ইংরেজি সাহিত্যে পুরুষদের থেকে নারীদের অবস্থা অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও জেন অস্টিন সেখানে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। জেন অস্টিন এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম খুবই সংক্ষিপ্ত বেশিরভাগ সাহিত্য কর্মই অপ্রকাশিত অবস্থায় রেখেই মারা যান।
জেন অস্টিন এর সাহিত্যকর্ম দেখে স্যার ওয়াল্টার স্কট একদা বলেছিলেন,
The big bow- now strain I can do myself, like any now going: but the exquisite touch that renders common place things and characters interesting from the truth of the description and the sentiment is denied me.
জেন অস্টিন এর জন্ম ১৭৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্টিভেনটন নামক ছোট্ট একটি গ্রামে। ইংল্যান্ডের নর্থ হানটস- এর শ্বেতপাথরের পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত। শহর থেকে অনেকটাই দূরের এই নির্জন, শান্ত ও কোলাহল বিহীন গ্রাম্য পরিবেশেই বেড়ে উঠেছিলেন জেন অস্টিন।
জেন অস্টিনের বাবা ছিলেন হমসশায়রের গির্জার পাদরি আর মা ক্যাসান্ড্রা অস্টিন। অস্টিনরা ভাই-বোন সব মিলিয়ে ছিলেন ৭ জন। ২ ভাই আর ৫ বোনের মধ্যে জেন অস্টিন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। জেন অস্টিনের বাবা ছিলেন পন্ডিত, নিষ্ঠাবান ও রুচিশীল মানুষ, মা-ও তাই। আর তাই পড়াশোনা করার ব্যাপারে কোনো সমস্যা হয়নি জেন অস্টিন এর। জেন অস্টিন কোনো স্কুল কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন নি, বাবার তত্বাবধানে বাড়িতেই পড়াশোনা করেছেন। অবশ্য জেন অস্টিন যে সময়টায় জন্মেছিলেন সে সময়ে ইংল্যান্ড (বলা যায় পুরো ইউরোপে) মেয়েদের স্কুল কলেজে গিয়ে পড়াশোনার নিয়ম ছিল না।
জেন অস্টিনের বাবা তাকে বেশ যত্নসহকারে লেখাপড়া শিখিয়েছেন আর অস্টিন ও গভীর মনোযোগ এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে লেখাপড়া শিখেছেন। একটা সময় এই গ্রন্থ পাঠই হয়ে উঠলো জীবনের আনন্দ উপভোগের একমাত্র উপায়। সবসময় যে বই-পুস্তক নিয়েই গ্রামে পড়েছিলেন তাও একদম ঠিক নয়, জীবনের একঘেয়েমি ঘুছানোর জন্য কখনে কখনো শহরে গেছেন থিয়েটারও দেখেছেন। তবে অধ্যায়নই ছিলো তার একমাত্র ও প্রধান নেশা।
অন্যান্য লেখক লেখিকাদের জীবন ঘটনাবহুল বা ট্রাজেডিময় ঘটনা থাকলেও জেন অস্টিনের জীবনে তেমন কোনো ঘটনা নেই। জেন অস্টিন যে সময়টায় জন্মেছিলেন সে সময় পুরো ইউরোপে বইছিলো ফরাসি বিপ্লবের ঝঞ্ঝাবায়ু, আর শিল্পবিপ্লব এনেছিলো সাধারণ মানুষের জীবনে কর্মচাঞ্চল্য। অথচ এসবের কোনো কিছুই যেনো জেন অস্টিনের জীবন কে স্পর্শ করতে পারে নি। জেন অস্টেন সে সব প্রভাবকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে নির্জন পল্লিজীবনের মধ্যে রহস্যময় মানব জীবনের বৈচিত্র্যের স্বাদ গ্রহণ করে নিজেকে পরিপূর্ণ করে তুলেছেন।
জেন অস্টিন স্বভাব চরিত্রে ছিলেন শান্ত, ধীর, স্থির, গম্ভীর, বিনম্র, মৃদু কৌতুকভাষিণী। অসাধারণ ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন নারী তাই সৃষ্টির সুখে সকলে আড়ালে সাহিত্য সাধনা করেছেন সারা জীবন ধরে। তবে লিখে গেলেও সেই লেখা পাঠকের কাছে পৌছানোর জন্য প্রকাশক জুটেনি জেন অস্টিনের। মৃত্যুর কিছুকাল আগে এক প্রকাশক জুটলেও তা জীবিত অবস্থায় তা ছাপানো অবস্থায় দেখে যেতে পারেন নি।
জেন অস্টিনের সাহিত্যকর্ম ও সাহিত্যের ধরণ
জেন অস্টিন তার ক্ষুদ্র জীবনে আটখানা উপন্যাস রচনা করেছিলেন, যার মধ্যে ৪ টি উপন্যাস অসম্পূর্ণ অবস্থায় রেখেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
তার রচিত উপন্যাসগুলো হলোঃ-
Pride and prejudice
Sense and Sensibility
Mansfield Park
Emma
Northanger Abbey
