You are currently viewing পৃথিবীর বিখ্যাত ৪ টি কাকতালীয় ঘটনা

পৃথিবীর বিখ্যাত ৪ টি কাকতালীয় ঘটনা

বিচিত্র এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই বহু ঘটনা ঘটে চলেছে। এতো এতো সব ঘটনার মাঝে আমরা মাঝে মাঝেই একটি ঘটনার সাথে আরেকটি ঘটনায় কিছু বা পুরোপুরি মিল বা বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই। আর এই ঘটনাকে আমরা বলি কাকতালীয় আর ইংরেজিতে কোয়েনসিডেন্স। 

আমাদের প্রায় কমবেশি সবারই জীবনে কাকতালীয় ঘটনা ঘটে; আমরা নিজেরাই কখনো কখনো সেসব ঘটনার মিল খুঁজে চমৎকৃত হই। প্রিয় পাঠক এই ব্লগে আপনার সাথে পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু কাকতালীয় ঘটনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। এই কাকতালীয় ঘটনাগুলো ইতিহাসের আরো বহু কাকতালীয় ঘটনার থেকে নিজেদের বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

অ্যাডগার অ্যালান পো’র নরখাদক ভবিষ্যৎবাণী

মার্কিন কবি ও ছোটগল্পকার এডগার অ্যালান পো তার সাহিত্য জীবনে অনেক ছোটগল্প লিখলেও উপন্যাস লিখেছেন মাত্র একটি—ন্যারেটিভ অব আর্থার গর্ডন পিম ন্যানটাকিট। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৮৩৮ সালে। 

এই উপন্যাসের কাহিনী ছিলো সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে ৪ নাবিক সমুদ্রে একসাথে পথ হারিয়ে ফেলেন। সেই সাথে খাবারের অভাবে তারা ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। নাবিকদের একজন প্রস্তাব করেন তাদের মধ্যে থেকেই একজনকে খেয়ে ফেলার জন্য। এজন্য তারা একটি খেলার প্রস্তাব দেয়। যে সবচেয়ে ছোট দাগ আঁকবে, সে বাকি ৩ জনের খাবার হবে। সেই খেলায় সবচেয়ে ছোট দাগ কাটেন রিচার্ড পার্কার। আর এরপর তার বাকি ৩ জন সহযোগী নাবিক রিচার্ড পার্কারের মাংস খেয়ে ফেলেন।

মার্কিন সাহিত্যিক এডগার অ্যালান পো Image Credit: Wikipedia Commons

অ্যাডগার অ্যালান পো অবশ্য দাবি করেন উপন্যাসটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত। কিন্তু তখন তাঁর সমসাময়িক কোনো সমালোচক বা পাঠক পোর দাবিকে সত্য বলে মানতে চাননি। কিন্তু অলৌকিকভাবে বই প্রকাশের ঠিক ৫ বছর পর, উপন্যাসের ঘটনার মতো একটি জাহাজডুবি ঘটে। এমনকি ওই উপন্যাসের একটি চরিত্রের সঙ্গে বাস্তব ঘটনার একজন নাবিকের নামেরও মিল পাওয়া যায়—রিচার্ড পার্কার। 

শুধু তাই নয়, পোর মৃত্যুর পর ১৮৮৪ সালে আরেকটি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে এবং পরবর্তীকালে রিচার্ড পার্কার নামের একজনের মৃত্যু হয় নরখাদকদের হাতে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বহু আগে লেখা ন্যারেটিভ অব আর্থার গর্ডন পিম ন্যানটাকিট–এর রিচার্ড পার্কারের মৃত্যুও হয়েছিল একইভাবে।

আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্ডিনান্ডের লাইসেন্স প্লেট ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

২৮ জুন ১৯১৪ সাল, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের যুবরাজ ফার্ডিনান্ড ও তার স্ত্রী কাউন্টেস সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সারাজেভো ভ্রমণের সময় সার্বিয়ান জাতীয়তাবাদী গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপের গুলিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই নিহত হয়। গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপের স্বপ্ন ছিল বসনিয়াকে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য থেকে মুক্ত করে সার্বিয়ার সাথে যুক্ত করা।

আরো পড়ুন:  বাঘ ও সিংহের মধ্যকার লড়াইয়ে কে জিতবে?
ফার্ডিনান্ড ও সোফিয়া Image Courtesy: Brittanica

ইতিহাসবিদরা এই ঘটনাটিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হিসবে উল্লেখ করেছেন। কারণ এই হত্যা জুলাই সংকটের সৃষ্টি করেছিলো ফলাফল হিসবে সেই সময়কার প্রধান ও শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো একে-অপরের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। প্রিন্সিপ মূলত একজন সার্বিয়ান সরকারের সিক্রেট এজেন্সির সদস্য ছিলেন। এর ফলেই অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করে, শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের। 

