You are currently viewing মানব ইতিহাসের ৪ টি উদ্ভট চাকরি

মানব ইতিহাসের ৪ টি উদ্ভট চাকরি

বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষকে কতো রকমের কাজই না করতে হয়। এই কাজ/ চাকরির মধ্যেও রয়েছে উঁচু নিচু ভেদাভেদ। অনেক চাকরি আঋে যাতে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, তবুও বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ সেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

আজকের এই আর্টিকেলে মানব ইতিহাসের তেমনই কিছু অদ্ভুত, উদ্ভট চাকরি সম্পর্কে জানাবো।

১. প্রেইগাস্টেটর: স্বাদ গ্রহণকারী

প্রেইগাস্টেটার অর্থ হচ্ছে যে খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করেন। আগেকার দিনে রাজা- বাদশা দেশি বিদেশি খাবার কিংবা পানীয় খেয়ে দেখার আগে একজন কে দিয়ে সেই খাবার ও পানীয়ের স্বাদ পরীক্ষা করে নিতো। এই কাজের জন্য তাদেরকে প্রচুর অর্থ প্রদান করতো।

আপাতদৃষ্টিতে খুবই মজার চাকরি মনে হলেও তা কিন্তু নয়। একটু ভাবুন যে একজন রাজা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খাবার ও পানীয় খেতে চান সেসব খাবারের টেস্ট গ্রহণ করা সহজ বিষয় নয়। কিছু কিছু খাবার ও পানীয়ের স্বাদ ছিলো খুবই উৎকট ও বিশ্রী।

একজন প্রেইগাস্টেটরের কাজ কেবল খাবারের লবন মশলার টেস্ট কেমন তা পরীক্ষা করাই একমাত্র কাজ ছিলো না। এরসাথে তাকে তাকে সেই খাবার খেতেও হতো যাতে রাজা বা সম্রাট নিশ্চিত হতে পারেন এই খাবারটি নিরাপদ কিনা।

প্রেইগাস্টেটর (অনেকে ফুড টেস্টার ও বলেন) মূলত রাজা বাদশারাই নিয়োগ করতেন। কারণ তাদের জীবন সবসময় হুমকিতে থাকতো।

খাবারের স্বাদ গ্রহণ করার পর যদি স্বাদ গ্রহণকারী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে খাবারটি রাজার জন্য উপযুক্ত নয়।

অনেক সময়ে রাজা বা সম্রাটদের শত্রুরা স্লো পয়জন মিশিয়ে দিতো খাবারে ফলে সহজেই খাবার টেস্ট করা ব্যক্তি বিষে আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে হতো না। এমন ঘটনা ঘটেছিলো রোমান সম্রাট ক্লাডিয়াসের সাথেও তিনি তার ফুড টেস্টার হ্যালোটাসের খাবার টেস্ট করার পরেও বিষে আক্রান্ত হয়েছিলো। এছাড়াও মৌর্যবংশের রাণী দুধরাও তার স্বামীর খাবারের স্বাদ গ্রহন করে মারা গিয়েছিলেন।

রোমান সম্রাট নিরোর উপস্থিতিতে খাবারের বিষ পরীক্ষা করছেন লোকাস্টা Image Credit: Wikimedia Commons

শুধু খাবারের স্বাদ দেখা ও খাওয়াই তাদের একমাত্র কাজ ছিলো না। বেশিরভাগ সময়ই তারা রাজাদের খাবার তৈরি ও খাবার পরিবেশনের কাজেও নিযুক্ত থাকতেন।

যাই হোক এই কাজটি ইতিহাসের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোর একটি। রাজাদের শত্রুর বিষ আক্রমণের বেশিরভাগ শিকার তাদেরকেই হতে হয়েছে।

২. বগলের চুল পরিষ্কার

আরো পড়ুন:  সেপ্পুকু বা হারাকিরি: জাপানি সংস্কৃতিতে অনুমোদিত আত্মহত্যা

শুধু আজকেই দিনেই নয়, প্রাচীনকালের মানুষের কাছেও খেলাধুলা ছিলো অবসর সময় কাটানোর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কার্যক্রম। যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলেই তাদের অবসর সময়ে কোনো না কোনে খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত থাকতো।

যেহেতু খেলাধুলা করার ফলে পুরুষদের ঘামে তাদের শরীরের চুলগুলো (বিশেষত বগলের) দুর্গন্ধ হয়ে যেতো, সেজন্য তাদের বগলের চুল পরিষ্কার করার জন্য একজন মানুষ প্রয়োজন পরতো। আর সেই চুল পরিষ্কার করা লোককে বলা হতো Armpit plucker.

