You are currently viewing প্রাচীন ও মধ্যযুগের রহস্যময় ৬ টি বই

প্রাচীন ও মধ্যযুগের রহস্যময় ৬ টি বই

প্রত্নতাত্ত্বিকরা সর্বদা এমন সকল জিনিসের সন্ধানের সন্ধানে থাকেন, যা বিশ্বের রহস্য উদঘাটনে সহায়তা করে।
কখনো কখনো তারা গুপ্তধন ছাড়াও বই কিংবা ছোটখাটো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে বের করেন, যা তাদেরকেই বিস্মিত করে। আর এই ধরনের আবিষ্কার গুলো ইতিহাসের গতিপথের পরিবর্তন ও পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে।

দ্য এন্সিয়েন্ট বুক অব ব্রেথিং

এই বইটি ১৯ শতকের গোড়ার দিকে আবিষ্কৃত হয়। এই বইটি প্রাচীন মিশরের একটি বই। বইটি মূলত মৃত্যুর পরবর্তী জীবন অর্থাৎ পরকালের রহস্য নিয়ে লেখা। কিভাবে একজন মানুষ মারা যায় আর কিভাবে তার পরবর্তী জীবন অর্থাৎ পরকালের জীবন শুরু হবে তার বিশদ বিবরণ উল্লেখ আছে।

বইয়ের কথাগুলো প্রাচীন মিশরের মানুষেরা বিশ্বাস করতো, এবং তারা মনে করতো তারা জানে মৃত্যুর পর তাদের আত্মার সাথে কি ঘটবে।

বইটি মিশরের টলেমাইক রাজবংশের সময়ে লেখা, বইটি লেখা হয়েছিল আনুমানিক ৩৩২ খ্রীস্টপূর্বাব্দে। এবং সেই বইয়ে পরকালের সমস্ত ঘটনাকে ম্যাপ আকারে বর্ণনা ও করা হয়েছে।

মিশরীয়রা এই বইটির একটি কপি সদ্য মৃত ব্যক্তির মাথার নিচে রাখতো আরেকটি কপি রাখতো পায়ের নিচে। তারা বিশ্বাস করতো এই বইগুলো মৃতদের মৃত্যু পরবর্তী জীবনে পথ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

বইটিতে ব্যবহৃত বানান ও ভাষা প্রাচীন মিশরের বইয়ের মতোই। বইটি বর্তমানে Field Museum of Natural History জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বইটি একজন ব্যবসায়ী জাদুঘরে দান করেছিলেন। তিনি ভ্রমণ করার সময় এই বইটি খুঁজে পেয়ে কিনেছিলেন।

বইটি গভীরভাবে অধ্যায়ন করে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেয়, বইটি সেসময়ের কোনো মিশরীয় পুরোহিতের দ্বারা লেখা হয়ে থাকতে পারে। এবং তিনি হয়তো এই বিষয়ে পুরো একটি সিরিজ লিখেছিলেন। এছাড়া বইটিতে সেসময়কার মিশরীয় রাজবংশ ও সেইসময়ের সংস্কৃতি নিয়েও লেখা আছে। যা মিশরীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।

Photo Credits: Ancient Origins

দ্য টেল অব টু লাভার (দুই প্রেমিকের গল্প)

দ্য টেল অব টু লাভার বইটি ১৫ শতকের এনিয়া সিলভিও বার্তোলোমিও পিকোলোমিনির লেখা একটি প্রেমের উপন্যাস। এনিয়া ১৪০৫ সালের অক্টোবর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে তার পিতামাতার সাথে একটি খামারে। যখন তার বয়স ১৮ তে পৌঁছায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন খামার ছেড়ে স্বাধীনভাবে নিজে কিছু করার। আর তাই তিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে পারি জমান। ফ্লোরেন্স এসে বিয়ে করেন এবং তার একটি সন্তান ও হয়েছিল।

