আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ – ৪ জানুয়ারি ১৯৯৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তিনি একজন স্বল্পপ্রজ লেখক ছিলেন। দুইটি উপন্যাস, গোটা পাঁচেক গল্পগ্রন্থ আর একটি প্রবন্ধ সংকলন এই নিয়ে তার রচনাসম্ভার। বাস্তবতার নিপুণ চিত্রণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ তার রচনাকে দিয়েছে ব্যতিক্রমী সুষমা। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্’র পরেই তিনি সর্বাধিক প্রশংসিত বাংলাদেশী লেখক। তাকে সমাজবাস্তবতার অনন্যসাধারণ রূপকার বলা হয়েছে।
১#
এদেশে সমালোচনা হয় না, শত্রুতা ও বন্ধুত্বের প্রকাশ হয়।
২#
“ওপরে সবই কালো রঙে আঁকা। ল্যাম্পোস্ট থেকে বিদ্যুৎ বহন করে ছুটে চলে তারের ঝাঁক, সেগুলো সব এখন অদৃশ্য।অথচ চোখ জোড়া তার হাট করে খোলা, পোড়া বাজির ভাঙা দরজার মতো সেগুলো বন্ধ করা যায় না। রক্ত ও বারুদের গন্ধে সে আপ্লুত হয়, তবে পলকের জন্য মাত্র। রক্তের মধ্যে হাবুডুবু খেতে খেতে সব রঙ সব গন্ধ এমনকি বাতাস পর্যন্ত তার আয়ত্তের বাইরে। খিজিরের মুখে অন্ধকার হয়ে পড়েছে পার্কের ভেতরকার রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়ানো গোলাচি গাছের প্রসারিত রোগা ডালের ছায়া।”
(চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস)
৩#
সংঘটিত মানুষই, ইতিহাসের নির্মাতা।
৪#
১০-১২টা মাঝারি গল্প লিখে এখানে প্রতিষ্ঠিত লেখক হওয়া যায়। বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় কাগজ থেকে ইন্টারভিউ নিতে লোক আসে।
…লিখলেই লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়? এ স্বীকৃতি পেয়ে লাভ কী? বাংলা গদ্য ঠিকমতো লিখতে পারে না, এমন লোক কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাদের সঙ্গে আমাকে আলাদা করে চিহ্নিত করবে? না, করবে না। এদের ভাবখানা এই; আমরাও আছি, তুমিও ভালো লিখছো, তুমিও আমাদের সোসাইটিতে এসো। এইসব রুচিহীন ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেখি, এখানেও আমি একা।
৫#
“হোসেন আলির চোখের সামনে বিশাল চর। কালচে হলুদ জ্যোৎস্নায় নিকানো। আর আনোয়ারের পিঠ ফেরানো রয়েছে চরের দিকে, তার সামনে যমুনা। খুব উঁচু পাড় থেকে খাড়া মাটি লাফিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে নদীর স্রোতে। শীতকালের নিরীহ নদীটার চলাচলও এই নির্জন জায়গায় ছলাৎ ছলাৎ করে প্রতিধ্বনিত হয়। নদীর ওপার দেখা যায়না। মনে হয় নদী হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছে কুয়াশার খাপের মধ্যে।”
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
৬#
“গ্রহ নক্ষত্রের ফোকাসে গোলাপি নীল, নীলচে নীল, গোলাপি সাদা এবং নীলচে সাদা আকাশের নিচে এবং পানিকাদা কফথুথু গুমুতের ওপর পা টানতে টানতে ওসমানের চেহারায় নতুন দাগ পড়ছে। এখন খাকি বলো কালো বলো, সবুজ বলো সাদা বলো – কারো সাধ্যি নাই যে তাকে সেই ওসমান গনি বলে সনাক্ত করে।”
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
৭#
আমার লেখার ধরণ খুবই গম্ভীর, আঁটসাঁট ও প্রাঞ্জল। আর আমার রচনায় সূক্ষ্ম অন্তদৃষ্টি ও তীক্ষ্ম কৌতুকবোধের পরিচয় রাখার চেষ্টা করেছি!
কিন্তু আমি আমার সাহিত্যিক জীবনে মাত্র দুটো উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধ সংকলন রচনা করেছি।কেননা, বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে লেখার মান বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ!
৮#
কিন্তু আমি আমার সাহিত্যিক জীবনে মাত্র দুটো উপন্যাস, পাঁচটি গল্পগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধ সংকলন রচনা করেছি।কেননা, বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে লেখার মান বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ!
৯#
“শরীরের পুলকে এক পলকের জন্য চোখ বন্ধ করলে রানুর চোখের মণি ঝকঝক করে ওঠে। সেই ধারালো আভায় তার নিজের চোখের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে ভেবে সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে পাশে তাকায়, সেখানে রঞ্জুর মুখ। চট করে চোখ ফিরিয়ে নেয় রানুর চিঠিতে। ১ বার ২ বার ৩ বার ৪ বার ৫ বার পড়তে পড়তে রানুর চোখ থেকে ধার করা আলোতে উদ্ভাসিত তার চোখ দিয়ে শুষে নেওয়া হয় চিঠির আভা। আভা মিলিয়ে গেলে পড়ে থাকে চিঠির ধড়, প্রাণহীন চিঠির লাশ বড়ো অস্বস্তিকর।”
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১০#
“ভোটের রাইট পাবার জন্য মানুষ প্রাণ দেবে?
দেবে।
স্বাধীনতা গণতন্ত্র এর জন্য মানুষ যুগে যুগে প্রাণ দিয়ে এসেছে।
ভোট দিলেই কি মানুষের জন্য গণতন্ত্র আসে?
আসে। ভোট দেওয়ার অধিকার গণতন্ত্রের বড় শর্ত।”
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১১#
“গল্প হবে কেন? ইতিহাসের কথা।ইতিহাসের কথা নিয়া মানুষ গল্প করে না? নাটক নভেল লেখে, বায়স্কোপ করে।৷ ইতিহাস কি তাই কেচ্ছা হয়ে যায়?
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১২#
“কেউ রাগ করলে বা বিরক্ত হলে তার প্রতিক্রিয়া দেখানো মানে নতুন ঝামেলা তৈরী। “
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১৩#
“উপযুক্ত জ্ঞান লাভ না হলে আদবকায়দা রপ্ত করা অসম্ভব, আদবকায়দা হলো শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। “
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১৪#
“বিদেশীর বিরুদ্ধে আন্দোলন তার আবার বড়ো ঘর ছোটো ঘর কি? দেশের সকল অধিবাসীরই সংগ্রাম।”
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১৫#
“ব্যক্তি মালিকানার প্রতি মোহ আনোয়ারের কাছে অরুচিকর ও নিচু ধরনের প্রবৃত্তি বলে মনে হয়। “
চিলেকোঠার সেপাই – আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১৬#
উপন্যাসে ‘ব্যক্তির আত্মসত্তার অন্তর্গত জীবনের উন্মোচন’ ঘটিয়ে থাকেন ঔপন্যাসিক।
১৭#
রাজনীতিবিদদের কামড়াকামড়ির দায় রাজনীতির নয়,বরং বুর্জোয়া কাঠামোর নড়বড়ে গঠনই রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে দেয় ।
—–(সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু)আখতারুজ্জামান ইলিয়াস