এবারের টি-টুয়ান্টি বিশ্বকাপটি আমার চোখে দেখা এখন পর্যন্ত সেরা বিশ্বকাপ। বাছাইপর্ব থেকে শুরু করে গ্রুপ পর্ব নাটকিয়তায় ভরপুর ছিলো। বিশেষ করে ছোট দলগুলোর বড় টিম গুলোকে হারিয়ে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে। বার্তা দিয়েছে সুযোগ পেলে তারাও পারেন বড় দল হওয়ার।
পুরো বিশ্বকাপে পাকিস্তান ছিলো একেবারে খাদের কিনারায়। ভারতের কাছে বিরাটের অতিমানবীয় ইনিংসের কারনে হাতে থাকা ম্যাচটি তারা হেরেছে। এরপর জিম্বায়ের কাছে সিকান্দার রাজাদের অসাধারণ পারফরম্যান্স ছোট টার্গেটে ব্যাটিং করতে গিয়ে হেরে গেছে ১ রানে!
ক্রিকেট দর্শকদের মতো করে পাকিস্তান ক্রিকেট প্লেয়াররাও হয়তো আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। গ্রুপ পর্বের শেষ দিনের ম্যাচে নেদারল্যান্ডস এর আফ্রিকা অঘটন হিসেব নিকেসের খাতার হিসেব উল্টো পাল্টা করে দিলো। পুরো টুর্নামেন্টে সেমি খেলার রেসে বাহিরে পাকিস্তান চলে গেলে সেমি ফাইনালে।
সেমি ফাইনালে নিউজিল্যান্ড কে প্রায় বলে কয়েই হারিয়েছে পাকিস্তান। আর ভারতের বিপক্ষে তো ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার প্রায় তান্ডব চালিয়েছে। সেমিফাইনালের মতো বড় ম্যাচে ১০ উইকেটে জয় সম্ভবত ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক পরাজয়ের একটি।
টি-টুয়ান্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০২২
ফাইনালের আগে দু দলের ওপেনারাই ছিলেন সেরা ছন্দে কারণ দু দলের ওপেনাররাই সেমিতে করেছেন শত রানের জুটি।
তবে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনাপে বরাবরই ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। তবে বোলিং ইউনিটে শাহিন আফ্রিদির, সাথে হারিস রউফ,নাসিম শাহ আর সাদাব খানদের বোলিং এই বিশ্বকাপের সেরা বোলিং ইউনিট।
বিপরীতে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনাপ বিশ্বকাপের সেরা। ওপেনিং এ জশ বাটলার, হেলস এর সাথে আছে ঝড় তোলা লিভিংস্টোন, মঈন আলী,হ্যারি ব্রুক,সাল্ট কিংবা স্যাম করানের মতো অসাধারণ অলরাউন্ডার। তবে বোলিং ইউনিট পাকিস্তানের থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে ছিল খাতাকলমে।
ম্যাচের আগে ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে এই ম্যাচটি সেরা ব্যাটিং লাইনাপের বিপক্ষে হতে যাচ্ছে সেরা বোলিং ইউনিটের খেলা।
ম্যাচে টস ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টি টুয়েন্টি খেলায় টস জেতা টিম বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। আর ফাইনাল ম্যাচে তার গুরুত্ব আরো বেশি।
টসে ইংল্যান্ড জয় লাভ করে এবং স্বাভাবিক ভাবেই বোলিং নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানের দুই ওপেনার রিজওয়ান ও বাবার তাদের স্বাভাবিক স্লো ব্যাটিং চলমান রাখে কিন্তু চতুর্থ ওভারে দলীয় ২৮ রানে স্যাম কারনের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রিজওনাল। এরপর নওয়ম করে হারিস, বাবর আউ হন নামমাত্র রান করে। মাঝে সাদাব খান ও শান মাসুদ প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালালেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আসা যাওয়ার মিছিলে পাকিস্তান ২০ ওভার শেষে রান তুলে ৮ উইকেটে ১৩৭ রান।
পাকিস্তান কে এতো অল্পরানে গুটিয়ে দেওয়ার জন্য অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে স্যাম কারন ও আদিল রাশিদ। স্যাম কারন ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট! তাও বিশ্বকাপ ফাইনালে।
আর ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দেওয়া আদিল রাশিদ নিয়েছেন ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট।
ছোট লক্ষ তারা করতে নেমে প্রথম ওভারের শেষ বলে শাহিন আফ্রিদির শিকার হন এলেক্স হেলস। সাল্টের সাথে একটি ছোট জুটি গড়ে তোলেন। কিন্তু হারিস রউফ এর গতির ঝড়ে ব্যক্তিগত ১০ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাল্ট। এরপর বেশ কিছু নান্দনিক ক্রিকেটিয় শট খেলেন জস বাটলার। কিন্তু শেষে তিনিও ব্যক্তিগত মাত্র ২৬ রানে হারিস রউফের শিকার হন, ইংল্যান্ডের দলীয় রান তখন ৪৫-৩!
হ্যারি ব্রুক কে নিয়ে স্টোক ছোট জুটি গড়ে তোলেন কিন্তু সেটাও বড় হতে পারে নি। ব্যক্তিগত ২০ রানে হ্যারি ব্রুক প্যাভিলিয়নে ফেলেন। ইংল্যান্ডের দলীয় স্কোর তখন ৮৫-৪!
বেশ একটা দীর্ঘ সময় পাকিস্তানের বোলিং ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কে চাপে রাখে। এই ছোট সংগ্রহকেই কঠিন করে তুলে ফেলছিলেন। ক্রিজে মঈন আলি আসলে স্টোক ও মঈল আলি শট খেলতে শুরু করলে রানের চাকা আবারো সচল হয়। ১৮.২ ওভারে ওয়াসিম জাফরের বলে বোল্ড আউট হয় মঈন আলী, এর মধ্যেই তিনি ১৩ বলে ১৯ রানের একটি কার্যকরী ইনিংস খেলে ফেলেছেন। ইংল্যান্ড তখন একদমই জয়ের দারপ্রান্তে।
আজ স্টোকস কে মনে হচ্ছিল১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতোই এবারো ইংল্যান্ডের ত্রানদাতা। চাপের মাথায় ৪৯ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস এ ইংল্যান্ড কে দ্বিতীয় বারের মতো টুয়েন্টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতালেন স্যার বেন স্টোকস। ৫১ রানে অপরাজিত এই মহাকাব্যিক ইনিংস এ ৬ হাকিয়েছিলেন ১ টি আর ৪ হাকিয়েছেন ৫ টি।
অভিনন্দন ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিম।