You are currently viewing ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া ৬ টি ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড

ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া ৬ টি ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড

মানুষ সময়ের সাথে সাথে সভ্য হয়েছে। কিন্তু অতীতে এমন সব প্রথা বা পদ্ধতি প্রচলন ছিলো যা তখনকার সময়ে ছিলো স্বাভাবিক কিন্তু বর্তমান সময়ে তা আমাদের কাছে এখন তা মনে হবে নৃশংস ও নিষ্ঠুর। সময়ের সাথে সাথে অতীতের সেই ঘটনা গুলোও প্রায় ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে চলেছে।

আজ ইতিহাস থেকে তেমনই ৬ টি প্রায় হারিয়ে যেতে চলেছে এমন নেতিবাচক বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানাচ্ছি।

হারিয়ে যাওয়া ধর্ম

Manichaeism একটি বিলুপ্ত ধর্ম। যা এখন সাধারণ মানুষের কাছে একটি প্রাচীন ইতিহাস মাত্র। এই ধর্ম সে সময়ে মানুষ কে কতোটা প্রভাবিত করেছিলো তা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই জানে না।

ব্যাবিলন (বর্তমান ইরাক) এর একজন নবী, ‘মানি’, তিনি এক অদ্ভুত ভাবধারায় বিশ্বাস নিয়ে তার ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন।

Image Credit: Wikipedia

ধর্ম এক দেবতা বা শয়তানের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। তার পরিবর্তে তিনি জগতের ভালে ও মন্দ বিষয়গুলো কিভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সেসময় এই ধর্ম প্রচারের জন্য রাজার আদেশে মণি কে বন্দী করা হয়। ২৬ দিন বন্দী থাকার পর তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর পরেও শত বছর ধরে মানুষ তার শিক্ষা গ্রহণ করে চলছিল।

মণির মতে, জগৎ হচ্ছে ভালো এবং মন্দের মধ্যে পছন্দের বিষয়ে, এবং এটিই ঐশ্বরিক। এই ধর্ম দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং অনেক লোক তা অনুসরণ করতে শুরু করে।

পারস্য থেকে শুরু করে মিশর, রোম, ফ্রান্স হয়ে সমস্ত পথ মানুষ ধর্মের বিশ্বাস অনুসরণ করতে থাকে। এটি সমস্ত খ্রিস্টানদের জন্য একটি প্রতিদ্বন্দ্বী কারণ হয়ে ওঠে কারণ তাদের একেশ্বরবাদের বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছিল, এবং লোকেরা নতুন ধর্মের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করেছিল।

এই ধর্মের প্রচার শতাব্দী থেকে শতাব্দী পর্যন্ত চলছিল। সেসময় রেমান সম্রাট থেওডোসিয়াস প্রথম ঘোষণা করেন, যে বা যারা এই ধর্ম পালন করবে তাকে হত্যা করা হবে। এই আদেশ জারি করার ফলে এই ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা কমতে থাকে।

সম্রাট থিওডোসিয়াস সেসময় এই ধর্ম পালনে জড়িত লোকদের সমস্ত নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। অনেকের ধারণা মতে এই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে চীনে তাদের সংখ্যা ছিলো সবচেয়ে বেশি।

মানব চর্বি বিক্রি

শুনতে অদ্ভুত ও ভীতিকর মনে হলেও এটা সত্যি! যে ১৬ শতকের ইউরোপেও মানুষের চর্বি বিক্রি হতো এবং তার চাহিদা ও উচ্চ ছিল। মানুষের এই চর্বি সেসময় Axungia Hominis বা “দরিদ্র পাপের চর্বি” নামেও পরিচিত ছিল।

সেসময় যারা বন্দী ছিলো যাদের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে তাদের দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে তাদের শরীর থেকে চর্বি আলাদা করা হতো। এবং সেই চর্বি বিক্রি করা হতো। যারা প্রচুর অর্থের মালিক ছিলেন, কেবল তারাই এই চবি কেনার সামর্থ্য রাখতেন।

Image Credit: The Atlantic

এই চর্বি প্রধানত চিকিৎসা উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো। তাই বেশিরভাগ চর্বিই ফার্মেসিতে পাঠানো হতো এবং তা দিয়ে শরীর ও দাঁতের ব্যথা, বাতের মতো রোগ ইত্যাদির জন্য ওষুধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হতো। সহজ কথায়, এটি তখন হাড় মজবুত করার জন্য একটি শক্তিশালী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হতো।

