পেইন্টিং করে বহু গুণী শিল্পী বিখ্যাত হয়েছেন। বর্তমানে সেইসব বিখ্যাত পেইন্টিং মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ১৫ শতকে ইতালিতে শুরু হওয়া এই শৈল্পিক বিপ্লব আজো বহমান। পেইন্টিং বতমানে এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে তা বর্তমানে মানুষের রুচির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। পৃথিবী জুড়ে গত কয়েক শতাব্দী জুড়ে অসংখ্য বিখ্যাত পেইন্টিং যেমন সৃষ্টি হয়েছে, সেরকমভাবেই প্রত্যেকটি পেইন্টিং এর পেছনে রয়েছে একটি ঘটনা।
আজ তেমনই কিছু বিখ্যাত পেইন্টিং এর কথা বলবো।
সিমন এন্ড পেরো
এই পেইন্টিং টি ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী পিটার রুবেন পল ১৬৩০ সালে এঁকেছিলেন। এই পেইন্টিং টি মূলত প্রাচীণ রোমে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রাচীণ রোমে একজন ব্যক্তিকে অনাহারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর এজন্য তাকে একটি কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল, শাস্তিটি ছিল তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত অনাহারে থাকা।
লোকটির একটি মেয়ে সন্তান ছিলো। সে সময় যেহেতু চার্চের বিচার হতো তাই মেয়েটি চার্চের কাছে অনুরোধ করেন যেনো তার বাবাকে প্রতিদিন দেখতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। না খেয়ে আর কয়দিনই বা বাঁচবে সে কথা চিন্তা করে চার্চ মেয়েটির প্রার্থনা মঞ্জুর করে।
মেয়েটিকে দেখা করতে দিলেও সঙ্গে করে কোনো খাদ্য নিয়ে যেতে দেওয়া হতো না। তাই ক্ষুধার্ত বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে মেয়েটি প্রহরীদের ফাঁকি দিয়ে তার বাবাকে নিজের স্তন থেকে দুধ পান করাতে শুরু করে।
অনেক দিন চলে যাওয়ার পরও যখন লোকটি মারা গেলো না তখন কারাগারের প্রহরীদের সন্ধেহ বেড়ে গেলো। তারা গোপনে দেখতে পেলো মেয়েটি তার বাবাকে স্তনের দুধ পান করাচ্ছেন।এই খবর চার্চের কানে পৌঁছাতে সময লাগেনি সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটিকে বিচার সভায় ডাকা হয়,এবং মেয়েটির বিচার করতে গিয়ে চার্চের বিচারক আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন।
বিচারকের সাথে সাথে চার্চের আদালতে উপস্থিত সকলে নির্বাক হয়ে যায়। বাবাকে বাঁচানোর জন্যে মেয়ের এত বড়ো আত্মবলিদান কল্পনা করা যায় না। এরপর বিচারক যথাযত রায় ঘোষনা করলেন। বিচারের রায়ে বাবা ও মেয়ে কে মুক্তি দিলেন। বর্তমানে এই পেন্টিংটি ইউরোপের সবচেয়ে দামী ও বিখ্যাত পেন্টিং এর মধ্যে একটি।
ট্রুথ কামিং আউট অব হার ওয়েল
এটি Jean Leon Gerome নামক বিখ্যাত চিত্রকরের পেইন্টিং। ১৮৯৬ তে আঁকা এই ছবিটা ঊনিশ শতকের একটি লোক কথাকে ভিত্তি করে আঁকা হয়েছিলো যার শিরোনাম ছিলো- “The truth is coming out of the well.”
গল্পটা ছিল এরকম -একবার সত্য এবং মিথ্যা পরস্পরের সঙ্গে দেখা করলো কিছু বিষয়ে মীমাংসার তাগিদে। হাঁটতে হাঁটতে তারা চলে গেলো একটা কুয়োর পাশে।
মিথ্যা বললো, দেখো, কী পরিষ্কার জল। চলো স্নান করি।
বলাবাহুল্য সত্য বিশ্বাস করেনি মিথ্যার কথা। নিজে পরখ করে দেখলো। যখন দেখলো কুয়োর জল সত্যিই পরিষ্কার তখন মিথ্যার প্রস্তাবে রাজী হলো। দুজনে পোশাক ছেড়ে নেমে পড়লো কুয়োয়। স্নানের মাঝপথে মিথ্যা কুয়ো থেকে উঠে এসে সত্যের পোশাক পরে পালিয়ে গেলো।
খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মিথ্যাকে ফিরতে না দেখে সত্য উঠে এলো কুয়ো থেকে। না, মিথ্যা তো কোথাও নেই, পোশাকও নেই। রাগে অন্ধ হয়ে সত্য বের হলো মিথ্যাকে খুঁজতে, কিন্তু নগ্ন সত্যকে দেখে ছিঃ ছিঃ ধিক্কার করলো সভ্য মানুষেরা। এমন কী তেড়েও এলো অনেকে। সত্য অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তাদের বোঝাতে না পেরে রাগে অপমানে ফের কুয়োয় নেমে গেলো।
তারপর থেকে সত্যকে আর কখনও কেউ দেখেনি। যাকে দেখেছে কিংবা দেখছে সে আসলে সত্যের পোশাক পরা মিথ্যা!
ফ্লুড সিন
পেইন্টিং টির নাম ‘Flood Scene’, ১৮ শতাব্দীতে Joseph-Désiré Court নামের এক ফরাসি নারী চিত্রশিল্পী এঁকেছিলেন। ছবিটি মূলত আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থের কাহিনি নোয়া বা নূহ (আঃ) এর মহা প্রলয়ের ঘটনার ছায়া অবলম্বনে তৈরি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পুরুষটি তার বৃদ্ধ বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, নিজের সন্তান আর স্ত্রীর জীবনকে উপেক্ষা করে। আর ছবিটির মা চেষ্টা করছেন নিজের সন্তান কে বাঁচাতে। ছবির বৃদ্ধ প্রতিনিধিত্ব করছে অতীতকে, পুরুষটি জীবনকে, মা প্রতিনিধিত্ব করছে বর্তমান কে, আর শিশুটি ভবিষ্যৎ কে।
পেইন্টিং টির মূল সারমর্ম হচ্ছে, যদি আপনি অতীতকে আকরে ধরে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার জীবনের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ দুটোই হারাবেন।
স্ট্যারি নাইট
জগৎবিখ্যাত ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেণ্ট ভ্যানগগ এর সবচেয়ে বিখ্যাত পেইন্টিং স্ট্যারি নাইট।
১৮৮৮ সালের বড়দিনের প্রাক্কালে গগ মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তিনি স্বেচ্ছায় ফ্রান্সের সেইন্ট রেমি-ডি প্রদেশের আশ্রমে আসেন।
বলা হয়ে থাকে ‘স্ট্যারি নাইট’ ছবিটি ছিল ভ্যান গগের বিছানার পাশের জানালা দিয়ে দেখতে পাওয়া রাতের দৃশ্য। ১৯৪১ সাল থেকে এই ছবিটি মেট্রোপলিটন আর্টস মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। গগ সেখানে প্রায় ১ বছর থেকেছিলেন।