প্রণব কুমার সত্যব্রত এর ভাওয়াইয়া


আরে মশার কামরে ওমোর নিন্দে ধরেনা
মিসারি খান ফেলে শোতং তাও মানে না
কয়েল নাগেয়া দেয়ও তাতো কমে না
ওরে মশার কামরে ওমোর নিন্দে ধরে না।।

চপুরাইতে গান কয় মশায় মশারির ভিতর
রক্ত খায়া টুমটুমা করিচে ওদোর,
খেতা ঘোমরে শুতি থাকং তাকো মানে না
মশার কামরে ওমোর নিন্দে ধরেনা।।

ঘ্যান ঘ্যানি আর প্যান প্যানি
মশা মস্ত বড় দেওয়ানি
উরিয়া দেয় কুটুস কামর তার বড় জ্বালানী
ভুতি নাগে পোয়য়া থোং তাও টানে না
মশার কামরে ওমোর নিন্দে ধরেনা।।


কুল নষ্ট মান নষ্ট পিরিতে মজিয়া
ওমোর পিরিতে মজিয়া।।

ওরে চন্ডীদাস আর রজকিনী
উদাস পিরিতির লাগিয়া
শিমুল ফুলের তুলা উদাস বাতাসে ভাসিয়া।
হৃদে হৃদে মনের পিরিত কেমনে যায় বসিয়া
ওমোর পিরিতি করিয়া রে পিরিতি করিয়া।।

জলের তলে নলের আগুন কেমনে যায় বোঝা?
ওরে মনে মনে একনা হইলে তার কিরে জ্বালা
তোমারে দেখিলে ওমোর প্রাণ যায় ভরিয়া
ওরে পিরিতি করিয়া রে পিরিতি করিয়া।।


ওমোর সাত রাজার ধন
আরে কি দিয়া শক্ত করিছেন মন,
এই যে থাকি থাকি মুই যাং হুতাশ হয়া
তোমরা না করেন এমন ঢং।।

আরে পিরিতে জ্বালা বড় জ্বালা
সোনা মনে মনে লাগিলে জোড়া
উরিয়া রে উরিয়া চকোয়ার ঝাক
না ছারে রে জোড়া ওমোর সুন্দরি…..
নরম মন পায়য়া করে কত সং
তোমরা না করেন এমন ঢং ।।

আরে কুমারে গড়ায় মাটির বাসনা
পুড়িয়া করে ঝামা
মাইটাল মাটিরো এমনো গুন
পিরিতির মত আঠারে সোনা ওমোর সুন্দরি…..
নরম মন পায়য়া করে কত সং
তোমরা না করেন এমন ঢং।।


আরে আইসেন আইসেন বন্ধু
আরে ও বন্ধু আইসেন ফির ঘুরি
মনের ভিতরা তালা দিয়া
না হন আর বন্দি বন্ধু রে ।।

ফুলের ভোমরা ফুলে নরে রে
ওবন্ধু ফুলের সঙ্গ সাথী
গাঙ্গের জলে হংস ভাসে
গাঙ্গেতে তার পিরিতি বন্ধু রে ।।

চর বাড়ির ওই বাউনুড়ি রে
ওবন্ধু উদাসীয়া হাওয়া
উদাস মনে নাজান ছারি
কন মাতাতো হাত দিয়া বন্ধু রে ।


আইসেন ক্যানে ধরলার পার
ওইদগা কতা বাদ দিয়া
আরে দোনো জনে কমো কতা
মনের হাউস মিটিয়া।।

এই যে এক নজর তোমাক দেখি
মোক যে নাগিল ভাল
এই রুপেতে কি দিয়া তোমরা
করিলেন মাতাল
যাক যাক হইবে কতা
ধরলার পারত আসিয়া
আরে দোনো জনে কমো কতা
মনের হাউস মিটিয়া ।।