আরো পড়ুন:  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জামাই দুর্ভোগ

সেসময় ডাক্তার ও শল্যচিকিৎসকরা এই চর্বির জন্য যুদ্ধে মৃত সৈন্যকে এই কাজে ব্যবহার করতেন। ধারণা করা হয় ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়েও এই জঘন্য প্রথাটি প্রচলিত ছিল।

নরখাদক ইউরোপীয়

ইউরোপের ইতিহাসের প্রচুর অন্ধকার দিক রয়েছে। প্রাচীন ইউরোপের মানুষরা নিজেদের স্ত্রী কে নিলামে বিক্রি করা থেকে শুরু করে নরখাদক হওয়ার মতো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।

১২ শতক থেকে ১৯ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বছর ইউরোপীয়রা প্রকাশ্যে নরমাংস ভক্ষন করতো।

প্রথমে, তারা মিশর থেকে সংরক্ষিত মমি নিয়ে যেতো এবং সেগুলোকে শুষ্ক ত্বক পাউডার এর মতো করত। এই পাউডার তারা খেতো ও গায়েও মাখতো। এর স্বাদ ছিলো অতি ভয়ানক! তা সত্ত্বেও মাথাব্যথা থেকে শুরু করে ক্ষত নিরাময় পর্যন্ত প্রায় সমস্ত কিছুর নিরাময় বলে মনে তা তারা ব্যবহার করতো।

Image Credit: Smootian Magazine

মমি খাওয়া থেকে শুরু হয় সত্যি সত্যি মানুষ খাওয়ার অভ্যাস, তাও প্রকাশ্যে। যারা নরমাংস খেতো তাদের ধারণা ছিলো যে ব্যক্তির মৃত্যু যত বেশি নৃশংস হবে, তার মাংস তত বেশি শক্তিশালী হবে।

সে সময় চিকিৎসার জন্য রক্ত বন্ধ করার জন্য মানুষের রক্ত ব্যবহার করা হতো, কিংবা মানুষের চর্বি এবং মাথার খুলি গুঁড়ো করে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার ওষুধ তৈরি করা হত।

ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার সময়েও এই কর্মকাণ্ড প্রচলিত ছিল। সাধারণ মানুষ থেকে রাজসভার সদস্যরাও নরখাদকের সাথে জড়িত ছিলো। এমনকি প্লেগ রোগের থেকেও নিরাময় পেতে মানব অঙ্গ ভক্ষণ করা হতো।

স্ত্রী কে নিলামে বিক্রি করা

বর্তমানে স্ত্রী কে নিলামে তোলা ঘোরতর অপরাধ বলা হবে। কিন্তু মধ্যযুগ থেকে শুরু করে রাণী ভিক্টোরিয়ার সময়েও স্ত্রী কে নিলামে তোলে বিক্রি করা ছিলো অতি সাধারণ বিষয়।
ইংল্যান্ডে বিবাহবিচ্ছেদ তখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল, এবং শুধুমাত্র ক্ষমতাশালী এবং ধনী লোকেরাই সেই ব্যায়ভার বহন করতে পারতো।

যে স্বামী তার স্ত্রীকে নিলামে তুলতো তাকে প্রথমে স্ত্রীকে পণ্য হিসেবে নথিভুক্ত করতে হতো। তারপর সেই নারীকে একটি জনসভার মাঝে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো।

Image credit: Facebook

নিলামগুলো সাধারণত সরাইখানা, মেলা বা বাজারের মতো সর্বজনীন স্থানে করা হতো। কিছু পুরুষ তাদের স্ত্রীদের গলায় দড়ি দিয়ে বাঁধা হতো, এ যেনো ছিলো কোনো কোনো পশুকে বাজারে বিক্রি করার মতো ব্যাপার!

নিলামে তোলার আগে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হতো। নিলামের সভাপতিত্ব করার জন্য একজন নিলামকারীও উপস্থিত থাকতো।

নিলামের সময় সাক্ষীদের উপস্থিতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বামী নিলামের সময় দর্শকদের কাছে তার স্ত্রীর গুণাবলী গুলো জোরে চিৎকার করে ঘোষণা করতো।

অনেক ব্যবসায়ী ও দালাল সেই নিলামে অংশ নিতো। দালালরা বিশেষত নিলামে কিনে তাকে আবার কোনো ধনী ব্যাবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিত যৌনদাসী হিসেবে।
কখনও কখনও, স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরাও সেই দর্শকদের ভিড়ের অংশ হয়ে যেতো। আবার কোনো কোনো মহিলার প্রেমিক থাকলে সে নিলামের মাধ্যমে সেই মহিলাকে কিনেও নিতো।

