You are currently viewing ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম শাস্তি: বাবা ও ছেলেকে জীবন্ত সিদ্ধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে

ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম শাস্তি: বাবা ও ছেলেকে জীবন্ত সিদ্ধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে

ছবির এই লোকটিকে জীবন্ত সিদ্ধ করে মারা হচ্ছে আর হাত দিয়ে একটি শিশুকে তিনি শূণ্যে তুলে ধরে আছেন,যেনো শিশুটিকে গরম পানি স্পর্শ করতে না পারে।
এই পেইন্টিং টি জাপানের সবচেয়ে বিখ্যাত পেইন্টিং গুলোর একটি, পেইন্টিং টি তৈরি করেছিলেন জাপানি চিত্রশিল্পী ‘টোয়োকুনি ইচিওসাই’।

দূর্ভাগ্যবশত এটি শুধুমাত্র একটি ছবি নয়, ছবিটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা কে কেন্দ্র করে অঙ্কিত। ছবির এই ব্যাক্তির নাম ইশকাওয়া গোয়েমন। তিনি জন্মেছিলেন ১৬ শতকে, জাপানিজ বাবাদের কাছে তিনি একজন আদর্শ পিতা।

তাকে জাপানের ইতিহাসের রবিনহুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে ধনীদের অতিরিক্ত অর্থ লুট করে গরীবদের মাঝে ভাগ করে দিতো।

জাপানের সেনগোকু আমলের যুদ্ধবাজ সম্রাট টয়োটমি হিদেয়োশিয়া কে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। শুধু ব্যর্থই হননি, তিনি সম্রাটের পেয়াদাদের হাতে ধরা পরে যান।

সম্রাট কে হামলার চেষ্টা করায় তৎক্ষনাৎ তাকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। তার মৃত্যুদন্ডাদেশ ছিল একদম আলাদা ও ভয়ানক। তাকে ফুটন্ত তরলে সেদ্ধ করে মৃত্যু আদেশ দেয়া হয়।

শুধু তাকেই মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়ে সম্রাট ক্ষান্ত হননি। তিনি ইশিকাওয়া গোয়েমন এর নবজাত ছেলে সন্তানকে একসাথে সেদ্ধ করার আদেশ দেন।

মৃত্যুর জন্য বাবা ও ছেলে দুজনকে বড় করাইয়ের তরলে বসানো হয়। এরপর কড়াইয়ের তলায় আগুন দিয়ে তাপ দেয়া শুরু করে। ছেলেকে বাঁচাতে ইশিকাওয়া গোয়েমন হাত দিয়ে উপরে তুলে রাখেন যেনো গরম তরল তার ছেলের শরীর স্পর্শ করতে না পারে। দীর্ঘক্ষণ সহ্য করার পর আর ছেলেকে তুলে ধরে রাখতে পারে নি ইশিকাওয়া গোয়েমন। বাবা ও ছেলে দু’জনেরই মৃত্যু হয়।

ইশিকাওয়া গোয়েমন কে ছিলেন?

ইশিকাওয়া গোয়েমন Image source: Wikipedia

ইশিকাওয়া গোয়েমন কে নিয়ে অনেক রকমের গল্প প্রচলিত আছে। তারমধ্যে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য টি হচ্ছে ইশিকাওয়া গোয়েমন ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তখন জাপান ‘আশিকাগা শোগুনাতের’ শাসনাধীন ছিল।

ইশিকাওয়া গোয়েমন জাপানের ইগা প্রদেশের শক্তিশালী মিয়োশি বংশের একটি সামুরাই পরিবারে সানাদা কুরানোশিন হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ইশিকাওয়া গোয়েমন এর বয়স যখন ১৫ বছর তখন তার বাবা ইশিকাওয়া আকাশি কে আশিকাগা শোগুনেটের (১৩-১৬ শতাব্দী পর্যন্ত একটি জাপানি সেনাবাহিনীর নাম) লোকেরা হত্যা করে।

বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইশিকাওয়া গোয়েমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। আর তাই তিনি ইগা নিনজুতসুর (মার্শাল আর্টের মতো এক ধরনের প্রতিরক্ষা বিদ্যা) প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য মোমোচি নামের এক মাস্টার এর নিক দারস্থ হন।

ইগা নিনজুতসু প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় ইশিকাওয়া গোয়েমন এর তার মাস্টারের স্ত্রীর সাথেই একটি রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মাস্টার মোমোচি সান্দায়ু যখন এই ব্যাপারে জানতে পারেন তখন ইশিকাওয়া গোয়েমন সেখান থেকে পালিয়ে যান। তবে খালি হাতে পালিয়ে যান নি! সঙ্গে করে মাস্টার এর সবচেয়ে মূল্যবান তলোয়ার টি সাথে করে নিয়ে যান।

