You are currently viewing ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উক্তি : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ৫০ টি বিখ্যাত বাণী

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উক্তি : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ৫০ টি বিখ্যাত বাণী

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামেও স্বাক্ষর করতেন; ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ – ২৯ জুলাই ১৮৯১) ঊনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। নারীমুক্তির আন্দোলনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।

অন্যদিকে বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারকও। বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তার অক্লান্ত সংগ্রাম আজও স্মরিত হয় যথোচিত শ্রদ্ধার সঙ্গে। বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত কখনোই তার দ্বার থেকে শূন্য হাতে ফিরে যেত না। এমনকি নিজের চরম অর্থসঙ্কটের সময়ও তিনি ঋণ নিয়ে পরোপকার করেছেন‌। তার পিতামাতার প্রতি তার ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল বাংলায় প্রবাদপ্রতিম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মোদ্যম ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।

বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তার স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তারই নামে উৎসর্গিত। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালির মধ্যে অষ্টম স্থান লাভ করেন।

১#

চোখের সামনে মানুষ অনাহারে মরবে, ব্যাধি, জরা মহামারীতে উজার হয়ে যাবে, আর দেশের মানুষ চোখ বুঝে ভগবান ভগবান করবে- এমন ভগবৎ প্রেম আমার নেই, আমার ভগবান আছে মাটির পৃথিবীতে, স্বৰ্গ চাই না, মোক্ষ চাই না, বারে বারে ফিরে আসি এই মর্ত্য বাংলায়।

২#

যে ব্যক্তি শ্রমবিমুখ হইয়া আলস্যে কালক্ষেপ করে তাহার চিরকাল দুঃখ ও চিরকাল অভাব থাকে।

৩#

যাহাদের অভিপ্রায় সৎ ও প্রশংসনীয় এরূপ লোক অতি বিরল এবং শুভ ও শ্রেয়স্কর বিষয়ে বাধা ও ব্যাঘাত জন্মাইবার লোক সহস্র সহস্ৰ ৷

৪#

এই সংসারে দাম্পত্যনিবন্ধন সুখই সর্বাপেক্ষা প্ৰধান সুখ।

৫#

মনের ঐক্যই প্রণয়ের মূল।

৬#

পরিশ্রম না করিলে স্বাস্থ্যরক্ষা ও সুখলাভ হয় না। যে ব্যক্তি শ্রম করে সে কখনও কষ্ট পায় না।

৭#

তোমার অবস্থা যত মন্দ হউক না কেন অন্যের অবস্থা এত মন্দ আছে যে তাহার সহিত তুলনা করিলে, তোমা অবস্থা অনেক ভাল বোধ হইবেক।

৮#

ফলবতী বৃক্ষ নত হয়, নত হয় গুণীজন, নত হয় না শুধু শুষ্ক বৃক্ষ আর মূর্খরা।

৯#

আপনি যদি সফল এবং মর্যাদাবান হতে চান, তাহলে মাথা নত করতে শিখুন। কারণ যারা মাথা নত করে না, সময়ের বাতাস তাদের মাথা নত করে দিয়ে যায়।

১০#

যে ব্যক্তি সংযমের সাথে নিয়মানুবর্তিতা করে এবং তার জ্ঞান দ্বারা সকলকে দান করে, শুধু ইহকালেই নয় পরকালেও তিনি পূজিত হন।

১১#

মানুষকে সমস্ত প্রাণীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলা হয়, কারণ তার আত্ম-বৈষম্য এবং আত্ম-জ্ঞান রয়েছে।

১২#

যার নিজস্ব বিবেক নেই, সে হালকা বাতাসেও নড়ে।

১৩#

যারা নাস্তিক তাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা উচিত, এতেই তাদের স্বার্থ।

১৪#

মাতা পিতার সেবাই শ্রেষ্ঠ পূজা এবং সন্তানের সর্ব প্রধান ও পবিত্রতম কর্তব্য।

১৫#

একজন মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হওয়া উচিত অন্যের কল্যাণ এবং সহযোগিতা, যা একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠন করে।

১৬#

যে ব্যক্তি অন্যের কাজে আসে না, সে আসলে মানুষ নয়।

১৭#

পরের উপকার করতে গেলে মাঝে মধ্যে ঠকতে হয়। ঠকানোর চেয়ে ঠকা ভালো।

১৮#

বিদ্যা হল সবচেয়ে মূল্যবান ধন; এর আগমনে শুধু নিজের নয়, সমগ্র সমাজের কল্যাণ হয়।

১৯#

যদি কেহ আপনি আপনার প্রশংসা করে, কিংবা আপনার কথা অধিক করিয়া বলে, অথবা কোন রূপে ইহা ব্যক্ত করে যে, সে আপনি আপনাকে বড় জ্ঞান করে, তাহা হইলে, সে নিঃসন্দেহে উপহাস্যাস্পদ হয়।