নববধূ কে অন্যের সাথে শেয়ার করা

মেসোপটেমিয়ায় (আধুনিক ইরাক) জুস প্রাইমা নকটিস নামে একটি প্রথা ছিল, যার অর্থ “প্রথম রাতের অধিকার”, এই প্রথায় ধনী প্রভু বা রাজারা তাদের প্রজা বা ভৃত্যের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে বিয়ের দিন রাতে তাকে শয্যাসঙ্গী করতেন।

অর্থাৎ স্বামীর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির আগেই, অন্য পুরুষ তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে বাধ্য করতো।

আরো পড়ুন:  ডাইনি হত্যা: যে ৭ টি উপায়ে ডাইনি শনাক্ত করা হতো

এই অভ্যাসটি সেই সময়ে পুরুষ শক্তি এবং আধিপত্যের প্রতিফলন ছিল; যাইহোক, এর অনুশীলনের কোন বিশিষ্ট প্রমাণ বা রেকর্ড নেই।

অনেক লোক এটাকে প্রতারণা এবং বানোয়াট গুজব বলে বিশ্বাস করে। যদি অনুশীলনটি সত্যিই ঘটে থাকে তবে এটি অবশ্যই সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ কর্মকান্ডগুলোর একটি ছিল।

জোহান ডি উইট

জোহান ডি উইট ছিলেন নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে মহান ও সমৃদ্ধশালী নেতা। তার বাবাও একজন মহান নেতা ছিলেন। তার বাবা ছিলেন নেদারল্যান্ডসের একটি শহরের মেয়র, সকলেই তার খুব প্রশংসা করতো।

জোহান ১৬২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সময় ডাচদের ক্ষমতা ও গৌরব ছিলো একদম শীর্ষে। জোহান ১৬৫৩ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে একজন কাউন্সেল হন। তিনি এতটাই মহান নেতা ছিলেন যে তিনি তিনবার তার পদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হন।

Image Credit: Wikipedia

জোহানের সময়ে নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো না। কিন্তু জোহান তার প্রচেষ্টা ও আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সেসময় নেদারল্যান্ডসে ‘হাউস অব অরেঞ্জ’ নামে একটি প্রভাবশালী পরিবার ছিলো। তারা জোহান তার বাবাকে প্রচন্ড ঘৃণা করতেন। পরিবারটি তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বছরের পর বছর ধরে কখনোই একত্রিত হয়নি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে গেছে।

বেশকিছু বছর ধরে পরিস্থিতি ভাল ছিল, এবং লোকেরা জোহানের প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা এবং ভালবাসত, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ইংল্যান্ড ১৬৬৫ সালে ডাচদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে।

শীঘ্রই, ফ্রান্স এই যুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৬৭২ সালে রাজা লুই চতুর্দশ নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি এবং জনগণের চাপ এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে জোহান একই বছর আগস্টে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

সাধারণ জনগণ নেদারল্যান্ডস এর সাথে এই যুদ্ধের জন্য জোহানকে দোষারোপ করতে শুরু করে এবং সাধারণ জনগণ হাউস অফ অরেঞ্জের সদস্য উইলিয়াম তৃতীয়কে তাদের নেতা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

জোহানের ভাই কর্নেলিয়াসকে উইলিয়ামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। জোহান তার ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য কারাগারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ক্ষিপ্ত জনতা তার ভাই জোহান উভয়কেই আক্রমণ করে এবং শরীর টুকরো টুকরো করে হত্যা করে।

তারা তাদের (দুই ভাই) নগ্ন দেহ টেনে নিয়েছিল, তাদের হত্যা করেছিল এবং তাদের মাংস ও খেয়েছিল। এককালের বিখ্যাত ও শ্রদ্ধেয় এই নেতার মৃত্যু হয় এক কলঙ্কজনক ও ভয়াবহ মৃত্যু।

তিনশ বছর পরে, তাদের ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য তাদের অনুশোচনা দেখানোর জন্য, ডাচরা মহান নেতাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেশ কয়েকটি মূর্তি তৈরি করেছিল এবং তাকে দেখানো হয়েছিল যে তারা তার সাথে যা ঘটেছে তার জন্য তারা কতটা গভীরভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।