You are currently viewing ধর্ম নিয়ে বিবেকানন্দের উক্তি : স্বামী বিবেকানন্দের ৩৫ টি ধর্ম বিষয়ক উক্তি

ধর্ম নিয়ে বিবেকানন্দের উক্তি : স্বামী বিবেকানন্দের ৩৫ টি ধর্ম বিষয়ক উক্তি

স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ। এছাড়াও বিবেকানন্দ ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন।

১#

মানুষের সেবা করা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা করা।

২#

দর্শনবর্জিত ধর্ম কুসংস্কারে গিয়ে দাঁড়ায়, আবার ধর্মবর্জিত দর্শন শুধু নাস্তিকতায় পরিণত হয়। আমাদের নিম্নশ্রেণীর জন্য কর্তব্য এই, কেবল তাহাদিগকে শিক্ষা দেওয়া এবং তাহাদের বিনষ্টপ্রায় ব্যক্তিত্ববোধ জাগাইয়া তোলা।

৩#

ধর্মই মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক স্পষ্টরূপে ভ্রাতৃভাব প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, আবার ধর্মই মানুষে মানুষে সর্বাপেক্ষা মর্মান্তিক শত্রুতা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করিয়াছে।

৪#

ভারতে মুসলিম বিজয় নির্যাতিত গরীব মানুষকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। সেই জন্যই এদেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষ মুসলিম হয়ে গিয়েছিল। এসব শুধু অস্ত্রের জোরে হয়নি। অস্ত্রের জোরে আর ধ্বংস করে একাজ হয়েছিল- এমন চিন্তা নিছক পাগলামী ছাড়া আর কিছু নয়। তারা জমিদারদের আর পুরোহিতদের কবল থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল।

৫#

ধর্মের প্রমাণ মানুষের প্রকৃতিগত সত্যের উপর নির্ভর করে, কোন গ্রন্থের উপর নয়। গ্রন্থগুলি তো মানুষের প্রকৃতির বহিঃপ্রকাশ, তাহার পরিণাম। মানুষই এই গ্রন্থগুলির স্রষ্টা। মানুষকে গড়িয়াছে, এমন কোন গ্রন্থ এখনও আমাদের নজরে পড়ে নাই।

৬#

তুমি খ্রিষ্টের মতো ভাবলে তুমি একজন খ্রিষ্টান, তুমি বুদ্ধের মতো ভাবলে তুমি একজন বৌদ্ধ। তোমার ভাবনা, অনুভূতিই তোমার জীবন, শক্তি, জীবনীশক্তি।

৭#

খালি পেটে ধর্ম হয় না।

৮#

ক্ষুধার্ত মানুষকে ধর্মের কথা শোনানো বা দর্শন শাস্ত্র এটি পৃথিবীর সেরা গিয়েছি শেখানো তাঁকে অপমান করা।

৯#

আমাদের মন্দির হচ্ছে রান্নাঘর, আমাদের দেবতা হচ্ছে ভাতের হাঁড়ি।

১০#

আমরা মানব জাতিকে সেই স্থানে লইয়া যাইতে চাই; যেখানে বেদ বাইবেল কোরআন নাই; অথচ বেদ বাইবেল কোরআন সমন্বয়ে গঠিত।

১১#

অন্ন! অন্ন! যে ভগবান এখানে আমাকে অন্ন দিতে পারেন না তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখিবেন—ইহা আমি বিশ্বাস করি না।

১২#

সবচেয়ে বড় ধর্ম হল নিজের স্বভাবের প্রতি সত্য থাকা, নিজের প্রতি বিশ্বাস করুন।

১৩#

হিঁদুর ধর্ম বেদে নাই, পুরাণে নাই, ভক্তিতে নাই, মুক্তিতে নাই-ধর্ম ঢুকেছেন ভাতের হাঁড়িতে। ইিঁদুর ধর্ম বিচারমার্গেও নয়, জ্ঞানমার্গেও নয়-ছুঁৎমার্গে; আমায় ছুঁয়ো না, আমায় ছুঁয়ো না, ব্যস্। এই ঘোর বামাচার ছুঁৎমার্গে পড়ে প্রাণ খুইও না। ‘আত্মবৎ সর্বভূতেষু’, কি কেবল পুঁথিতে থাকবে না কি? যারা এক টুকরো রুটি গরীবের মুখে দিতে পারে না, তারা আবার মুক্তি কি দেবে! যারা অপরের নিঃশ্বাসে অপবিত্র হয়ে যায়, তারা আবার অপরকে কি পবিত্র করবে?

