You are currently viewing প্রাচীন রোমের ৭ টি অদ্ভুত আইন

প্রাচীন রোমের ৭ টি অদ্ভুত আইন

প্রাচীন রোমের অনেক আইন, দর্শন কিংবা কালচার বর্তমানের আধুনিক সমাজে বিভিন্ন ভাবে অবদান রেখেছে। বর্তমানে আমাদের আর্কিটেকচারে এখনো প্রাচীন রোমের স্থাপত্যের প্রভাব দেখতে পাই, এমনকি বর্তমানে আমাদের রাজনীতি তেও কিংবা বলা যায় বিশ্বের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতি সবই প্রাচীন রোমের প্রজাতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে।

রোমান সাম্রাজ্য তাদের সময়ের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে উন্নতি করেছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের সেই প্রাচীন সময়ে নদীর গভীরতা মাপার মতো জিনিস ছিল এবং প্রাচীন রোমেই প্রথম মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার হয়েছিল।

শুধু তাই নয় তারা স্বাস্থব্যবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল যা প্রাচীন রোমকে এমন একটি জনসংখ্যায় পৌঁছাতে দেয় যার সংখ্যা এক মিলিয়ন নাগরিকে অতিক্রম করেছিল,যা ছিল অবিশ্বাস্য। যা ১৮ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরও জনসংখ্যায় ১ মিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।

৭ টি অদ্ভুত ও পাগলাটে আইন

প্রাচীন রোমের দর্শন, রাজনীতি কিংবা চিকিৎসা পদ্ধতির অনেক উঁচু শ্রেণীর হলেও,তাদেরও রয়েছে কিছু অদ্ভুত আইন ও রিতীনিতী যা বর্তমানের আধুনিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যথেষ্ট আলাদা।

চলুন আজ আমরা ৭টি আশ্চর্যজনক আইন সম্পর্কে জানি যা প্রাচীন রোমানরা আইন পাস করেছিল এবং প্রয়োগ ও করেছিল।

বেগুনি রঙের পোশাক পরিধান করা একটি অপরাধ ছিল

প্রাচীন রোমে, বেগুনি রঙের পোশাক শুধুমাত্র অভিজাত শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত ছিল। সাধারণ মানুষকে বেগুনি রঙ পরতে নিষেধ করার কাজটি সেই সময়ের মধ্যে পরিলক্ষিত হওয়া সামগ্রিক আইনের অংশ হিসাবে।সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসকে শক্তিশালী করার জন্য সাধারণ নাগরিকদের পোশাক বা কিছু উপকরণ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র প্রাপ্ত করা থেকে বিরত রাখার জন্য ব্যায়নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করা হয়েছিল। বেগুনি পোশাকের ক্ষেত্রে, প্রয়োজনীয় রঞ্জকগুলির কারণে সেগুলি উৎপাদন করা অবিশ্বাস্যভাবে ব্যয়বহুল ছিল। অতএব, বেগুনি রঙের পোশাক সবচেয়ে ধনী ও অভিজাতদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।

(Copyright photo)

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মহিলাদের কাঁদতে অনুমতি দেওয়া হতো না

ইতিহাস জুড়ে সভ্যতা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পেশাদার শোককারীদের ব্যবহার করা হতো(মানে কান্নার জন্য ভাড়াটে লোক)। আজও এগুলি কিছু সমাজে ব্যবহৃত হয়।ধারণা করা হয়েছিল যে যখন বেশি লোক একজন ব্যক্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে, তখন সেই ব্যক্তিটি আরও জনপ্রিয় এবং আরও মর্যাদা পেতো। তাদের বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের প্রভাবিত করার জন্য, ধনী পরিবারগুলি তাদের মৃত পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানাতে প্রচুর শোকার্তদের (ভাড়াটে) নিয়োগ করতো।

আরো পড়ুন:  মাথা ছাড়াই ১.৫ বছর জীবিত ছিলো মুরগীটি
copyright photo

এই প্রথাটি প্রাচীন রোমে এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মহিলাদের কান্না থেকে বিরত রাখার জন্য একটি আইন পাস করেছিল। আইনটি পুরুষদের সম্বোধন করার প্রয়োজন ছিল না কারণ জনসাধারণের মধ্যে কান্না করা পুরুষদের জন্য একটি সর্বজনীন অসম্মান হিসাবে বিবেচিত হত।

