মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ, ডাক নাম গালিব (গালিব অর্থ সর্বোচ্চ) এবং (পূর্বের ডাক নাম) আসাদ অর্থ সিংহ (ডিসেম্বর ২৭, ১৭৯৭ — ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৮৬৯) ভারতবর্ষে মোঘল-সম্রাজ্যের শেষ ও ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকের একজন উর্দু এবং ফার্সি ভাষার কবি । সাহিত্যে তার অনন্য অবদানের জন্য তাকে দাবির-উল-মালিক ও নাজিম-উদ-দৌলা উপাধি দেওয়া হয়।
তার সময়কালে ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য তার ঔজ্জ্বল্য হারায় এবং শেষে ১৮৫৭ সালের সিপাহীবিদ্রোহ এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা পুরোপুরিভাবে মোঘলদের ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন দখল করে, তিনি তার লেখায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মহাবিদ্রোহের সময়কার তার লেখা সেই দিনলিপির নাম দাস্তাম্বু। তিনি জীবনকালে বেশ কয়েকটি গজল রচনা করেছিলেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন ও গেয়েছেন। তাকে মোঘল সম্রাজ্যের সর্বশেষ কবি হিসেবে ও দক্ষিণ এশিয়ায় তাকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়। আজ শুধু ভারত বা পাকিস্তানে নয় সারা বিশ্বেই গালিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
১
ধর্মকে বাদ দিয়ে নৈতিক হওয়া সম্ভব নয়
২
পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি মিথ্যা বলা হয় ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে,
যেটা আদালতে।
আর সব চেয়ে বেশি সত্য বলা হয় মদ ছুঁয়ে,যেটা পানশালায়।
৩
এই প্রেম গালিবকে নিষ্কর্মা করে দিলো, নয়তো আমিও ছিলাম খুব কাজের মানুষ।
৪
সব সম্পর্ক ছিন্ন করো না, বন্ধু;
আর যদি কিচ্ছু না থাকে
তো শত্রুতাই থাক।
৫
অনুকম্পা হলে ডেকে নিও আমায়,
আমি তো অতীতকাল নই যে ফিরে আসতে পারবো না।
৬
দুনিয়ার এই ভয়ানক উজাড় মজলিসে
প্রদীপের মতো আমি প্রেমের শিখাকেই
আমার সর্বস্ব জ্ঞান করলাম।
৭
আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি, এদিকে প্রিয় বলে, সে কথা না বললে কি করে বুঝবো তার মনের কথা?
৮
আমি একবারই দুঃসাহস দেখাবো , যখন লোকেরা হেঁটে চলবে আর আমি (মারা যাবার পরে) লোকেদের কাঁধে চাপবো।
৯
এখন অনেক রাত।
চারদিকে অন্ধকার;
কোথাও কেউ নেই।
চলো গালিব! তার বাড়ির দেয়ালে চুমু দিয়ে আসো।
১০
আমার সামনে পৃথিবীটা যেন বাচ্চাদের খেলার মাঠ, প্রতিটা রাত্রি আর দিনে কেবল তামাশাই ঘটে যাচ্ছে।
১১
আমি এখন সেইখানে আছি, যেখান থেকে আমি নিজের খবরই আর পাই না।
১২
তোমার দরজার সামনেই ঘর বানিয়ে নিয়েছি আমি, এবারও কি বলবে আমার ঘরের ঠিকানা জানোনা তুমি।
১৩
নিজের জীবন যখন এমনই বিবর্ণ, গালিব,
কী করে যে ভাবি, একদা আমাতেই ছিল স্রষ্টার বাস?
১৪
কিছু এমন ভাবে আমার জীবনকে সহজ করে নিয়েছি ,
কারো কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি , আবার কাউকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
১৫
জীবন বড়ই বিচিত্র : সন্ধ্যা কাটেনা অথচ দিব্যি বছর কেটে যাচ্ছে!
১৬
প্রেমে বাঁচা আর মরার মাঝে কোন তফাৎ নেই,
কেনো তাকে দেখেই বাঁচি? যে অবিশ্বাসীর জন্য মরলাম!
১৭
শরাব ছাড়া আমার হাতের কলম চলছে না। ধোঁয়াহীন আগুন কোথায় তুই?
১৮
সারাজীবন কেবল সেই মানুষটির কথাই মনে রইলো যাকে ভেবেছিলাম ভুলে যাবো আমি।
১৯
লক্ষ্য এক থাকলে সৌন্দর্যও ইবাদতে পরিণত হয়,
ধর্মহীনই শুধু প্রতিদিন তার কিবলা পরিবর্তন করে।
২০
বেশী নুয়ে গেলে পৃথিবী পিঠকে পা’দানি বানিয়ে ফ্যালে।
২১
প্রেমে কোনো জোর খাটে না, এ আগুন অনির্বাণ
এ যায় না লাগানো, তেমনি করা যায় না নির্বাণ।
২২
সন্ধ্যার অন্ধকার কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা সেই পাখিকে জিজ্ঞেস করো, যার কোনো ঘর নেই।
২৩
আমি অনেকটা এভাবেই জীবনকে সহজ করে নিয়েছিলাম।
কারো কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে। কাউকে ক্ষমা করে দিয়ে।
২৪
হাতের তালুর রেখায়
ভাগ্য দেখতে যেও না গালিব
ভাগ্য তাদেরও আছে
যাদের হাত নেই।
২৫
আমাকে মদ খেতে দাও
এই মসজিদে বসেই
নইলে এমন জায়গা দেখাও
যেখানে আল্লাহ নেই।
২৬
তুমি যেন আমার কাছেই থাকো
যখন আর কেউ থাকে না।
২৭
হায়রে জুয়া!
জুয়া খেলি আমি
জীবনটাই তো জুয়া, রেখেছি বাজি।
প্রেম চেয়ে প্রতীক্ষায় ছিলাম
এলো না সে,এখন চলে যেতে রাজি!
২৮
বন্ধু খুব সাবধানে তুলে রাখো
নিভে যাওয়া এই প্রদীপটিকে
অমাবস্যার গভীর কালো অন্ধকারে
এই আমাদের আলো দিয়ে ছিলো।
২৯
কেই বা তাকে চিনতে পারে সেই অলঙ্ঘ্য একক একাই
দুইয়ের ছিটেফোঁটাও থাকলে হয়তো কিছু চেনা হতো।
৩০
কিছুই যখন ছিল না, তো খোদা ছিল।
কোনো কিছু না হলেও তো খোদা হতো।
হয়ে যাওয়াই ডুবিয়ে দিল বন্ধু আমায়,
নাই বা যদি হতাম কী ক্ষতি আর হতো?
Galib is in my heart.