বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে। নিমাই ভট্টাচার্য কলকাতার টালিগঞ্জের শাশমল রোডের বাসায় বসবাস করতেন তিনি। নির্মম অদৃষ্ট সাড়ে তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহীন হন। পিতার সীমিত আয়ে অকল্পনীয় দুঃখ কষ্ট অভাব অভিযোগের মধ্যে ভর্তি হলেন কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি স্কুলে। কলকাতা রিপন স্কুলে কিছুদিন তিনি পড়াশুনা করার পর যশোরে ফিরে আসেন।
১৯৪১ সালে যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে চতুর্থ শেণীতে ভর্তি হন এবং নবম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে পড়াশুনা করেন। তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ বাবুও এক সময় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ও পরবর্তীতে শিক্ষক ছিলেন। দেশ বিভাগের পর নিমাই ভট্টাচার্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান এবং পুনরায় কলকাতায় রিপন স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং রিপন কলেজ থেকে আই. এ পাশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে তিনি বি. এ পাশ করেন। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। কিন্তু প্রথম অবস্থায় সেখানেও তিনি ভাগ্যের বিড়ম্বনার স্বীকার হন। নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্য চিন্তা তাঁর জীবনচর্চার একান্ত অনুগামী হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যামোদীদের নিকট ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। নিমাইয়ের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫০ -এর অধিক। বাংলা সাহিত্যে মেমসাহেব উপন্যাসটি তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। মেমসাহেব গ্রন্থ অবলম্বনে ১৯৭২ সালে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার এবং অপর্ণা সেন।
১#
কেউ যদি আপনার উপস্থিতি উপভোগ না করে,
তাকে অবশ্যই আপনার অনুপস্থিতি উপভোগ করতে দিন।
উপন্যাস: মেমসাহেব
~ নিমাই ভট্টাচার্য
২#
সোনায় যেমন একটু পানি মিশিয়ে না নিলে গহনা মজবুত হয় না, সেইরকম ভালোবাসার সঙ্গে একটু শ্রদ্ধা, ভক্তি না মিশালে সে ভালবাসাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
৩#
যে জীবনে ভালোবাসা পায়, সে আর কিছু পায় না। যে জীবনে আর সব কিছু পায়, সে ভালোবাসা পায় না।
৪#
“প্রহর শেষের আলোর রাঙা সেদিন চৈত্র মাস-
তেমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস-
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।”
৫#
“ ভালোবাসা দীন ভিখারিকেও রাজা করে ”
~ নিমাই ভট্টাচার্য
৬#
আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলেই বৃষ্টিপাত হয় না; সে কালো মেঘে জলীয়বাষ্প থাকা দরকার।
৭#
ও আমাকে সবকিছু দিয়েছে -কর্মজীবনে সাফল্য, সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠা, প্রান ভরা ভালোবাসা – সবকিছু দিয়েছে। নিজে কিছুই ভোগ করলো না,কিছুর ভাগ নিলো না। সবকিছু রেখে গেল,নিয়ে গেছে শুধু আমার হৃৎপিণ্ড টা।
উপন্যাস: মেমসাহেব
~ নিমাই ভট্টাচার্য
৮#
যখন রাত আসে তখন ঘুম আসে যখন ঘুম আসে তখন স্বপ্ন আসে যখন স্বপ্ন আসে তখন তুমি আসো – যখন তুমি আসো তখন ঘুমও আসে না, স্বপ্নও আসে না।
৯#
সীতার গর্ভেই বোধহয় বাঙালির পূর্বপুরুষদের জন্ম। তা না হলে সমগ্র বাঙালি জাতি এমন অভিশাপগ্রস্ত কেন হলো?
১০#
“যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক
তারা তো পারে না জানিতে
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ
আমার হৃদয়খানিতে।”
১১#
শুধু ইট-কাঠ-সিমেন্ট হলেই তো একটা সুন্দর বাড়ি হয় না! আর্কিটেক্ট চাই, ইঞ্জিনিয়ার চাই, মিস্ত্রি চাই। সোনার তালের দাম থাকতে পারে কিন্তু তার সৌন্দর্য নেই, স্বর্ণকারের হাতে সেই সোনা পড়লে কত সুন্দর গহনা হয়! মেমসাহেব তুমি আমার সেই আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পী!
১২#
আমার মনে অনেক দুঃখ থাকলেও আক্ষেপ নেই, বেদনা থাকলেও ব্যর্থতার গ্লানি নেই।
১৩#
শিক্ষিতাই হোক আর অশিক্ষিতাই হোক, প্রেমপত্র সেন্সর করতে মেয়েরা তো শিরোমনি।
১৪#
অতীত-বর্তমান হচ্ছে ক্যানভাস আর ব্যাকগ্রাউন্ড মাত্র, ছবিটা এখনও আঁকা বাকি।
১৫#
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ভুল, আমি মিথ্যা, আমি ছায়া, আমি অব্যয়! মনে হয় এমন করে নিজেকে বঞ্চনা করে কি লাভ?
১৬#
জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত কোন মানুষের আমন্ত্রণ এলে পঞ্চাশ টাকার এই রিপোর্টারকে নিশ্চয়ই তোমার ভুলে যেতে কষ্ট হবে না।
১৭#
স্নেহ ভালোবাসা দেওয়া সহজ কিন্তু বিনিময়ে তার মর্যাদা পাওয়া দুর্লভ।
১৮#
কর্মজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত অন্য কোন ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে হতে পারতো, হয়তো সে তোমার চেয়ে ঢের বেশি রোজগার করতো! কিন্তু আমার মনে হয়- ‘ সুপ্রতিষ্ঠিত পুরুষের হৃদয়ে স্ত্রীর প্রতিষ্ঠা পাওয়া খুব দুর্লভ!
১৯#
জগন্নাথঘাটে রজনীগন্ধার পাইকারি বাজার দেখে কোনো কবির কাব্যচেতনা জাগবে না; কিন্তু প্রেয়সীর সঙ্গে একটু রজনীগন্ধার সজ্জা অনেকের মনে দোলা দেবে। ঝুড়িবোঝাই রজনীগন্ধার চাইতে লম্বা ফ্লাওয়ার ভাসের মধ্যে দু’চারটে স্টিক দেখতে অনেক ভালো লাগে।
২০#
মানুষের জীবনে প্রথম ও প্রধান নারী হচ্ছে মা।