আরো পড়ুন:  চার্লি চ্যাপলিনের উক্তি : ব্রিটিশ কৌতুকাভিনেতার ২০ টি বিখ্যাত উক্তি

১৪#

আমাদিগকে বড়বড় কাজ করিতে হইবে, অদ্ভুত শক্তির বিকাশ দেখাইতে হইবে, অপর জাতিকে অনেক বিষয় শিখাইতে হইবে। দর্শন ধর্ম বা নীতিবিজ্ঞানই বলুন অথবা মধুরতা কোমলতা বা মানবজাতির প্রতি অকপট প্রীতিরূপ স‍‍‍‍‍‍‍‍‍দ‍্গুনরাজিই বলুন, আমাদের মাতৃভূমি এ-সব কিছুরই প্রসূতি। এখনও ভারতে এইগুলি বিদ্যমান আছে আর পৃথিবী সম্বন্ধে যতটুকু অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি, তাহাতে আমি এখন দৃঢ়ভাবে সাহসের সহিত বলিতে পারি, এখনও ভারত এই সকল বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই আশ্চর্য ব্যাপারটি লক্ষ্য করিয়া দেখুন।

১৫#

ধর্ম যতদিন না অনুভূত হইতেছে, ততদিন ধর্মের কথা বলাই বৃথা। ভগবানের নামে এত গন্ডগোল, যুদ্ধ ও বাদানুবাদ কেন? ভগবানের নামে যত রক্তপাত হইয়াছে, অন্য কোন বিষয়ের জন্য এত রক্তপাত হয় নাই; কারণ সাধারণ মানুষ ধর্মের মূল উৎসে যায় নাই। সকলই পূর্বপুরুষগণের কতকগুলি আচার অনুমোদন করিয়াই সন্তুষ্ট ছিল। তাহারা চাহিত, অপরেও তাহাই করুক। আত্মা অনুভূতি না করিয়া, আত্মা অথবা ঈশ্বর দর্শন না করিয়া ‘ঈশ্বর আছেন’ বলিবার কী অধিকার মানুষের আছে।

১৬#

বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেইজন,সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।

১৭#

পরোপকারই ধর্ম,পরপীড়নই পাপ। শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম, দুর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ। অপরকে ভালোবাসাই ধর্ম, অপরকে ঘৃণা করাই পাপ। ঈশ্বর ও নিজ আত্মাতে বিশ্বাসই ধর্ম, সন্দেহই পাপ।

১৭#

প্রথমে অন্নের ব্যবস্থা করতে হবে, তারপর ধর্ম।

১৮#

এই জগতে একজন ঈশ্বর আছেন। ইহা সত্য নয় যে, জগৎ স্রোতে ভাসিয়া চলিয়াছে এবং তোমার বা আমার সাহায্যের অপেক্ষায় রহিয়াছে। ঈশ্বর জগতে সর্বদাই বর্তমান। তিনি অবিনাশী, নিয়ত-ক্রিয়াশীল। জীবনে-মরণে, সুখে-দুঃখে-সকল অবস্থাতেই সমুদয় জগৎ ঈশ্বরপূর্ণঃ কেবল নয়ন উন্মীলন করিয়া তাঁহাকে দর্শন কর।

১৯#

ধর্ম এমন একটি ভাব, যাহা পশুকে মনুষ্যত্বে ও মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে।

২০#

আপনারা ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্য হয়তো একটি মূর্তির অবতারণা করতে পারেন । কিন্তু জেনে রাখুন, তাঁহাকে উপাসনা করার জন্য এর চেয়ে ভাল মূর্তি যা আগে থেকেই রয়েছে, তা হল জীবন্ত মানুষ ।

২১#

পবিত্র ও নিঃস্বার্থ হতে চেষ্টা করো, তার মধ্যেই রয়েছে সমস্ত ধর্ম।

২২#

ভগবানে বিশ্বাস রাখো। কোনো চালাকির প্রয়োজন নাই; চালাকি দ্বারা কিছুই হয় না।

২৩#

কি কারণে হিন্দুজাতি তাহার অদ্ভুত বুদ্ধি এবং অন্যান্য গুণাবলী সত্ত্বেও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল? আমি বলি, হিংসা। এই দুর্ভাগা হিন্দুজাতি পরস্পরের প্রতি যেরূপ জঘন্যভাবে ঈর্ষান্বিত এবং পরস্পরের যশখ্যাতিতে যেভাবে হিংসাপরায়ণ, তাহা কোন কালে কোথাও দেখা যায় নাই।

