সাদাত হোসাইন একজন বাংলাদেশী কবি ও ঔপন্যাসিক। তার স্নাতকোত্তর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তার কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ’সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি’ নির্মাণ করেছেন ‘গহীনের গান’ এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯।
১#
এমন হিমের রাতে তুমি হলে ঘোর,
কুয়াশাও হয়ে যায় আদুরে চাদর।
২#
কিছুটা মেঘের মতো ছায়া যদি নামে,
কিছুটা বিষাদ আসে সন্ধ্যার খামে,
সকালের মিহি রোদ, রাত হয়ে যায়,
জেনে নিও, খুঁজে আর পাবেনা আমায়।
৩#
তোমাকে চেয়েছি অন্ধকারের মতন, একাকী ভীষণ-গভীর এবং গাঢ়,
তোমাকে চেয়েছি প্রার্থনা ও প্রেমে, যতটা রয়েছ তার চেয়ে বেশি আরো।
৪#
আমাকে হারাতে দিলে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে তোমার শহর।
৫#
তুমি তার কাছে যেয়ো রোদ, যে জানে আলো কত দামি,
তুমি তার কাছে যেয়ো মন, যার কাছে দামি শুধু ‘আমি’।
৬#
এমন বিষণ্ণ দিন শেষে
যদি খানিক আঁধার এসে,
ভীষণ আপন হয়ে বসে
তোমার আঙুলগুলোর ফাঁকে?
তখন আমার আঙুল ছাড়া
তুমি খুঁজবে কোথায় কাকে?
৭#
তুমি কি মেঘ?
কী গাঢ়, গভীর, অথচ ছুঁতে গেলে নেই,
তুমি কি জল?
কী স্বচ্ছ, সহজ, অথচ প্রলয় নিমিষেই!
৮#
অভিমানে চলে যেতে যেতেও, ফিরে আসতেই-
দেখি, তোমার দরোজা জুড়ে খিল।
কোথাও চিহ্ন নেই আমি যে ছিলাম,
কোথাও গন্ধ নেই, যা কিছু দিলাম,
অন্য হাসি-কলোরোলে, গৃহ ঝিলমিল।
৯#
তোমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে,
একটা দোয়েল একটা চড়ুই পাখি,
খানিকটা পথ উড়েই এলো,
কুড়িয়ে নিল খানিক বিষাদ জমা।
১০#
তোমার জন্য অঝর অশ্রু জলে,
একটা জনম কাটিয়ে দিলাম বলে,
এই পৃথিবী হাজার বছর ধরে,
নদীর নামে নারীর কথা বলে।
১১#
তোমার জন্য অপেক্ষাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে,
মেঘ বলেছে খানিক আঁধার ঢেলেও,
বৃষ্টি আসুক আর কিছুক্ষণ পরে।
১২#
যতদূর চোখ যায়, যতদূর যায় না,
সবখানে অদ্ভুত, তুমিময় আয়না।
১৩#
আমাদের কিছুই নেই,
অথচ সবটা সময় জুড়ে ভাবি-
এই বুঝি নিঃস্ব হলাম!
১৪#
যা কিছু আমার ছিলো, লিখে দেই তোমাকেই- জলের দামে। তুমি ভাবো, জল বুঝি দামহীন, আসলেতো, জলের চেয়ে দামি কিছু নেই- অন্তবিহীন।
১৫#
তোমার কাজল চোখে চোখ যেই রাখি, সজল হৃদয়ে ভাসে জোছনা-জোনাকি!
১৬#
তোমার জন্য অপেক্ষাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে, মেঘ বলেছে খানিক আঁধার ঢেলেও, বৃষ্টি আসুক আর কিছুক্ষণ পরে।
১৭#
জানে শুধু জল, চোখ ছলছল দায় নেই কারো তাই লুকায় আঁচল। অভিমানী তুই, পাবি না কিছুই মিছেমিছি মুছে যাবে চোখের কাজল।
১৮#
শহরে হঠাৎ জ্বলে ওঠে তারা বাতি শহরে হঠাৎ তুমি হয়ে যাও রাত, বুকের ভেতর সাইরেন বাজে সুরে তোমার নামে কবিতা অকস্মাৎ!
