You are currently viewing মাদার কারেজ এন্ড হার চিল্ড্রেন: যুদ্ধের পেছনের ভয়াবহ বাস্তবতা

মাদার কারেজ এন্ড হার চিল্ড্রেন: যুদ্ধের পেছনের ভয়াবহ বাস্তবতা

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী ‘এন্টি-ওয়ার ড্রামা’ অর্থাৎ যুদ্ধবিরোধী নাটক জনপ্রিয় হতে শুরু। এই ধরনের নাটকের মূল উদ্দেশ্য ছিলে দর্শকদের কাছে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা ও যুদ্ধের পেছনে থাকা অর্থনীতি ও রাজনীতির বাস্তব রূপ তুলে ধরা।

Mother Courage And Her Children তেমনই একটি এন্টি-ওয়ার ড্রামা বা যুদ্ধবিরোধী নাটক। নাটকের রচয়িতা বিখ্যাত জার্মান কবি ও নাট্যকার বার্টোল্ট ব্রেখট। সাহিত্য জগতে বার্টোল্ট ব্রেখট বিখ্যাত হয়েছেন এপিক থিয়েটার ধারণার জন্য। তিনি এই নতুন নাট্য শৈলি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রবর্তন করেন। এই নতুন ধরনের নাট্যশৈলী সাধারণ প্রচলিত নাট্যশৈলী থেকে আলাদা ছিলো। কারণ এই নাটকগুলোতে বিনোদন দেওয়ার পরিবর্তে দর্শকদের চিন্তায় প্ররোচিত করতো।

বার্টোল্ট ব্রেখট Image Courtesy : Wikipedia

Mother Courage And Her Children নাটকটি ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা হয়েছিলো। যুদ্ধ যে একপ্রকার বাণিজ্য সেই বিষয়টিই এই নাটকের প্রধান বিষয়। এছাড়া যুদ্ধ কিভাবে সাধারণ মানুষদের শোষণ করে এবং শাসকগোষ্ঠী সেই যুদ্ধকে কিভাবে নিজেদের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে তাও তুলে ধরা হয়েছে।

ব্রেখট নাটকের প্লট হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইউরোপে খ্রিস্টান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টেন্টদের মধ্যে চলা ১৬১৮ থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছরের যুদ্ধকে, যা Thirty Year’s War নামে পরিচিত। ব্রেখট এই নাটকটি রচনা করেন মূলত নাৎসি জার্মানির উত্থান ও যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য। নাটকের যুদ্ধটি ৩০ বছরের দীর্ঘ হলেও নাটকে দেখানো হয়েছে ১২ বছরের ঘটনাবলীকে। যা নাট্যকার ১২ টি দৃশ্যে দৃশ্যায়িত করেছেন।

নাটকের শুরু হয় ১৬২৪ সালের বসন্তে সুইডেনের ডালার্না অঞ্চলে যখন ত্রিশ বছরের যুদ্ধ চলমান। নাটকের শুরুতে দেখা যায় এক সুইডিশ সেনা নিয়োগকর্তা এক সার্জেন্টের সাথে কথা বলছেন। তিনি বলছেন সৈন্য খুঁজে বের করা, তারপর তাদের সেনাবাহিনীতে নিযোগ দেওয়া একটি খুবই কঠিন ও বিরক্তিকর কাজ। সে সময় তাদের সামনে একটি ভ্রাম্যমাণ ক্যান্টিন গাড়ি বা ওয়াগন এসে থামে। ক্যান্টিনটির মালিক আনা ফিয়ারলিং নামের এক নারী। যিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টের ক্যম্পের মানুষের কাছে মাদার কারেজ বা সাহসী মা নামে পরিচিত। তিনি তার ভ্রাম্যমাণ ক্যান্টিনে খাদ্যসামগ্রী, পানীয়, বস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেন। মাদার কারেজের সাথে রয়েছে তার দুই ছেলে এলিফ ও সুইস চিজ আর একজন বোবা মেয়ে ক্যাথরিন। ক্যাথরিন কথা বলতে না পারলেও শুনতে পান।

সেই সময় সেই দুই সেনা কর্মকর্তা এলিফকে বলেন প্রটেস্ট্যান্ট সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য। তারা তাকে বলে সেনাবাহিনীর জীবন খুবই এডভেঞ্চারময়। এলিফের মা এলিফকে বারণ করেন কারন তিনি জানেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। আর তিনি তার ছেলেকে হারাতে চান না। কিন্তু এলিফ তার মায়ের কথা শুনে না সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। কারন তার বাবাও ছিলেন একজন সাহসী পোলিশ। সেও হয়েছে তার বাবার মতোই সাহসী। বলে রাখা ভালো মাদার কারেজের তিন সন্তানের পিতা আলাদা আলাদা পুরুষ।

