বইয়ের নাম: নবনী
লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
ধরণ: প্রেমোপন্যাস
প্রকাশনী: সময় প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩
সর্বশেষ প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২০
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠা: ১২৭
মলাট মূল্য: ২০০৳
‘নবনী’, হুমায়ূন আহমেদের এমন একটি প্রেমোপন্যাস, যার প্রথম অংশ পড়ার সময় আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না এর শেষে কী হতে চলেছে! যারা রোমান্টিক উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের কাছে বইটি বেশ ভালো লাগবে। নবনী নামের এক তরুণীর জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনিটি যেকোনো পাঠককে অন্য এক জগতে হারিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম! বইটিতে একদিকে যেমন ফুটে উঠেছে গভীর প্রেমানুভূতি, তেমনি অপরদিকে বেদনার তিক্ততার পাশাপাশি আমাদের সমাজের বাস্তবতাও লেখক তুলে ধরেছেন সুনিপুণভাবে।
❝ নবনী ❞
গল্পের শুরুতেই ঘুম ভাঙার পর নবনী জানতে পারে আজ রাতে তার বিয়ে! হঠাৎ করে বিয়ের কথা শুনে যে কারোরই হকচকিয়ে ওঠার কথা। কিন্তু নবনী স্তম্ভিত হয় না কেননা তার জীবনে এমন এক অতীত রয়েছে, যার কারণে কোনো পাত্রপক্ষই তার সাথে তাদের ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হন না। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে নবনীর বড় মামা তার জন্য এক পাত্রপক্ষকে রাজি করাতে সক্ষম হন। পাত্রের নাম নোমান। নোমান অত্যন্ত সহজ-সরল। সে তার বন্ধু সফিকের অফিসে ছোটখাটো একটা চাকরি করে। নোমানের সরলতা ও নবনীর প্রতি তার যত্ন ও ভালোবাসা দেখেই নবনী ধীরে ধীরে তাকে পছন্দ করতে শুরু করে। গল্পটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে এগোতে থাকে তাদের প্রেম ও ভালোবাসার মেলবন্ধনে। দুজনের মাঝে ফুটে ওঠে সীমাহীন প্রেম। ভালোবাসা যে কতটা সুন্দর হতে পারে তা তাদের মাঝে প্রতীয়মান হয়। নবনীর জ্বর দেখার বাহানা করে তার প্রতি নোমানের কাছে আসার প্রচেষ্টা, ট্রেনে করে নবনীকে তার বাড়িতে পাঠানোর সময় নোমান ও নবনীর আবেগময় মুহূর্ত, বাড়ি থেকে ফেরার পর নোমানের কাছে নবনীকে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে জনৈক ব্যক্তির সাথে নবনীকে দেখে নোমানের খারাপ লাগা ও নবনীর প্রতি নোমানের রক্ষণশীল মনোভাব যেন বিশুদ্ধতম ভালোবাসারই প্রতিচ্ছবি। নবনী অনেকবারই নোমানকে তার ভয়াবহ অতীতের কথা বলতে চেয়েছে। বলতে চেয়েছে আনিস স্যারের কথা। কিন্তু শেষ অবধি আর বলে উঠতে পারেনি। নোমানও আগ বাড়িয়ে তাকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি কখনো। অতঃপর তাদের জীবন চলতে থাকে সাধারণভাবেই। ভাবছেন এখানেই শেষ! না, তারপর হঠাৎ-ই নোমানের বন্ধু সফিক ও তার স্ত্রী অহনার জন্য তাদের জীবনের মোড় পাল্টে যায়, গল্পটি চলতে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত এক পরিসমাপ্তির দিকে। ‘নবনী’ উপন্যাসটির সমাপ্তি অত্যন্ত পীড়াদায়ক, যার জন্য কোনো পাঠক কখনোই প্রস্তুত থাকবে না। শেষটা যে এমন হবে তা আসলেই কল্পনা করা কঠিন!
‘নবনী’ উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদের লেখা অন্যতম রোমান্টিক উপন্যাসগুলোর একটি। এটি পড়ে আমি নিজেকে যেন উপন্যাসের মাঝে অনুভব করতে পেরেছি। শুরুতে আনিস স্যারের প্রতি টান জন্মালেও একসময় তার প্রতি-ই আপনার মায়া ও খারাপ লাগা উভয়ই কাজ করবে! কি অদ্ভুত, তাই না! গল্পটির প্রেক্ষাপট সাধারণ হলেও তা উপস্থাপনের ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। কত সুন্দরভাবে নবনী ও নোমান তাদের সংসার গুছিয়েছিল! সাধারণ জীবনও তারা কত সুন্দরভাবে সাজিয়েছিল! তবে উপন্যাসের শেষে হুমায়ূন আহমেদ বাস্তবতার তিক্ততা ও কঠোর রূপ তুলে ধরেন। পাশাপাশি নবনীর শেষ পরিণতি জানার এক অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা তিনি পাঠকদের হৃদয়ে গ্রোথিত করে দেন। উপন্যাসটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। তবে পরিসমাপ্তিটুকু পড়ে আমি বেশ কিছুদিন হতভম্ব ছিলাম! একদিকে যেমন প্রচণ্ড খারাপ লাগা কাজ করছিল অন্যদিকে এমন পরিণতি দেখে তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল! কী ছিল নবনীর সেই অতীতে? কে ছিলেন এই আনিস স্যার? আর উপন্যাসটির সমাপ্তিতেই বা এমন মর্মান্তিক কী ঘটেছিল? জানতে হলে পড়তে হবে হুমায়ূন আহমেদের এই অসাধারণ উপন্যাসটি। সবশেষে যারা রোমান্টিক উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের সবাইকে অবশ্যই ‘নবনী’ উপন্যাসটি পড়তে বলব। আশা করি বইটি আপনাদের ভালো লাগবে। সামান্যতম সময়ের জন্যও বিরক্তি অনুভূত হবে না।
উপন্যাসটির পছন্দের কিছু উক্তি:
❝ পৃথিবীতে দু’ধরনের মানুষ খুন হয়। প্রবল ঘৃণার মানুষ এবং প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষ। ❞
❝ মানুষের চরিত্রের একটা অংশ উদ্ভিদের মতো। উদ্ভিদ যেমন মাটিতে শিকড় ছেড়ে দেয়, মানুষও তাই করে। কিছুদিন কোথাও থাকো মানে সেখানে শিকড় বসিয়ে দেয়া। মাটি যদি চেনা হয় আর নরম হয় তাহলেতো কথাই নেই।❞
❝ ভালোবাসার দাবি আছে। সেই দাবি খুব কঠিন দাবি। ❞
❝ হতাশা, গ্লানি, দুঃখ ও বঞ্চনার পৃথিবীকে এত সুন্দর করে বানানোর কি প্রয়োজন ছিল কে জানে? ❞