You are currently viewing মহাবীর আলেকজান্ডারের মৃত্যু: মৃত্যুর পর ৬ দিন শরীরে পচন ধরেনি!

মহাবীর আলেকজান্ডারের মৃত্যু: মৃত্যুর পর ৬ দিন শরীরে পচন ধরেনি!

আলেকজান্ডারের মৃত্যু নিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। সহজ ভাষায় বললে বলতে হয়, আলেকজান্ডার কি রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেছেন তা নিয়ে রয়েছে রহস্য। ধারণা করা হয়, তার মৃত্যুর কারণ সেসময়কার চিকিৎসকগণ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারেনি।

৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ‘ব্যাবিলনে’ মারা যান, ঐতিহাসিক কিছু তথ্য অনুসারে, তার দেহটিতে মৃত্যুর পর দীর্ঘ ৬ দিন কোনো প্রকার পচনের লক্ষণ দেখা যায় নি।

প্রাচীন গ্রীকদের সাধারণ মানুষের তখন এই তরুণ মেসিডোনিয়ান রাজা সম্পর্কে বিভিন্ন রকম ধ্যানধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। ইতিহাসের কিছু বইয়ে উল্লেখ আছে যে আলেকজান্ডার নিজের সম্পর্কে বিশ্বাস করতেন যে, তিনি কোনো আর আট-দশ টা সাধারণ মানুষের মতো নন, তিনি স্রষ্টার প্রেরিত কোনো দেবতা।

মহাবীর আলেক্সান্ডার

মাত্র ৩২ বছর বয়সেই তিনি বছর বয়সে, তিনি বলকান থেকে হিন্দুকুশ পর্বতমালা (আধুনিক পাকিস্তান) অবধি পৌঁছে গিয়েছিলেন। তার সেনাবাহিনী ২১ হাজার মাইল পথ পরিক্রমণ করে। তিনি যখন আরেকটি দেশ/রাজ্য আক্রমণের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন তখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১২ দিনের নির্মম কষ্টের পর মারা যান।

তারপর থেকে, ইতিহাসবিদরা তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে করে চলেছেন বিতর্ক, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড এবং অ্যালকোহল বিষ থেকে শুরু করে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজনের দ্বারা হত্যা পর্যন্ত সবকিছুরই সম্ভাবণার কথা প্রস্তাব করেছেন।

চিকিৎসকের সাথে আলেক্সান্ডার

তবে সর্বশেষ যে সম্ভাবণার কথা বলা হয়েছে, তা একজন একজন পণ্ডিত এবং চিকিৎসকের মতামত। তিনি ব্যাখ্যা দেন যে আলেকজান্ডার হয়তো স্নায়বিক ব্যাধি গুইলেন-বারে সিনড্রোম (জিবিএস) এ ভুগছিলেন, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। তিনি আরও যুক্তি দেন যে মানুষ হয়তো একটি সাধারণ কারণে শরীরে পচনের কোনো তাৎক্ষণিক চিহ্ন লক্ষ্য করেনি কারণ আলেকজান্ডার তখনও মারা যাননি।

নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের’ ডুনেডিন স্কুল অফ মেডিসিনের’ একজন সিনিয়র লেকচারার ‘ডক্টর ক্যাথরিন হল’ এর লেখা ‘The Ancient History Bulletin, নামে প্রকাশিত বইয়ের একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, আলেকজান্ডার এর মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রচন্ড জ্বর ও পেট ব্যাথায় কথা উল্লেখ করা হয়। আরো বলা হয় যে রাত জেগে মদ পানের কারণে সম্ভবত তার রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। এবং মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে তিনি যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন।
ক্যাথরিন হল যুক্তি দেন যে মৃত্যুর আগে আলেকজান্ডার খুবই অসুস্থ থাকলেও তার মানসিক ভারসাম্য তার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল।

৬ দিন শরীরে পচন কেনো ধরেনি?

ক্যাথরিন হল যুক্তি দেন যে (জিবিএস) একটি বিরল, কিন্তু গুরুতর অটোইমিউন ডিসঅর্ডার যেখানে ইমিউন সিস্টেম স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থ কোষকে আক্রমণ করে। তিনি বিশ্বাস করেন যে আলেকজান্ডার সেই সময়ে একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর পাইলোরির সংক্রমণ থেকে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন। ক্যাথরিন হলের মতে, আলেকজান্ডার সম্ভবত (জিবিএস) এর একটি রূপ পেয়েছিলেন যা বিভ্রান্তি বা অচেতনতা সৃষ্টি না করেই পক্ষাঘাত সৃষ্টি করে।

ঠিক কী কারণে আলেকজান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা নতুন বিষয় নয়। তবে ক্যাথরিন হল একটি নতুন যুক্তি ছুঠে দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়ে দেখান যে আলেকজান্ডার হয়তো তখনো মারা যায় নি যখন লোকেরা ভেবেছিল যে সে মারা গেছে।
তিনি যুক্তি দেন যে আলেকজান্ডার যে ক্রমবর্ধমান পক্ষাঘাতে ভুগছিলেন, সেইসাথে এটি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে তার শরীরের কম অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল, এর অর্থ হল তার শ্বাস-প্রশ্বাস কম দৃশ্যমান ছিল।

কারণ প্রাচীনকালে, ডাক্তাররা রোগীর জীবিত বা মৃত কিনা তা নির্ধারণ করতে নাড়ির পরিবর্তে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করতেন। ক্যাথরিন হল বিশ্বাস করেন যে আলেকজান্ডার আসলে মারা যাওয়ার আগে তাকে মিথ্যাভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল।

আলেকজান্ডার এর মৃত্যু পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত একটি ঘটনা ঘটনা। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তার শরীর না পঁচে যাওয়ার ঘটানাটি আরো বিখ্যাত করে তুলেছে। তাকে কি সত্যিই জীবিত থাকা অবস্থাতেই মৃত ঘোষণা করেছিলো? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে? দুঃখজনকভাবে আমরা এই রহস্যের সত্য কখনোই উদঘাটন করতে পারবো না।

Leave a Reply