প্রাচীন গ্রীক ও রোমের সাধারণ মানুষেরা তাদের অবসর সময়ে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত থাকতেন। খেলাধুলার সাথে গ্রীকাদের কেমন সম্পর্ক ছিলো হাজার বছরের পুরনো এই ভাস্কর্য কে দেখলেই বুঝা যায়। Image Credit: Wikimedia Commons

এই ধরনের কাজ বিশেষ করে প্রাচীন রোমের মাঝেই অধিক প্রচলিত ছিল। কাজটি খুব সহজ ছিলো না পুরুষদের ভেজা ঘামের উৎকট গন্ধ সহ্য করে এতো এতো মানুষের চুল পরিষ্কার করা মোটেই সহজ কাজ নয়।

সেসময় বগলের চুল কাঁটার পরিবর্তে একেবারে উপড়ে ফেলা হতো, তবে সে সময়ে শরীরের অন্য কোনো অঙ্গের চুল ছিঁড়ে ফেলাকে বিশেষ করে পুরুষদের কাছে তা ছোট করে দেখা হতো।

৩. কুৎসা রটানো

শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এটা সত্যি যে কুৎসা রটানোও আগেকার দিনের একটি পেশা ছিল। বর্তমানে আধুনিক যুগে এসেও কিন্তু এমন দেখা যায়। বিশেষ করে সংবাদপত্র গুলো টাকার বিনিময়ে কুৎসা রটায়।

কেবল বর্তমানেই নয় প্রাচীন যুগেও গুজব ও কুৎসা রটানোর চল ছিলো। এমনকি কুৎসা রটানোর বিনিময়ে তারা অর্থ ও পেতেন! Image Credit: Wikimedia commons

সেসময়ে তারা টাকার বিনিময়ে প্রতিবেশীর সম্পর্কে আজেবাজে কথা রটাতো। এছাড়াও তারা সকল মানুষের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও দিতো অর্থ প্রদানকারীকে। একপ্রকার ছোটখাটো গুপ্তচর ও বলা যেতে পারে তাদের।

যেহেতু তাদের পরচর্চার জন্য তারা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে মানুষের কাছে প্রচার করতো তাদেরকে সমাজের মানুষেরা প্রায়শই খারাপ বিশ্বাসঘাতক ও তুচ্ছ দৃষ্টিতে দেখতো। কারণ অর্থের জন্য তারা  মিথ্যা বলে যা কিছুই করতে পারে।

৪. সতিত্বের প্রতিশ্রুতি

২১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিখ্যাত যোদ্ধা হ্যানিবল বোমানদের অবস্থা খুবই নাজেহাল করে ফেলেন।  আর এই দর্ভাগ্যের জন্য তারা মনে করতো তারা তাদের দেবতাদের খুশি রাখতে পারেন নি।

সে সময়ে রোমানরা ছিলো অত্যাধিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারা বিশ্বাস করতো, তাদের এমন পরাজয়ের কারণ সতী নারী না থাকা।

প্রাচীন রোমে ভেস্তা নামে একজন দেবী ছিলেন, রোমানরা এই দেবীর উপাসনা করতেন। ভেস্তা ছিলো রোমানদের বাড়ি ও পরিবারের দেবী। এই ভেস্তা দেবীর মন্দিরের নারী পুরোহিতদের বলা হতো ভেস্টাল, তাদের একমাত্র কাজ ছিলো মন্দিরের প্রদীপে আগুন জ্বালানো, আর এরাই ছিলো রোমের একমাত্র নারী পুরোহিত।

আরো পড়ুন:  রাধা বিনোদ পাল: আজও যে বাঙালিকে কৃতজ্ঞচিত্তে সম্মান জানায় জাপানিরা
শিল্পীর তুলিতে চিত্রিত একজন ভেস্টাল নারী হাতে তার মন্দিরের অগ্নিপাত্র Image Credit: Flickr

যদি কখনো ভেস্তার মন্দিরের প্রদীপের আগুন বন্ধ হয়ে যায়, রোমানরা ধরে নিতো নতুন কোনো সমস্যা কিংবা বিশৃঙ্খলা শহরে প্রবেশ করছে। হ্যানিবলের আক্রমণ এবং রোমানদের ভয়ানক পরাজয়ের পর এই বিশ্বাস আরোও দৃঢ় হয়ে উঠেছিল এবং এর জন্য সেসময় কঠোর শাস্তি ঘোষণা করা হয়।

এই নারী পুরোহিত বা ভেস্টালদের চিরকুমারী থাকার কথা ছিল। এই সকল নারীদের ৬ থেকে ১০ বছর বয়স থাকাকালীন সময়ে অনেক শিশুদের মধ্যে বেছে নেওয়া হতো এবং দীর্ঘ ৩০ বছর কুমারী থাকার প্রতিশ্রুতি নেওয়া হতো।

একজন ভেস্টাল (নারী পুরোহিতের) পোর্ট্রেট Image Credit: Flickr

যদি কোনো ভেস্টাল (নারী পুরোহিত) তার ‘সতীত্বের ব্রত’ অক্ষত রাখতে অক্ষম হয় তবে তাকে কঠিন ও বেদনাদায়ক মৃত্যু দেওয়া হতো। তবে ভেস্টাল হওয়া নারীদের একটি সুবিধা ও ছিলো, সেসময়ে রোমান সাম্রাজ্যে নারীদের ভূমিকা বলতে কিছুই ছিলো না। অন্যান্য সাধারণ কিংবা অভিজাত রোমান নারীদের তুলনায় ভেস্টাল নারীরা অধিক সুযোগ-সুবিধা, ক্ষমতা ও স্বাধীনতা পেত।