মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) যিনি আল মাহমুদ নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি।
তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন।বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ (১৯৭২-১৯৭৪) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
১#
কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রি শেষে শুভ শুক্রবারে মৃত্যুর ফেরেশতা যদি এসে দেয় যাওয়ার তাকিদ; অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।
২#
আমি থাকবো না এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ আর কি হতে পারে। পৃথিবীটাতো না থাকারই জায়গা।
৩#
আমার মায়ের সোনার নোলক
হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি
সারা বাংলাদেশে।
৪#
কবির কাজ স্বপ্ন দেখানো, আমি এই জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছি।
৫#
কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক এই মরজগতে মৃত্যুই সুন্দর। সব অমরতার গল্পই কীটদ্ৰষ্ট কাগজমাত্র।
৬#
আমার লড়াই তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণির বিরুদ্ধে একজন কবির লড়াই।
৭#
হিন্দির দাপটে কলকাতা থেকে বাংলা বিতাড়িত প্রায়, কলকাতার লেখকরা ঢাকামুখী, সময় বদলে যাচ্ছে কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির বা আত্মশ্লাঘা অনুভের কিছু নেই। হিন্দির দাপট কিন্তু বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির যুগে স্যাটেলাইটের সহায়তায় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখন হিন্দির অধিষ্ঠান ঘটে চলেছে।
৮#
আমরা জানি । আমাদের ভয় দেখিয়ে শয়তান নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়। আমাদের মুখাবয়বে আগামী ঊষার উদয় কালের নরম আলোর ঝলকানি।
৯#
কতবার তোমাকে বলেছি যে দেখো আমার কোনো প্ৰতিযোগী নেই আমার পরাজয়ের সম্ভাবনা যেখানে ষোল আনা সেখানে আমি কার সাথে দৌড়াবো?
১০#
আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয়নি, নেবে না।
১১#
আমরা সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে ইসলামের খেদমত করিয়েছেন।
১২#
আমাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত। আমাদের রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিল মুতার প্রান্তর। পৃথিবীর যত গোলাপ ফুল ফোটে তার লাল বর্ণ আমাদের রক্ত। তার সুগন্ধ আমাদের নিঃশ্বাস বায়ু।
১৩#
যারা আমাকে এ অদম্য চলার পথে নিয়ে এসেছে তারা তো সবাই জানে আমার পা পাথর, দৃষ্টি শক্তি স্বপ্নের কুয়াশায় আচ্ছন্ন।
তবু মানুষের মন বলে একটা কথা আছে। আছে না কি? হ্যাঁ, মন বলছে এখনও আমার দিগন্তে পৌঁছার খানিকটা পথ বাকি।
১৪#
আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে । আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে, শত সংঘাতের মধ্যে এ কাফেলায় এসে দাঁড়িয়েছি।
১৫#
আমাদের কত সাথীকে আমরা এই ভূ-পৃষ্ঠের কন্দরে কন্দরে রেখে এসেছি। তাদের কবরে ভবিষ্যতের গুঞ্জন একদিন মধুমক্ষিকার মতো গুঞ্জন তুলবে।
১৬#
আমাদের পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবা, আমাদের এই বাণী কাউকে কোনদিন থামতে দেয়নি। আমরাও থামবোনা।
১৭#
আমরা আজন্ম মিছিলেই আছি। এর আদি বা অন্ত নেই। পনেরশত বছর ধরে সভ্যতার উত্থান-পতনে আমাদের পদশব্দ একটুও থামেনি।
১৮#
আমরা তো শাহাদাতের জন্যই মায়ের উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছি।
১৯#
আমাদের হাতে একটি মাত্র গ্রন্থ আল কুরআন। এই পবিত্র গ্রন্থ কোনোদিন কোনো অবস্থায় কোনো তৌহিদবাদীকে থামতে দেয়নি। আমরা কি করে থামি?
২০#
কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক এই মরজগতে মৃত্যুই সুন্দর। সব অমরতার গল্পই কীটদ্ৰষ্ট কাগজমাত্র।