You are currently viewing জন কীটস: আস্তাবল থেকে ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক যুগের শ্রেষ্ঠ কবি

জন কীটস: আস্তাবল থেকে ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক যুগের শ্রেষ্ঠ কবি

ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক যুগে যে কয়জন কবি সবচেয়ে বেশি দ্যুতি ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে জন কীটস অন্যতম। অনেকের মতে তিনিই রোমান্টিক যুগের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। অথচ তার জীবন ছিলো খুবই ক্ষণস্থায়ী মাত্র ২৫ বছরের জীবনে সাহিত্য জীবন মোটে ৩/৪ বছরের। এই স্বল্প সময়ে ইংরেজি সাহিত্যে নিজের পদচিহ্ন বেশ ভালো ভাবেই রেখে গেছেন।

জন কীটস এর জন্ম লন্ডন শহরে, তাও আবার সোয়ান ও হুপইন আস্তাবলের মধ্যে। কীটসের বাবা টমাস কীটস ছিলেন প্রথমে ভাড়াটে ঘোড়ার আস্তাবলের কর্মচারী, পরে সেই আস্তাবলের মালিকের কন্যা জেনিংসকে বিবাহ করে সেই ব্যবসায়ের মালিক হয়ে যান। কীটস রা চার ভাই , এক বোন। একভাই শৈশবে মারা যায়। কীটসের বাবার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল এবং অবস্থাপন্নই ছিলেন।

কীটসের বাবা ভেবেছিলেন যে ছেলেদের লেখাপড়ার জন্য তাদেরকে হ্যারোতে পাঠাবেন কিন্তু তা হলো না। এনফিল্ড – এর একটা নামকরা স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করে দিলেন। এখানে প্রধান শিক্ষকের ছেলে চার্লস কাউনডেন ক্লার্ক এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে। কাউনডেন ক্লার্ক ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি এবং সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি কীটসের মনে কবি কল্পনা বা কাব্য রচনা ও আস্বাদনের প্রেরণা জুগিয়ে দেন।

ছোটোবেলায় অবশ্য কীটসের পড়াশুনায় মন ছিল না। কেবল মারপিট আর মারামারিতে তাঁর উৎসাহ ছিল। কিন্তু স্কুলে এসে কাউডেন ক্লার্ক – এর সান্নিধ্যে তিনি এলিজাবেথীয় কবি স্পেন্সার ও নাট্যকার শেক্সপিয়রের কাব্য ও নাটকের সঙ্গে পরিচয় লাভ করেন। চ্যাপম্যান অনূদিত হোমারের ইলিয়াড এর সঙ্গেও তাঁর পরিচয় ঘটে। ১৮০৪ সালে কীটসের বাবা মারা যান। মা দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিবাহ সুখের না হওয়ায় তিনি বাবার বাড়ি ফেরত আসেন। ১৮১০ সালে তিনি ক্ষয়রোগে মারা যান। কীটসের বয়স তখন মাত্র ১৪!

মায়ের মৃত্যুর পর কীটস – এর দিদিমা কীটস কে স্কুল ছাড়িয়ে একজন চিকিৎসকের অধীনে শিক্ষানবিশের কাজে নিযুক্ত করে দেন। কিন্তু কীটস কিছুদিন পরে ডাক্তার ড্যামণ্ডের সঙ্গে ঝগড়া করে শিক্ষানবিশি ছেড়ে দিয়ে ১৮১৪ সালে লন্ডন চলে আসেন। এখানে সেন্ট টমাস হাসপাতালে বেশ কিছুদিন ধরে হাতে কলমে ডাক্তারি বিদ্যা শিখলেন। কিন্তু কীটসের জন্য এসব নয়। তার ভাবুক মন তখন ছুটে চলেছে কাব্যের মায়াময় জগতে।

