাধবোধে ভুগতে থাকে।
পরিবারের এমন অর্থনৈতিক সংকটের মুখে টেস তার বাবার সেই পুরনো প্রস্তাবে রাজি হয়। সে জানতে পারে বেশ কয়েক মাইল দূরে ডার্ভারভিল নামের এক ধনী পরিবার থাকে। টেস কাজের জন্য সেখানে যায় সেখানে গিয়ে তরুণ যুবক অ্যালেক ডার্ভারভিলের সাথে তার দেখা হয়। টেস বলে সে ডার্ভারভিল বংশের লোক তবে উচ্চারণের কারনে তাদেরকে এখন লোকে ডার্বিফিল্ড বলে ডাকে। এ প্রশ্নের মুখে অ্যালেক উত্তর দেয়, টেসদের সাথে তাদের কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। এই ডার্ভারভিল পদবি তার বাবা অবসর নেবার সময় গ্রহণ করেছিলো। অ্যালেক তাকে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখায় তাকে বিভিন্ন ফলমূল ও গাছ থেকে পেরে দেয়। সেই সাথে অ্যালেক টেসকে খারাপ স্পর্শ করবার চেষ্টা ও করে। টেস তা বুঝতে পারে এবং তার থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখে। যাবার সময় অ্যালেক টেস কে বলে সে তার মায়ের সাথে তার কাজের ব্যাপারে কথা বলবে।
বাড়ি ফিরে যাবার পরপরই টেস মিসেস ডার্ভারভিল থেকে একটি চিঠি পায়। সেই চিঠিতে বলা হয় টেসকে তারা তাদের হাস-মুগী ও পশুপাখির দেখাশোনা করার জন্য কাজে নিতে চায়। তবে তাকে সেখানেই কাজ করতে হবে একই সাথে সেখানেই থাকতে হবে। টেস কে নেওয়ার জন্য অ্যালেক পরের দিনই তাদের বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে আসে। টেস সেই বাড়ি যাওয়ার পর দেখতে পায় সেই বাড়ির কর্ত্রী অন্ধ মানুষ। টেস বুঝতে পারে এই চিঠি আসলে এই মহিলা লেখেনি মহিলার নামে কারসাজি করে চিঠি পাঠিয়েছে অ্যালেক।
টেস এক বাজারের দিন বাড়ির অন্যান্য কর্মচারীদের সাথে চেস্টারব্রিজ মার্কেটে গিয়েছিলো। তার সাথে অনেক মেয়ে ও পুরুষও ছিলো। ফেরার সময় অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। আর সাথে থাকা পুরুষরা মাতাল হয়ে উদ্ভট আচরণ করছিলো। সাথে থাকা মেয়েগুলোও টেসকে পছন্দ করতো না, কারন অ্যালেক তাদের মধ্যে কাউকে না বরং টেসকে পছন্দ করে। তারা সকলে টেসের সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলো। সেই সাথে অনেক রাত ও হয়ে গিয়েছিলো। সেই সাথে টেস মাতাল লোকগুলোর সাথে বাড়ি ফিরতে সাহস পাচ্ছিলো না। সে সময় অ্যালেক এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়ে যায়। অ্যালেক তার সাথে করে ঘোড়ায় নিয়ে বাড়ির পথে চলতে শুরু করে। কিন্তু অ্যালেকের মধ্যে ছিলো দুষ্টু ভাবনা সে পুরনো জনমানবহীন এক ভিন্ন রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করে।অ্যালেক ও টেস দুজনেই রাতের কুয়াশার ধূম্রজালে হারিয়ে যায়। অ্যালেক টেসকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয় কিন্তু টেস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। আর তাই জনমানবহীন জায়গায় অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অ্যালেক টেসের সতিত্ব হরণ করে।
এই ঘটনার পর টেস তার গ্রাম মারলটে ফিরে যায়। মারলটে ফিরে যাবার পর সে তার মাকে সবকিছু খুলে বলে। তার মা এই ব্যাপারটাকে বেশ সাধারণ ভাবেই একটি দূর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেয়। বেশকিছুদিন কাটার পর টেস বুঝতে পারে সে গর্ভবতী হয়ে পরেছে। টেস একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। এ সময়ে গ্রামে টেস সম্পর্কে বিভিন্ন রকম গল্প চর্চা হতে থাকে, যেহেতু টেসের সন্তানের পিতৃ পরিচয় অজানা। টেস এজন্য মানুষের মুখোমুখি না হতে চার্চে যাওয়া বাদ দিয়ে দেয়। কিছুদিন বাদেই টেসের পুত্র অসুস্থ হয়ে মারা যায়। টেস তার মৃত পুত্রকে খ্রিস্টান পদ্ধতিতে সৎকার করতে পারে না। কারন তাকে খ্রীস্ট ধর্মে দীক্ষিত করা হয়নি কারন তার সন্তানপর পিতৃপরিচয় নেই। টেস তার সন্তানেকে ধর্মীয় প্রথায় নিজে দীক্ষিত করে সৎকার করে। তার সন্তান কে কবর দেওয়া হয় চোর, মাতাল ও আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কবরের পাশে। ছেলের মৃত্যুর পর টেস আরো ভেঙে পড়েন।
ছেলের মৃত্যুর পর টেস একটি ডেইরি ফার্মে কর্মচারী হিসেবে যোগ দেয়। সেখানে সে সুখের সাথে দিন কাটাচ্ছিলো। যা তার গ্রাম থেকে বেশ দূরে। এখানে কেউ তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনে না সমালোচনাও করে না। এখানে আসবার পর টেসের সাথে দেখা হয় অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ারের। এই অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ার টেসের পূর্ব পরিচিত। যার সাথে অনেকদিন আগে টেসের গ্রামের নাচের উৎসবে দেখা হয়েছিলো। অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ার একজন সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে। অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ার এখানে কর্মী হিসবে নয়, সে এখানে এসেছে ডেইরি ফার্মের কাজ শিখতে। ভবিষ্যতে সে একটি ডেইরি ফার্মের ব্যবসা শুরু করবে।
টেস অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ার কে পছন্দ করতে শুরু করে কিন্তু অ্যাঞ্জেলকে সে কথা বলার সাহস পায় না। কারণ পূর্বে তার সাথে ঘটা দূর্ঘটনার কথা মনে করে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যাঞ্জেল ক্লেয়ার ও টেস কে পছন্দ করতে শুরু করে, ইতোমধ্যে তার পরিবার তার জন্য মার্সি শ্যান নামে একটি মেয়কে পছন্দ করেছে। অ্যাঞ্জেল তার বাবা মাকে জানিয়ে দেয় সে এমন একজন মেয়েকে বিয়ে করবে যে তার ফার্মের কাজে সাহায্য করতে পারবে। সে টেসের কথা তাদের কাছে বলে।
ফিরে এসে অ্যাঞ্জেল টেস কে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। টেস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। সে বলে সে তার যোগ্য নয়। টেস এই ঘটনা তার মাকে বললে তার মা বলেন সব গোপন করে অ্যাঞ্জেল কে বিয়ে করে ফেলতে। কিন্তু টেস এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। আর তাই সে সব ঘটনা একটি কাগছে লিখে তা অ্যাঞ্জেলের ঘরের দরজার নিচে দিয়ে তার ঘরে রেখে দেয়। কিন্তু সেই চিঠি আর অ্যাঞ্জেলের চোখে পড়ে না। তা দরজার কার্পেটের নিচেই পরে থাকে। চিঠি দেবার পর অ্যাঞ্জেলকে যখন তার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলতে দেখে টেস ভেবে নেয়, তার এসব ঘটনা বোধহয় অ্যাঞ্জেল স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছে।
টেস ও অ্যাঞ্জেলের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের রাতে তারা একে অপরের স্বীকারোক্তি দেয়। অ্যাঞ্জেল টেসকে জানায় যে, সে একবার লন্ডনে একজন নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। আর এই ভুলের জন্য সে অনুশোচনা করে এবং টেসকে এজন্য ক্ষমা করতে বলেন। টেস আন্তরিকভাবে অ্যাঞ্জেলকে ক্ষমা করে সেই সাথে তার প্রতি নিজের গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করে। এরপর টেস তার অতীত সম্পর্কে অ্যাঞ্জেলকে সত্য বলতে বাধ্য হন। টেস জানায় অ্যালেক ডি’আর্বারভিলের দ্বারা তিনি একবার ধর্ষিত হয়েছিলেন এবং একটি সন্তানেরও জন্ম দিয়েছিলেন। অ্যাঞ্জেল এই সত্য শোনার পর মর্মাহত হন। তিনি টেসকে বলেন যে, যদিও তিনি তাকে ভালোবাসেন, তবে তিনি তার “কঠিন সত্য” গ্রহণ করতে অক্ষম। এরপর, অ্যাঞ্জেল টেসকে শীতলভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে একা ফেলে চলে যান।
তাদের সেই কথোপকথনে টেস অ্যাঞ্জেলকে বলেছিল,
“Forgive me as you are forgiven! I forgive you, Angel.”
উত্তরে অ্যাঞ্জেল বলেছিল, You were one person; now you are another.