Persuation
Love and friendship (অসমাপ্ত)
The Watsons Lady Susan (অসমাপ্ত)
Sandition (অসমাপ্ত)
জেন অস্টিনের এই সব সকল উপন্যাসই অষ্টাদশ শতকের ইংল্যান্ডের সমাজব্যবস্থ নিয়ে লেখা। আর তার উপন্যাসের প্লট হচ্ছে ইংল্যান্ডের মধ্যবিত্ত পরিবারে সমস্যা নিয়ে। বিত্তমান পুরুষ খোঁজে সুন্দরী স্ত্রী আর বিত্তহীন সুন্দরী রমণীরা খোঁজে বিত্তবান পুরুষ। কারণ তাহলেই তো জীবনের ভবিষ্যৎ হবে সুনিশ্চিত। মধ্যবিত্ত পরিবারে বিবাহ সমস্যা একটা প্রধান সমস্যা এটাই তার সকল উপন্যাসে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়েছে।
এছাড়া সমাজের এলিট শ্রেণীর মানুষরা সাধারণ মানুষদের খুবই ছোট দৃষ্টিতে দেখা হয় সে বিষয়টিও তার উপন্যাসের ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তার উপন্যাসের পুরুষদেরকে নারীদের তুলনায় কম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নারী চরিত্রগুলো তিনি যেভাবে একেছেন পুরুষদের ক্ষেত্রে ততোটা করেন নি। এছাড়া এই উপন্যাসের পুরুষদের রাজনীতির সাথেও কোনো সম্পর্ক নেই! অথচ যে সময়টায় অস্টিন লেখাগুলো লিখেছিলেন ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিলো উত্তাল। কিন্তু তার কোনো প্রভাব তার উপন্যাসে দেখা যায় নি।
অসুস্থতা এবং মৃত্যু
১৮১৬ সালের প্রথম দিকে অস্টেন অসুস্থ হয়ে পরেন, কিন্তু অসুস্থতার গুরুতর লক্ষণগুলি তিনি উপেক্ষা করে থাকেন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। ১৯৬৪ সালে জ্যাকারি কোপ জেনের মৃত্যুর কারন হিসাবে অ্যাডিসন রোগকে দায়ী করেন এবং জেনের বেশিরভাগ জীবনীকার তার মতকেই মান্য করেন, যদিও হজকিনের লিম্ফোমা -কে তার চূড়ান্ত অসুস্থতার কারন হিসাবে ধরা হয়। যখন তার কাকার মারা গেলেন এবং তার আত্মীয়দের বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পত্তি তার স্ত্রী -কে দান করে গেলেন, তখন জেন পুনরায় অসুস্থ হয়ে পরেন, তখনকার তার লিখিত একটি পত্রে তিনি এই কথা উল্লেখ করেছিলেন।
অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি তার সাহিত্য রচনার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। দ্য ইলিয়টস -এর সমাপ্তি নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাই চূড়ান্ত দুটি অধ্যায় তিনি পুনরায় সংশোধিত করে নতুনভাবে লেখেন এবং ১৮১৬ সালের ৬ আগস্ট তিনি সম্পূর্ণ লেখার কাজ শেষ করেন। ১৮১৭ সালের জানুয়ারিতে, অস্টেন দ্য ব্রাদার্স উপন্যাসটির কাজ শুরু করেছিলেন যা ১৯২৫ সালে স্যান্ডিটন শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি উপন্যাসটির বারোটি অধ্যায় লেখেন এবং সম্ভবত অসুস্থতার কারণে ১৮১৭ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তাকে লেখার কাজ বন্ধ করতে হয়। লেখার কাজ বন্ধ করার পাঁচদিন পর তিনি তার নিজের সম্পর্কে লিখেছিলেন যে, তার বর্নবিভ্রান্তি হচ্ছে এবং দিনের বেশিরভাগ সময় তিনি সোফায় বসে কাটাচ্ছেন। জানা যায় যে, ১৮১৭ সালের ১৮ ই মার্চ তিনি লেখার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। পারসুয়েসন উপন্যাসের চূড়ান্ত সংশোধিত পান্ডুলিপিটিই সম্ভবত তার নিজের হাতে লেখা শেষ লেখনি।
অসুস্থতা বাড়ার সাথে সাথে অস্টেনের, হাটাচলার সমস্যা হতে শুরু করে এবং তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।মে মাসে, ক্যাসান্দ্রা এবং হেনরি তাকে চিকিৎসার জন্য উইনচেস্টারে নিয়ে আসেন, সেই সময়ে তিনি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে ছিলেন। ১৮১৭ সালের ১৮ জুলাই উইনচেস্টারে মাত্র ৪১ বছর বয়সে অস্টেন মারা যান।
Reference
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Jane_Austen
https://www.britannica.com/biography/Jane-Austen