টলষ্টয়ের এই উপন্যাসটি ধর্মীয় ভাবনার ফসল। তবে টলস্টয়ের ধর্ম মানব ধর্ম। মানুষকে বাদ দিয়ে তিনি ক্রিশ্চান ধর্মের কোনো কিছু গ্রহণ করেননি। তাই এই উপন্যাসে সেই মানব ধর্মের কথাই বিঘোষিত হয়েছে। এই উপন্যাসটি টলস্টয়ের শেষ বয়সে একটানা দশ বছর ধরে লেখা পূর্ণাঙ্গ রচনা।
এই উপন্যাস রচনার উৎস হলো ধর্মীয় ঘটনা। রাশিয়ায় “ দুখোবরস ” নামে একটি খ্রিস্টান সম্প্রদায় ছিল। এরা ধর্মীয় লোকাচারের বিরুদ্ধে ছিল এবং রক্ষণশীল চার্চের পরিবর্তে অন্তরের আলোকে বাইবেলের ব্যাখ্যা করত। অর্থাৎ সোজা কথায় এরা চার্চের শাসন মানত না। ফলে চার্চের সঙ্গে তাদের বিরোধ শুরু হয়। এমনকি সরকারের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়। সরকার এদেরই ধর্মগুরু ‘পিটার ভেরিগিন’ কে নির্বাসন দণ্ড দেয়।
প্রতিবাদে ওরা মুখর হয়ে জনগণের কাছে প্রচার শুরু করে যে, রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পত্তি সাধারণের হোক, মাদক দ্রব্য বর্জন করা হোক, প্রত্যেকে নিরামিশাষী হতে হবে, সৎচরিত্র হতে হবে , অহিংস হতে হবে এবং সেনাবাহিনীতে যোগদান বন্ধ করতে হবে।
টলষ্টয় এদের মতবাদকে সমর্থন করেছিলেন এবং প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। দুখোবরসদের আন্দোলন যতই জন সমর্থন পেয়ে উত্তাল হতে লাগল ততই সরকারি নিপীড়ন বাড়তে লাগল। টলষ্টয়ের দুই প্রধান সহকর্মীকে নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হলো। সবশেষে সরকার এই সম্প্রদায়ের মানুষদের দেশ ছেড়ে যেতে নির্দেশ দিল।
অবশ্য টলষ্টয়কে এক্ষেত্রে নিষ্কৃতি দিল সরকার। কিন্তু সমস্যা হয়ে উঠে গুরুতর। প্রায় ১২ হাজার ব্যক্তিকে দেশ অন্য দেশে যেতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। আর সেই অর্থের প্রয়োজনেই এই উপন্যাসটি রচিত।
এই উপন্যাসের কাহিনিটি টলষ্টয় এ. এফ কোনী নামে এক বিখ্যাত উকিলের কাছ থেকে শুনেছিলেন। ঘটনাটা হলো এই যে চুরির দায়ে দ্রুত একটি পতিতার বিচারের সময় একজন জুরি পতিতাকে চিনতে পারে কারণ এসময় ঐ জরিটি ঐ মেয়েটিকে তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করার জন্য প্রলোভিত করেছিল। তার ঐ কাজের জন্যই মেয়েটি পতিতা বৃত্তি অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছিল। যাইহোক, জুরি যুবকটি অভিযুক্ত মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে এবং তাকে বিয়ে করবে বলে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তার সেই প্রস্তাব কার্যকরী হয়নি কারণ মেয়েটি জেলে মারা যায়।
এদের চরিত্র এই ঘটনার সঙ্গে টলষ্টয়ের ঘটনার পার্থক্য হলো এই যে টলস্টয়ের নায়ক খেলিযুভ এর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কাতুসার মিলন ঘটেনি। কারণ কাতুসার মৃত্যু নয়, কাতুসার প্রত্যাখ্যান ।
কাতুসা আর নেখলিউডভের সঙ্গে সমাজগতভাবে একটা বিরাট পার্থক্য আছে কাতুসা বাড়ির ঝি . আর নেখলিযুডভ হলো বিশাল সম্পত্তির অধিকারী লিঙ্গ। এই প্রিন্সদের কাতুসা কোনোদিন বিশ্বাস করেনি। তার মনের কোণে সম্বন্ধে যে অবিশ্বাস গভীরভাবে শিকড় নামিয়েছিল তা আর মন থেকে আদৌ উৎপাটিত হয়নি। তাই নেখলিয়ডভ তার মুক্তির জন্য বা তার শাস্তি লাঘবের জন্য বা তার সুখ সুবিধার জন্য যা কিছু চেষ্টা করেছিল সেটাকে সে করুণা বা দয়া বলেই ভেবেছিল। এই জাতীয় মানুষের কাছে সে করুণাভিখারি হতে চায়নি।
তাই সে বলেছিল— “ I am comict , you are a prince . ” অর্থাৎ , ” আমি একজন পতিতা , আর তুমি হলে যুবরাজ । ”
এই দুই ব্যবধান ও পার্থক্যই কাতুসার হৃদয়ে নেখলিয়ুডভের সম্বন্ধে কোনো ভালোবাসার ভিত রচনা করতে সাহায্য করেনি। বরং তাকে রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তার জীবনের এই পরিণতির জন্য সে দায়ী করেছিল নেখলিযুডভকে। অন্যদিকে নেখলিযুভণ্ড যে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য কাতুসাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত কাতুসার প্রত্যাখ্যানের ফলে সে দুখোবরসদের ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করে সন্ন্যাসী হয়ে গেল। কাহিনি এমন কিছু চমকপ্রদ নয়। কাহিনি জটিলও নয়। সহজসরল কাহিনি। তার মধ্য দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের চরিত্রের মুখোশ তিনি খুলে দিয়েছেন। বিশেষ করে সমাজের একটা ব্যবস্থাকে তিনি কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন এবং তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ বিদ্রূপে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। ন্যায় বিচারের নামে আইন আদালত, বিচারক , জুরি , উকিল , কেরানি , পুলিশ , জেল , হাজত , ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদিকে নিয়ে যে বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে , তা নেহাতই একটা প্রহসন মাত্র।
কারণ দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরাই ন্যায়নীতির রক্ষক যেখানে সেখানে ঐ সব অর্থহীন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনটা কী? তাই ঐ সব ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে টলষ্টয়ের মনে হয়েছে— all of them are prostitutes.
এই দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজকে তিনি মনেপ্রাণে ঘৃণা করেছেন। তাই নিজে বিপ্লবী না হয়েও তিনি এই গ্রন্থে বিপ্লবীদের ভূমিকা অনেক বড়ো করে দেখিয়েছেন। নারদনিকারা যারা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল তাদের অনেকেরই জেল হয়েছে। জেলের মধ্যে তাদের কার্যকলাপ এই কাহিনির নায়ক দেখলিযুভকে অনেকখানি প্রভাবিত করেছিল যে নেখলিফুডভ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে আদৌ সহা করতে পারত না।
এমনকি তাদের দলের সঙ্গে কাতুসাকে সে ভিড়িয়ে দিয়েছিল। যে কাতুসা দিনের পর দিন তাদের সঙ্গে থেকে থেকে একথা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে —these people were for the people and against the upper classes and though themselves belongings to the upper classes they had sacrificed their privileges , their liberty and their lives for the people .
বিপ্লবীদলের নেত্রী মেরী পাভলোভনা কাতুসার জীবনে বিরাট পরিবর্তন এনেছিল। যে অভিজাত শ্রেণিকে কাতুসা ঘৃণা করত সেই অভিজাত শ্রেণির মানুষ হলো নেখলিযুডভ। কুমারী নারীর চরিত্রহরণ করা যেমন এদের ধর্ম তেমনি মানুষকে শোষণ করাও তাদের ধর্ম।
নেখলিযুডভ এই শ্রেণির হয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেছে। যখন প্রায়শ্চিত্ত করতে সে মনস্থ করেছে তখন অনেকেই তাকে বুঝিয়েছে— “ you are not particularly at fault . It happens to everyone , it all gets smoothed over and forgotton . ”
এরকম ঘটেই থাকে। এতে দোষ কী? কাতুসাকে ও বিয়ে করবে কিন্তু কাতুসা ওকে বিয়ে করতে চায়নি শুনে ওর মাসি ক্যাটেরিনা আইভ্যানোভা বলেছিল— “ She is wiser than you . Dear me you are a fool . ”
বাস্তববাদী মহিলা আদর্শবাদী নেখলিয়ুডভকে ‘বোকা’ ভেবেছিল। আদর্শবাদীরা সব সময়ই বোকা বলে পরিগণিত হয়। নেখলিয়ুডভ সমস্ত সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়ে পিতৃপুরুষের পাপের পথ থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল। চেয়েছিল সাধারণের মতো জীবনযাপন করতে। তাই সে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পথে এগিয়ে গেল।
টলস্টয় এই উপন্যাসের কাহিনির পরিসমাপ্তি অত্যন্ত যুক্তিহীনভাবে ঘটিয়েছেন। জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যেমন পারেননি তেমনি জট মুক্ত করে কাহিনির পরিণতিও ঘটাতে পারেননি।
I have read your writings and I have read articles on this topic in several articles from other sources. I got a lot of information from your writing, is there any other suggestions you can convey regarding the theme of your writing? so that I can get more and more complete information.
I write short reviews of each book, after reading it thoroughly.If you want to know more about this you have to read the book.