You are currently viewing শয়তান (লিও তলস্তয়): প্রত্যেক মানুষের ভেতরে আছে এক অদৃশ্য শয়তান

শয়তান (লিও তলস্তয়): প্রত্যেক মানুষের ভেতরে আছে এক অদৃশ্য শয়তান

আমাদের প্রত্যেকের ভেতরেই রয়েছে এক কামুক শয়তানের বসবাস। কেউ সেই শয়তান কে তার কামনা থেকে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারি আর কেউ হয়তো পারি না। লিও তলস্তয় এই ব্যাপারটা খুব সুন্দর করে এই উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন।

শয়তান লিও তলস্তয়
লিও তলস্তয় Image Source: Advance Literature

উপন্যাসের প্লট লিও তলস্তয় তার জীবন থেকেই নিয়েছেন। ১৮৮০ সালের কথা, তলস্তয়ের বয়স তখ ৫২! তখন এক দুর্দম যৌন আকাঙ্খা তাকে আচ্ছন্ন করে বসেছে। তলস্তয় ডোমনা নামে এক ২২/২৩ বছর বয়সী তরুণীর মোহে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তলস্তয় তার পেছনের ঘুরঘুর করতে থাকেন, একসময় তাদের দুজনের পরিচয় হয় ডোমনা তাকে নির্জন এক বাগানে মিলনের জন্য ডাকেন। যেদিন সেই নির্জন বাগানে দেখা করার জন্য যাচ্ছিলেন তলস্তয়ের তার মেঝ ছেলের ডাকে পিছু ফেরেন। তার ছেলে তাকে পড়া বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ডাক দিয়েছিল, সে তলস্তয়ের থেকে গ্রীক ভাষা শিখছিল। তলস্তয়ের তখন চৈতন্য ফিরে এলো তিনি বুঝলেন এটা তার সংকেত, তিনি গর্হিত অপরাধ করত যাচ্ছিলেন। পরে তরিঘরি করে ছেলের গৃহশিক্ষকের কাছে যান এবং পুরো ঘটনা খুলে বলেন, এবং সেই নোংরা কামুক চিন্তা ভাবনা থেকে নিজের মনকে বের করেন।

উপন্যাসের কাহিনী

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ইউজিন। তলস্তয় ইউজিনকে নিজেকে কল্পনা করেই সৃষ্টি করেছেন। ইউজিন জমিদারের ছেলে শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা। আইনে সে স্নাতক করেছে। বাবার মৃত্যুর পর সে তার বাবার জমিদারির ভার নেয়। ইউজিনরা ২ ভাই বড় ভাই সৈনিক, বছরে ২ মাসের জন্য আসে, বাকি সময় যুদ্ধের ময়দানে।

জমিদারির তখন একেবারে যা তা অবস্থা। বাবা প্রচুর দেনা করে গেছেন, উকিল পরামর্শ দেয় এই জমিদারি করার চেয়ে বরং বেঁচে দেয়া ভালো। ইউজিন ছাড়লো না, পৈত্রিক আভিজাত্য ফিরিয়ে আনতে সে জমিদারিতে দিতরাত খাটতে শুরু করলো।

ইউজিন তার বড় ভাইকে কিছু শর্তের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে জমিদারি পুরোটাই নিজের করে নিলো।দিনরাত খেটেখুটে একসময় তার শরীর যৌন আকাখাঙ্খার ডাক দিলো। শহরে পড়ার সময় তার বহু নারীর সঙ্গেই শারিরীক সম্পর্ক ঘটেছে, কিন্তু এখানে তো সে জমিদার তার তো শহরের মতো সুযোগ এখানে নেই।

ইউজিন তখন দানিয়েল নামে এক বুড়োকে তার মনবাসনার কথা বলে। বুড়ো দানিয়েল তখন স্টপানিডার কথা বলে যার স্বামী বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই শহরে কাজের জন্য থাকে। আর সে নিঃসন্তান। স্টিপানিডার সঙ্গে ইউজিনের শারিরীক সম্পর্ক চলতে থাকে। যখনি কামনা জেগে উঠতো তখনি সে স্ট

ইউজিনের একটা সময়ে লিজা নামে এক তরুণীর সঙ্গে প্রণয় হয়। লিজার সাথে প্রণয়ের পর থেকে ইউজিনের স্টিপানিডার কথা প্রায় ভুলেই যায়। একসময় লিজার সাথে তার বিবাহ হয়। লিজার মা ও ইউজিনের বাড়িতেই বসবাস করতে থাকে। লিজার মায়ের সাথে ইউজিনের মায়ের সম্পর্ক সবসময় খোঁচা খুচির ছিল। ইউজিনের মা চাইছিলেন তার ছেলেকে কোনো ধনীর মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে বড় রকমের পণ নেবেন। এদিকে লিজারা মধ্যবিত্ত। যাই হোক সেসব বিষয়ে কথা না বাড়াই।

