You are currently viewing মীর মশাররফ হোসেন এর উক্তি : মীর মশাররফ হোসেন এর বিখ্যাত উক্তি

মীর মশাররফ হোসেন এর উক্তি : মীর মশাররফ হোসেন এর বিখ্যাত উক্তি

মীর মশাররফ হোসেন (নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ – ডিসেম্বর ১৯, ১৯১১) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তাঁর পুরো নাম সৈয়দ মীর মশাররফ হোসেন। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত বিষাদ সিন্ধু তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম।

তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরেরপদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন।

মীর মশাররফ হোসেন তার বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন।

১#

মুখে অনেকেই টাকা অতি তুচ্ছ, অর্থ অনর্থের মূল বলিয়া থাকেন; কিন্তু জগৎ এমনই ভয়ানক স্থান যে, টাকা না থাকিলে তাহার স্থান কোথাও নাই, সমাজে নাই, স্বজাতির নিকটে নাই, ভ্রাতা ভগ্নীর নিকট কথাটার প্রত্যাশা নাই।

২#

মাতৃভাষায় যার ভক্তি নাই,সে মানুষ নহে।

৩#

‘[হিন্দু-মুসলমান] পরস্পর এমন ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ যে, ধর্ম্মে ভিন্ন, কিন্তু মর্ম্মে এবং কর্ম্মে এক’ এবং তাই ‘কালে আমরা রাজাকে পরিত্যাগ করিতে পারি। রাজাও আমাদিগকে পরিত্যাগ করিতে পারেন। কিন্তু হিন্দু-মুসলমান কেহই কাহাকে পরিত্যাগ করিতে পারে না।—জগত যতদিন—সম্বন্ধও ততদিন…।’

৪#

‘জন্মভূমি কাহার না আদরের?…জন্মভূমির জন্য কে না লালায়িত? বহুদিন পরে প্রবাসী দেশে আসিলে তার মনে কতই না সুখ! আনন্দ’

৫#

মানুষ তো বটেই ‘পশুপক্ষী কীটপতঙ্গগণও জন্মস্থানের মায়ামমতা বোঝে’, আবার স্বদেশের মূল্য ও গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে উদ্ধৃত করেছেন এই শাস্ত্রবাণী—‘জন্মভূমি স্বর্গ হইতে গরীয়সী’।

৬#

জন্মভূমি ‘প্রকৃত সুসন্তান পক্ষে স্বর্ণরজত অপেক্ষাও মূল্যবান’। কিন্তু পাশাপাশি এ-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, এই উপলব্ধি ‘মাতৃদ্রোহী সন্তানের পক্ষে নহে, স্বদেশদ্রোহী কুলাঙ্গারের পক্ষে নহে, জন্মভূমিবৈরী নিষ্ঠুর পামরের পক্ষে নহে’ (এসলামের জয়, তৃতীয় মুকুল)।

৭#

‘আমরা বাঙ্গালী, আমাদের হোম্্কে আমরা কেবল পদতলেই দলিত করিতে শিখিয়াছি। কি প্রকারে পূজিতে হয় তাহা জানি না। এই হোমেই যে, স্বর্গসুখ ভোগ করা যায়, তাহাও স্বীকার করি না। এই ঝাড়, জঙ্গল, জলে ডোবা, সেঁতসেঁতে, কুঁড়েঘর শোভিত হোমই যে, পবিত্র স্বর্গ হইতে গরীয়সী, তাহাই বা কয়জনে মনে করি।…আমরা নিমকহারাম, আমরা কৃতঘ্ন, তাহাতেই এই দশা’।

৮#

‘…আমি উদাসীন পথিক। মনের কথা বলিতেছি।—এ জগতে আমার কেহই নাই…।

৯#

‘বঙ্গবাসী মুসলমানদের দেশভাষা বা মাতৃভাষা “বাঙ্গালা”।

১০#

‘পয়গম্বর এবং এমামদিগের নামের পূর্ব্বে বাঙ্গালা ভাষায় ব্যবহার্য্য শব্দে সম্বোধন’ করার কারণে ‘স্বজাতীয় মূর্খদল হাড়ে হাড়ে চটিয়া রহিয়াছেন’।

১১#

‘শাস্ত্রের খাতিরে’, ‘সমাজের কঠিন বন্ধন’ ও ‘দৃঢ় শাসনে’ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে ‘কল্পনা কুসুমে আজ মনোমত হার গাঁথিয়া পাঠক-পাঠিকাগণের পবিত্র গলায় দোলাইতে পারিলাম না…।’ (বিষাদ-সিন্ধু )।

১২#

‘…আকিকা হইল-নাম রাখিবার সময় উপস্থিৎ। নাম রাখা হইল মফাজ্জ্বল হোসেন।…পারস্যভাষায় নাম রাখা হইল। আমি সদা সর্ব্বদা ডাকার জন্য বাঙ্গলা ভাষায় নাম রাখিব। …দুই একজন বলিলেন বাঙ্গলা নাম রাখিবেন রাখুন, তাই বলিয়া রাম, কৃষ্ণ, শিবদুর্গা, কালী নাম রাখা ভাল নয়। আমি বলিলাম—তাহাতে দোষ কি?…আপনারা এক চক্ষে দেখিবেন। কাযেই বাঙ্গালা ভাষাটা আপনাদের চক্ষেই ধরে না। অথচ বাঙ্গলার জল, বাঙ্গলার বাতাস, বাঙ্গলার আকাশ, বাঙ্গালার শস্য, বাঙ্গলার মাটী, বাঙ্গলার সকলই আপনার বলিতেছেন, ভাষাটার প্রতি এত ঘৃণার কারণ কি?…বাঙ্গলার মাটীতে জন্মগ্রহণ করিয়া প্রথম ডাক “মা” ডাকিতেছেন। কথা ফুটীয়ে বাঙ্গলা ভাষায় কথা কহিতেছেন, অথচ বাঙ্গলা হিন্দুর ভাষা কাফেরের ভাষা শিখিলে পড়িলেই মহাপাপ। তাহা যাহাই হউক আমার পুত্রের নাম আমি “শরৎ” রাখিলাম।’

১৩#

‘…সাবেক এস্লামি ভাষা পরিত্যাগ করিয়া বিসুদ্ধ [বিশুদ্ধ] বাঙ্গালাভাষার সেবা মুসলমান সমাজে আমিই প্রথম করিলাম।…আমার মুখেই প্রথম “ঈশ্বর” শব্দ বাহির হইয়াছে।—এই প্রকার অনেক কথা—আমারই মুখে অগ্রে বাহির হইয়াছে, লিখা হইয়াছে—ছাপার অক্ষরে কেতাবে উঠিয়াছে। খোদা, এলাহি স্থানে জগদীশ-পরমেশ্বর, পানি স্থানে জল, নমাজ স্থানে উপাসনা,—এইরূপ শব্দ বাহির হওয়ায় মুসলমান [সমাজে] আমার নিন্দার চর্চ্চ্যা [চর্চা] হইতে লাগিল’ (অপ্রকাশিত আত্মজীবনী)।

Leave a Reply