প্রাচীন রোমের অনেক আইন, দর্শন কিংবা কালচার বর্তমানের আধুনিক সমাজে বিভিন্ন ভাবে অবদান রেখেছে। বর্তমানে আমাদের আর্কিটেকচারে এখনো প্রাচীন রোমের স্থাপত্যের প্রভাব দেখতে পাই, এমনকি বর্তমানে আমাদের রাজনীতি তেও কিংবা বলা যায় বিশ্বের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতি সবই প্রাচীন রোমের প্রজাতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে।
বিশ্বের যতগুলো প্রাচীন সভ্যতা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী রোমান সভ্যতা। সেই সময়ে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২০% ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অধিনস্ত। আর রোম শহর ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে জনসংখ্যাবহুল শহর, খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর শুরুতেই এর জনসংখ্যা ছিল ১ মিলিয়ন এর বেশি! বলা যায় এই নগরায়ন বা শহরায়ন এর ধারা পুরোটাই রোমানদের থেকে এসেছে।
আজ রোমানদের রাজনীতি, আইন কিংবা স্থাপত্য এসবের কোনো কিছু নিয়েই কথা বলবো না। আজ কথা বলবো প্রাচীন রোমের ডিনার পার্টি নিয়ে। অবাক হচ্ছেন তো? এতো আগেও ওসব ডিনার পার্টি হতো? হ্যা ডিনার পার্টি বলি কিংবা নৈষ্যভোজ এটি রোমানদেরই সৃষ্টি। চলুন আজ রোমানদের নৈশভোজের সম্পর্কে ১০ টি চমকপ্রদ তথ্য জানি।
১. মদ ছিল পার্টির প্রধান আকর্ষণ
সেই সময়েও মদ ছিল পার্টিতে একটা বড় ব্যাপার স্যাপার। বিশেষ করে যখন সমাজের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ সেই নৈশভোজে উপস্থিত থাকতেন। মদ ছিল সেসব লোকদের জন্য মর্যাদার প্রতীক। সেসময় বিয়ার ও পাওয়া যেতো কিন্তু এটি তাদের স্ট্যাটাস অনুযায়ী মানানসই ছিলো না, তাই বিলাসবহুল পার্টিতে বিয়ার ব্যবহার করা এড়িয়ে চলতো।
নৈশভোজে মদ এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যে অতিথিদের জন্য কয়েক রকমের মদ পরিবেশন করা হতো। এবং অতিথিরা নিজেদের পছন্দ মতো পানীয় বেছে নিতো।
সেসময় দুটি বিশেষ ধরনের মদ ছিলো যেগুলো মূলত অভিজাতরাই পান করতো, একটির নাম ‘ক্যালডা’ আর আরেকটি ‘মুলসুম’।
‘ক্যালডা’ পানীয়টি ছিলো শীতের রাতের নৈশভোজের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পানীয়। এই পানীয়টি অতিথিদের মাঝে গরম গরম পরিবেষণ করা হতো, এই মদটি বিভিন্ন মশলার সংমিশ্রণে তৈরি করা হতে।
‘মুলসুম’ পানীয় টি ছিল মিষ্টি মধু মিশ্রণে তৈীি। এই মদটি রোমান সংস্কৃতি জুড়ে খুব জনপ্রিয় ছিল।
এছাড়াও পার্টি শুরু হওয়ার আগে গরম জলের সাথে ওয়াইন মেশানোর একটি ঐতিহ্য ছিল। এটি করা হয়েছিল কারণ বিশুদ্ধ ওয়াইন পরিবেশন করা তাদের সংস্কৃতিতে অসভ্যতা হিসাবে বিবেচিত হতল। আর তাই পানীয়তে রেমানরা জল মেশাতেন।
২. ডিনার পার্টি রেমানদের সামাজিকতা
যখনই পার্টি শব্দটি আমাদের মাথায় আসে, আমরা প্রথমে খাবার এবং অতিথির কথা ভাবি। এরপর বাকি জিনিসের কথা ভাবি। রোমান ডিনার পার্টি গুলোরও তেমন কেনো ভিন্নতা ছিলো না। একটি সফল ডিনার পার্টির জন্য দুটি জিনিস বিশাল হতে হবেঃ-