লিজা তার স্বামীকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো। স্বামী সম্পর্কে তার ধারণা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ পুরুষ। ইউজিন ততদিনে স্টিপানিডার কথা প্রায় ভুলেই বসেছেন। বিয়ের তখন বছর পেরিয়ে গেছে। লিজা তখন অন্তস্বত্বা এবং গাড়ি দূর্ঘটনায় সে তার সন্তান কে হারায়। লিজা ইউজিন দুজনেই তখন ভেঙে পরে। ভবিষ্যতে লিজা কখনো মা হতে পারবে কিনা সে বিষয়ে লিজার ভয় ডুকে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জানে সে ঠিক আছে। সে মা হতে পারবে।

কয়েক মাস পর লিজা আবারো অন্তস্বত্বা হয়। এবার লিজার প্রতি সে তার মা ও শ্বাশুড়ি সকলেই যত্নআত্তি বাড়িয়ে দেয়। এজন্য বেশ কজন কাজের লোক ও রাখেন এরমধ্যে ছিল স্টিপানিডা। ইউজিন ভয় পেতে থাকে সে হয়তো লিজাকে তাদের সম্পর্কের কথা বলে দেবে। বুড়ো দানিয়েল তাকে বলে, সে জমিদার স্টিপানিডার কখনোই অতো সাহস হবে না।

সময় বাড়ার সাথে সাথে আবারো সেই কামনা জেগে উঠে ইউজিনের, যেমনটা বিয়ের আগে হতো। প্রতিদিন সে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলো। একসময় ইউজিন তার মামার কাছে তার বাসনার কথা বলেন, মামা তাকে পরামর্শ দেয় সে বরং দূর থেকে ঘুরে আসুক। হয়তো তার মনের পরিবর্তন হবে। ইউজিন তার স্ত্রী কে নিয়ে ২ মাস ক্রিমিয়ায় ঘুরে আসে।

ইউজিন কন্যাসন্তানের বাবা হন। ঘুরে আসার পর ইউজিন তার মামাকে জানায় সে আর তেমন আকাঙ্খা অনুভব করছেন না স্টিপানিডার প্রতি। বেশ কয়েক মাস ভালোই চলছিল, এপর আবার শুরু হলো সেই তীব্র কামনা, ইউজিন কে দেখা যেতো স্টিপানিডার জন্য সেই আগের জায়গায় অপেক্ষা করছেন যেখানে তারা মিলিত হতো। ইউজিন মনে করতো স্টিপানিডা আসবে, না স্টিপানিডা আসে নি।

লিজা তার স্বামীর অবস্থা দেখেই বুঝতে পারে, তার স্বামীর কিছু একটা হয়েছে। ইউজিন তখন বলে সে জমিদারি আর দেনা নিয়ে চিন্তিত।লেখক এই উপন্যাসের মূল চরিত্র ইউজিনের দুটো পরিনতি দিয়ে উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন।

সমাপ্তি ১

ইউজিন হাঁপিয়ে উঠেছিল তার ভেতরে থাকা কামুক শয়তানের কামনায়। সে সিদ্ধান্ত নিলো কখনোই স্টিপানিডার মুখদর্শন করবে না। এ থেকে মুক্তি পেতে সে নিজের রিভলভার দিয়ে নিজেকেই শেষ করে দেয়।

সমাপ্তি ২

যার কামনায় তার চরিত্রের এতো অধপতন থাকেই বরং শেষ করে দিলে কেমন হয়? ইউজিন ঠিক করলো সে স্টিপানিডাকে হত্য করবে তাই সে রিভলবার নিয়ে স্টিপানিডার বাড়ির কাছে যায়, স্টিপানিডা তখন ফসল মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত। স্টিপানিডাকে ইউজিন গুলি করে হত্য করে। এবং আত্মসমর্পণ করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। বিচারে জুরির মাধ্যমে প্রমানিত হয় সে সাময়িক উম্মাদনার বসে খুন করে ফেলেছে। বিচারে ইউজিন কে ৯ মাসে কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং ১ মাস মঠে রাখা হয়, এরপর মুক্তি দেয়া হয়।

Leave a Reply