মোবাইলে নাম্বার তোমরা টপ করিয়া দ্যাও
নাম্বার কোনা মুই তুলিয়া নেও
ফোনে ফোনে হইবে কতা
জমেয়া জমেয়া
আচ্ছা আচ্ছা হইবে কতা
ধরলার পারত বসিয়া
আরে দোনো জনে কমো কতা
মনের হাউস মিটিয়া।।


তুষের আগুন জ্বলে দ্বিগুন
ঘুংসিয়া ঘুংসিয়া
মনের অনলের কিরে দহন
পিরিতের লাগিয়া সোনা ।।

পিরিতের রসের রসে নাউ পাকে রে বয়সে
আরে গাবুর বয়সে ওমোর পিরিতি
না জুটিলো কপালেরে সোনা
না জুটিলো কপালে ।।

কাঠ পুরিয়া হয় রে ধোঁয়া
উড়িয়া যায় আকাশে
পিরিতি বিনে শূণ্য মরু মোর
তৃষ্ণা নিয়া মরে রে সোনা
তৃষ্ণা নিয়া মরে ।।


ওকি ওহো পঙ্খিরে
পঙ্খি উরিলু কোন দেশে
এ হিয়ারো বাধন ছাড়ি, কোন পরবাসে।।

বাস কাবারির নোয়ায়রে পিঞ্জিরা
সোনা দিয়া গড়া,
সেই না পিঞ্জিরা ছাড়িয়া পঙ্খি
ভুলিলু মোর মায়া রে ॥

কত না আদরের সেই না পঙ্খি
প্রেম কলসি ভরা
এত করিলাম পঙ্খির নামে
তবু না দিলো ধরা রে ॥


আবেগের বয়সে মুই ভাবের পাগেলা
পিরীতি উতলা রসে,
মোর সখি না ভাব করে মোর নজরে নজরে ॥

নয়নে নয়নে দরিশনে
মন মোর উতলা তাতে,
মুখের হাসিতে মন মোর কারি
পিরীতি না হয় আপন দোষে ॥

খোরারো বিলে বগারো সারি
কত না আশায় থাকে,
সখী না বিনে মুই হনু উদাসী
মন মোর ছটফট করে ॥


দুরে দুরে থাকে সখি
ফোনতো না হয় কথা
ভাবের মানুষ তায় না বোঝে মনেরো ব্যাথা ॥

নজরে নজরে হয় কী পিরীতি?
কথা না হইলে পরাণে পরাণে,
মোর সখি বুক বান্দিচে কঠিনো পাষাণে ॥

পাষাণের পাষাণ হিয়া
সখি মোর মরে লাজে,
মোর সখি বুক বান্দিচে কঠিনো পাষানে ॥


ও মোর ভাবের কালাচাঁন
ও মোর রসিয়া বন্ধুধন
মন দিয়া মন বান্দিয়া মোর
বশীয়া নিলেন মন ৷।

আরে পিরিতি হইল বন্ধু কাটলের আটা
পিরিতি হইল বন্ধু নিমের পাতা,
পিরিতি হইল কুসারের ছাল,
গাবুর বয়সে পিরিতি বন্ধু
নদীর জোয়ারের জল।।

ভর নদীর জল যেমন টলমল করে
যৌবন কালের পিরিতি বন্ধু উতলিয়া পরে
বয়স কালে ও পিরিতি শুকনা আমের ডাল ॥


ও কি কন্যা রে
কারে দিছিস মন তুই
উজার করিয়া রে ॥

নদীর জল কন্যা সাগরে যায়
বিলের জল কন্যা কি বিলত রয় রে ॥

কয়লা ধুইলে কি ম‍ইলা যায়
যার যে স্বভাব তেমন রয় রে ॥


ও মোর সরলা ও মোর সোনা
তুই হলু মোর জপেরো মালা ॥

মাইনষে পোষে ময়না পাখিরে
পিঞ্জিরায় ধরিয়া,
সেই মত তোক রাকচং মুই
বুকত ভরেয়ারে সোনা তুই জপের মালা ॥