আরো পড়ুন:  চোখের বালি উপন্যাসের উক্তি : ১৫ টি বিখ্যাত উক্তি

২৪#

ঈশ্বরের অন্বেষণে কোথায় যাইতেছ? দরিদ্র, দুঃখী, দুর্বল—সকলেই কি তোমার ঈশ্বর নহে? অগ্রে তাহাদের উপাসনা কর না কেন? গঙ্গাতীরে বাস করিয়া কূপ খনন করিতেছ কেন? প্রেমের সর্বশক্তিমত্তায় বিশ্বাস কর।

২৫#

আমার ধারণা, বেদান্ত —কেবল বেদান্তই সার্বভৌম ধর্ম হইতে পারে, আর কোন ধর্মই নয়।

২৬#

তিনি সকলেরই হৃদয়ে বিরাজ করিতেছেন। যদি দর্পণের উপর ধূলি ও ময়লা থাকে, তবে তাহাতে আমরা আমাদের চেহারা দেখিতে পাই না। আমাদের হৃদয় দর্পণেও এইরূপ অজ্ঞান ও পাপের ময়লা রহিয়াছে।

২৭#

ভগবান যদিও সর্বত্র আছে বটে, কিন্তু তাঁকে আমরা জানতে পারি কেবল মানবচরিত্রের মধ্য দিয়ে।

২৮#

নিরাশ হইও না। স্মরণ রাখিও, ভগবান গীতায় বলিতেছেন, ‘কর্মে তোমার অধিকার, ফলে নয়।

২৯#

ঈশ্বরই তাঁহার সন্তানগণকে সমুদ্রগর্ভে রক্ষা করিয়া থাকেন!

৩০#

যে ধর্ম বা যে ঈশ্বর বিধবার অশ্রুমোচন করিতে পারে না অথবা অনাথ শিশুর মুখে একমুঠো খাবার দিতে পারে না,আমি সে ধর্মে বা সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। যত উচ্চ মতবাদ হউক,যত সুবিন্যস্ত দার্শনিক তত্ত্বই উহাতে থাকুক,যতক্ষণ উহা মত বা পুস্তকেই আবদ্ধ,ততক্ষণ উহাকে আমি ধর্ম নাম দিই না। চক্ষু আমাদের পৃষ্ঠের দিকে নয়,সামনের দিকে-অতএব সম্মুখে অগ্রসর হও,আর যে ধর্মকে তোমরা নিজের ধর্ম বলিয়া গৌরব কর,তাহার উপদেশগুলিু কার্যে পরিণত কর-ঈশ্বর তোমাদিগের সাহায্য করুন।

৩১#

যে দেশে কোটি কোটি মানুষ মহুয়ার ফুল খেয়ে থাকে,আর দশবিশ লাখ সাধু আর ক্রোর দশেক ব্রাহ্মণ ঐ গরীবদের রক্ত চুষে খায়,আর তাদের উন্নতির কোনও চেষ্টা করে না,সে কি দেশ না নরক! সে ধর্ম,না পৈশাচ নৃত্য! দাদা,এটি তলিয়ে বোঝ—ভারতবর্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেছি। এ দেশ দেখেছি। কারণ বিনা কার্য হয় কি? পাপ বিনা সাজা মিলে কি?

৩২#

হিন্দু যেন কখন তাহার ধর্ম ত্যাগ না করে। তবে ধর্মকে উহার নির্দিষ্ট সীমার ভিতর রাখিতে হইবে, আর সমাজকে উন্নতির স্বাধীনতা দিতে হইবে।

৩৩#

কোন ধর্মকে ফলপ্রসূ করতে হলে তাই নিয়ে একেবারে মেতে যাওযা দরকার; অথচ যাতে সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক ভাব না আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৩৪#

আমি দৃঢ়ভাবে বলিতেছি, হিন্দুসমাজের উন্নতির জন্য ধর্মকে নষ্ট করিবার কোন প্রয়োজন নাই এবং ধর্মের জন্যেই যে সমাজের এই অবস্থা তাহা নহে, বরং ধর্মকে সামাজিক ব্যাপারে যেভাবে কাজে লাগানো উচিত, তাহা হয় নাই বলিয়াই সমাজের এই অবস্থা।

৩৫#

আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি,মানুষকে বিশ্বাস করি;দুঃখী দরিদ্রকে সাহায্য করা,পরের সেবার জন্য নরকে যাইতে প্রস্তুত হওয়া—আমি খুব বড় কাজ বলিয়া বিশ্বাস করি।

Leave a Reply