বাংলা সাহিত্যে অবশ্যপাঠ্য উপন্যাসের তালিকা করলে সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’ উপন্যাসটির নাম অবশ্যই যুক্ত করতে হয়। এটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, একটি নারীর জাগরণের গল্প। অনেকেই এই বইটিকে সমরেশ মজুমদারের লেখা মাস্টারপিস বই বলে অভিহিত করেন।
শুরুতে বইটি দুটি খণ্ডে প্রকাশিত হলেও পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সালে অখণ্ড উপন্যাসটি প্রকাশ করে আনন্দ প্রকাশনী। এই গল্প অবলম্বনে বাংলাদেশ এবং ভারতে বিভিন্ন সময় নাটক, সিরিয়াল হয়েছে। এই বইটি প্রতিটি মেয়ের জন্য অবশ্যপাঠ্যও বলা যায়।
আজ আপনাদের সামনে থাকছে সাতকাহন উপন্যাসের বিখ্যাত ৩০ টি উক্তি।
১#
প্রেম করা যায় তাকে বিয়ে করতে নেই? অসম্ভব। ওর একটা বাহানা দরকার ছিলো। টাকাপয়সা গয়নাগাঁটির আড়ালে বাঙালী মেয়ে যে সুখ পায় তা ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি নিতে বোধ হয় ও কখনোই চায়নি।
২#
বয়স অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা মানুষকে উদার করে। উদারতা অনেক সময় মান অপমান বোধকে চালিত করে।
৩#
জীবন থেকে নাটক তৈরি হয় কিন্তু অনেক সময় জীবন নাটককে ছাপিয়ে যায়।
৪#
তুমি পথিক, পথ তোমার। সেই পথ রাজা তৈরি করেছেন না কোন অসৎ ধনীর টাকায় তৈরি হয়েছে তা তো তোমার জানার কথা নয়। পথিকের কাজ পথ ধরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
৫#
বিয়ে ছাড়া কি মেয়েদের কোন কিছুতেই পূর্ণতা নেই? একটি মানুষের অনেক কাজ থাকে, সেই কাজে আনন্দ আসে সার্থক হলে, সেই সার্থকতার জন্য কি বেঁচে থাকা যায় না!
৬#
আমাদের এখানে মেয়েরা বিয়ে করে না, তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।
৭#
ছেলেদের সঙ্গ মানপই একটা গোপন পাপ যা করার জন্যে কিছু মেয়ে চাপা উৎসাহ বোধ করে।
৮#
ছাত্ররা চিরকালই সরকার বিরোধী হয়।
৯#
জীবন মানেই সুখের স্মৃতি বয়ে বেড়ানো, বেঁচে থাকা মানেই দুঃখের সঙ্গে অজান্তেই সহবাস করা। অবিমিশ্র সুখ মানুষের ভাগ্যে কখনোই লেখা হ না। সুখ বাঁচিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি অনুভব করে মানুষ। যে কোনো ছলছুতোয় সে দুঃখকে ডেকে নিয়ে আসে। সুখের চেয়ে দুঃখের সঙ্গে বাস করতে মানুষ বড় আরামবোধ করে। কারণ অতি সুখে হাহাকার থাকে না। সন্দেহ, জ্বালা অথবা নিজেকে বঞ্চিত ভাবার যন্ত্রণা পাওয়া যায় না।
১০#
শাসন শুনতে যতই খারাপ লাগুক, যে মানুষের জীবনে শাসন করার মানুষ না থাকে তার মত অভাগা আর কে আছে।
১১#
ঈশ্বর মানুষকে চরম শাস্তি দেন যখন তিনি তাকে নিঃসঙ্গ করেন।
১২#
ভালোবাসা হলো সকালের মত। স্বার্থর লম্বা ছায়া সূর্য ওঠা মাত্র ছোট হতে আরম্ভ করে। সূর্য যখন মাথার উপর তখন ছায়া পায়ের তলায়। ভালোবাসার পূর্ণতা তখনই হয়ে যায়। তারপর যত বেলা গড়ায়, ছায়া লম্বা হয়, তত ভালোবাসার আয়ু ফুরিয়ে আসে। পৃথিবীতে সবকিছুর মত ভালোবাসার আয়ু বড় ক্ষণস্থায়ী।
১৩#
ভালোবাসার মৃত্যুর পরে বেঁচে থাকা অর্থহীন।
১৪#
বাঙালির সব শেষে আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ।
১৫#
মানুষ ভুলে যেতে বড় ভালেবাসে।
১৬#
পৃথিবীর কোনো মানুষই জানে না কোথায় সে পৌঁছাতে চায়। শুধু জানে, বহুদুর যেতে হবে। এইটুকু।
১৭#
লালসা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, যখন পুরুষের মানসিক বিকৃতি পূর্ণ করতে নারী স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে সহযোগিতা করে তখন কোণারকের মন্দিরে গায়ে শৃঙ্গারত মূর্তিগুলোও লজ্জিত হবে।
১৮#
মানুষ বড় দুঃখের সঙ্গী চায় কিন্তু অপমান হজম করতে হয় একা, নিজের মতন করে।
১৯#
প্রেমের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত বোধ হয় শেকড় মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে না।
২০#
বাঙালিদের মদ লুকেবার সহজাত প্রবণতা আছে।
২১#
জীবন কখনই একটা জায়গায় সমানভাবে বয়ে যায় না।
২২#
মানুষ মরে গেলেই যদি তার সমস্ত আকাঙ্খার শেষ তাহলে এখন কিছুই বলার নেই। কিছু মরে যাওয়া মানুষ জীবিতদের মনে যে প্রতিক্রিয়া রেখে গেল তার দায় বইতে হয় অনেকদিন, কারো কারো ক্ষেত্রে সারাজীবন।
২৩#
বিয়ে যদি কাউকে করো তাহলে ভাল করে যাচাই করে নিও। নিজের সঙ্গে কথা বলবে পরিষ্কার করে। পরিষ্কার না হলে একা থেকো। তাও বরং ভাল।
২৪#
আমরা কেউ কাউকে নিতে পারি না মন থেকে মেনে নেই। এই মেনে নেওয়া যদ্দিন চলে তদ্দিন বিরোধটা কেউ দেখতে পায় না।
২৫#
যারা দিনের আলোয় ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকে তারাই রাত্রের অন্ধকারে সঠিক চেহারা দেখায়।
২৬#
ঈশ্বর যদি মানুষকে অন্তত একদিনের জন্যে অন্যের মন পড়ার ক্ষমতা দিতেন তাহলে নব্বইভাগ মানুষ কেউ কারো সঙ্গে থাকতে পারতো না।
২৭#
আমার কাছে চরিত্রহীন শব্দের অর্থ, যে কথা দিয়ে কথা রাখে না।
২৮#
আমাদের দেশে যখন কেউ কাউকে সাহায্য করি তখন মনে মনে নিজের একটা অধিকার তৈরী করে নেই। যাকে সাহায্য করলাম সে যেন চিরকাল আমার কথা শুনতে বাধ্য থাকবে।
২৯#
স্রোতের বিরুদ্ধে কেন মানুষ একা চলতে পারে না।
৩০#
জীবন কোন অঙ্কের হিসেবে চলে না। তার কোন নিয়মও নেই। কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের তাই নিত্যদিন সংঘাত।