ফ্লোরেন্স আসার পর তিনি লেখালেখিতে মনযোগ দেন, এবং খুব দ্রুতই তার লেখা গল্পগ্রন্থ গুলো জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তবে একটি গল্প তার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয় যা তাকে তার বাকি জীবনে আর সুখ দেয় নি।

গল্পটি লুক্রেটিয়া এবং ইউরিয়ালাস নামে দুই ব্যক্তিকে নিয়ে, যারা একে অপরকে দেখে প্রেমে পড়েছিল। তাদের দুজনের দেখা হয়েছিল একটি অন্তেষ্টিক্রিয়ায়। সেই প্রথম দেখায় প্রেম সবশেষে রোমান্সে রূপ নেয়।

সেই সময়ের মানুষের জন্য কামোত্তেজক উপন্যাস লেখা অস্বাভাবিক ছিল। অতএব, লোকেরা এনিয়ার প্রত্যাশার বাইরে বইটির প্রশংসা করেছে।

অতিরিক্ত প্রশংসা ও পরিচিতি এনিয়ার জীবনকে নাজুক করে তুলেছিলো তাই নিজের জীবনের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন এনিয়া। আর তাই তিনি পোপ হওয়ার পথ বেছে নেমন। ১৪৫৮ সালে তাকে পোপের মুকুট দেয়া হয় এবং তার নাম দেয়া হয় ‘পোপ পিয়াস দ্বিতীয়’

তার বিপুল জনপ্রিয়তা তাকে প্রথম পোপ বানিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় সময়ের বিপরীতে গিয়ে সাহসী ও বিপরীত ধর্মী লেখা লিখেছেন তিনি। লেখক হিসাবে তিনি তার পরিচয় ঢেকে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হন কারণ লোকেরা তাকে ইতিমধ্যেই ভালভাবে চিনতো।

Photo Credits: Lesser known gems

দ্য অ্যাসাসেন্স কেভিনেট অব পয়জন্স

একটি বইয়ের মতো বাক্স, আঠালো-একসাথে কাগজ দিয়ে তৈরি যা খোলা হলে, স্টোরেজের জন্য ছোট ড্রয়ার সহ একটি ছোট ক্যাবিনেট বলে মনে হয়। অদ্ভুত এই বইটি ১৬৮২ সালে তৈরি হয়েছিল।

বাক্সের ভিতরে একটি লেবেল সহ ছোট ড্রয়ার ছিল। কিছু জিনিসের মধ্যে ছিল ওল্ফসবেন, শয়তানের ফাঁদ, বেলা ডোনা, আফিম পপি ইত্যাদি। বাক্সটির নাম ছিল The Assassin’s Cabinet of Poisons বা “বিষের ঘাতক ক্যাবিনেট।
এটিতে প্রতিটি বাক্সের বিষয়বস্তু চিহ্নিত করে হাতে লেখা কাগজের লেবেল ছিল।

প্রায় ৪০০ বছর পুরানো বইটির রহস্য কেউ উদঘাটন করতে পারে নি। এবং কে এটি তৈরি করেছিলো তা কেউই জানে না। ১১ টি ছোট ড্রয়ার এবং ক্যাবিনেটের মতো বইয়ের বাম কোণে থাকা একটি ছোট কাচের বয়াম গুপ্তহত্যার উদ্দেশ্যে বা ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, রোমান সাম্রাজ্যে বেলা ডোনার খুব চাহিদা ছিল কারণ এটি মানুষকে হত্যা করতে ব্যবহৃত হত এবং একই সাথে পেশী ব্যথার জন্য একটি নিরাময় ছিল। একইভাবে, আফিম পোস্ত মাদকদ্রব্যের একটি ভিত্তি এবং হাঁপানি এবং পেটের সমস্যাগুলির জন্য ওষুধ।

অদ্ভুত বইটি কোথা থেকে এসেছে, কারা এটি তৈরি করেছে বা কী উদ্দেশ্যে এটি পরিবেশন করেছে তা স্পষ্ট নয়, তবে এটি মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল।