১) খাবার এবং
২) অতিথির তালিকা।
খাবার গুলো যে উচ্চমানের ছিলো তাতে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই নৈশভোজের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো একটি সামাজিক সমাবেশের আয়োজন করা। এই সমাবেশ বা নৈশভোজ যাই বলি না কেনো এটি সমস্ত অভিজাত শ্রেণীর বন্ধু এবং পরিচিতদের এক জায়গায় একত্রিত করতো।
রোমান ডিনার পার্টির জন্য ব্যবহৃত আরেকটি শব্দ ছিল ‘কনভিভিয়াম’।
এই দলগুলো শুধু উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সাধারণ মানুষের কাছেও এটা ছিল নিয়মিত ব্যাপার।
তবে বেশ কিছু ইতিহাসবিদদের দেয়া তথ্যমতে শুধুমাত্র বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের ডিনার পার্টিগুলিতে আমন্ত্রণ করা হতো। ডেভিড ম্যাটজের ‘Daily Life of the Ancient Romans’ বই এর তথ্যঅনুসারে রোমান সম্রাট অগাস্টাস প্রায় সবসময়ই এই জাতীয় নৈশভোজের আয়োজন করতেন।
সম্রাট অগাস্টাস তিনি তার আগত অতিথিদের সামাজিক স্তর এবং ব্যক্তিত্বকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন। তার পার্টিগুলি তাদের সবচেয়ে জমকালো ফর্মগুলিতে তিন-কোর্স বা এমনকি ছয়-কোর্সের খাবারের জন্য বিখ্যাত ছিল। তবে এই নৈশভোজের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে একটি ভাল ফেলোশিপ বজায় রাখা।
৩. নৈশভোজে আসন চার্ট অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল
বর্তমান সময়ে কেনো অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক বা পাবলিক ইভেন্টে বসার আসন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু যখন প্রাইভেট অনুষ্ঠানের কথা আসে, সেখানে কোনও বসার ব্যবস্থা নেই। অতিথিরা যেখানে খুশি সেখানে বসতে পারেন অনেকটা ‘ফার্স্ট-কাম-ফার্স্ট-সার্ভ’ ভিত্তিতে।
যাইহোক, রোমান পার্টিগুলোতে বসার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। পার্টিতে বিশেষ অতিথিদের জন্য (সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের) একটি নির্দিষ্ট আসনে বসতেন।
আর যেসব অতিথিরা বিশিষ্ট ব্যক্তি পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, তাদেরকে বেশ কিছুটা দূরে বসবার আয়োজন করা হতো। আর ঐশ্বর্যবানরা ডিনার টেবিলের চারপাশে সাজানো পালঙ্ক বা বিছানায় নৈশভোজ আয়োজনকারীর কাছাকাছি বসতেন।
শক্তিশালী এবং ধনী ব্যক্তিদের সাথে শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তোলার ধারণাটি ছিল ‘আধুনিক দিনের নেটওয়ার্কিং’ যাকে আমরা বলতে পারি।
তাই, আয়োজক বসার ব্যবস্থায় অতিরিক্ত বিশেষ মনোযোগ দিতেন।
৪. নৈশভোজে বিনোদন হিসেবে সঙ্গিত, কবিতা ও গ্ল্যাডিয়েটর অন্তর্ভুক্ত ছিল