১৮১৭ সালে ওসব ছেড়ে দিয়ে কাব্যের জগতে পুরোপুরি আত্মনিমগ্ন হলেন। এ সময়ে তিনি যাদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন তারা হলেন কবি জন হ্যামিলটন রেনল্ড, চিত্রশিল্পী সেভার্ন, সমালোচক হ্যাজলিট, কোলরীজ, ল্যাম্ব,শেলী।

কীটস – এর জীবনে প্রথম আঘাত এল যখন মেজভাই জর্জ কীটস আমেরিকা চলে গেল এবং ছোটোভাই টম কীটস ক্ষয়রোগে মারা গেল। কীটসের জীবনে তখন কেবল শুধুই শূন্যতা। তখন তিনি এক সাধারণ মেয়ে ফ্যানী ব্রনীর প্রেমে পড়লেন। কিন্তু ইতিমধ্যে ক্ষয়রোগে তাঁকেও আক্রমণ করেছে, ফলে কীটসের জীবনে প্রেমের মাধুর্য অপেক্ষা যান্ত্রণাই বৃদ্ধি পেল। বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে এলেন স্বাস্থ্য পরিবর্তনের জন্য ইতালিতে। কোনো সুরাহা হলো না। ১৮২১ সালে ২৮ শে ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫ বছর বয়সে কীটস ইহলোক ত্যাগ করে চলে গেলেন। রোমের প্রোটেস্টান্ট সমাধিভূমিতে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর স্বরচিত বাণী লেখা হলো সমাধিভূমির উপর

“এখানে এমন একজন শায়িত , যার নাম বারি ধারায় লেখা হয়েছিল।”

কীটসের রচনা

কীটসের প্রথম রচনা “ ইমিটেশন অব স্পেন্সার ” ( ১৮১৩ ) আঠারো বছর বয়সে রচিত । ১৮১৭ সালে তাঁর কবিতার প্রথম খণ্ড আত্মপ্রকাশ করে। খণ্ডটির নাম “ পোয়েমস ”। এই গ্রন্থটি লে হান্টের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত । এর কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা হলো , “ অন ফাস্ট লুকিং ইনটু চ্যাপম্যানস হোমার ” , “ স্লিপ অ্যান্ড পোয়েট্রি ” , এবং “ আই স্টুড টিপ টো আপন এ লিটল হিল ”।

জন কীটস: আস্তাবল থেকে ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি
কীটস এর প্রথম রচনা ইন ইমিটেশন অব স্পেন্সার Credit: poetry house

পরবর্তী খণ্ড ১৮১৮ সালে “ এণ্ডাইসিয়ন ” নামে প্রকাশিত হয় । এই কাব্যটির কাব্যমূল্য সম্বন্ধে সমালোচকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও কাব্যের প্রথম ছত্রটি “ A thing of beauty is a joy for ever ” ( সুন্দর বস্তু মাত্রই চিরকালে আনন্দ ) কেবলমাত্র কবি কীটসের কাব্যজীবনের মন্ত্রধ্বনি ছিল না , এর মর্মসত্য অনেক কবিকেই করেছে উদ্বোধিত , জুগিয়েছে প্রেরণা, করেছে পূজারি। ব্ল্যাকউড ম্যাগাজিন এবং কোয়াটার্লি ম্যাগাজিনের কঠিন সমালোচনার তীক্ষ্ণধার দাঁতের আঘাতেও তা বিক্ষত হয়নি । বরঞ্চ ঐ একটিমাত্র ছত্রই কালের কপোলতলে সমুজ্জ্বল হয়ে রইল । তার শেষ কাব্যখণ্ড “ লামিয়া অ্যান্ড আদার পোয়েমস প্রকাশিত হয় ১৮২০ সালে । তিন খণ্ডে তার সমগ্র রচনা প্রকাশিত হয় । শেষের খণ্ডটিতে রয়েছে কীটসের পরিণত প্রতিভার আলোকে সৃষ্ট কাব্যগুলো।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ব্রুটনিকা এনসাক্লোপিডিয়া, ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস- শীতল ঘোষ

Leave a Reply