স্বপনেতে দ্যাখোং তোমাকো
বসিয়া বগলেতে,
নিন্দভাঙ্গিয়া চমকিয়া দেখং
বগলত নাই মোর অনুরাধা রে সোনা
তুই জপের মালা ॥


ভাল করি তোক সাজাইম কইন্যা রে
সাজাইম ঝলমলা সাজে ॥

বানেয়া নিচোং কইন্যা সোনারো বালা
হাত ঝুম ঝুম হইবে রুপারো পলাতে।।

পাত বাজিবে তোমার রুপারো নূপুর
কানোত দুলিবে ঝুমকা দুলো রে ॥

কমোরত দিবার আছে বিছা
সীতাতো দিবার আছে সীতাপাটি রে।।


রসের কালা রসিয়া
তোমরা বাজান বাঁশি
এই যে তোমারো বাঁশি
যাদু করিল মোক করিলো উদাসী ॥

দিনে রাইতে নিশি দুপুরে
তোমারা বাজান বাঁশি
বাঁশির সুর উতলা করে
মোর অবলার কানে আসি ॥

নল বাঁশেরো পোড়া বাঁশি
কত যাদু জানে
সুরে সুরে পাগল করিয়া করিলেন মোক বশি ॥


কুলো কাষ্ঠেরো আগুনে জ্বলাইলেন তোমরা
খড় সাজেয়া অনল দিয়া রে বন্ধুরে,
কি দোষে ভুলিলেন মোরে ॥

ভাটার অনলে কয়লা পোড়ে
সেই অনল ধরাইলেন অন্তরে ॥

তুষের আগুনের বড় জ্বালা
সদা ঘুংসি ঘুংসি জ্বলে রে ॥

দাবানলের জ্বলা আগুনে
পুড়িয়া করিলেন অঙ্গার রে ॥


বুক বান্দিচেন দিয়া পাষাণ
মনো দিয়া বোঝেন মন
বন্ধ একবর আসিয়া কতা কন ॥

তোমরা হইলেন মোর আপনজনা
পিরিতি হইল মোর কানচা সোনা
বিশ্বাস না হইলে পরোক করি নেন বন্ধু ধন ॥

তোমরা বিনে মোর পাগল হিয়া
মন পাখি মোর যায় বেরেয়া
বিশ্বাস না হইলে বুক চিরিয়া দেং বন্ধু ধন ॥

বাড়ির আগত মোর খোরার দোলা
মন করে মোর তোলাপারা
সার হইল মোর দুই চোখেরো কান্দন ॥


ডোংডোংগাডোং দোতারার বাজন
কারিয়া নেয় মোর প্রাণ
নিশি রাইতে প্রাণো বন্ধু বাজায়
ভাওয়াইয়া গানো রে
ও দোতারা না বাজান আর উদাসী সুরে।।

ও দোতোরা ডাংগান খিরল দিঘলনাসা
মন কারা সুরে
আরে এই সুর আসি বুকত ব্যাধে
মন করে উতলা রে ॥

চাইর তারের দোতোর দুই তারে জোড়া
তিন তারে এক করিয়া
ডোংডোংগাডোং দোতারার বাজন
কি যাদু ভরা রে ॥


দেওয়ায় করচে ম্যাগম্যাগালী দখিণা বাতাসে
আরে এই ঝড়িতে আশা করোংরে
এবার আবাদ হইবে ভালে।।

বাইগোন বাড়িত ধোরচে আগুন
মাটির রস বিনে
এই জলেতে ভালে হইবে রে
ও মোর আবাদ হইবে ভালে।।

গুইয়ার গাছো ঠনঠনা মোর
নাই পাং জল দিবার মোর ছ্যাকে
আরে এই জলেতে ভালে হইলো রে
এবার আবাদ হইবে ভালে।।

