এডলফ হিটলার ১৮৮৯ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে অস্ট্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জীবনযাপন ছিল সাধারণ আর ৮-১০ টা মানুষের চেয়ে উদ্ভট, পাগলাটে ও ক্ষ্যাপাটে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং ক্ষমতায় এসে তিনি শপথ নেন জার্মান যা হারিয়েছে তা তিনি পুনরুদ্ধার করবেন।
পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতোমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর হিটলারের নাৎসি বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়।
প্রায় ৬ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের পর, জার্মানির জন্য আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং এই যুদ্ধ জার্মানির হারতেই হবে তা অনিবার্য হয়ে উঠছিল।
এডলফ হিটলার তখন পারকিনসন (স্নায়ু-অধঃপতনজনিত) রোগে ভুগছিলেন, যা তিনি লুকানোর চেষ্টা করছেন। এক সময়কার কঠোর, রাগী দেশ পরিচালক হিটলার ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একদম শেষ প্রান্তে এসে বুঝতে পারেন, তিনি যুদ্ধে হারতে চলেছেন।
হিটলারের আত্মহত্যা
যেমনটি আমরা আমাদের ইতিহাসের বইয়ে পড়েছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে এডলফ হিটলার যুদ্ধে জয়ের কোনও আশা দেখতে পাচ্ছিলেন না। তাই স্ত্রী ইভা ব্রাউনের সাথে তার ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেছিলেন। নিজের মাথায় গুলি করার পর এবং ইভা একটি সায়ানাইড পিল খেয়ে আত্মহত্যা করে। হিটলারের পূর্বে লিখিত ও মৌখিক নির্দেশাবলী অনুযায়ী, সেই বিকালে তাদের দেহাবশেষ বাংকারের জরুরী বহির্গমন দিয়ে উপরে সিঁড়ি পর্যন্ত আনা হয় এবং বাংকারের বাইরে রাইখ চ্যান্সেলারি বাগানে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
১ মে জার্মান সরকার (নাৎসি পার্টি) হিটলারের মৃত্যু ঘোষণা দেয়। হিটলার কি আসলেই আত্মহত্যা করেছিলেন? নাকি পুরোটাই সাজানো নাটক?
যখন নাৎসি পর্টি রেডিওতে হিটলারের মৃত্যু ঘোষণা করে তখন মিত্র বাহিনী বার্লিনে যুদ্ধ করছিল, ফলে হিটলারের মৃত্যু যাচাই করে দেখার সুযোগ তাদের হয়নি।
যাইহোক, পরের দিন, সোভিয়েত সেনাবাহিনী একজন সাংবাদিক কে সাথে নিয়ে বাঙ্কারটি দখল করে এবং হিটলারের অনুমিত লাশ আবিষ্কার করে। প্রায় পুড়ে যাওয়া লাশে কালো চুল এবং সামান্য কালো গোঁফ ছিল। প্রথম নজরে, এটি হিটলারের সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হলেও, পরে ডাক্তাররা বলেছিলেন যে এটি আসলে হিটলার ছিল না হিটলারের প্রতিকৃতি (অর্থাৎ নকল হিটলার) ছিলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ‘বডি ডাবলস’ মানে নকল প্রতিকৃতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বলা হয় যে রুশ নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের কাছে বেশ কয়েকটি নকল প্রতিকৃতির মানুষ ছিল এবং এমনকি উইনস্টন চার্চিলের অন্তত একটি ছিল বলে জানা গেছে।
ইতিহাসবিদরা নিশ্চিত যে হিটলারও সেই প্রতিকৃতি মানে ‘নকল হিটলার’ কে ব্যবহার করেছিলেন।
