প্রণব কুমার সত্যব্রত

কবিতা


দুঃখ তুমি নির্বাসনে যাও অনেক বহুত দুর
আমি নিজেই একটু তৈরি করবো দোঁয়াস মাটি।
শুনেছি বেলে দোঁয়াস মাটিতে সবজি চাষ ভালো
হয়,তুমি চলে যাও ব’দুর আমি নিজেকে আরো
উর্বর করি। প্রিয়োতমা দুঃখ তুমি দেখেছো কি যে এঁটেল মাটিতে গড়া, কলস,হাড়ি-পাতিল,থালা
বাসন,গ্লাস,প্লেট,সানকি?কতটুকু না পুড়িয়ে
করে তাদের ব্যাবচ্ছেদ?দুঃখ আমাকে ছেড়ে চলে
যাও মরুর দেশে সাহারায়,রাজস্থানে।নয়তো
আমার জীবনের এপিটাফে লিখে দাও তোমার জীবনলীপী।করো জোড়ে হাত,মিনতি করছি হ্যা
আমি মিনতি করছি এ’অবসান দাও আমায়!
নয়তো জ্বলন্ত চিতায় এ হোক বসবাস শুধু
জ্বলছি জন্ম থেকেই জ্বলছি এর শেষ কোথায়?
আমাকে মুক্তি দাও দুঃখ,বেলে দোঁয়াস মাটি চাষে হবোই উর্বর ভূমি,আমাকে বাঁচতে দাও দুঃখ
বুকে শান্তি নিয়ে বাঁচি।আমার স্বপ্ন গুলোর সেই অনুপমার মতো আকাশ ছোঁবে সুখ দাও দুঃখ।


কেউ একজন আমার হোক একান্তই আমার
হোক, অম্লান চোখ তার একনিষ্ট দৃষ্টি আমার
দিকেই হোক, আমার দিকে তাকিয়ে সে মাথা নত
করে একটু হাসুক,অথবা স্বপ্নে ঘোরে একটু ভালোবাসুক।তিস্তা থেকে কুড়িগ্রামের স্ট্রেট ট্রেন লাইন সকালের ট্রেনের হুইছাল ঝকঝক
শব্দে ঘুম ভাঙ্গতো।এখন কেউ বকাবকি করে
ঘুম ভাঙ্গার কারন কারোর অমৃতো তিক্ত স্বর লেখকস্বত্বার বিরুদ্ধে দ্বারাক,কেউ একজন
আমার হউক একান্তই আমার।ঘরের ডিম
বাতিটা কেউ সময় অসময়েই নিভিয়ে দিক
মধ্য রাতে জানালা খোলা থাকলে কেউ বন্ধ করে
দিয়ে আমার পাশে ঘুমাতে যাক।যখন গভীর
ঘুমে তখন কেউ গায়ে উষ্ণ কাঁথা জড়িয়ে দিক
অফিস থেকে আমার শুভ আগমনের জন্য
মনোযোগ দিয়ে কেউ একজন অপেক্ষা করুক।
ইন্টারনেটে কেউ আমাকেই তন্নতন্ন খুঁজুক
কেউ আমার হোক শুধু একান্তই সে আমার।


অনুপমা এসময় ভোর নক্ষত্ররা ঘুমিয়ে গেছে
নিশির শিশির শীতল করেছে বসন্তো বাতাস
চোখে ঘুম নেই ফিরে আসো সব অভিমান রেখে
সেই চোখে ফাগুন দেখেছি আমি অমৃত লোকে।
তপ্ত নিঃশ্বাসে বিরুপ বাতাস ঘোলাটে চাঁদ একা
কংক্রিট আর ইটের দেয়ালে স্বআবদ্ধ থেকোনা।
উষ্ণ নিমন্ত্রণে আবার এসো উপ্তাপ’এ বৈশাখী
অনুপমা চোখে ঘুম নেই একা রাত জেগে আছি
নির্ঘুম ল্যাম্পপোস্ট চেয়ে দেখেছি অব্যাক্ত নিথর
অস্পষ্ট অবয়বে একি তুমি আমার আঁকো ছবি?
জানি ভুলে গেছো সব অসময়ে বাসন্তী আবেগে
হয়তো আর হবেনা সেই প্রণয় অমিমাংসিত
প্রচ্ছদে তুমি,সেই জীবন এঁকেছো উর্বর ভূমি
তোমার ধৃষ্টতায় উষ্ণ চুম্বন যেনো পলাশ ফুলে
ভুল হয়ে যায় বড় মানুষ নয় ভুলের উর্দ্ধে
জেগে আছে এ পূর্ণিমার ঘোলাটে চাঁদ মেঘাছন্ন
আষাঢ় বিষন্ন বাদল বুক করেছে তছনচ
ফিরে আসো উত্তপ্ত বৈশাখী চোখে রেখে ওই চোখ।
★★★
যে পৃথিবীতে আমরা জীবিত আছি তরুলতার
অক্সিজেন নিয়ে।এই পৃথিবীর এক সল্পক্ষুদ্র
সবাই পরিযায়ী পাখি,উড়াল দেবো সে অজানা
গন্তব্যে আমরা পরিযায়ী পাখি আমাদের ওই
পরিযান হবে চৌম্বকক্ষেত্রের টানে।এ ধূলির
ভস্মভূত মাথা চারা দিয়ে উঠে যে ভিন্ন উদ্ভিদ
নতুন করে আবার বাঁচবো,সে বিটহোফেনের
ভায়োলিন শুনবো।মহাপ্রলয় হবেতো আবার!
গ্রহান্তরিতো হবে মানুষ জীবের প্রাণ পাথর
অথবা মমিতে বাঁচেনা সে বাঁচে নিজের ইচ্ছার
শরীরে।এই কংক্রিট-ইটের দেয়াল দিয়ে তৈরি মেগাসিটি সবই হবে একদিন পুরাকীর্তির
প্রাচীন সে সভত্যা আজকের মিশোর কালকের আমেরিকার ইতিহাস রচিতো পাঠ্য বইয়ের
সংকলনে।সব কিছু চলে যাবে আসে নতুনত্ব
মহামারি,জৈবঅস্ত্র-পরমানু যুদ্ধে পৃথিবীর
বিপর্যয় আসবে;আমরা ক্ষনজন্মা এসে চলে
যাই পরিযায়ী পাখি,মানব জন্ম আবার হবে।


