You are currently viewing ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু পেশা

ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু পেশা

পেশা মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। আদিমকালে মানুষের পেশা ছিলো ‘পশু শিকার’ এরপর এলো কৃষিসহ আরো বহু রকমের পেশা। সময়ের সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে নিত্য নতুন পেশা, আর সেই সাথে অমেক পেশা হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে।

আজ তেমনই কিছু হারিয়ে যাওয়া পেশা সম্পর্কে জানাবো। আজকের এই সময়ে দাড়িয়ে আপনার কাছে সেই পেশাগুলো উদ্ভট ও হাসির মনেও হতে পারে।

হিউম্যান এলার্ম ঘড়ি

কখনে ভেবে দেখেছেন এলার্ম ঘড়ি না থাকলে আপনাকে কে জাগিয়ে তুলতো? তেমনই এক চাকরি ছিলো মানুষকে জাগিয়ে তোলার।

১৮ শতকের গ্রেট ব্রিটেনে শিল্পবিপ্লব শুরু হলে এই পেশার উদ্ভব হয়। সে সময়ে শিল্প-কারখানা গুলোতে প্রচুর পরিমানে শ্রমিক কাজ করতো। এই শ্রমিকদের খুব সকালে কারখানার কাজে যোগ দিতে হতো। আর তাদেরকে খুব ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তোলার জন্য তারা নকার আপার্সদের সাপ্তাহিক বা মাসিক নেতনের বিনিময়ে ভাড়া করতো।

Image Credit: History Undusted

এলার্ম-ঘড়ি আবিস্কারের পর তা যখন সহজলভ্য হয়ে যায় এই পেশা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৫০/৬০ এর দশকেও ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় নকার আপার্সদের দেখা যেতো।

চিমনি সুইপার

চিমনির প্রথম ব্যবহার ইতালিতে ১৩ শতাব্দীতে পাওয়া যায়। তবে এটি ১৬ শতাব্দীর দিকে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময়ে, অনেকেই প্রায় প্রতিটি ঘরে ফায়ারপ্লেস দিয়ে তাদের ঘর তৈরি করেছিলেন।

প্রথম দিকে চিমনির ব্যবহার শুধু শাসক শ্রেণীর মধ্যে প্রচলিত ছিল। কারো বাড়িতে চিমনি থাকার মানে ছিলো তারা বিত্তবান। সময়ের সাথে সাথে গরীব শ্রমিক শ্রেণীর বাড়িতেও চিমনির ব্যবহার শুরু হয়। সকল শ্রেণীর মানুষের বাড়িতে চিমনির ব্যবহারের কারণ ছিল নগরায়ন এবং শিল্পায়নের দ্রুত বৃদ্ধি।

শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হতে থাকলে সেই বিল্ডিং গুলোর চিমনি পরিষ্কার করতে গিয়ে পড়তে হতো ঝামেলায়। যেহেতু চিমনিগুলোতে কাঠ কয়লা ব্যবহার করা হতো তাই সেগুলো ঘনঘন ময়লা হয়ে যেতো। আর সেই ময়লা পরিষ্কার করার জন্য পেশাদার চিমনি পরিষ্কারকের প্রয়োজন শুরু হয়।

Image credit: Rare photograph

চিমনি সুইপাররা চিমনি পরিষ্কার করার জন্য নিজের সঙ্গে একজন শিশু রাখতো। এই শিশুরা ছিলো অনাথ। যেহেতু চিমনিগুলো বেশিরভাগই সরু ছিলো সেগুলো ঝাড়ু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা যেতো নাই, আর তাই পরিষ্কার করার জন্য মাষ্টার সুইপাররা শিশুদেরকেই চিমনির পাইপে ঢুকিয়ে দিতেন। চিমনির ভেতরে ঢুকে শিশুদের শারিরীক ক্ষতি হতো এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে। গত শতকের শুরুর চিমনি ঝাড়ু আবিষ্কার হওয়ার পর চিমনি সুইপারদের ব্যবহার কমে যেতে শুরু করে।


ইঁদুর ধরার চাকরি

ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউরোপীয়রা কিছু কর্মী নিয়োগ করেছিলো যাদের কাজ ছিলো ইঁদুর ধরে মেরে ফেলা, কারণ ইউরোপে তখন ইঁদুরের উপদ্রব ছিলো খুবই বেশি।

ইঁদুর ধরার জন্য প্রায়শই তাদেরকে নর্দমার ড্রেনে ঢুকতে হতো Iage Credit: Rare Photo
পেশাদার ইঁদুর ধরা। নিম্নবিত্ত এবং অশিক্ষিত পুরুষেরা এই কাজটি করতে পারত কারণ তাদের নিজেদের এবং তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। Image Credit: Rare History Photos

এই ইঁদুরের কারনেই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহামারী ব্ল্যাক ডেথ সৃষ্টি হয়েছিলো। কারণ ইঁদুর প্লেগ জীবানু বহন করে। এই ইঁদুর ধরার কাজটি মোটেও সহজ ছিলো না। ইঁদুরের কামরে রোগ হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি ছিলো। ইঁদুর ধরার জন্য সাধারণত হাত দিয়েই ধরা হতো, অনেকে আবার ইঁদুর ধরার জন্য বেশ কিছু অভিনব পন্থাও আবিষ্কার করেছিলেন। ইঁদুর ধরা ও মারার বিভিন্ন ঔষধ আবিষ্কারের ফলে বতমানে এই পেশার প্রচলন আর নেই।

লেকটর

একটানা কাজ করতে করতে যে কারো মাঝেই একঘেয়েমি চলে আসতে বাধ্য। কিন্তু এটা আবার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লোকসানের বিষয়।

এজন্যই একসময় পাশ্চাত্য দুনিয়ার ফ্যাক্টরিগুলোতে লেক্টর হিসেবে একজনকে নিয়োগ দেয়া হতো, যার কাজ থাকতে নিয়মিত খবর ও নানা সাহিত্যকর্ম পড়ে শোনানোর মাধ্যমে সহকর্মীদের চাঙ্গা রাখা

Image Crdit: Rare Historical Photos

ছবিতে উঁচু জায়গায় বসা তেমনই একজন লেক্টরকে দেখা যাচ্ছে। ১৯২৯ সালের এই ছবিটি ফ্লোরিডার কুয়েস্তারে সিগার কোম্পানি থেকে তোলা।