বেশ কিছু সূত্রে জানা যায় ইশিকাওয়া গোয়েমন পালিয়ে কিয়োটা শহরে চলে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই তিনি তার চুরির পেশাগত জীবন শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি একটু চোরে দল তৈরি করে, পুরো শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি করেন।

ইশিকাওয়া গোয়েমন এর চোর এর দল বা ডাকাতের দল যাই বলি না কেনো তারা দিনের বেলা শিকার খুঁজত আর রাতের বেলা ডাকাতি করতো। তারা ডাকাতি করতো ধনী শ্রেণীর বাড়িতে, আর দিনের বেলা শিকার খুঁজতো ব্যবসায়ীর রূপ ধরে।

শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা না পড়তে তারা চুরির অর্থ ও জিনিসপত্র লুকিয়ে গরীবদের বাড়ির সামনে রেখে যেতো।

ইশিকাওয়া গোয়েমন ও তার দলের কর্মকাণ্ডের জন্য তারা জাপানে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দরিদ্র শ্রেণীর মানুষরা তাদের দেখতো বীর হিসেবে।

ইশিকাওয়া গোয়েমন ধরা পড়লেন যেভাবে

ইশিকাওয়া গোয়েমন এর পতন নিয়ে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত আছে।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে,
কোনো এক ভুলে ইশিকাওয়া গোয়েমন এর অনুসারীরা ধরা পরে যায় এবং তাদেরকে তাদের নেতাদের নাম প্রকাশ করার জন্য নির্যাতন করা হচ্ছিল। একটা সময়ে তারা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের নেতা ইশিকাওয়া গোয়েমন এর নাম বলে দেয় এবং তাকে গ্রেফতার করে।

সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য গল্পটি হচ্ছে,

ইশিকাওয়া গোয়েমন সেসময় যুদ্ধবাজ সম্রাট টয়োটমি হিদেয়োশিয়া এর প্রাসাদে প্রবেশ করেছিলেন। সেসময়কার লোকজন বিশ্বাস করতো যে টয়োটমি হিদেয়োশিয়া প্রাসাদে ঢুকেছিলেন কোনো মূল্যবান জিনিস চুরি করতে। কিন্তু টয়োটমি হিদেয়োশিয়া ভেবেছে তাকে হত্যা করতেই ইশিকাওয়া গোয়েমন প্রাসাদে ডুকেছিল।

কথিত আছে যে হিদেয়োশির কাছে একটি জাদুকরী ধূপ বার্নারের অধিকারী ছিল যা তার ঘরে অনুপ্রবেশকারীকে সনাক্ত করতে পারতো। আর ইশিকাওয়া গোয়েমন এর ও দূর্ভাগ্য সঙ্গে সঙ্গেই রাজার রক্ষীরা তাকে ধরে ফেলে এবং বন্দী করে ইশিকাওয়া গোয়েমনকে।

ইশিকাওয়া গোয়েমন কে সম্রাট টয়োটমি হিদেয়োশিয়া মৃত্যুদন্ডের ঘোষণা দেন। তাও যেমন তেমন ধরনের মৃত্যু নয়। নিজের সন্তানের সাথে ইশিকাওয়া গোয়েমন কে তেলের কড়াইয়ে সেদ্ধ করে মৃত্যুর নির্দেশ দেন।

তেলের কড়াইয়ে তেল গরম হচ্ছে আর ইশিকাওয়া গোয়েমন তার শিশু সন্তান কে হাত দিয়ে উপরে তুলে রাখছেন। যেনো গরম তেল তাকে স্পর্শ না করতে পারে। যতক্ষণ ইশিকাওয়া গোয়েমন বেঁচে ছিলো ততক্ষণ সে হাত দিয়ে ছেলেকে শূণ্যে তুলে ধরে রেখেছিল

সেদ্ধ করে মৃত্যুদন্ড শুধু জাপানেই হতো না!

ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরির শাসনামলে কেউ কাউকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করলে তাকে জীবন্ত সেদ্ধ করে মৃত্যু দেওয়া হতো। সেসময় ইংল্যান্ডে বিষ পান করিয়ে হত্যা করাকে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ মনে করতো।

সিদ্ধ করে মৃত্যু দেওয়ার জন্য তরল হিসেবে পানি, তেল, আলকাতরা ছাড়াও মদেরও ব্যবহার করা হতো।

সেদ্ধ করে মৃত্যু দেওয়ার এই নিষ্ঠুরতম শাস্তি কেবল জাপান নয়, এশিয়া ইউরোপের অনেক অঞ্চলেই প্রচলিত ছিলো

রাজা অষ্টম হেনরির সময়ের একটি ঘটনা, রিচার্ড রুজ নামে এক রান্নার বাবুর্চি বেশ কিছু লোককে বিষযুক্ত খাবার দিয়েছিলেন, যার ফলে কিছু লোক মারা গিয়েছিল।
রুজকে জীবন্ত সিদ্ধ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

রিচার্ড রুজ করে ফুটন্ত পানিতে নিক্ষেপ করা হয়। সে বার বার সেই বড় কড়াই থেকে নেমে যেতে চাচ্ছিলো, তাই তাকে একবার সেখানে ঢুকানো হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত তা চলতে থাকে, যতক্ষণ না তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

সেসময় পত্র-পত্রিকায় এটা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিলঃ-
রিচার্ড জোরে জোরে গর্জন করছিলো, সেসময় যেসব তার মৃত্যু দেখছিলো তারা সকলেই অসুস্থবোধ করছিলো, বপশ কয়েকজন নারী তা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

বিষপানের অপরাধ ছাড়াও মধ্যযুগে কেউ জাল দলিল, প্রতারণা বা মুদ্রা জাল করে ধরা পড়লে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যু দেওয়ার পরিবর্তে সেদ্ধ করে মৃত্যু কার্যকর দেওয়া হতো।

আধুনিক যুগেও কি এমন মৃত্যু প্রচলিত?

যে কেউ এই প্রশ্নের উত্তরে বলবে, না! অসম্ভব!! এই যুগে কারো এমন বর্বর মৃত্যুদন্ড দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ এমন মৃত্যু দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না।

২০০৪ সালে মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছিল যে উজবেকিস্তানে দু’জন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের শত্রু হওয়ার কারণে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।

একজন প্রাক্তন ISIS (Islamic State of Iraq and the Levant) কমান্ডার আবু আববুদ আল রাক্কাভি, আইসিসের নৃশংস মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ছিলো ইঞ্জিন তেলে জীবিত বন্দীদের ফুটানো।

তার ভাস্যমতে,
কিছু লোককে ইঞ্জিন তেলে জীবন্ত সিদ্ধ করা হয়েছিল। শিকারকে ফুটন্ত তেলে ফেলে দেওয়ার আগে তারা এক ঘণ্টা আগুনে কাঠ দিয়ে পোড়াতো।

Leave a Reply

This Post Has One Comment

  1. anwar

    এর চেয়েও নিষ্ঠুরতম ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের সড়কে প্রতিদিন কিন্তু ঘাতক ধরা নিষিদ্ধ? বছরে সড়কে হত্যাকাণ্ডের শিকার ২৫০০০ এর অধিক, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর ! তার মানে এই যাবত সড়ক হত্যাকাণ্ডের শিকার ১২, ৫০,০০০ ( সাড়ে বার লাখের বেশি মানুষ) আর আন্দোলন হয় ২টি, ১ বিপিএউ এর আব্রার – তাই আব্রার ব্রিজ হয়েছে, ২ নটরডেম নাইম এর নামে ব্রিজ হবে, ব্রিজের নামকরন আর ঘাতক ধরা হয় শুধু মাত্র আন্দোলন এর ভয়ে আর না হয়, কেউ সড়কের হত্যা নিয়ে ভাবে না – ভাবার সময় কৈ , ঘাতকরা সব সময়েই জামাই আদরে !! মেধাবী শিক্ষার্থী আদনান তাসিন কে শিক্ষার্থী পোশাকে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হতে দেখে ২০১৮ সালের এই ( বিমান বন্দর সড়ক #আদনান_তাসিন_চত্তর) এস্থানের রমিজুদ্দিন শিক্ষার্থী দিয়া করিম আন্দোলনের কারনে সৃষ্ট রাগ – জিদ – ক্ষোভের কারনে পরিবহন ঘাতক ইচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করে মেধাবী শিক্ষার্থী আদনান তাসিন যে, জেব্রা ক্রসিঙের উপর হত্যা করা হয় প্রায় ৩ বছর কিন্তু ঘাতককে নাকি খুঁজেও পাওয়া যায় না – -২০১৮ সালের সড়ক আন্দোলনের প্রথম শহীদ মেধাবী শিক্ষার্থী আদনান তাসিন হত্যার বিচার চাই – ঘাতকদের ফাঁসি চাই :