কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার (৩১ মে,১৮৩৪-১৩ জানুয়ারি, ১৯০৭) হলেন একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও পত্রিকা সম্পাদক। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার পক্ষে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। মূলত কীর্তিপাশার জমিদারের অর্থানুকূল্যে তিনি জীবনযাপন করেন। কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামে ১৯১৪ সালে কবি কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ১৮৬০ সালে মাসিক মনোরঞ্জিকা ও কবিতাকুসুমাবলী নামক পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৮৬১ সালে ‘ঢাকা প্রকাশ’ প্রকাশিত হলে তিনি তার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মালিকের সঙ্গে মতানৈক্য হলে তিনি পদত্যাগ করেন এবং ১৮৬৫ সালে বিজ্ঞাপনী নামক পত্রিকার সম্পাদক হন। দেড় বছর পর তিনি আবার ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক পদে প্রত্যাবর্তন করেন। অসুখ স্থতার কারণে সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।
১৮৮৬ সালে যশোর থেকে তিনি সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় দ্বৈভাষিকী নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। কবিতাকুসুমাবলী ছিল পদ্যবহুল মাসিক পত্রিকা। তার সদ্ভাবশতক কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই এ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবি, সম্পাদক ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের বলা অসাধারণ কিছু উক্তি ও পঙক্তি থাকছে এই লেখায়।
১#
যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশু গৃহে তার দখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি।
২#
ওহে মৃত্যু! তুমি মোরে কি দেখাও ভয়?
ও ভয়ে কম্পিত নয় আমার হৃদয়।
৩#
একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে!
৪#
শুনহে হে ভাবুক! এই জানিবে নিশ্চয়,
চিরদিন একদশা কাহারো না রয়
৫#
।চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে?
৬#
দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার,
অমনি ‘জুতো’র খেদ ঘুচিল আমার,
পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন
নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ?
৭#
তরঙ্গিণী! কোথা তব তরঙ্গের রঙ্গ,
হেরি যাহা, পোতারহী পাইত আতঙ্ক?
৮#
এই যে বিটপি-শ্রেণী হেরি সারি সারি-
কী আশ্চর্য শোভাময় যাই বলিহারি!
কেহ বা সরল সাধু-হৃদয় যেমন,
ফল-ভারে নত কেহ গুণীর মতোন
৯#
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?
১০#
যতদিন ভবে, না হবে না হবে,
তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে
বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম
১১#
সকলেই কয়, অতি সুখময়,
সুখের যৌবনকাল।
হায়! এ যৌবন, হইবে পতন,
রহিবে কি চিরকাল?
জীবন কমল, করে টল টল
চারু দেহ সরোবরে।
১২#
আজ কেন তোমা হেরি দীনা ক্ষীণা অতি?
১৩#
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে
১৪#
যে প্রেমিক সাহস-মাতঙ্গপরি চড়ি
সহিষ্ণুতা দৃঢ়বর্মে সর্বাঙ্গ আবরি,
নির্ভয়ে প্রবেশে প্রেম-বিপিন মাঝার,
নিরাশা-কন্টক নাহি ফুটে দেহে তার;
বিরহ-শার্দুল নারে গ্রাসিবারে তায়,
প্রিয়-প্রেম-সুখ-মৃগ দরিতে সে পায়
১৫#
চরিত্র পবিত্র নয় পাপে রত মন.
বাসনা সকলে বলে ধাম্মিক সুজন!