নৈশভোজে খাবারই শুধু প্রধান আকর্ষণ ছিলো না। খাবারের পাশাপাশি অতিথিদের জন্য বিনোদন ও ছিল সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অতিথিদের বিনোদন দেয়ার জন সঙ্গীত দল গান গাইতো, কেউ কবিতা আবৃত্তি করতো আবার কৌতুক করে অতিথিদের হাসানোর ও কথা শোনা যায়।
সবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয় ছিল গ্ল্যাডিয়েটর মধ্যে লড়াই যা অতিথিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করতো। ২ যোদ্ধা প্রথম ঢাল তলোয়ারের দিয়ে লড়াই করতেন। কখনো একে অপরের বিরুদ্ধে মুষ্টিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। এই গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই জাতীয় পর্যায়ে সম্রাটের দ্বারা আয়োজিত নৈশভোজের ও প্রধান আকর্ষণ ছিল।
৫. ডিনার পার্টি নিজের আভিজাত্য প্রকাশের মাধ্যম ছিল।
একটি অভিনব খাবারের মেনু প্রদর্শন করাই আভিজাত্যের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো না। খাবার পরিবেশনে আরি আভিজাত্য আনতে তারা সোনা, রূপা, কিংবা মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি পাড্রের ব্যবহার করতো। আর সেই সকল খাবার পাত্রের কারুকার্য ও ছিল অসাধারণ।
সেসময় একটি সাধারণ পরিবার কোনো নৈশভোজের আয়োজন করলে সেখানে রূপার পাত্রের ব্যবহারও অতি সাধারণ বিষয় ছিল। তাহলে ভাবুন উচ্চবিত্ত কিংবা সম্রাটের আয়োজিত নৈশভোজ কেমন করে আয়োজন করা হতো?
চলুন আপনাকে সেসময় একটি রেমান সাধারণ নৈশভোজের খাবারের মেনুতে কি কি থাকতো তা বলি।
১) বাছুরের মাংস
২) শূকর
৩) বুনে ছাগল
৪) শুয়োর
৫) ভেনিসন (হরিণের একটি প্রজাতি)
৬) খরগোশ
৭) ব্রীমস (মিঠা পানির মাছ)
৮) ঝিনুক
৯) হাঁস
১০) রাজহাঁস
১১) ঘুঘু
১২) কচ্ছপ
১৩) সারস
১৪) ফ্লেমিংগো
১৫) উটপাখি ইত্যাদি
অবিশ্বাস্য, তাই না?
এত লম্বা লিস্টের পরও আমাকে ইত্যাদি বসাতে হলো। কারণ এই খাবারের তালিকা আরো দীর্ঘ, এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু প্রাণী বা পাখির মাংস অন্তর্ভুক্ত ছিলো, সেগুলো ছিলো বিলাসবহুল ভোগ, বিশেষ অতিথিদের সেসব পরিবেষণ করা হতো।
৬. নৈশ্যভোজ সবসময় ব্যক্তিগত ছিলো না
অভিজাত ছাড়াও সকল সাধারণ মানুষ যেনো পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে পাটে তার জন্যও পাটি আয়োজন করা হতো। এটি ছিলো সম্পূর্ণ ধর্মীয়। আর সেই পার্টিগুলোর আয়জন করতো ধর্মীয় গুরুরা।
রোমানরা খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আগে তারা বহু ইশ্বরের উপাসনা করতো। তাদের মধ্যে একটি ছিল বৃহস্পতি।
দেবতা বৃহস্প্রতি কেস ম্মান জানাতে রোমানরা রোমের ক্যাপিটোলিন মন্দিরে বৃহস্পতির উপাসনার জন্য পূজা দিতো। এটি প্রতি বছরে কেবল একবার হতো।
এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিলো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রোমানরা দেবতাদের নিকট আমন্ত্রণ পত্র পাঠাতো। স্ব শরীরের দেবতা কে পাওয়া যাবে না, তাই রোমানরা দেবতাদের সুন্দর কারুকার্য খচিত মূর্তির কাছেই সেই আমন্ত্রণ পত্র দিতো।
অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ যে যার ইচ্ছেমতো খাবার ও পানীয় পান করতে পারতো।
ইতিহাসবিদ Gregory S. Aldrete তার ‘Daily life in the Roman city’ বইতে এই পার্টির ব্যাপারে বিস্তর ভাবে উল্লেখ করেছেন। পুরো একসপ্তাহ ব্যাপী বিরতিহীনভাবে এই পার্টি চলতো।
এই একটা সপ্তাহ শহরের সকল দোকানপাট, স্কুল এমনকি আদালত পর্যন্ত বন্ধ থাকতো। স্বাভাবিক সংযত নৈতিক মূল্যবোধগুলিকে বিরতি দেওয়া হয়েছিল এবং লোকজন প্রচুর আনন্দ, মজা লাভের প্রত্যাশা করতো।
প্রাচীন রোমে পাবলিক প্লেসে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ছিল। মানুষজন লুকিয়ে জুয়া খেলতো। লুকিয়ে জুয়া খেলতে গিয়ে ধরা পড়লেও তাকি কঠিন শাস্তি দেয়া হতো। তবে এই কদিন জুয়া খেলা সকলের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হতো।
৭. বাচানালিয়া উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়েছিল
‘বাচানালিয়া’ শব্দের অর্থ ‘মদের ঈশ্বর’।
প্রাচীন রেমের এটিই একমাত্র উৎসব ছিল যা সম্রাটের দ্বারা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই উৎসবে অতিথিরা ভারী মদ্যপান, ভোজনের সাথে বেশ কিছু বিনেদনের আয়োজন করতো। এই উৎসবের জনপ্রিয়তা এতোটাই উচ্চতায় পৌঁছেছিল যে এটি রোমান সরকারকে নিষিদ্ধ করতে হয়েছিল।
এর বর্ণময় প্রকৃতির কারণে, সরকারকে এই জাতীয় উৎসবগুলির জন্য কিছু আইন প্রবর্তন করতে হয়েছিল। পার্টিতে খেলা কিছু আনন্দ-সন্ধানী খেলা বন্ধ করার জন্য এগুলি প্রয়োজনীয় ছিল।
বাচানালিয়া মূলত একটি ধর্মীয় উৎসব ছিল যা সাধারণত রাতে পালিত হতে। এই জাতীয় পার্টিগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যৌনতা ও ‘অশ্লীলতা’।
৮. সম্রাট ক্যালিগুলার নৈশভোজের নামে অশ্লীলতা
রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা বা ‘গায়াস’ (খ্রিস্টাব্দ ৩৭-৪১ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন তৃতীয় রেমান সম্রাট। তিনি রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে নিষ্ঠুর সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তিনি খুন, ব্যভিচার এবং অসামাজিক কাজের মাধ্যমে পুরো রোম জুড়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিলেন।
জমকালো রোমান পার্টি নিয়ে আলেচনা করলে সেই আলোচনায় সম্রাট ক্যালিগুলার নাম উঠে আসতে বাধ্য। বাধ্য মূলত তার নিঃসংসতা ও অসামাজিক ও ব্যভিচারতার জন্য। ক্যালিগুলাকে নির্মমভাবে হত্যা করার আগ পর্যন্ত রেমান রোমান জনগণকে তার নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে হয়েছিল।
সম্রাট ক্যালিগুলা প্রায়ই তার প্রাসাদে নৈশভোজের আয়োজন করতেন। সেই নৈশভোজে তিনি সমাজের সকল শ্রেণীর শত শত অপরিচিত লোককে আমন্ত্রণ জানাতেন এবং তাদের সাথে সীমাহীন খাবার এবং ওয়াইন দিয়ে আপ্যায়ন করতেন।
পার্টির উত্তেজনা বাড়াতে তিনি যৌনকর্মীদের ব্যবহার করতেন তার সাথে বিশেষ সঙ্গীতশিল্পীদের ও নিয়োগ করা হয়েছিল। তার এই উদ্ভট ও অশালীন কর্মকাণ্ড সহনীয় মাত্রায় ছিলো।