অস্ট্রে-হাঙ্গেরির যুবরাজ ফার্ডিনান্ড ও তার স্ত্রী সোফিয়া খুন হবার সময় যে গাড়ির ভেতর ছিলেন সেই গাড়ির লাইসেন্স প্লটের নম্বর ছিলো ‘AIII 118’, প্রথম দেখাই এই অক্ষরগুলো আপনার কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।কিন্তু একটু খেয়াল করলে এই শব্দের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আপনার নজরে পড়বে।  

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিলো ১৯১৮ সালের ১১ মাসের ১১ তম দিনে অর্থাৎ ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ। এই দিনে পৃথিবীর এখনও কিছু দেশ যুদ্ধবিগ্রহ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। আর এই দিনে যে চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিলো সেই চুক্তি আরমিসটিস নামে পরিচিত, বাংলায় যার অর্থ ‘সংঘাতের সমাপ্তি’। 

যদি আমরা আবার লাইসেন্স প্লেটের অক্ষরগুলির দিকে ফিরে তাকাই, কেউ তাদের এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে: A-11–11–18, লাইসেন্স প্লেটের নম্বরটি নির্দেশ করছে ১১ তারিখ ১১ মাস ১৯১৮ সালে সেই সাথে রয়েছে আরমিসটিস এর “A”।

এটি অবশ্যই একটি কাকতালীয় ঘটনা। তবে একটু অবাক তো আমাদের সবাইকে করায়, যা দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটেছিলো সেখানেই তো সমাপ্তির তারিখ অগোচরে বলে দেওয়া রয়েছে।

আব্রাহাম লিংকন ও  জন এফ কেনেডি

আব্রাহাম লিংকন ও জন এফ. কেনেডি আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত ও আলোচিত রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে অন্যতম। দুজন প্রেসিডেন্ট দুটে পৃথক শতাব্দীতে জন্মালেও তাদের জীবনে ভয়ংকর কিছু কাকতালীয় মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

আব্রাহাম লিংকন ও জন এফ. কেনেডি Image Courtesy: Wikipedia Commons

আব্রাহাম লিংকন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ১৮৪৬ সালে এবং রাষ্ট্রপতি হিসবে নির্বাচিত হন ১৮৬১ সালে। ঠিক ১০০ বছর পরে কেনেডি ১৯৪৬ সালে কংগ্রেসের সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রপতি হন। দুটো ক্ষেত্রেই বরাবর ১০০ বছর। সংখ্যা ও এক শুধু আলাদা দুটো শতাব্দী। 

লিংকন ও কেনেডির মধ্যে আরো সাদৃশ্য পাওয়া যায়। যেমন তাদের দুজনেরই চারটি করে সন্তান ছিলো। দুজনই শুক্রবারে আততায়ীর হাতে হত্যার শিকার হয় এবং দুজনের পাশেই তাদের স্ত্রী বসে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলি করা হয়। লিঙ্কনকে ফোর্ডের থিয়েটারে হত্যা করা হয়েছিল, আর কেনেডিকে ফোর্ড মোটর কোম্পানির তৈরি একটি গাড়িতে চলমান অবস্থায় হত্যা করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন:  কেমন ছিলো প্রাচীন রোমের মানুষদের জীবন?

তাদের দুজনের মৃত্যুর পরেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলো। অ্যান্ড্রু জনসন (ডি-টেনেসি) লিঙ্কনের স্থলাভিষিক্ত হন এবং লিন্ডন বেইনস জনসন (ডি-টেক্সাস) কেনেডির স্থলাভিষিক্ত হন। আরো লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে তাদের দুজনের নামের শেষে জনসন রয়েছে।

ভায়োলেট জেসপ 

ভায়োলেট জেসপ ছিলেন একজন আইরিশ-আরজেন্টাইন। পেশায় তিনি ছিলেন জাহাজের নার্স। জেসপ ঐতিহাসিক ৩ জাহাজ টাইটানিক, ব্রিটানিক ও অলিম্পিকে চাড়ছিলেন জাহাজের দায়িত্বরত নার্স হিসেবে। 

১৯১১ সালে অলিম্পিক জাহাজ এক যুদ্ধজাহাজের সাথে সংঘর্ষে ডুবে যায়, ১৯১২ সালে টাইটানিক এক আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়, ১৯১৬ সালে ব্রিটানিক পানির তলদেশে থাকা মাইনে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়।

ভায়োলেট জোসেপ Image Courtesy: Reddit

সবগুলো জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছিলো মাত্র ৫ বছরেই। আর আশ্চর্যজনক ভাবে ভায়োলেট জেসপ বেঁচে ফিরে এসেছিলেন এই সবগুলো ডুবন্ত জাহাজ থেকেই!