মাদার কারেজ সে-সময় তার সন্তানদের নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, যে তার সন্তানেরা যুদ্ধের কারণে মারা যাবে। বড় ছেলে এলিফ বীরত্বের জন্য, সুইস চিজ তার সততার জন্য। আর একমাত্র বোবা মেয়ে ক্যাথরিন তার দয়ার জন্য।

এর পরের ঘটনা ২ বছর পর ১৬২৬ সালে পোল্যান্ডে সুইডিশ বাহিনীর তাঁবুর বাহিরে মাদার কারেজ সুইডিশ বাহিনীর কুক অর্থাৎ রাঁধুনির সাথে একটি মুরগির দরদাম করছেন। সে সময় বাহিনীর কমান্ডার, পুরোহিত ও কারেজের বড় ছেলে এলিফ সেনাবাহিনীর তাঁবুতে প্রবেশ করে।

কমান্ডার এলিফের সাহসিকতার জন্য তার প্রশংসা করেন কারন এলিফ সম্প্রতি একটি গ্রামের ক্যাথলিক কৃষকদের হত্যা করে সেনাবাহিনীর জন্য গবাদিপশু ও অন্যান্য জিনিস লুট করে নিয়ে এসেছে। কমান্ডার এলিফকে জুলিয়াস সিজারের সাথে তুলনা করেন। তিনি এলিফকে বলেন তিনি রাজা সামনে তার সাহসীকতার জন্য তাকে উপস্থাপন করবেন।

এলিফের সাথে তার মায়ের অনেক দিন পর দেখা হয়। ছেলের মুখে কৃষকদের খুন করা ও তাদের পশু লুটপাটের কথা শুনে মাদার কারেজ কষ্ট পান। তিনি তার ছেলেকে একটা চড় মারেন।

এর তিন বছর পর অর্থাৎ ১৬২৯ সালে মাদার কারেজ ইভেট পটিয়ের সাথে সুইডিশ ক্যাম্পে বসে কথা বলছেন কবে যুদ্ধ শেষ হতে পারে এসব বিষয়ে। মাদার কারেজ বলছিলো এই যুদ্ধ এতো সহজে শেষ হবে না। ইভেট পটিয়ের সেসময় তার জীবনের দুঃখের কথা বলতে শুরু করে। কিভাবে কিশোরী বয়সে সে একজন সেনাবাহিনীর কুক পিটার পাইপার নামের এক ডাচ লোকের প্রেমে পড়েছিলো। কিন্তু সে তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গিয়েছিল। এখন তাকে সেনাবাহিনীর পতিতা হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। সে তার এই জীবন নিয়ে হতাশ। কিন্তু এর থেকে বের হবার উপায়ও তার হাতে নেই।

ইভেট পটিয়ের মাদার কারেজের বোবা মেয়ে ক্যাথরিনকে সাবধান করে প্রেম ভালোবাসা থেকে দূরে থাকতে। কারন সে লক্ষ করেছে ক্যাথরিন প্রটেস্ট্যান্ট সেনাদের সাথে মেশামিশি করছে। আর এই মুহূর্তে ক্যাথলিক সেনাবাহিনী অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে যুদ্ধের প্রভাব সেনাদের পাশাপাশি তার উপরেও এসে পড়বে।

মাদার কারেজের ছোট ছেলে সুইস চিজ ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীতে পে মাস্টার হিসেবে কাজ শুরু করেছে। তার কাজ ছিলো সেনা ক্যাম্পের অর্থের হিসাব রাখা ও সেনাদের বেতন দেওয়া। সুইস চিজ খুবই সৎ ও নীতিবাদী মানুষ। সে সময় ক্যাথলিকরা তাদের সেনা ক্যাম্পে আক্রমণ করে। সুইস চিজ তার কাছে থাকা সেনাবাহিনীর টাকা তার মায়ের সেই টানা গাড়ির ক্যান্টিন অর্থাৎ ওয়াগনের ভেতর লুকিয়ে রাখে। যখন সে দেখে লড়াই খারাপ অবস্থায় চলে গেছে, তখন সে টাকাগুলো নদীতে ফেলে দেয় যাতে ক্যাথলিকরা সেই টাকা না পায়।

Mother Courage and Her Children

সুইস চিজের কাছে সেনাবাহিনীর অর্থ আছে সেই টাকা নেবার জন্য ক্যাথলিক সৈন্যরা তাকে অত্যাচার করতে থাকে যেনো সে টাকার খবর দেয়। সুইস চিজ কোনোভাবেই সে কথা বলে না। মাদার কারেজ তার ছেলেকে মুক্ত করবার জন্য চেষ্টা করলে ক্যাথলিক সেনারা তার কাছে ২০০ গিলডার দাবি করে। কারেজ তার ক্যান্টিন অর্থাৎ ওয়াগনটি ইভেটের কাছে ২০০ গিলডারে বিক্রি করে সুইস চিজকে মুক্তির চেষ্টা করে। কিন্তু নিজের বোবা মেয়ে ও নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে ক্যাথলিক সৈন্যদের সাথে দরদাম করে ১২০ গিলডারে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ক্যাথলিক সেনারা সুইস চিজকে গুলি করে হত্যা করে ফেলেছে।

সুইস চিজের মৃত্যুর পর মাদার কারেজ তার দুঃখ লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়। তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে হয়, কারণ যুদ্ধের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য আবেগ প্রকাশ করা বিলাসিতা। নাটকের এই অংশ দেখায় কিভাবে যুদ্ধ মানুষের মানবিকতা ও সম্পর্কের মূল্য নষ্ট করে ফেলে। যেখানে একজন মা তার ছেলের মৃত্যু মেনে নিয়েও কিছু করতে পারে না।

এই আক্রমণের পর সেই অঞ্চল পুরোপুরি ক্যাথলিক সেনাদের হাতে চলে যায়। আর প্রটেস্ট্যান্ট পাদ্রী তার ধর্ম পাল্টে ক্যাথলিক ধর্মে চলে যায় আর যীশু খ্রিস্টের গান গাইতে থাকে।

এরপরের দৃশ্যে দেখা যায় মাদার কারেজ সেনা অফিসারের অফিসে যান বিচার চাইতে কারন সৈন্যরা তার ওয়াগনের ক্ষতি করেছে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান কিছু সৈন্য সেখানে অপেক্ষা করছে অফিসারের সাথে দেখা করার জন্য, কারন তারা কম বেতন পাচ্ছে সেই সাথে তাদের চাওয়া পাওয়া অনুযায়ী খাবার পাচ্ছে না। মাদার কারেজ তখন তাদের একটি গান শুনায় যার নাম The Great Capitulation, এর মাধ্যমে তিনি সৈন্যদের বলেন তারা তো দেশের ও দেশের মানুষের জন্যই কাজ করছেন। এসব শুনে সৈন্যরা কোনো দাবি আর না করে সেখান থেকে চলে যায়।

এর দুই বছর পরের ঘটনা অর্থাৎ ১৬৩১ সাল, মাদার কারেজ ও তার বোবা মেয়ে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রামে তাদের ওয়াগনে দুজন সেনাকে পানীয় ও অন্যান্য সেবা দিচ্ছেন। সেসময় পাদ্রী এসে কারেজকে বলে যুদ্ধে অনেক মানুষ আহত হয়েছে তাদের সাহায্য দরকার। মাদার কারেজকে পাদ্রী কিছু ঔষধ ও বেন্ডেজ দিতে বলে। মাদার কারেজ কোনো টাকা ছাড়া কোনো কিছু দিতে অস্বীকার করেন। এমনকি সে মেয়ের অনুরোধও শুনেন না। তখন পাদ্রী জোর করে কিছু বেন্ডেজ ও ঔষধ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আর তাদের ওয়াগনের পাশে থাকা একটি আহত শিশুকে দেখতে পেয়ে ক্যাথরিন শিশুটিকে পরম মমতায় সেবা ও যত্ন করতে থাকেন।

এরপরের ঘটনা প্রটেস্ট্যান্ট সেনাপতি টিলির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়। মাদার কারেজ তখন তার ভ্রাম্যমাণ ক্যাট্রিন বা ওয়াগনের মালের হিসাব করছে। কারেজ তখন পাদ্রীর কাছে জানতে চায় যুদ্ধ শেষ হবে কি না, যাতে সে নতুন মালামাল কিনতে পারে। পাদ্রী তখন মাদার কারেজ কে বলেন ‘যুদ্ধ কখনোই সত্যিকারের শেষ হয় না।’ এই কথাবার্তার সময় পাদ্রী মাদার কারেজ কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মাদার কারেজ সাথে সাথেই পাদ্রীর দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।