Credits: Open Culture

দ্য থিয়েটার অব লেসার লিভিং ক্রিয়েটার্স

এই চমৎকার বইটি আছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। এই বইটি একই সাথে অদ্ভুত এবং রহস্যময়। বইটি পোকামাকড় এবং তারা সময়ের সাথে কীভাবে বিকাশ করে তার উপর একটি বই। বইয়ের শিরোনামটি ল্যাটিন ভাষায় লেখা, যার অর্থ “ছোট্ট জীবন্ত প্রাণীর থিয়েটার।”

বইটি লাইব্রেরিতে দান করেছিলেন লরেন্স স্ট্র্যাংম্যান নামে একজন বই সংগ্রাহক। শিরোনাম পৃষ্ঠায় চারজন লেখকের নাম রয়েছে, এডওয়ার্ড ওয়াটন, লোনভাড গার্স্টনার, থমাস পেনি এবং টমাস মফেট।
বইটি থমাস পেনির মৃত্যুর প্রায় ৩০ বছর পরে ১৬৩৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
বইয়ের চার লেখকেরই পোকামাকড় সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাদের কেউ জীবিত অবস্থায় তাদের প্রকাশিত বই দেখে যেতে পারেন নি।

Photo Credits: Library Chethams

দ্য বুক অব কেলস (কেলসের বই)

৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে ৮ম শতাব্দীতে খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের দ্বারা লেখা একটি মাস্টারপিস বই, যা মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ধন বা আবিষ্কার হিসেবেও পরিচিত। অনেকে এই বইটিকে রঙিন বাইবেল নামে ও ডাকেন।

যে সন্ন্যাসীরা বইটি তৈরি করেছিলেন তারা সংসার থেকে দূরে, পরিত্যাগে বসবাস করতেন। এই সন্ন্যাসী ও ভিক্ষুরা প্রত্যন্ত স্কটিশ দ্বীপে বসবাস করতো। কারণ তারা সবসময় ভাইকিং আক্রমণের ভয়ে তটস্থ থাকত।

তাদের জীবনযাত্রার অবস্থা কঠোর ছিল, কিন্তু তারা এখনও একটি সুন্দর শিল্প তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল যা এখনও ট্রিনিটি কলেজের লাইব্রেরিতে (আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরের একটি কলেজ) সংরক্ষিত আছে। বইটির ৬০ টি পৃষ্ঠা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে হবে বাকি অংশটুকু ঠিকঠাক আছে।

The Book of Kells | Photo Credits: Wikipedia

এ লিটল বুক ফর লিটল চিল্ড্রেন ( শিশুদের জন্য ছোট্ট বই)

বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা মাত্র ১২ টি! আনুমানিক ৫০০ বছর আগে এই বইটি লেখা হয়েছিল। তবে লেখকের নাম অজানাই রয়ে গেছে।

বইটি শিশুদের আচার-আচরণ, আদব-কায়দা ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে শেখায়। এই বইয়ে উপদেশ এবং সতর্কবাণী ছিল যেমন বাচ্চাদের হাসতে বা হাসাতে হবে না, খাবার পরিবেশন করার সময় লোভী হওয়া উচিত নয়। হলি ওয়াটার পান করার আগে নাক চেপে ধরতে হবে এবং খুব বেশি পান করতে হবে।

এই ধরনের বই ইউরোপের মানুষদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত এবং চাহিদা ছিল উচ্চ বলে বলা হয়। বইটির লেখক ধর্মের সাথে ভালোভাবেই সংযুক্ত ছিলেন। আর তাই শিশুদের সাথে শিষ্টাচার ও ধর্মের সংযোজন করে শিষ্টাচারে পূর্ণ জীবন যাপন করা লক্ষে বইটি লিখেছিলেন।

Photo Credits: Daily Mail

তথ্যসূত্রঃ Wikipedia, History exra, History, Medium, short history

Leave a Reply