কিন্তু যখন বিবাহিত দম্পতিদের সাথে ডিনার পার্টির কথা আসে, তখন তিনি সত্যিই সমস্ত সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেন। ক্যালিগুলা বিবাহিত দম্পতিদের তার জমকালো পার্টিতে যোগ দিতে বাধ্য করতেন।
সেই পার্টিতে ক্যালিগুলা সমাজের অভিজাতদের স্ত্রীদের চুরি করে তার গোপন কক্ষে নিয়ে যেতেন। আর পার্টি চলাকালীন সে তাদের উপর যৌন নিপীড়ন করতো।
লজ্জাজনক অংশ এখানেই শেষ নয়। ক্যালিগুলা সেই পার্টিতে ফিরে আসতেন এবং তার অতিথিদের সামনে সহবাসের সমস্ত বিবরণ শেয়ার করতেন। ক্যালিগুলা কে নৃশংসভাবে হত্যা করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তার এই ব্যাভিচার কর্মকাণ্ড নিয়মিত চলতো।
৯. অসভ্য ও ব্যভিচার রোমান সম্রাট
এতোক্ষণে হয়তো আপনি সম্রাট ক্যালিগুলার নৃশংসতা ও ব্যাভিচারতার মাত্রা কি ছিলো তা অনুমান করতে পারছেন। তবে ক্যালিগুলাই একমাত্র সম্রাট নন যিনি ব্যাভিচারি ছিলেন।
টাইবেরিয়াস নামের একজন রোমান সম্রাট ছিলেন। যখন তিনি তার পদ থেকে অবসর নেন, তখন তিনি ক্যাপ্রি দ্বীপে সীমাহীন মজা, যৌনতা, অ্যালকোহল এবং মাদকদ্রব্যের জন্য ‘ডি ভিলা জোভিস’ নামে একটি বিশাল প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন।
টাইবেরিয়াস তার ব্যাপক গ্রন্থাগারের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। তবে সেই গ্রন্থাগারে বিভিন্ন যৌন অবস্থানের বিস্তারিত চিত্রাবলী রয়েছে এমন বই ছিল। এই বইগুলি তার যে কোনও যৌন নিম্ফকে ঠিক কী প্রয়োজন তা বোঝার জন্য গাইড করতে পারে।
এরকম আরেকজন শাসক ছিলেন তিনি সম্রাট নিরো। তিনি নারীদের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতেন। বিশেষ করে যৌন ক্রিয়াকলাপের জন্য তার ‘ডোমাস অরিয়া’ নামে একটি প্রাসাদ ছিল।
সেই জায়গার বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল সুন্দর বাথহাউস, বিরল এবং বিদেশী বিচরণকারী প্রাণী, একটি ঘূর্ণায়মান ডাইনিং রুম এবং নিজের জন্য একটি ১২০ ফুট দীর্ঘ ব্রোঞ্জের একটি মূর্তি।
১০. অন্তরঙ্গ নৈশভোজ সাধারণ কোনো বিষয় ছিলো না
ব্যভিচারের জন্য প্রাচীন রোমের উচ্চ খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও, এই সমস্ত কাজগুলির বেশিরভাগই বন্ধ দরজার পিছনে ঘটেছিল। তবে এমন একটা সময় ছিল যখন জনগণের স্বাধীনতা ছিল এই ধরনের বর্ণবাদী কাজগুলিকে রাস্তায় প্রকাশ্যে আনার।
এমনকি সম্ভ্রান্ত রোমান সম্রাটরাও তাদের নোংরা কাজের জন্য ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে তাদের নাম অমর করে রেখেছেন।
যাইহোক, যদি কেউ প্রকাশ্যে যৌন ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার সময় নিজের সীমা অতিক্রম করে ধরা পড়ে, তার পরে তাদের সামাজিক মর্যাদা/ মানসম্মান উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
Featured Image Credit: Facts and details website