এর ১ বছর পরে ১৬৩২ সালে সুইডিশ রাজা গুস্তাভ আদলফ লুটজেন যুদ্ধে নিহত হলে শান্তির ঘোষণা আসে। মাদার কারেজ যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে শুনে আশাহত হয়, কারন ইতোমধ্যে সে অনেক মালামাল কিনে ফেলেছে। এখন যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সে লোকশানে পরে যাবে। সেসময় সেনাবাহিনীর কুক পাদ্রীকে গালাগাল করে কারন তার কথা শুনেই কারেজ দোকানের জন্য নতুন মালামাল কিনেছে। মাদার কারেজ তখন কুকের পক্ষ হয়ে কথা বললে পাদ্রী মাদার কারেজ কে “যুদ্ধের হায়েনা” বলে, কারন সে যুদ্ধের লাভে মাতাল এবং শান্তির কোনো মূল্য তার কাছে নেই।

সেসময় ইভেট পটিয়ের সেখানে প্রবেশ করেন। ইতোমধ্যে সে একজন কর্ণেল কে বিয়ে করে বিধবা হয়ে গেছেন। সেখানে তিনি কুক কে দেখতে পেয়ে চিনতে পারেন। ইভেট তখন প্রকাশ করে যে কুকই সেই পিটার পাইপার, যিনি একসময় তাকে প্রতারণা করে ছেড়ে গিয়েছিলেন। সে তখন মাদার কারেজকে সতর্ক করে কুকের অতীত সম্পর্কে, যা কুকের জন্য তখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তবে মাদার কারেজ ইভেটের কথায় বিশেষ গুরুত্ব দেয় না এবং কুকের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যায়।

এরপর মাদার কারেজ বাজারে চলে যায় তার সদ্য নতুন কেনা মালামাল কম দামে বিক্রি করে দেবার জন্য। সেসময় সেখানে দুজন ক্যাথলিক সেনা একজন লেফটেন্যান্ট কে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসেন তার মায়ের সাথে দেখা করার জন্য। এই হাতকড়া পড়া লেফটেন্যান্টটি হলো কারেজের বড় ছেলে এলিফ। যেহেতু তখন প্রটেস্ট্যান্ট রাজা মারা গেছে আর এখন সবকিছু ক্ষমতায় ক্যাথলিকরা। এলিফকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। কারন সে যুদ্ধের সময় গরীব ক্যাথলিক কৃষকদের হত্যা করে তাদের গবাদি পশু ও মালামাল লুন্ঠন করেছে। আগে যখন প্রটেস্ট্যান্টরা ক্ষমতায় ছিলো তখন সে বাহবা পেয়েছে আর এখন তাকে শাস্তি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। মায়ের সাক্ষাৎ না পেয়ে ক্যাথলিক সেনারা এলিফকে নিয়ে চলে যায় তার মৃত্যু কার্যকর করার জন্য। সেসময় পাদ্রী কুক বলে যে তারা এই ঘটনা কখনো মাদার কারেজকে জানাবে না কারন ইতোমধ্যে সে তার ছোট ছেলেকে হারিয়েছে।

১৬৩৪ সালের শরৎকাল। যুদ্ধ জার্মানির অর্ধেক জনসংখ্যাকে গ্রাস করেছে। শীত আগেভাগেই নেমে এসেছে, সব মানুষ অনাহারে, শহরগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত। কুক মাদার কারেজকে জানায়, সে উট্রেখট থেকে একটি চিঠি পেয়েছে। তার মা কলেরায় মারা গেছেন এবং তাকে পারিবারিক সরাইখানাটি উত্তরাধিকার সূত্রে দিয়ে গেছেন। কারেজও স্বীকার করে যে সে এই অনিশ্চিত জীবনযাত্রায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

কুক কারেজকে তার সাথে করে সরাইখানার কাজে যোগ দিতে বলে। কিন্তু কুক কারেজকে জানায় যে তাকে তার সাথে যেতে হলে ক্যাথরিনকে রেখে যেতে হবে। সরাইখানায় তার জায়গা নেই। কারণ এরকম একজন বোবা ও বিকৃত মুখের মেয়ে মানুষকে ক্রেতারা সরাইখানায় দেখতে পছন্দ করবে না। মাদার কারেজ কুক কে জানিয়ে দেয় সে তার মেয়েকে ছাড়তে পারবে না। আর তাই সে কুকের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে।

