You are currently viewing রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট: ঘুম নিয়ে বন্দীদের উপর চালানো রাশিয়ানদের নিষ্ঠুর পরীক্ষা নিরীক্ষা

রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট: ঘুম নিয়ে বন্দীদের উপর চালানো রাশিয়ানদের নিষ্ঠুর পরীক্ষা নিরীক্ষা

মানব দেহের সুস্থতার জন্য নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কী ঘটতে পারে, যদি কোনো মানুষ একটানা একমাস জেগে থাকে? সেটা জানার জন্য এক সময়ে এক উদ্ভট ও অমানবিক পরীক্ষা চালিয়েছিলেন রাশিয়ার একদল বিজ্ঞানী। সেই পরীক্ষার পরিণাম যা হয়, তা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। যুদ্ধে যুদ্ধবন্দীদের উপর রাশিয়ান ও জার্মানি বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত ও উদ্ভট পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কুখ্যাতি আছে।

সময়টা ১৯৪০ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তখন ইউরোপের উত্তাল পরিস্থিতি। সে সময়ে দেশের দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ৫ বন্দির উপরে এক অদ্ভুত পরীক্ষা চালান রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি গ্যাস আবিষ্কার করা, যা মানুষের শরীর থেকে ঘুমের প্রয়োজনকে দূরীভূত করবে। এই গ্যাস আবিষ্কার করার উদ্দেশ্য ছিলো যুদ্ধে যেনো সৈনিকরা এই গ্যাস ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় জেগে থাকতে পারে। আর এজন্য রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা ৫ জন যুদ্ধবন্দীকে গিনিপিগ হিসেবে বেছে নেয়।

বন্দীদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাদের উপর একমাস একটি পরীক্ষা চালানে হবে। এবং ১ মাস শেষ হয়ে গেলেই তাদেরকে চিরতরে মুক্তি দেওয়া হবে। মুক্তির আশায় সেসব বন্দীরা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।

পরীক্ষার জন্য একটি বদ্ধ ঘরে সেই ৫ জন বন্দীকে প্রবেশ করানো হয়। বন্দীদের সংস্পর্শে বিজ্ঞানী বা রাশিয়ান সৈন্যরা যেনো না আসে সেজন্য যোগাযোগের মধ্যম হিসেবে একরি মাইক্রোফোন সেট করা হয়। সেই ঘরে বন্দীদের খাবার পানীয় এবং বাথরুমের ব্যবস্থাও রাখা হয়। এরপর ধীরে ধীরে সেই বদ্ধ ঘরে গ্যাস প্রবেশ করানে শুরু হয়।

পরীক্ষায় ব্যবহৃত সেই রুমের ভেতরের ছবি Image Source: Pinterest ©unknownmaia)



এই সময়টায় মাইক্বরোফোনে বন্দিদের বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়, মাত্র ৩০ দিন টিকে থাকলেই তাদের মিলবে মুক্তি। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরেই সেই বদ্ধ ঘর থেকে মাইক্রোফোনে উত্তর ভেসে আসে:-

কে চায় মু্ক্তি?

সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আঁকা ডেভিড রোমেরোর কার্টুন Image Source: Pinterest ©unknownmaia)

বন্দিদের এই অস্বাভাবিক আচরণে চিন্তিত বিজ্ঞানীরা ১৫তম দিনে গ্যাসের প্রয়োগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, কী আশ্চর্যভাবে, গ্যাস বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বন্দিরা কাকুতি-মিনতি শুরু করে গ্যাস পুনরায় চালু করার জন্য! আর রক্ষীদের পাঠানো হয় বন্দিদের বদ্ধ ঘর থেকে বের করে আনার জন্য।

ঘরের দরজা খুলে যেনো চোখ কপালে ওঠে রক্ষীদের। তারা দেখলো, জেলের ভিতর জীবন্ত রয়েছে মাত্র চারজন বন্দি। আর এক বন্দির মৃতদেহ পড়ে রয়েছে মাটিতে। বন্দিদের জন্য দেওয়া খাবারও অভুক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু মৃতদেহটির শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে কারা যেন খুবলে খেয়েছে মাংস। এমনকী জীবন্ত চার বন্দির দেহ থেকেও মাংস খুবলে খাওয়ার চিহ্ন। বুঝতে বাকি থাকে না যে, বন্দিরা স্বাভাবিক খাবার বাদ দিয়ে একে অন্যকে খাওয়া শুরু করেছে।

পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ৫ জনের মধ্যে যে ৪ জন একজন কে খেয়ে ফেলেছিল তাদের ছবি। Image Source: Edtimes.in



এই দৃশ্য দেখে সন্ত্রস্ত রক্ষীরা বন্দিদের জেল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হিংস্রভাবে তারা বাধা দেয়। রক্ষীদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, রক্ষীরা শেষ পর্যন্ত গুলি চালাতে বাধ্য হন।

তিন জন বন্দি গুলি লেগে মারা যায়। জীবিত চতুর্থ বন্দিটি রক্ষীদের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত হাসি হেসে বলে,

তোমরা কি ভুলে গিয়েছ, যে আমরাই তোমরা?’’



এই কথা শুনে গুলি চালিয়ে দেন রক্ষীরা। মারা যাওয়ার আগে সেই বন্দি বলে,

মুক্তির এত কাছে পৌঁছেও…।




ঘুমের অভাব যে মানুষের শরীর ও মনের উপর কী মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, তার এক চরম নিদর্শন হয়ে রয়েছে রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের এই পরীক্ষা।


রাশিয়ার পুরোনো নথিপত্র ঘাটতে গিয়ে সেই দেশের বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন এই গুপ্ত পরীক্ষার কথা। তা প্রকাশ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমেও। যারা জেনেছেন এই পরীক্ষার খবর,তারা শিউরে উঠেছেন ঘুম-বঞ্চিত সেই পাঁচটি মানুষের এই ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা জানতে পেরে।

এই ঘটনা নিয়ে হলিউডে Russian sleep experiment,The Russian Sleep Experiment,The Sleep Experiment,The Soviet Sleep Experiment নামে অসংখ্য মুভি ও সিরিজ তৈরি হয়েছে।

Photo Courtesy: Film affinity

Featured Image: Artwork by David Romero Showing the Subjects of Russian Sleep Experiment in the Chamber (Image via Twitter ©CinemamindDavid )

Leave a Reply