২০#

অন্যে যখন আমাদের প্রশংসা করে, তৎকালে বিনীত হওয়া কর্তব্য।

২১#

স্নেহ অতি বিষম বস্তু।

২২#

শাস্ত্রের অর্থ না বুঝিয়া অথবা ভুল অর্থ বুঝিয়া কিংবা অভিপ্রেত সিদ্ধির নিমিত্ত স্বেচ্ছানুরূপ অর্থান্তর কল্পনা করিয়া, শাস্ত্রের দোহাই দিয়া যথেচ্ছাপ্রবৃত্ত বহুবিধবাকাণ্ড বৈধ বলিয়া প্রচার করিলে নিরপরাধ শাস্ত্রকারদিগকে নরকে নিক্ষিপ্ত করা হয়।

২৩#

শিক্ষকের দায়িত্বপূর্ণ কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে পারে, এমন একদল লোক সৃষ্টি করিতে হইবে; তাহা হইলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হইবে। মাতৃভাষায় সম্পূর্ণ দখল, প্রয়োজনীয় বহুবিধ তথ্যে যথেষ্ট জ্ঞান, দেশের কুসংস্কারের কবল হইতে মুক্তি শিক্ষকদের এই গুণগুলি থাকা চাই।

২৪#

দরিদ্র ব্যক্তিদের অভুক্ত রেখে মাটির প্রতিমাকে ষোড়শোপচারে পূজা করাকে আমি যথার্থ মনে করি না।

২৫#

যথার্থ সাধুদিগকেও সঙ্গদোষে, বিপদে পড়িতে হয়।

২৬#

সেই সাহিত্যকে আমরা সঠিক সাহিত্য বলবো যা মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত করবে।

২৭#

যাহার যে অবস্থা, সে যদি তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহা হইলে তাহাকে কাহারও নিকট অপদস্থ ও অপমানিত হইতে হয় না।

২৮#

মানুষ ততই বড় হওয়া যাক না কেনো তাকে সর্বদা তার অতীত কে মনে রাখা দরকার, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যত্ এর দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার।

২৯#

আমার মা আর বাবাই আমার কাছে কাশীর বিশ্বেশ্বর ও অনুপূর্ণা’

৩০#

বাল্যবিবাহের দোষ ও বিধবা-বিবাহের প্রথা প্রচলিত হইলে অসহ্য বৈধব্য যন্ত্রণা, ব্যভিচার দোষ ও দ্রুণহত্যা পাপের নিবারণ ও তিন কুলের কলঙ্ক নিরাকরণ হইতে পারে।

৩১#

নিকৃষ্টের কর্তব্য আপন অপেক্ষা প্রধান ব্যক্তিদের সমাদর মর্যাদা করা। কিন্তু কাহারও নিকট নিতান্ত নম্র অথবা চাটুকার হওয়া অনুচিত।

৩২#

নিকৃষ্টকে যেমন প্রধানের সমাদর ও মর্যাদা করিতে হয়, নিকৃষ্টের প্রতি সেইরূপ করা প্রধানেরও অবশ্য কর্তব্য।

৩৩#

সংসারের যাবতীয় উত্তম বস্তু শ্রমলভ্য; সুতরাং শ্রম ব্যাতিরেক সে সকল বস্তু লাভ করিবার উপায়ন্তর নাই।

৩৪#

কর্তব্য সাধিতে খল তোষামোদ করে।

৩৫#

কাহারও উপর দয়াপ্রকাশ করিলে, তাহা প্রায় নিস্ফল হয় না।

৩৬#

নারী জাতি এখনও দ্বিতীয় শ্রেণী মানুষ হিসাবে বিবেচিত, এমন হলে সমাজের সার্বিক উন্নতি কখনও সম্ভব নয়

৩৭#

যাহার যে অবস্থা, সে যদি তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকে তাহা হইলে তাহাকে কাহারও নিকট অপদস্থ ও অপমানিত হইতে হয় না।

৩৮#

পরের মন্দচেষ্টায় ফাঁদ পাতিলে, আপনাকেই সেই ফাঁদে পড়িতে হয়।

৩৯#

আমার মা আর বাবাই কাশীর বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণা।

৪০#

আমাদের সমাজ নানা ধরনের কু সংস্কারে পরিপূর্ণ। কু-সংস্কার মুক্ত সমাজ গঠনের জন সকল বুদ্ধিজীবীর কায়িক এবং মানসিক পরিশ্রম করা উচিৎ।

৪১#

নারী জাতি এখনও দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসাবে বিবেচিত, এমনটি হলে সমাজের সার্বিক উন্নতি কখনও সম্ভব নয়।

৪২#

গৃহস্থাশ্রম সকল আশ্রমের মূল এবং সকল আশ্রম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। বিশেষতঃ পরমগুরু পিতা মাতার শুশ্রুষা করাই পুত্রের প্রধান ধর্ম।

৪৩#

আমরা স্বয়ং যে কর্ম নিষ্পন্ন করিতে পারি, অন্যের উপর সে বিষয়ে ভার সমর্পণ করা কদাচ উচিত নহে।

৪৪#

বিপদকালে কাতর না হওয়া অত্যন্ত আবশ্যক। সেই সময়ে স্থির ও সতর্ক থাকা উচিত।

৪৫#

আমাদের নিজেদের স্বার্থ দেখার আগে, সমাজ এবং দেশ এর সর্থ দেখা উচিত সেটাই হলো প্রকৃত বিবেক ধর্ম।

Leave a Reply