এরপর চলে আসে ১৬৩৫ সাল। মাদার কারেজ ও তার মেয়ে বিধ্বস্ত সেনাবাহিনীর সঙ্গে জার্মানির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। একসময় তারা এক ধনী কৃষকের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। তারা শুনতে পায় বাড়ির ভেতর থেকে কেউ একটি গান গাইছে যাতে বছরের সব ঋতুতে এই বাড়ির সমৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। তারা গানটি শুনতে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়, তারপর আবার পথচলা শুরু করে।

এর পরের ঘটনা জানুয়ারি ১৬৩৬ সালের। মাদার কারেজ একটি কৃষকের ফার্মহাউসের বাহিরে তার ওয়াগন ও মেয়ে ক্যাথরিনকে রেখে শহরে যায় জিনিসপত্র কেনার জন্য। কারন যুদ্ধের খারাপ অবস্থার জন্য ব্যবসায়ীরা এখন কমদামে জিনিস সব জিনিস বিক্রি করে দিচ্ছে। আর মাদার কারেজ সেই সুযোগটাই নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেসময় ৩ জন ক্যাথলিক সৈন্য সেই কৃষকের বাড়িতে আসে। তারা কৃষকের ছেলেকে বাহির বাহিরে ডেকে এনে তাদেরকে শহরের রাস্তায় চিনিয়ে দিতে বলে। যাতে করে তারা শহরে ক্যাথলিক সেনাবাহিনী নিয়ে গিয়ে প্রোটেস্টেন্ট মানুষদের হত্যা করতে পারে।

ক্যাথরিন এসব শুনতে পেরে সে কৃষকের বাড়ির ছাঁদে চলে যায় এবং জোড়ে জোড়ে ড্রাম বাজাতে থাকে। যেনো প্রোটেস্টেন্টরা সতর্ক হয়ে যায়, যে ক্যাথলিক সৈন্যরা শহরে আক্রমণ করতে আসছে। সৈন্যরা ক্যাথরিনকে ড্রাম বাজানো বন্ধ করতে বলে কিন্তু সে তাদের কথা শুনে না। আর তাই সৈন্যরা তাকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করে। ড্রামের ও গুলির আওয়াজ শুনে শহরের মানুষ সচেতন হয়ে যায়। বেঁচে যায় বহু মানুষের প্রাণ।

মাদার কারেজ শহর থেকে ফিরে এসে দেখতে পান ক্যাথরিন মারা গেছে। ক্যাথরিন মারা গেছে এটা তার মেনে নিতে কষ্ট হয়। এসময় তারা দূর থেকে সৈন্যদের ড্রাম ও বাঁশির আওয়াজ শুনতে পায়। কৃষক পরিবার মাদার কারেজকে বলে এখান থেকে চলে যেতে কারন সৈন্যরা ফিরে আসলে মাদার কারেজকেও হত্যা করবে। কৃষক পরিবার বলেন তারা ক্যাথরিনের শেষকৃত্যের কাজ করবে। মাদার কারেজ সেই পরিবারকে কিছু অর্থ দিয়ে তার ভ্রাম্যমাণ রেস্তোরাঁ বা ওয়াগন সাথে নিয়ে যুদ্ধের গান গাইতে গাইতে চলতে শুরু করে এবং তার উদ্দেশ্য তার বড় ছেলে এলিফের সাথে দেখা করা। কিন্তু সে জানেনা যে তার ছেলে বহু আগেই মারা গেছে।

যুদ্ধের জন্য মাদার কারেজ তার সকল সন্তানকে হারিয়েছেন। কিন্তু নাটকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় নি। তার কাছে যুদ্ধ একটি ব্যবসা। সে চাইতো যুদ্ধ সবসময় চলতে থাকুক। কেননা যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে তার ব্যবসা ও শেষ হয়ে যাবে। নিজের সন্তানদের মৃত্যুর পরেও তারমধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় নি। নাট্যকার বাট্রোল্ট ব্রেখট মূলত এই চরিত্রের মাধ্যমে সেই সকল মানুষদের দেখিয়েছেন যুদ্ধ যাদের কাছে একটি ব্যবসা। যাদের কাছে মানুষদের জীবন তাদের দুঃখ, কষ্ট কোনো কিছুরই মূল্য তাদের কাছে নেই। যুদ্ধের মাধ্যমে ব্যবসা ও মুনাফা অর্জনই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।

Leave a Reply