ওয়া বাড়ি গেইচে ফাটি কেরাসিনের দামের বাদে আরে এই জলেতে ভালে হইলো রে
এবার আবাদ হইবে ভালে ॥


পহেলা পড়িলো রে
রংয়ে ঢংয়ে সবে মাতিলো রে ॥

পইলে পহেলা শুরু হয় দখিনা বাতাস
গাছে গাছে আম কাটোল
আরে ফুলে ভরে জাম গাছ॥

বৈশাক পড়িলে চতুর পাশে
পড়ি যায় ধুম ধাম
গীতাপাঠ আর পূজা পার্বণ
আর ঘরে ঘরে হরি নাম ॥

পইলে পহেলা বৈশাকি ম্যালা বইসে
চরকা, নাগরদোলা, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা,
শকের হাড়ি সোগে আইসে ॥


আরে কিসোত গোসা, কিসের ব্যাজার
কিসোত দোজনা ওঠে
মুই চ্যাংরা বয়সে কামাই দিয়ারে
আনচোং তোমাক তরে ॥

বাপের বাড়ি হইলো তোমার
ওই যাত্রাপুরের চরে
ওইনা ধরলা নদীর পাতারে
অভাব দেকি বিনায় আনচো রে
এলা কিসোত দোজনা উঠে ৷।

চ্যাংরা বয়সের খাটুনি দিয়া
কামাইচোং পাইসা ম্যালা রে
আরে সেই কামাইয়ে যাইবে চলি রে
ওমোর নিদান কালো ভালে ॥


রূপ কুমারী রূপের কইন্যা রে
চাঁননি রাইতে ও যেমন পূর্ণিমারো আলো
তারো চাইতে রূপ কুমারী অধিক গুণে ভালো রে।।

কালে ভালে রূপ কুমারী চোকে পরে চোক
লাজ শরমে ও কুমারী চুলে ঢাকে মুকো রে ॥

বাড়ির পুবে দিগীর পাড়ে বসিয়া বিকাল ব্যালা
কি ধান্দিয়া চায়া থাকে উদাসীনো হয়া রে।।

শোনো শোনো ও ভাইয়োরে তোমাক গুলাক কং
ওই রূপসির রূপোতে
ওমোর মজিয়া গেইচে মন রে ॥


ও ঘটকের ব্যাটা
গরিব দেখি চ্যাংরা দ্যাকেন
ছওয়াটাক দিমো বিয়া ॥

বাচ্চাকালে মরচে মাও
দুধ ছাড়া হয়া
তখন থাক মানুষ করচোং মুই
কোলে পিটে নিয়া ॥

বুক জুরিয়া মোর একনা ছাও
নাই কিন্তু আর কাও
দেকি শুনি দেইম ছওয়াক মুই
কনু কিন্তু তাও ॥


ওকি ও মোর সরলা
চোখের ভাষা মন তোর বোঝেনা
মুই থাকোং চায়া উদাস রে হয়া
তুই বিনে বাড়ে মনের জ্বালা রে ॥

গলাতে পড়িচেন সোনারো মালা
তোক সুন্দরীক মোক নাগে ভালা রে ॥

নূপুর পরিচেন পায়ে জোরা
পাগোল হয়া যায় মোর মন উতলা রে।।

বাড়ির আগোত খোরার দোলা
তোর সুন্দরীর মন চঞ্চলা রে ॥


এক নজর তোমাক দেকিয়া
তোমাক মনোত মুই দিচোং থুইয়া
সরলা রে শেষোত তোমরা
নিরাশ না করে করেন মোরে ॥

জানি তোমার মনের কথা
ভাও দেকিলে যায় বোঝা
সেই আশাতে বান্দিয়া থুচোং মনো রে ॥

পাচোত ফিরনা চাঁনদো দেকিয়া
মোর কতা না যান ভুলিয়া
ভুলি গেইলে বাঁচিয়াও মরিমো রে ॥

Leave a Reply