মিশরের কথা ভাবলেই যদি আপনার মনে কোনো প্রাণীর কথা মনে আসে তা নিঃসন্দেহে বিড়াল।
ছোট-বড় সকলেই সম্মান করত এই ছোট্ট প্রাণিটিকে। বিড়াল মিশরের সমাজে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করত। যে কারণে বিড়ালকে তারা শিল্পে স্থান দিয়েছিল, মর্যাদা দিয়েছিল দেবতার। এমনকি মৃত্যুর পর বিড়ালের মমিও করা হত। বিড়াল কৃষিক্ষেত্রের অনিষ্টকর জীবজন্তু থেকে রক্ষা করত। এ কারণে মিশরবাসী বিড়ালের প্রশংসা করত। এছাড়াও বিড়াল সাপও মারতে পারত ; বিশেষ করে বিষধর গোক্ষুর। আর এসব কারনেই বিড়াল প্রাচীন মিশরে সুখ ও শান্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে প্রাচীন মিশরে বিড়ালদেবীর পূজাও আরম্ভ হয়- যা প্রায় ২০০০ বছর টিকেছিল। আর সেই বিড়ালের দেবীর নাম ছিল বাস্ট বা বাসটেট।
বিড়ালদের যত্ন নেওয়ার জন্য এই ভালবাসা ও উৎসর্গের ব্যাপারটিই একসময় প্রাচীন মিশরীয়দের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছিল। এই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার জন্য প্রাচীন মিশরীয়রা পারস্যের কাছে হারিয়েছিল নিজেদের স্বাধীনতা। চলুন ইতিহাসের পাতায় একটু ডুব দেয়া যাক।
পেলুসিয়ামের যুদ্ধ: ৫২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
সামেটিক তৃতীয় ছিলেন সেই সময়ে মিশরের ফারাও। তিনি তার পিতা আমাসিসের মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। তিনি যে সময়টায় সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন সে সময় মিশর ও আচেমেনিড সাম্রাজ্যের (পারসিয়ানদের) মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক খুব খারাপ দিকে চলছিল।
সামেটিক তার পিতার তুলনায় শাসক হিসেবে খুব বেশি দক্ষ ছিলেন না, তবুও বলা যায় তিনি পারস্যদের জন্য একজন যোগ্য প্রতিপক্ষই ছিলেন। কিন্তু প্রতিকূলতা তার বিরুদ্ধে এতটাই স্তুপীকৃত ছিল যে তিনি আর সাম্রাজ্যকে ধরে রাখতে পারেন নি।
সে সময়ে তার গ্রীক মিত্ররা তার সাথে সম্পর্ক মিটিয়ে চলে গিয়েছিল। তার সাথে তার পিতার সময়কার সামরিক উপদেষ্টা তখন মিশর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তিনি পারস্যদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
রাজা দ্বিতীয় ক্যাম্বিসেসের অধীনে পারস্যের মিশর আক্রমণের অগ্রযাত্রার কথা শুনে সামেটিক খুব একটা ভয়ে কাতর হননি। তিনি দ্রুত রাজধানী মেমফিসের দুর্গের যাবতীয় যা প্রয়োজন সকল কিছুরই ব্যবস্থা করেন এবং আসন্ন যুদ্ধ সম্পর্কে অবগত থাকার তার সামরিক বাহিনীকে সচেতন থাকতে বলেন।
আরেকটি বিষয় যা তিনি সুদৃঢ় করেছিলেন এবং যথেষ্ট ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তা হল পেলুসিয়াম। সম্রাট সামেটিক তার গুপ্তচরদের মাধ্যমে খবর পেয়েছিলেন পার্সিরা প্রথমে মিশরের পেলুসিয়াম আক্রমণ করবে।
যুদ্ধের অবস্থা যখন একেবারে তুঙ্গে তখন মিশরীয়রা যুদ্ধে প্রায় সফলতার সাথে বিজয়ের দিকে আগাচ্ছিল। মিশরীয়রা তাদের যুদ্ধের পরিকল্পনামাফিক জয়ের পথেই ছিল।
কিন্তু এগিয়ে থেকেও মিশরীয়রা সেই যুদ্ধে হেরেছিল মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাসের কারনে। পারস্যের রাজা মিশরীয়দের বিশ্বাস এবং ধর্মীয় দূর্বলতা সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন।
যুদ্ধের জয় যখন মিশরের পক্ষে তখন তিনি তার সৈন্যদের ঢালগুলিতে মিশরীয়দের বিড়ালের দেবী বাসটেটের ছবি আঁকতে বাধ্য করেন।
পলিয়ানাস (একজন ম্যাসেডোনিয়ান লেখক) এর মতে, যুদ্ধে বিড়াল ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি প্রাণী ভূমিকা রেখেছিল। কুকুর, ভেড়া এবং আইবিস পাখি সহ বেশ কিছু প্রাণী মিশরীয় ধর্মীয় রীতিতে পবিত্র ও প্রিয় প্রাণী।
পারস্য সৈন্যদের ঢালে বিড়ালের দেবী বাসটেটের ছবি দেখে মিশরীয় সৈন্যরা দেবির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির কারনে তারা শত্রুকে আঘাত করেনি। কারণ আঘাত করতে হলে শত্রুর ঢালে আঘাত করতে হবে। শত্রুর ঢালে আঘাত করা মানে দেবী বাসটেটের উপর আঘাত করা তাই সৈন্যরা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাতে থাকে।
এছাড়াও যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে যাওয়ার আরো একটি কারণটি ছিল। যুদ্ধের ময়দানে পারস্যরা কুকুর, ভেড়া এবং আইবিস পাখি সহ আরো বিভিন্ন প্রাণী হত্যা করতে শুরু করে, মিশরীয় সৈন্যদের সামনে যা মিশরীয় ধর্ম মতে পবিত্র প্রাণী। ফলে এসব চোখে দেখে তারা লড়াই করতে পারে নি।
যুদ্ধে হারের জন্য এগুলোই একমাত্র কারণ ছিল না। এছাড়াও মিশরীয়দের তুলনায় পার্সিয়ানদের সৈন্য ছিল সংখ্যায় অনেক বেশি। সেই সঙ্গে পূর্বে তাদের মিত্র দেশ গ্রীকরাও পার্সিদের দলে যোগ দিয়েছিল।