কতশত জনম পর ধরলা অববাহিকায়
অনুপমা কত কল্প-মন্বতরে হয়তো এসেছি
জলেশ্বরীর তীরে যে বিধৌত ব্রহ্মপুত্র সঙ্গমে পরশুরামের তীর্থে।কোনো শ্রাবন হয়তো জানে
কোনো জলাঙ্গীর ক্রন্দন কত গভীর ক্ষতে প্রাণ আত্মকে উঠে।কত কাক মরু খরায় বিসর্জন
দিয়ে প্রাণ।আমরা সুফলা বাংলার মাটি,তিস্তার
করি দুগ্ধপান;কত মহাপ্রাণ দিয়েছে জীবন
বয়েছে স্রোতে রক্ত নদী ,তীতুমীর,বিবেকানন্দ,
ভবানী পাঠক,সূর্য সেন,অভয় বাঙ্গালী।জানি
সবার উপর আপন মাতৃভূমি তার লালনে
প্রতিপালিত আমি।শৈশবে তার কর্দম মাটিতে
কত করেছি তিলক চন্দন সেই মাটির আছে
ঘ্রান ফসল কাটার পর যখন ধানের নাড়া
কাটে।বট আর জিগার করুন মিনতি শোনেনি
কোনো পথিক কোনো কালে; বসন্তে এই আগমনে শিমুল-মান্দার যৌবন পেয়েছে ফিরে।শতশত
শতাব্দী পর হয়তো এভাবেই নিয়েছি জনম।


প্রেম এসে চলে যায়,মানুষ বদায় সে স্বভাবে
অভাবে হয় চরিত্রভ্রষ্টা,মানুষ নিয়মে মরে
পঁচে নশ্বর এ দেহ,ক্ষণজন্মা কেউ এসে হয়
মহামানব বেঁচে থেকেও কেউ মৃত,তবু অতি
ধনবান দরিদ্র।এ সংসার মিথ্যে সব অস্থায়ী খ্যাতি,ক্ষমতা,যশ লোভী মানুষ হয় স্বার্থপর
বাটপারী করে ঠগ শৃঙ্খলে আবদ্ধ আছে সব
পাপের সাজা পাপী পায়। ধর্মের হয় জয় বিশ্ব
মানবতায় কেউ করে অভিনয়।প্রেম এসে সেতো নিরবে মরে যায়,কষ্টে ভোগে সৎ ছায়াদায়ী বৃক্ষে
ডাল ভাঙ্গে পথিক,ফলজ বৃক্ষের পাতায় পাখি
করে মলত্যাগ।এসব প্রকৃতির স্বভাব তবু
নদী বয়ে যায় সগরের পানে,না ফিরে সাগরি
কেউ যদি পিছে টানে,নিঃস্বার্থ বিলিয়ে তার জল
নদী হয় মরু,তার বুকে মেষ,ছাগল কৃষক
চারায় গরু।মৃত নদীর পলি মটিতে ফসল
হরিৎ হয় বন্যায় দুকূল ছাপিয়ে সব ভাসিয়ে
নিয়ে যায় নদীবাসী শুধু দীর্ঘশ্বাসে থেকে যায়।


চাঁদের দিকে চেয়েছি প্রিয়তমার মতোই কত
সুন্দর অরুপ যৌবন তার তবুয়ো চাঁদে আছে
কলঙ্কের রেখা!কে দিয়েছে এমন কালিমা ফর্সা
শুভ্র মুখে?জানি মানুষের কলঙ্ক মুছেনা জলে
ক্ষয়না কঠিন শিলা।চাঁদ, প্যারিওথিসিক যুগ
হতে মানুষ ব্যবহার করে দিন থেকে সপ্তাহ,
পক্ষ থেক মাস।প্রিয় চাঁদ তোমাকে দেখি আমার প্রিয়তমার মতো লাগছে, ভরা পূর্নিমার রাতে
তোমায় দেখে আবেশ ছড়ে মনে চৌম্বকত্ব পায়।
মাঠের ফসল সোনালী রংয়ে ডুবে গেছে আলো,
জামরুলের পাতায় লেগে সে পূর্ণিমা ঝলকিয়ে
উঠে।যাকে দেখি বারবার যতবার দেখি উষ্ণ
আবেশ জড়িয়ে ধরে গায়।মেঘ তোমার সঙ্গী কী
তাই মেঘ জড়িয়ে থাকো?প্রিয়ো চাঁদ তুমি হাঁসলে
হাসে আকাশ ঝলক দিয়ে উঠে দৃশ্য।তুমি চলে
গেলে আঁধার নামে আমার গহীন বুকের কোনে।
জাম আর জামরুলের পাতার ফাঁকে উঁকি মেরে
দেখি চেয়ে আছো আমার দিকে।অপরুপ সে চাঁদ?