আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগেকার কথা। জাপানের সাইতামা প্রিফেকচারের ইয়াশিও-মিনামি হাই স্কুলে পড়তো এক কিশোরী। কিশোরীটির নাম ছিল জুনকো ফুরুতা। আর ৮-১০ জন সমবয়সী ছেলেমেয়েদের মতো জুনকো ফুরুতারও ভবিষ্যৎ নিয়ে রঙিন সব স্বপ্ন। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠা জুনকো ফুরুকা এভাবেই একদিন ১৭ বছরে পা দিলেন।
জাপানের সায়তামা প্রদেশের মিসটোরের উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রী জুনকো দেখতে বেশ সুন্দরী ছিলেন। আর এজন্য তার প্রতি ছেলেদের আগ্রহ লেগেই থাকতো। কিন্তু নিজের সমবয়সীদের মতো ধূমপান বা অ্যালকোহলের কোনও নেশাই ছিল না এই কিশোরীর।
এদিকে হিরোশি মিয়ানো নামে একটি ছেলে জুনকোকে পছন্দ করতে শুরু করেছিল। ভালোবাসার কথাও একদিন জুনকোকে জানিয়ে দেয় মিয়ানো। তবে জুনকো হিরোশির প্রস্তাবে রাজি না হয়নি, আর তাতেই তার জীবনে নেমে এসেছিল চরম বিপদ। প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হিরোশি।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালের ২৫ শে নভেম্বর, হিরোশিসহ ৪ জন কিশোর অপহরণ করে জুনকোকে। তারা জুনকোকে টোকিওর আতাচিতে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। এর প্রাণের ভয় দেখিয়ে জুনকোকে বাধ্য করে তার বাবা মাকে ফোন করে বলতে, যে সে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কিছুদিনের জন্য ঘুরতে এসেছে। এরপর শুরু হয় জুনকোর উপর অমানবিক নির্যাতন। তার উপর নির্যাতন এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কোনোদিন চিন্তা করতে পারবে না। এমনকি কোনো লেখক ভুলেও তার গল্পের কোনো চরিত্রকে এমন নির্যাতনের মুখোমুখি করতে সাহস করবেন না।
জুনকোকে ৪৪ দিন আটকে রাখা হয়। আর এই ৪৪দিন ধরে তার উপর অমানষিক অত্যাচার চলেছিল। তাকে সর্বক্ষণ উলঙ্গ রাখা হত এবং এই ৪৪ দিনে তাকে ১০০ জনের বেশি ব্যাক্তি ৫০০ বারের মত নানা উপায়ে ধর্ষণ করেছে।
প্রতিদিন মানুষের কল্পনারও বাইরে নানারকম নির্যাতন করা হত তার উপর। জুনকোকে এই সময় প্রতিদিন নিয়ম করে পেটানো হত এবং বোতল, কাঁচি ও লোহা সহ নানা জিনিস তার যৌনাঙ্গে ঢোকানো হত। বাধ্য করা হত জ্যান্ত তেলাপোকা ও নিজের মূত্র পান করার জন্য। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার স্তনও কেটে নেওয়া হয়।
এখানেই শেষ নয় অত্যাচারের কাহিনী। তাকে ঝুলিয়ে রেখে বক্সিং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা হত। ঘন্টার পর ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দেওয়া হত। লাইটার দিয়ে চোখের মনি, যৌনাঙ্গ ও ক্লাইটোরিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। সুঁই দিয়ে শরীরে অসংখ্য ছিদ্র করা হয়। জুনকো নিঃশ্বাস নিতে পারত না কারণ নাকে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের জন্য তার পাকস্থলী খাবার হজম করতে পারত না, ফলে বমি করে দিত। এই অবস্থায় কার্পেট নোংরা করার জন্য তাকে আরও মারধর করা হত।
অপহরণের ২০ দিন পর সুযোগ পেয়ে পুলিশকে ফোন করতে গিয়ে ধরা পড়ে জুনকো। তারপর তার পা আগুন দিয়ে পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সে হাঁটতে পর্যন্ত পারত না। এমনকি হাতও নাড়াতে পারত না, কেননা তার হাড় ভেঙে দেয়া হয় এবং নখ তুলে নেয়া হয়। ৩০ দিনের দিন থেকে জুনকোর মুত্রত্যাগ বন্ধ হয়ে যায়। শেষের দিকে কানেও শুনতে পেতেন না তিনি। এক সময় জুনকো এতো অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অপহরণকারীদের কাছে নিজের মৃত্যু ভিক্ষা চায়।
৪৪ দিন ধরে পাশবিক অত্যাচার সহ্য করার পর জুনকো মৃত্যুবরণ করেন। হত্যার অভিযোগের ভয়ে জুনকো ফুরুতার অপহরণকারীরা তার মৃতদেহ কে একটি ড্রামে ঢুকিয়ে তা ইট, বালু কংক্রিটে ভর্তি করে একটি সিমেন্টের ট্রাকে রেখে দেয়। তারা নিশ্চিন্ত ছিলো যে তারা হয়তো কখনো তাদের অপরাধের জন্য ধরা পড়বে না।
ফুরুতার মৃত্যুর ২ সপ্তাহ পর পুলিশ মিয়ানো ও ওগুরাকে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেফতার করে। পুলিশের তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের সেই নির্ম পাসবিক অপরাধের কথা স্বীকার করে এবং ফুতুরার লাশ কোথায় আছে তাও বলে পুলিশ কে।
সেই সময় সেই ৪ যুবকের বয়স ১৮ বছর এর নিচে হওয়ায় পুলিশের হাতে পাহাড় সমান প্রমাণ থাকার পরেও তাদের কাউকে আদালত কঠিন শাস্তি দেয় নি।
আদালত হিরোশি মিয়ানোকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়, শিনজি মিনাতোকে ৫ থেকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, জো ওগুরাকে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং ইয়াসুশি ওয়াতানাবেকে ৫ থতেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে ফুরুতার ৪ খুনিই কারাগারের বাহিরে মুক্ত বাতাসে বেঁচে আছে। এখনো জাপানিরা আফসোস করে বলেন ফুরুতার মামলার সঠিক বিচার হলো না। জাপানিরা মন থেকে চান এমন নৃশংস ঘটনা যেনো জাপানের মাটিতে দ্বিতীয়বার আর না ঘটে।