ষড়যন্ত্রটি ছিল, ‘মৃত্যুর’ কয়েক দিন আগে, হিটলার এবং ইভার দুটি প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছিল, এবং সেই হিটলার ও ইভার প্রতিকৃতিটিকে পরে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাটির রূপ এমনভাবে দেখানো হয়েছে যেনো মনে হয় তারা আত্মহত্যা করেছে। এই পরিকল্পনাটি হিটলারের ব্যক্তিগত সচিব ‘মার্টিন বোরম্যান’ দ্বারা পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
বোরম্যান হিটলারের যুদ্ধে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং অ্যাডলফ ও নাৎসি দলের প্রতি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। শুধুমাত্র বোরম্যান এবং গেস্টাপো প্রধান হেনরিখ মুলার এই প্ল্যান সম্পর্কে জানতেন। এমনকি বডি ডাবলদেরও মানে ‘নকল হিটলার ও ইভার’ এইপরিকল্পনার কোনো ধারণা ছিল না।
যে কর্মীরা বাঙ্কারে টহল দিত তারা এই নকল হিটলার ও নকল ইভাকেই আসল হিটলার ও ইভা মনে করতো। কারণ আসল নকল যাচাই বাছাই করার জন্য ওদের কাছাকাছি যাওয়ার সাহস সেই কর্মীদের ছিল না।
হিটলার ও ইভানা সফলভাবে পালিয়ে গেছেন। তখন বোরম্যান বাঙ্কারে থাকা নকল হিটলার ও নকল ইভা কে হত্যা করে। হত্যাকান্ড কে এমনরূপ দেয় যেনো মনে হয় আত্মহত্যা করেছে। আর আগে থেকেই হিটলারের লেখা একটি চিঠি দেখায়। যেখানে বলা হয় তাদের লাশ যেনো পুড়ে ফেলা হয়। ঠিক সেভাই লাশ পোড়ানো হয়।
হিটলার মারা না গেলে সে কোথায় গিয়েছে?
ইতিহাসবিদ ‘ডগলাস ডিয়েট্রিচ’ একটি ধারণা প্রস্তাব করেছেন যে নাৎসিরা দক্ষিণ মেরুতে একটি গোপন উপনিবেশ তৈরি করেছিল। তিনি বলেছিলেন যে সেখানে ভূগর্ভস্থ হাসপাতাল, ডে কেয়ার সুবিধা এবং সুপারমার্কেট রয়েছে যেখানে যুদ্ধে ব্যর্থতার পরে নাৎসিরা পিছু হটবে।
যদিও এই ধারণাটিকে উদ্ভট মনে হয়। তবে যুদ্ধের পরে অস্ট্রিয়ায় শহরের প্রতিলিপি সহ বড় সুড়ঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছিল।
১৯৩৮ সালে নাৎসিরা ‘বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে’ দক্ষিণ মেরুতে একটি দল পাঠায়, তবে, মিশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিটি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না – তিনি ছিলেন জার্মান বিমানবাহিনীর প্রধান হারমান গোরিং।
অনুমিতভাবে, তারা সেখানে ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করতে গিয়েছিল কারণ জার্মানি অনুভব করেছিল যে তাদের নিজেদের হিসাবে অ্যান্টার্কটিকার একটি অংশ দাবি করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কেন তারা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম জায়গা নিজেদের বলে দাবি করতে যাবে? কিছু তাত্ত্বিকবিদ বিশ্বাস করেন যে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যতের সম্ভাবনা আছে কিনা তা দেখার জন্য তারা সেখানে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল।
১৯৪৩ সালে, ‘অ্যাডমিরাল ডনিটজ’, যিনি ‘জার্মান ইউ-বোট ফ্লিটের’ কমান্ডার ছিলেন। তিনি বলেছেন হিটলার কে পৃথিবীর অন্য কোনো দুর্ভেদ্য প্রান্তে দূর্গ তৈরি করার ব্যাপারে কথা বলতে শুনেছেন।
অনেক তাত্ত্বিকবিদরা বলেছেন, যে ১৯৪৫ সালের জুনে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দুই মাস পরে) আর্জেন্টিনায় দুটি ইউ-বোটের আগমন ঘটেছিল। এটি প্রমাণ করে যে হিটলারের দুর্ভেদ্য দুর্গ হয়তো সেখানেই বিদ্যমান ছিল।
Featured Photo Credit: CORBIS/Corbis via Getty Images