মানবজমিন ভারতীয় বাঙালি লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রচিত ১৯৮৮ সালের একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে আগস্ট, ১৯৮৮ সালে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৯ সালে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
এ-উপন্যাসের আরেকটি প্রধান চরিত্র তৃষা। মৃত ভাসুর তৃষাকে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে গেছে। লোকে বলে, তৃষার একমাত্র পুত্রের জনক তার ভাসুর। এমন-কি তৃষার স্বামীও। তৃষার বিরুদ্ধে তাই স্বামীর লড়াই। দুরারোগ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে যার প্রতিমুহূর্তের একলা যুদ্ধ, সেই প্রীতম, দীপনাথের ভগ্নীপতি, এ-উপন্যাসের আরেক প্রধান চরিত্র। প্রীতমের স্ত্রী স্বামীর প্রতি সেবাপরায়ণা, কিন্তু আগে থেকেই অরুণ নামে এক যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক।
মুখ্যত এই তিন চরিত্রের লড়াই ‘মানবজমিন’। আর লড়াইয়ের অবসানে তিন রকমের যে-পরিণতি, তার মধ্যেই ফুটে উঠেছে অসামান্য এই উপন্যাসের অমোঘ সেই বার্তা, মানবজমিনে যা করতে শেখায় নতুন আবাদ, ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার সোনা-ফলানো আবাদ।
১#
আজকাল এই দুনিয়ায় কোনো মানুষেরই। ঘেন্নাপিত্তি খুব বেশীদিন থাকে না।
২#
পাহাড়ের যৌবন বা জরা এতটাই দীর্ঘস্থায়ী যে মানুষের আয়ুতে বেড় পায় না
৩#
উদ্যমহীন, আড্ডা ও অবসরপ্রিয়, হতদরিদ্র শ্রীনাথের ঘর করতে গিয়েই সে টের পেত, সতীত্ব বা এককেন্দ্রিক জীবন কত না অর্থহীন। কতই না হাস্যকর শব্দ ভালবাসা। রাজার আমলের টাকার মতোই ভা অচল।
৪#
ছোটো জিনিস নিয়ে মাথা ঘামাতে ভিতরের মানুষটাও কি ছোটো হয়ে যায় না?
৫#
মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকবে তার তো কোনো বাঁধাধরা ছক নেই।
৬#
পুরুষরা প্রকৃতির নিয়মেই পলিগেমাস। তারা কখনো একজন মহিলাকে নিয়ে খুশি নয়।
৭#
পৃথিবীর খবর খুব ভাল নয়। খবরের কাগজগুলোর সেই নিরানন্দ ছবিই তুলে ধরে বারবারণ এনার্জি ক্রাইসিস, ইনফ্লেশন, পৃথিবী জুড়ে উগ্রপন্থীদের উৎপাত, দুর্ঘটনা।
৮#
কিন্তু টের পেতাম যারা এক-আধবার জেতে তারা আর নেশাটা কিছুতেই ছাড়তে পারে না।
৯#
এই পৃথিবীতে তার কোনো জমির আর প্রয়োজন নেই। ভেবে দেখলে কারোরই প্রয়োজন নেই। তবে সেটা সকলে সব সময়ে টের পায় না।
১০#
এই পৃথিবীতে তার কোনো জমির আর প্রয়োজনী নেই। ভেবে দেখলে কারোরই প্রয়োজন নেই। তবে সেটা সকলে সব সময়ে টের পায় না।
১১#
এই পৃথিবীতে তার কোনো জমির আর প্রয়োজন। নেই। ভেবে দেখলে কারোরই প্রয়োজন নেই। তবে সেটা সকলে সব সময়ে টের পায় না।
১২#
অংশু হয়তো ভেবেছিল, সে মরলে দু-জনেরই শিক্ষা হবে। হয়নি। অংশু হয়তো ভেবেছিল মরলে নিষ্কৃতি। পাবে। কিন্তু তা পেয়েছে কিনা তা পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রমাণিত নয়। সুতরাং মৃত্যু দিয়ে অংশু কিছুই প্রমাণ বা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ঠিক সেই রকম যারা আত্মহত্যা করে তারা কিছুই প্রমাণ করতে পারে না।
১৩#
বাচ্চাদের কাছে কথার খেলাপ করা ঠিক নয়। ওতে ওরা শ্রদ্ধা হারায়, হতাশায় ভোগে।
১৪#
একজন মেয়েমানুষকে ক্ষমতায় দেখতে পুরুষরা পছন্দ করে না। তার ওপর এখানকার বেশীর ভাগ পুরুষই অপদার্থ, কুচুটে, পরশ্রীকাতর। তাতে তেমন কোনো কাজ না থাকায় ঐ সব করে বেড়ায়।
১৫#
রোগে ভুগলে কি মানুষের অনুভূতি বাড়ে?
১৬#
শয়তান আর কেউ নয়, শয়তান হল মানুষের প্রতিদ্বন্দী ইচ্ছা।
১৭#
বোধহয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রবলেম হল অহংকারের লড়াই।
১৮#
কোনো কিছু ছাড়তে হলে এক ঝাঁকিতেই ছাড়তে হয়, ধীরে ধীরে ছাড়া যায় না।
১৯#
একজাতের মেয়ে আছে, যারা প্রেমিকা বা স্ত্রী হিসেবে তেমন কাজের নয়। কিন্তু ভারী ভাল মা হতে পারে।
২০#
পুরুষ আর রমণী যতই। পরিধেয় পরুক, ঘনিষ্ঠতা একদিন তাদের দেহমিলনে প্ররোচিত করবেই।
২১#
পৃথিবীতে কেউ কারো নয়। সারা জীবন ধরে মানুষ কেবলই ভুল দাবিদাওয়া বা যায়।
২২#
মানুষের সমাজে আজও ভদ্রতা, শিষ্টতার মতো কিছু ভাঁড়ামি এসে সত্যের মুখ চাপা দিয়ে ধরে।
২৩#
মানুষ যাকে ভালবাসে তার একটু কিছু হলেই সে পাগল হন্যে হয়ে যায়। তখন যুক্তি থাকে না, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন থাকে না, সে তখন ডাক্তার বদ্যি, তাবিজ তাগা মাদুলি জলপড়া মাথাখোঁড়া ধর্ণা দেওয়া সব করে করে বেড়ায়। তাতে কাজ না হোক, উদ্বেগ আর ভালবাসার একটা জমজমাট প্রকাশ তো ঘটে।
২৪#
গরীবদের জন্য ফিল করা ভাল, কিন্তু গরীব হওয়া ভাল নয়।
২৫#
কম বয়সে বিয়ে করলে কি মানুষ তাড়াতাড়ি বুড়োটে মেরে যায়?
২৬#
পৃথিবী থেকে বিষণ্ণতার বাতাস বিদায় নিয়েছে। চারদিকে যেন অজস্র আলো, প্রজাপতি, সুগন্ধ।
২৭#
পৃথিবী থেকে বিষণ্ণতার বাতাস বিদায় নিয়েছে। চারদিকে যেন অজস্র আলো, প্রজাপতি, সুগন্ধ।
২৮#
পুরুষ যেটাকে দখল করতে পারে না সেটাকেই মহিমান্বিত করে তোলার চেষ্টা করে।
২৯#
আমার তো সব ঘুষের পয়সা, যায় যাক। ঘুষের পয়সা এমনিতেও থাকে না।
৩০#
যে মানুষ নিজের বশে থাকে না ষে নানা অবস্থার চাপে পরে নানারকম মানুষের একটা সমষ্টি হয়ে দাঁড়ায়।