You are currently viewing মানব ইতিহাসের দীর্ঘতম বছর: খ্রীস্টপূর্ব ৪৬ সালে ৪৪৫ দিনের বছর

মানব ইতিহাসের দীর্ঘতম বছর: খ্রীস্টপূর্ব ৪৬ সালে ৪৪৫ দিনের বছর

আপনার কি মাঝেমধ্যে মনে হয় এইতো সেদিন নিউ ইয়ার পালন করলাম আর এখন ডিসেম্বর মাস চলে এলো! এতো তাড়াতাড়ি সময়গুলো শেষ হয়ে গেলো!! বছরটা আরেকটু দীর্ঘ হলে তো মন্দ হতো না? কিংবা দিনটা যদি ২৪ ঘন্টা থেকে টেনে ৩০ ঘন্টা যেতো কিংবা বছরটাকে ৩৬৫/৬৬ দিন থেকে টেনে ৪০০+ দিন করতে পারলে ব্যাপারটা বেশ দারুণ হতো।

কিন্তু এ যুগে এমন ইচ্ছে কেবল আপনার কল্পনাতেই সম্ভব। তবে ইতিহাসের পাতায় কিন্তু এমন একটা বছর রয়ে গেছে!

সালটি ছিল ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং এই দীর্ঘতম বছরটি বিখ্যাত রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার তৈরি করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সাল ছিল ৪৪৫ দিনের!

রোমান ক্যালেন্ডার সম্পূর্ণ জগাখিচুড়ি ছিল

রোমান ক্যালেন্ডার বহু শতাব্দী ধরে প্রচলিত ছিল। তবে এটি এতোটাই বিভ্রান্তিকর ছিল, বেশিরভাগই রোমান এই দিন তারিখের খবর খুব একটা রাখতো না।

রোমান ক্যালেন্ডারের ১২ মাস এবং ৩৫৫ দিন ছিল। রোমানরা জানত যে সৌর বছর ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা দীর্ঘ, তাই তাদের অধিবর্ষ (২ বছর পর অধিবর্ষ হতো তখন) কে সৌর বছরের সাথে মেলাতে অতিরিক্ত ২২/২৩ দিন যোগ করতো।

ফলস্বরূপ, রোমান ক্যালেন্ডারো বছরের দিন সংখ্যা হতো ৩৫৫ দিন, ৩৭৭ বা ৩৭৮ দিন।

রোমান ক্যালেন্ডারের নমুনা Credit: Wikimedia Commons

এর সঙ্গে নতুন এক বিভ্রান্তির সংযোগ করেন তখনকার রোমান পুরোহিত পন্টিফেক্স ম্যাক্সিমাস। তিনি অধিবর্ষে আরেকটি নতুন সংযোজন করেন। যখন তার মিত্র দল শাসন করবে তখন তিনি অধিবর্ষ কে দীর্ঘ করে দেন, আর বিরোধীদল শাসনে আসলে তা ছোট করে দিতেন।

বিখ্যাত রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ক্ষমতায় এসে একটি নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন, যা সকল সাধারণ মানুষের জন্য যুতসই হবে।

৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, তিনি একটি নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি করতে রোমে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদদের ডেকে পাঠান যা রোমান ক্যালেন্ডারকে প্রতিস্থাপন করবে যা ইতিমধ্যে সৌর বছরের চেয়ে ৮০ দিন পিছিয়ে ছিল।

সম্রাট জুলিয়াস সিজার সৃষ্টি করেন ইতিহাসের দীর্ঘতম বছর

নতুন এই ক্যালেন্ডারে বছর করা হয় ৩৬৫ দিনে আর যেহেতু সৌরবছর ৩৬৫ দিনের সাথে ৬ ঘন্টা অতিরিক্ত থাকতো তাই ৪ বছর পর পর লীপ ইয়ার যোগ করেন।

জুলিয়াস সিজার credit: Wikimedia Commons

জুলিয়াস সিজার চেয়েছিলেন বছরের শুরু হোক মার্চ মাস দিয়ে, জানুয়ারি মাস নয়। কারণ রোমান ক্যালেন্ডারের প্রথা ছিল মার্চ মাস দিয়ে শুরু হওয়ার।

আর তাই তিনি সাম্যতা আনতে ৯০ দিন অতিরিক্ত যোগ করেন, সেই বছর হয়ে যায় ৪৪৫ দিনের!

আর তাই রোমানরা এই বছরের নাম দেন ‘বিভ্রান্তির বছর’!

গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সংশোধন

১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি প্রবর্তন করেন নতুন এক বর্ষপঞ্জির। তিনি হিসাব করে বের করে দেখেন, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতিবছর ১১ মিনিটের গরমিল থাকায় ইস্টার ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছিল।

পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী Credit: Wikimedia Commons

এই গরমিল সমাধানের জন্য গির্জার পক্ষ থেকে ১১ দিন যোগ করে প্রবর্তন করা হয় গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি, যা এখন আমরা অনুসরণ করি।

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির বিষয়ে বেশ কিছু মজাদার তথ্য আছে। ১৭ শতাব্দী পর্যন্ত ফ্রান্স ব্রিটেন কিংবা জার্মানি এরা কেউ এই নতুন ক্যালেন্ডার গ্রহন করেনি। তারা মনে করতো এগুলো সব ক্যাথলিকদের ষড়যন্ত্র।

আর রাশিয়াতে তো ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের আগ পর্যন্ত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ছিল রাশিয়ার সরকারী ক্যালেন্ডার।

Featured Image credit: Freepieek

Leave a Reply