অ্যাঞ্জেল টেসকে ছেড়ে ব্রাজিলে চলে যায়, যাবার সময় সে কিছু অর্থ সে টেস কে দিয়ে যায়। টেস ও ডেইরি ফার্মের কাজ ছেড়ে নিজের গ্রাম মার্লোটে ফিরে যায়। টেস অ্যাঞ্জেলকে প্রচুর চিঠি পাঠাতে থাকে। কিন্তু কোনো চিঠির কোনো উত্তর আসে না। আবারো টেসের জীবনে আর্থিক কষ্টের শুরু হয়। তাই টেস আবারো একটি ডেইরি ফার্মে কাজে যোগ দেয়। ইতোমধ্যে সে অ্যাঞ্জেলের পরিবারের সাথে দেখা করতে বাড়ি যায় কিন্তু পথে তাদের মুখে টেসের নামে খারাপ মন্তব্য শুনে টেস দেখা না করেই চলে আসতে থাকে। পথে চলার পথে টেস একজন যাজককে দেখতে পায়। এই যাজকে তার পরিচিত মনে হয়। হ্যাঁ, ঠিক!! এতো সেই অ্যালেক ডার্ভারফিল, যে অনেকদিন আগে তার সর্বনাশ করেছিলো। যার জন্যই আজকে তার এতো হতশ্রী দশা। অ্যালেকও টেসকে চিনতে পারে তার সাথে ভাব করতে করতে চায়। কিন্তু টেস তাকে এরিয়ে এখান থেকে চলে যেতে চায়। অ্যালেক টেস কে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। টেস তা প্রত্যাক্ষান করে এবং বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে টেস অ্যালেককে একটা চড়া মারে।
এরপরেই টেস তার ছোটবোন লিজার মাধ্যমে খবর পায় তার বাবা মা উভয়েই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার মা সুস্থ হলেও তার বাবা জন ডার্বিফিল্ড মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। জন ডার্বিফিল্ডের মৃত্যুর পর তাদেরকে ভাড়া না দিতে পারায় বাড়ি থেকে তারিয়ে দেয়। এসময় অ্যালেক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং সে একই সাথে টেস কে বুঝাতে থাকে অ্যাঞ্জেল আর কখনোই ফিরে আসবে না। মা, ভাই ও বোনদের কথা ভেবে টেস অ্যালেকের সাথে বিবাহ করতে রাজি হয়। শেষ মুহূর্তের এক চিঠিতে টেস অ্যাঞ্জেলকে লিখে অ্যাঞ্জেল তার জীবনের প্রথম প্রেম। কিন্তু কোনো উপায় আর নেই। অ্যালেককে সে কখনোই ভালোবাসেনি। বাধ্য হয়েই তার এই ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
টেসের বিয়ে হয়ে যায় অ্যালেকের সাথে। ওদিকে অ্যাঞ্জেল টেস কে ছাড়া আর থাকতে না পেরে ব্রাজিল থেকে ফেরত আসে। এসেই সে টেসকে খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু কেথাও সে টোকে খুঁজে পায় না। অবশেষে সে টেসের মায়ের খোঁজ পায় তার মা টেসের ঠিকানা দেয়। টেস স্যান্ডবোর্ন নাম সম্ভ্রান্ত এক এলাকায় থাকে। অনেক কষ্টে টেস কে অ্যাঞ্জেল খুঁজে পায়। প্রথম দেখায় টেসের পোশাকআশাক দেখে সে চমকে যায়। টেস তাকে বলে সে এখনো তাকে আগের মতোই ভালোবাসে, কিন্তু এখন সে অ্যালেকের স্ত্রী। টেস এখান থেকে যাবার পর অ্যালেকের সাথে টেসের এ ব্যাপারে বাকবিতন্ডা হয়। টেস বুঝতে পারে অ্যালেক তাকে অ্যাঞ্জেল ফিরে আসবে না এসব বলে তার সাথে প্রতারণা করেছে। এমন এক চরম মুহূর্তে টেস অ্যালেককের গায়ে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে আর সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।
টেস অ্যাঞ্জেল কে সাথে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এদিকে সারা শহর এই খুনের কথা প্রচার হয়ে যায়। পুলিশ টেস কে ধরতে খোঁজ চালাতে থাকে। টেস ও অ্যাঞ্জেল একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে কিছুদিন টেস তার জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ সময়গুলো কাটায়। একদিন সেই পরিত্যক্ত বাড়ির মালিক তাদের দেখে ফেলে। সে পুলিশকে খবর দেয়।
টেস ও অ্যাঞ্জেলস সেখান থেকে পালিয়ে স্টোসহেঞ্জে আশ্রয় নেয়। টেস অ্যাঞ্জেলকে বলে, পুলিশ তাকে ধরার পর তাকে ফাঁসিতে ঝুলাবে। সে যেনো তার ছোটবোন লিজা কে বিয়ে করে নেয়। লিজা খুবই ভালো মেয়ে। একদিন সকালে পুলিশ টেসকে গ্রেফতার করে এবং খুনের অপরাধে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।
টেসের মৃত্যুর সময় কাহিনী উপন্যাসে বর্ণিত হয় দূর থেকে। অ্যাঞ্জেল এবং লিজি-লু স্টোনহেঞ্জ থেকে দূরে একটি পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ফাঁসির খবর পায়। তারা দুজনে দেখতে পায়, দূরের কালো পতাকা উত্তোলিত হয়েছে, যা টেসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার চিহ্ন।
এভাবেই লেখক টমাস হার্ডি উপন্যাসে ট্রাজিক ক্যারেক্টার টেসের মৃত্যুর মাধ্যমে সমাপ্তি টানেন। এই উপন্যাসে তিনি দেখান কিভাবে টেসের মতো একজন বিশুদ্ধ স্নিগ্ধ ও পবিত্র নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জাতাঁকলে পড়ে কিভাবে জীবনের চরম পরিণতির শিকার হন।