পতিতাদের চুল স্বর্ণকেশী রঙ করা বাধ্যতামূলক ছিল

প্রাচীন রোমান সমাজে মহিলাদের চুলের রঙ কালো হবে এমনটাই ভাবা হতো। তবে প্রাকৃতিক ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলে অনেকেই স্বর্ণকেশী চুলের অধিকারী হতো। এটা ছিলো রোম সমাজের জন্য একটি অবাঞ্ছিত কারণ তারা আশা করতো কোনো রোমান নারীর কখনও স্বর্ণকেশী চুল থাকবে না।

প্রাচীন রোমের অদ্ভুত আইন
(copyright photo)

আর তাই পার্থক্য সৃষ্টি করতে রোমের যৌনকর্মীদের চুলের রঙ জোড় করে রঙ দিয়ে স্বর্ণকেশী করা হতো। এতে করে সাধারণ রোমান নারীর মধ্যে এই সোনালী রঙের চুল সম্পর্কে ঘৃণা জন্মায়। তারা ভাবতো কারো সোনালী চুল চলে এর মানে সে হবে পতিতা ও নিকৃষ্ট নারী।

বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিদের দাফন করার অনুমতি দেওয়া হতো না

বিশ্বাস করুন বা না করুন, রোমানরা খুব কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল। এই কারণে, তারা বজ্রপাতকে সৃষ্টিকর্তার একটি কাজ হিসাবে দেখেছিল আরও নির্দিষ্টভাবে বললে দেবতা বৃহস্পতির একটি কাজ।

photo copyright

এর মানে হল যে একজন ব্যক্তি যদি বজ্রপাতের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে এর মানে ছিল বৃহস্পতি দেবতা নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তিকে ঘৃণা করতো।

যদি কেউ বজ্রপাতে মারা যাওয়া একজন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতো তারা সেটিকে দেবতা বৃহস্পতি থেকে একটি বলি চুরি হিসাবে দেখেছিল। আর কেউ এই কাজ করলে তাকেই বৃহস্পতির জন্য বলিদান করা হতো।

পিতারা অস্থায়ীভাবে তাদের বাচ্চাদের দাসত্বের জন্য বিক্রি করতে পারতো

রোমান পিতাদের “প্যাটারফ্যামিলিয়াস” মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল যা তাদের তার পরিবারের উপর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়েছিল। এর মধ্যে পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন।

Copyright photo

এই ক্ষমতার কারণে, একজন রোমান বাবা ক্রেতার সাথে চুক্তির ভিত্তিতে তাদের সন্তানদের দাসত্ব করার জন্য বিক্রি করতে পারতো। ক্রেতারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেই সন্তানদের কিনে নিতো এবং সে তাদের মন মতো সেই শিশুদের উপর যা কিছু করতে পারতো।

নারীরা তাদের স্বামীদের আইনি সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছিল

রোমান আইনগুলি বিশেষভাবে বলে যে আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট সময় কিছুর অধিকারী হন, তবে সেই অধিকারটি আপনার আইনি সম্পত্তি হয়ে ওঠে। এই আইন মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আরো পড়ুন:  গিউলিয়া তোফানা: মেকাপে বিষ দিয়ে ৬০০ পুরুষকে হত্যা করেছিলেন

যেমনঃ- স্ত্রী।

Photo copyright

অনেক রোমান স্ত্রী এই আইনের ফাঁকির সুযোগ নিয়েছিল। যদি তারা তাদের স্বামীর আইনগত অধিকার হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চায়, তবে প্রতি বছর তাদের কমপক্ষে তিন দিনের জন্য তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।

পিতা চাইলে তার পুরো পরিবারকে হত্যা করতে পারবে

পিতারা ছিলো তার পরিবারের ‘প্যাটারফ্যামিলিয়াস’ হিসাবে, প্রাচীন রোমে একজন বাবা তার পরিবারের সদস্যদের সাথে তার ইচ্ছামত অনেক কিছু করতে পারতো।

কারণ রোমান সাম্রাজ্যে পিতাকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।কোনো বাবা মন চাইলে তার পরিবারকে হত্যা করতে পারতো, এর জন্য কোনো বিচার হতো না। এমনকি রোমান পিতারা তার সন্তানদের বড় হওয়ার পরেও এই অধিকারগুলি ধরে রেখেছিলেন!