চিমনি সুইপারদের সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম William Blake এর Songs of Innocence and Experience কাব্য পড়ে।
চিমনি পরিষ্কার করা ছোট্ট শিশুদের করুণ জীবন খুব কাছ থেকে দেখে উপলব্ধি করে তাই হয়তো তিনি লিখেছিলেনঃ-
When my mother died I was very young,
And my father sold me while yet my tongue
Could scarcely cry ” ‘weep! ‘weep! ‘weep! ‘weep!”
So your chimneys I sweep & in soot I sleep.
চিমনির প্রথম ব্যবহার ইতালিতে ১৩ শতাব্দীতে পাওয়া যায়। তবে এটি ১৬ শতাব্দীর দিকে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময়ে, অনেকেই প্রায় প্রতিটি ঘরে ফায়ারপ্লেস দিয়ে তাদের ঘর তৈরি করেছিলেন।
প্রথম দিকে চিমনির ব্যবহার শুধু শাসক শ্রেণীর মধ্যে প্রচলিত ছিল। কারো বাড়িতে চিমনি থাকার মানে ছিলো তারা বিত্তবান। সময়ের সাথে সাথে গরীব শ্রমিক শ্রেণীর বাড়িতেও চিমনির ব্যবহার শুরু হয়। সকল শ্রেণীর মানুষের বাড়িতে চিমনির ব্যবহারের কারণ ছিল নগরায়ন এবং শিল্পায়নের দ্রুত বৃদ্ধি।
শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হতে থাকলে সেই বিল্ডিং গুলোর চিমনি পরিষ্কার করতে গিয়ে পড়তে হতো ঝামেলায়। যেহেতু চিমনিগুলোতে কাঠ কয়লা ব্যবহার করা হতো তাই সেগুলো ঘনঘন ময়লা হয়ে যেতো। আর সেই ময়লা পরিষ্কার করার জন্য পেশাদার চিমনি পরিষ্কারকের প্রয়োজন শুরু হয়।
যদি চিমনি গুলো পরিষ্কার না করা হতো তখন চিমনি জ্বালাতে গেলেই চিমনি থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া বেড়িয়ে ঘর অন্ধকার হয়ে যেত। আর ঘর গরম রাখতে হলে চিমনির ব্যবহার করতেই হবে।
চিমনি পরিষ্কার করার জন্য যেসব মানুষ কাজ করতো তাদের বলা হতো মাস্টার সুইপার। চিমনির ছাই বা কালি পরিষ্কার করতে তারা সাধারণ ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতো।
চিমনি পরিষ্কার করার সময় চিমনির ভেতরে থাকা কার্বন বা গ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য ছোট ছোট বাচ্চাদের দিয়ে চিমনি পরিষ্কার করাতে শুরু করে।
আর তাছাড়া ঝাড়ু দিয়ে পুরো চিমনি ভালো করে পরিষ্কার করা যেতো না, ফলে মাস্টার সুইপার রা ছোট ছোট শিশু গুলোকেই চিমনির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে চিমনি পরিষ্কার করা শুরু করে। সহজ ভাষায় বলতে বাচ্চা গুলোকেই তাড়া ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। আর এভাবেই শুরু হয় চিমনি পরিষ্কারে বাচ্চা শিশুদের ব্যবহার।
চিমনির মাস্টার সুইপার রা মূলত গৃহহীন বা এতিমখানায় বেড়ে উঠা নিরীহ শিশুদের খাবারের লোভ দেখিয়ে তাদের দিয়ে চিমনি পরিষ্কার করার কাজ করাতো।
এই শিশুগুলোর বয়স হতো সাধারণত ৫ থেকে ১১ বা ১২ বছর। তাদের সাথে মাস্টার সুইপার রা চাকরের মতো ব্যবহার করতো। আর তাদেরকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করতো। চিমনি পরিষ্কার করার জন্য শুধু ছেলে শিশুই নয়, কিছু মেয়ে শিশু ও এই কাজ করতো।
চিমনি পরিষ্কার করতে গিয়ে ছোট শিশুগুলোর হাত, পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিলে যেতো। তাদেরকে ঠিকঠাক চিকিৎসা সেবা ও দিতো না মাস্টার সুইপাররা।
চিমনি পরিষ্কার করা খুবই অস্বস্তিকর একটি কাজ ছিল। যদি কোনো শিশু চিমনি পরিষ্কার করতে দ্বিমত পোষণ করতো, মাস্টার সুইপাররা সেই শিশুকে শাস্তি দিতো।
শাস্তির ধরণ গুলো ছিলো, গরম আগুনের ছ্যাকা দেয়া কিংবা শরীরে পিন ঢুকিয়ে গুতো দেয়া।
চিমনি পরিষ্কার করা শিশুদের সকলের একটি কম্বল থাকত। সেই কম্বলটিকে গোল করে পেচিয়ে চিমনির উপর দিয়ে ঢুকিয়ে ঠেলে ঠেলে উপর থেকে নিচে ফেলতো। এতে করে চিমনির ভেতরে থাকা কালি আর ধুলো গুলো একেবারে নিচে পরে যেতো। আর সেই কালিও ধুলো গুলো শিশুরা মাস্টার সুইপার এর কাছে নিয়ে যেতো। মাস্টার সুইপার সেই কালি এবং ধুলো সার হিসাবে কৃষকদের কাছে বিক্রি করতো।
যেহেতু শিশুদের কম্বলগুলো ময়লা হয়ে যেতো সেগুলোকে ধুতে গিয়ে তাদের কম্বল ছাড়াই ঠান্ডার মধ্যেই বেঁচে থাকতে হতো। কিংবা না ধুয়েই সেই ময়লা কম্বল গায়ে দিয়েই শরীর উষ্ণ করতে হতো।
চিমনির ঝাড়ু হিসেবে শিশু ব্যবহারের ভয়াবহতা
শিশুদের কে চিমনির ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বিশেষ করে লন্ডন শহরে চিমনি পরিষ্কারে শিশুদের ব্যবহার বেশি জনপ্রিয় ছিল।
শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে লন্ডনে প্রচুর পরিমানে ভবনের নির্মাণ শুরু হতে থাকে। আর সেই ভবনগুলোর চিমনির পাইপগুলো খুব সরু হতে থাকে। চিমনিগুলি ছোট হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের অনেকগুলি বাঁক এবং কোণ হতে শুরু করে যা ছাই এবং কালি জমে ধোঁয়া বের হতো। আর তাই সেই চিমনিগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি ছিল। যেহেতু ঝাড়ু দিয়ে পুরোপুরি পরিষ্কার করা যেতো না। তাই শিশুদেরকেই পাইপের ভেতর ঢুকতে হতো।
শিশুগুলো কোন প্রতিরক্ষামূলক কাজের সরঞ্জাম বা পোশাক ছাড়াই অমন বিপজ্জনক জায়গায় ঢুকতো। এর ফলে তাদের মধ্যে অনেকের বারবার শ্বাসকষ্টের অসুস্থতা, বিকৃত গোড়ালি এবং পেঁচানো মেরুদণ্ড এবং চোখের ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এই অসুস্থতাগুলি বেশিরভাগই কাজের সাথে সম্পর্কিত ছিল।
কিছু শিশু কাজ করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হয়। সবচেয়ে খারাপ জিনিসটি ছিলো, কালি পরিষ্কার করতে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময় দম বন্ধ হয়ে যাওয়া।
অনেক শিশু আবার চিমনির ভেতরে আটকা পরে শ্বাস নিতে না পেরে মারাও যেতো।
এই সরু চিমনির আঁকাবাঁকার ভেতরে ঢুকে কাজ করার কারণে অনেক শিশুর বৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে।
যখন তাদের মধ্যে অনেকেই বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছতা, তখন তাদের অনেকে চিমনি সুইপ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো, বিশেষ করে অণ্ডকোষের ক্যান্সার হওয়াটা সবচেয়ে বেশি স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।
এছাড়াও শিশুগুলোকে পিঠে ভারি ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে হতো ফলে তাদের পিঠ বাঁকা হয়ে যেতো।
দুঃখজনকভাবে, এই শিশু চিমনি সুইপাররা কঠোর পরিশ্রম করে খুবই অল্প টাকা মজুরি পেতো। আর খুব কম খাবার পেতো। আর বেসমেন্টে অস্বাস্থ্যকর জায়গায় তারা গুটিশুটি হয়ে ঘুমাতো।
কিছু ছেলেকে তাদের খালি হাতে চিমনি পরিষ্কার করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তারা হাত দিয়ে খোঁচা দেয়। মাস্টার সুইপস সাধারণত এই ছেলেদের হাঁটু এবং কনুই একটি তারের ব্রাশ দিয়ে স্ক্র্যাপ করে যাতে তারা আরও শক্ত হতে পারে।
সময়ের সাথে সাথে, এটি বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে মাস্টার ঝাড়ুদাররা শিশু যত্নের দায়িত্ব অর্পণ করা ভুল লোক ছিল কারণ তারা এই শিশু সুইপারদের সাথে অত্যন্ত নৃশংস আচরণ করতো।
চিমনি পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক শিশু চিমনির ভেতরে আটকা পড়ে শ্বাসকষ্ট হয়ে মারা যেতো। সেসব ঘটনা নিয়ে আইন পর্যন্ত গড়াতো না। তবে জর্জ ব্রুস্টার নামে এক ১২ বছরের কিশোরের মৃত্যু আলোরণ তুলেছিল সেসময়।
জর্জ ব্রুস্টারের দুঃখজনক মৃত্যু
জর্জ ছিলেন একজন ১২ বছর বয়সী চিমনি ঝাড়ুদার যিনি চিমনি পরিষ্কার করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। তিনি ফুলবোর্ন হাসপাতালের চিমনিতে আটকে যান যেখানে তার মাস্টার ’উইলিয়াম ওয়ায়ার’ তাকে পাঠিয়েছিলেন চিমনি পরিষ্কার করতে।
জর্জ চিমনি ভেতরে আটকা পড়ে অতিরিক্ত ঝুল কালিতে শ্বাস নিতে না পেরে সেখানেই মারা যান। আর তার মৃত দেহ চিমনির ভেতর থেকে বের করতে, চিমনিটাই ভেঙে ফেলা হয়
জর্জের মৃত্যুর জন্য উইলিয়াম ওয়ারার কে গ্রেফতার করে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। জর্জের এই মৃত্যু শিশু চিমনি সুইপার এর কাজের উপর আইন প্রয়োগ করে শিশুদের চিমনি পরিষ্কার পেশা অবৈধ ঘোষণা করে।
১৮৮৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে জর্জের মৃত্যুর পর, শিশুদের চিমনি পরিষ্কার করা শিশুদের জন্য অবৈধ ঘোষণার পরে একটি বিল পাস করা হয়েছিল। এই বিলে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু/ কিশোরদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়।
কিছু বছর পর সেই বিলটি সংশোধন করে বয়স সীমা ১৪ বছর থেকে ১৬ বছর বয়সে উন্নীত করা হয়।
১৯ শতাব্দীর শুরু দিকে প্রকৌশলী জোসেফ চিমনি পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ ধরনের ব্রাশের উদ্ভাবন করেন। আর এই আবিস্কারের মাধ্যমে শিশুরা মৃত্যু কূপ থেকে রক্ষা পায়।
Featured Image Credit: Extractor Hood
имате ли друге референце?
my website