১৯#
সবটুকু কেড়ে নিতে ছেড়ে দেই, পেয়ে যাওয়া তোমার আধেক, অথচ আকাশ ভেবে, একটা জীবন শুধু ছুঁয়ে গেছি মেঘ।
২০#
আমায় দিও একটুখানি ছুঁয়ে, আমায় দিও একটুখানি মন, এই জনমের জন্ম-মৃত্যু জানে, তুমি মানেই আমার সমর্পণ।’
২১#
আমি একদিন নিখোঁজ হবো, উধাও হবো রাত প্রহরে, সড়কবাতির আবছা আলোয়, খুঁজবে না কেউ এই শহরে…!!
২২#
মানুষ যখন কারো প্রেমে পড়ে, তখন তার ভালবাসার মানুষটিকে ঘিরে এক ধরণের প্রবল মুগ্ধতা তৈরি হয়। সেই মুগ্ধতার বেশিরভাগই বিভ্রম। কিন্তু তখন সে তা বুঝতে পারে না। ফলে তার চরিত্রের অমাবস্যার মত নিকষ কালো অন্ধকার দিকটাকেও জোছনার স্নিগ্ধ মায়াময় আলো বলে ভ্রম হয়। ওই ভ্রম আর সহজে কাটে না। কিংবা কাটলেও তা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয় কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই কোনো ভুল হচ্ছে। সেই ভুল কাটে প্রেম ভেঙে গেলে।
২৩#
হিসেবের পৃথিবী মূলত ভালবাসাহীন। অথচ মানুষ জীবনভর ওই হিসেব কষেই ভালবাসতে চায়।
২৪#
মানুষ ঘৃণা লুকাতে পারে, কিন্তু ভালবাসা লুকাতে পারে না।
২৫#
মানুষ নদী, পাহাড় কিংবা বিস্তৃত মাঠের কাছে দুঃখ কিংবা একাকীত্ব লুকাতে চায়। কারণ যখন সে দুঃখ পায়, তখন তার নিজেকে খুব বিশাল কিছুর কাছে সমর্পণ করতে ইচ্ছে হয় তার, যাতে সে ওই বিশাল অস্তিত্বে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তার রোজকার জীবনের অজস্র দুঃখ, বেদনা, দুশ্চিন্তা শুষে নিতে পারবে ওই বিশাল বুক। কিন্তু মানুষ কি কখনো অমন বিশাল হতে পারে না? যার বুকে মাথা রেখেও অমন নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে? যে শুষে নিতে পারবে সকল দুঃখ কিংবা একাকীত্ব?
২৬#
হিসেবের পৃথিবী মূলত ভালবাসাহীন। অথচ মানুষ জীবনভর ওই হিসেব কষেই ভালবাসতে চায়।
২৭#
এই যে নারী ও পুরুষের পরস্পরের প্রতি যে ভালবাসা, সেই ভালবাসা বোঝার উপায় হচ্ছে কষ্ট। তারা তাদের ভালবাসার মানুষটিকে না পেলে কষ্ট পায়। আর এই কষ্ট পেতে চায় না বলেই তারা পরস্পরকে পুরোপুরি পেতে চায়।
২৮#
মানুষ যখন কাউকে খুব বেশি ভালবাসে, তখন তাকে হারানোর ভয়টাও বেশি থাকে। সারাক্ষণ শুধু মনে হয়, এই বুঝি সে হারিয়ে গেল। এই বুঝি তার জায়গা অন্য কেউ নিয়ে নিল।
২৯#
পুরুষ আসলে কখনো নারীর মন বোঝার চেষ্টাই করেনি। হৃদয় দিয়ে অনুভবই করতে চায়নি নারীকে। বরং নারীর চোখের ভাষা পড়ার চেয়েও তার শরীরের ভাষাই পড়তে চেয়েছে সে। মনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে শরীরকে। ফলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই নারীর মন সে কখনো বুঝতে পারেনি।
৩০#
পৃথিবীতে যাকে তুমি ভালবাসো, কিংবা যে তোমাকে ভালবাসে তাকে আনন্দিত করার চাইতে শ্রেষ্ঠ কিছু আর নেই।