জয় গোস্বামী (জন্ম: ১০ নভেম্বর ১৯৫৪) বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত একজন আধুনিক বাঙ্গালী কবি। ভারতীয় পশ্চিম বাংলার এই কবি বাংলা ভাষার উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি হিসাবে পরিগণিত।
তার কবিতা চমৎকার চিত্রকল্পে, উপমা এবং উৎপ্রেক্ষায় ঋদ্ধ। তিনি দুবার আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছেন। বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন।
তার কবিতার কিছু বিখ্যাত পঙ্ক্তি
১#
‘‘অতল তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে / হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে’’’।
২#
চার দেওয়ালের বন্দিশালায়
একটি রাতের পাখি,
স্বপ্ন ডানায় উড়ান ভরে
আকাশ দিয়ে ফাঁকি
৩#
আমি কেবল একটি দিন তোমার পাশে তাকে দেখেছিলাম আলোর নীচে অপূর্ব সে আলো স্বীকার করি, দুজনকেই মানিয়েছিলো ভালো জুড়িয়ে দিলো চোখ, আমার পুড়িয়ে দিলো চোখ বাড়িতে এসে বলেছিলাম ওদের ভালো হোক।
~ “বেণিমাধব – জয় গোস্বামী”
৪#
তুমি কি একদিন আসতে পারো
পাখির ডাক হয়ে ? শেষরাতে?
আমি তো জানলায় বসেই থাকি।
৫#
আপনি যা বলবেন
আমি ঠিক তাই কোরবো
তাই খাবো
তাই পরবো
তাই গায়ে মেখে ব্যাড়াতে যাবো
কথাটি না বলে
বললে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকবো সারা রাত
তাই থাকবো
পরদিন যখন বলবেন এবার নেমে এসো
তখন কিন্তু লোক লাগবে আমাকে নামাতে একা একা নামতো পারবো না
ও টুকু পারি নি বলে
অপরাধ নেবেন না যেন
~ শাসকের প্রতি (জয় গোস্বামী)
৬#
প্রতিদিন কিন্তু ইচ্ছেকে পুড়িয়ে মারি প্রতিদিন কিছু ইচ্ছেকে পাঠাই নির্বাসনে, ভালবাসা কি ভীষণ প্রতারক হৃদয় ভেঙেছে যার সেই জানে।
৭#
শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে এখনো গোপন করে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা; সমস্ত যৌবন ধরে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে, জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোস্নার ধারণা দেব বলে এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।
৮#
শুধু আমাকে দেখবার জন্যেই,
এতদিন ধরে এতবার
গাছের দিকে তাকিয়েছ,
জলের দিকে তাকিয়েছ,
তাকিয়েছ প্রত্যেক রাস্তায়
জানলার দিকে তাকিয়েছ,
তাও একবার নিজে থেকে
বলতে পারলে না?
৯#
আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি তবু আগুন, বেণীমাধব, আগুন জ্বলে কই? কেমন হবে, আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই?
১০#
সমুদ্র? না প্রাচীন ময়াল? পৃথিবী বেষ্টন করে শুয়ে আছে।
তার খোলা মুখের বিবরে অন্ধকার।
জলের গর্জন।
১১#
সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রহ্মচারী জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।
১২#
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে সারাদিন।
১৩#
যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেই
বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!”
১৪#
একটা বিচ্ছেদ থেকে
পরের বিচ্ছেদে
যেতে যেতে
কয়েকটি দিন মাত্র
মাঝখানে পাতা আছে
মিলনের সাঁকো
মেঘ ক’রে আসবেই।
পথ ঝাপসা হবেই বৃষ্টিতে
পা পিছলে তলিয়ে যাবে,
তার আগে যতক্ষণ পারো
আঙুলে আঙুলে
আঁকড়ে রাখো।
১৫#
“আমি আর বুকুন, দিনে রাতে,
কত গাছের গুঁড়িতে
কান রেখে শুনেছি
গাছ, মনে-মনে কবিতা বলছে ….
১৬#
মেঘবালিকা রেগেই আগুন,
“মিথ্যে কথা । নাম কি অমন হয় কখনো ?”
আমি বললাম
“নিশ্চয়ই হয় ৷ আগে আমার গল্প শোনো।”
১৭#
কলঙ্ক, আমি কাজলের ঘরে থাকি
কাজল আমাকে বলে সমস্ত কথা
কলঙ্ক, আমি চোট লেগে যাওয়া পাখি
বুঝি না অবৈধতা।